মুমিন জীবনে সফলতা ও বিজয় অনিবার্য
২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০৯ এএম | আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০৯ এএম

মানুষের সম্মান ও মর্যাদা জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। মানুষের প্রতি মানুষের সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ গড়ে ওঠে একে অন্যের প্রতি সুধারণা ও ভালোবাসা থেকে। কিন্তু যখন কোনো কারণে ভালোবাসা হ্রাস পায় তখন আর তার প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধাবোধ থাকে না। প্রত্যেকটি মানুষ জীবনের কোনো না কোনো সময় কারো না কারো কাছে অপমানিত হয়ে থাকে। কখনো নিজস্ব লোকের মাধ্যমে কখনো বাইরের লোকদের মাধ্যমে।
কেউ যদি কাউকে অন্যায়ভাবে অসম্মান ও অপমান করে থাকে, তাহলে তিনিও জীবনের কোনো না কোনো সময় অন্য কারো দ্বারা অপমানিত হবেন-তাতে সন্দেহ নেই। আর আপনি যদি কাউকে অপমান না করে থাকেন, যদি সত্যিকার মুমিন ব্যক্তি হয়ে থাকেন, তারপরও যদি আপনাকে কেউ কোনো বিষয়ে অন্যায়ভাবে দোষারোপ করে এবং অপমান করে তাহলে বুঝে নিবেন এটি আপনার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা। এ পরীক্ষায় আপনি মন খারাপ করবেন না। কারণ সত্যিকার মুমিন ব্যক্তিকে আল্লাহ ধৈর্য পরীক্ষা করেন। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে আল্লাহ তাকে সুসংবাদ দিয়েছেন। (সুরা বাকারাহ : ১৫৫)।
মানুষ যত ভালো কাজই করুক না কেন, তার প্রতি এক শ্রেণির লোক নেতিবাচক সমালোচনা করতেই থাকবে। কেউ সৎ পথে থেকে নিজের মেধা, শ্রম, শক্তি, বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে নিজের সম্পদ ব্যয় করে মানুষের জন্য সেবামূলক কাজ করলেও তাকে নেতিবাচক সমালোচনা শুনতে হবে। এমনকি নিজের কলিজা কেটে উন্নতমানের মসলা মাখিয়ে ভূনা রান্না করে খাওয়ালেও মানুষ বলবে, এতে লবণ কম হয়েছে। এটিই মানুষের ফিতরাত বা স্বভাব। কৃতজ্ঞতা বোধ মানুষের মাঝে সহজে কাজ করে না। তাতে অনেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে।
তবে মনে রাখা দরকার যে, যারা নেতিবাচক সমালোচনা করে, তারা এমন লোক, যারা হয় আপনার নিকটতম ও রক্তের সম্পর্কের কেউ অথবা আপনি কাউকে যেচে পড়ে উপকার করেছেন বা বিপদে-আপদে সহযোগিতা করেছেন এমন কোনো লোক। উপকারী ব্যক্তির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এমন লোকের সংখ্যা পৃথিবীতে খুবই নগন্য। তবুও আল্লাহর সন্তুষ্টির কথা চিন্তা করে মানুষকে উপকার করা অব্যাহত রাখা মুমিনদের গুরুত্বপূর্ণ কাজ। যেভাবেই হোক আপনাকে কেউ অসম্মান করলে ও মানহানিকর কথা বা কাজ করলে তা থেকে পরিত্রাণের জন্য করণীয় বিষয় নি¤œরূপ:
শান্ত থাকার চেষ্টা করা: মহান আল্লাহ তায়ালা মানবজাতিকে সম্মানিত করেছেন, তার মর্যাদা ও অধিকার সংরক্ষণের মাধ্যমে। শুধু জীবনে চলার পথে নয়, মৃত্যুর পরও তাকে মর্যাদার অধিকারী করেছেন। ইসলামী আইন বিশেষজ্ঞগণ ইসলামের ৫টি মৌলিক উদ্দেশ্য নির্ণয় করেছেন। তাদের মধ্যে ৪টিই হচ্ছে মানুষের পার্থিব অধিকার, মর্যাদা ও সম্মান সংক্রান্ত। এগুলো সকল মানুষের জন্য প্রযোজ্য। ক. দ্বীনের যথাযথ সংরক্ষণ খ. জীবনের সংরক্ষণ গ. সম্মানের সংরক্ষণ ঘ. সম্পদের সংরক্ষণ ঙ. বংশধারার সংরক্ষণ।
উল্লেখিত ৫টি বিষয় প্রত্যেকটি মানুষের জন্য প্রযোজ্য। মানুষকে সম্মানিত করে থাকেন মহান আল্লাহ তায়ালা। সুতরাং কারো সম্মান কেউ জোর করে কেড়ে নিতে পারবে না-যদি তিনি সৎ ও সত্যিকার মুমিন হয়ে থাকেন। বরং কাউকে অন্যায়ভাবে অপমান করার কারণে তিনি আল্লাহর নিকট বেশি সম্মানিত হবেন। যদি তিনি প্রকৃত মুমিন হয়ে থাকেন। অপরপক্ষে অপমানকারী আল্লাহর নিকট শাস্তি পাবেন। সে শাস্তি হবে দুই ধরণের। ১. দুনিয়ার জীবনের যে কোনো সময় অন্যের দ্বারা অপমানিত হবেন ২. আখেরাতে আল্লাহর নিকট কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হবেন।
(তাওদিউল আহকাম: ১ম খন্ড, ৪৪পৃ.)।
সকল মানুষই সম্মানিত: মানবজাতির সম্মান ও মর্যাদা সর্বজনীন। প্রত্যেক মানুষ সে মুমিন হোক অথবা কাফির হোক, মুসলিম হোক অথবা অমুসলিম হোক মৌলিক অধিকার ও সম্মান সবার ক্ষেত্রে সমান। পবিত্র কুরআনের বর্ণনা মতে, সাধারণ সম্মান সকল মানুষের জন্য। তবে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে কোনো মানুষ বেশি সম্মানিত হয়ে থাকেন। কোনো ব্যক্তির সম্মান বেশি উচ্চ পদ-পদবিতে দায়িত্ব পালনের সুযোগ পাওয়ার কারণে। এ সুযোগ আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে দিয়ে থাকেন। (সুরা ইমরান:২৬-২৭ আয়াত)।
কিছু কিছু মানুষকে আল্লাহ তায়ালা অন্য মানুষের দায়িত্বশীল বা কর্তৃত্ব করার অধিকার দিয়েছেন। সেটি সমাজ থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পর্যন্ত হতে পারে বা আন্তর্জাতিক পর্যায় পর্যন্ত হতে পারে। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমি মানবজাতিকে সম্মানিত করেছি, কর্তৃত্ব দিয়েছি স্থলে ও জলে, তাদেরকে উত্তম জীবিকা দিয়েছি এবং আমার সৃষ্টি জগতের অনেকের ওপর তাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি। (সুরা বনি ইসরাইল:৭০ আয়াত)। আমাদের প্রিয় নবী (সা.) ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী, দল, মত, ধনী, দরিদ্র, শ্রমিক-মালিক নির্বিশেষে সকলকে সম্মান দিয়েছেন। (মুসলিম: হাদিস-৯৬১)।
মৌলিক অধিকার সকলের জন্য সমান:মৌলিক অধিকার বা ঋঁহফধসবহঃধষ ৎরমযঃং সবার জন্য সমান। মানুষের সম্মানের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা ঈমানদার ও কাফিরদের মধ্যে কোনো পার্থক্য সৃষ্টি করেননি। আল্লাহ বলেন : আমি যাকে হত্যা করা নিষিদ্ধ করেছি, তোমরা তাকে আইনানুগ কারণ ছাড়া হত্যা কর না। (সুরা আনআম : ১৫১)। এ আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মানুষ সত্তাগতভাবে সম্মানিত। সুতরাং কাউকে অপমান করা, তার প্রতি পরিকল্পিত অবিচার করা, তার অধিকার ও মর্যাদা বিনষ্ট করা, মানহানি করা, কর্মস্থল ভাঙচুর করা, অফিস কক্ষে তালা লাগিয়ে দেয়া, পিঠের চামড়া তুলে নেয়ার হুমকি দেয়া, মেন্টাল টর্চার করা, জালেম সরকারের দোসর কর্তৃক কারো বাসায়, চাকরিস্থলে সর্বত্র সবসময় গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা, মোবাইল ট্র্যাকিং করে রাখা, হয়রানি করা অন্য কোনো মানুষ বা শাসকের পক্ষে বৈধ নয়।
তবে আপনি যদি এরূপ করে থাকেন, কারো প্রতি অবিচার করে থাকেন, জুলুম করে থাকেন, মামলা-হামলা করে থাকেন, জেল-জুলুম দিয়ে থাকেন, কারো অফিসে তালা লাগানোর নির্দেশ দিয়ে থাকেন, অন্যায়ভাবে ফাঁসি দিয়ে থাকেন, তাহলে আপনি যতো বড় ক্ষমতাশালীই হন না কেন, সময়ের পরিক্রমায় একদিন অবশ্যই আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবেন। এমনকি জনগণ কর্তৃক পিঠের চামড়াও তুলে নেয়ার ভয়ে দেশ ছেড়ে পালাতেও পারেন-তাতে কোনো সন্দেহ নেই। অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে আপনি ধৈর্যের সাথে অপেক্ষা করুন। আল্লাহ আপনাকে সাহায্য করবেন। আপনাকে বিজয় দান করবেন। মোটকথা আপনি যা কিছু অন্যায়ভাবে অন্যের উদ্দেশ্যে করবেন, তা একদিন প্রতিশোধ হিসেবে আপনার নিকটে ফেরত আসবে। অন্যকে অভিশম্পাত করলেও তা আপনার ওপর ফেরত আসবে। সুতরাং মানুষকে অপমান করা থেকে বিরত থাকাই প্রকৃত মুমিনদের লক্ষ্য হওয়া উচিত।
অতএব, মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলের সম্মান ও মর্যাদাকে সমুন্নত রাখুন। কারো সম্মানের প্রতি আঘাত করা থেকে বিরত রাখুন। তাহলে আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবার সম্মান বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেবেন। আসল কথা হলো, মুমিন ব্যক্তিরা কখনো পরাজিত হন না। আল্লাহর রহমত তাদেরকে ঘিরে ধরে। মুমিনগণ জুলুম নির্যাতনের স্বীকার হয়েও সবসময় ধৈর্য ধারণ করেন। তাই মুমিন জীবনে পরাজয় বলতে কিছুই নেই, দেরিতে হলেও মুমিনের সফলতা ও বিজয় অনিবার্য।
বিভাগ : ইসলামী জীবন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

গাজায় যুদ্ধ থামবে না, হুঁশিয়ারি নেতানিয়াহুর

ইসরায়েলি নৃশংস হামলায় গাজায় নিহত অন্তত ৮১ ফিলিস্তিনি

কালিগঞ্জে প্রশাসনের নাকের ডগায় অবৈধ বালু উত্তোলন, পরিবেশ বিপর্যয়ের সম্ভাবনা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি-প্রক্টরের পদত্যাগ চায় ছাত্রদল

রিয়াল ছেড়ে কেন ব্রাজিলে আনচেলত্তি

দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত ঢাবি ছাত্রদল নেতা, বিক্ষোভ প্রতিবাদে উত্তাল ক্যাম্পাস

সেমি-ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ নেপাল

এই প্রথমবারের মতো ‘বাবার কারাবাস’ নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বললেন ইমরান খানের সন্তানদ্বয়

আমিরাতের উন্নয়নে বাংলাদেশিদের অবদানের প্রশংসা এবং সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ

কৃষিপণ্য রপ্তানিতে ভাটা, উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা

ব্রিফিংয়ে জয়সোয়াল আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার ঘটনায় ভারতের উদ্বেগ!

আমদানি বৃদ্ধি ও শুল্ক কমানোর পণ্য তালিকা চূড়ান্ত হচ্ছে

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করে না: প্রেস উইং

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করে না: প্রেস উইং

চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে পতিত সরকারের করা চুক্তি স্থগিত করুন

কমলো উড়োজাহাজের তেলের দাম

লিবিয়ায় ভয়াবহ সংঘর্ষ, বাসিন্দাদের ঘরে থাকার নির্দেশ

আমরা কি নতুন কোনও যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে যাচ্ছি? প্রশ্ন মেজর হাফিজের

মঙ্গলের মাটির তলায় তরল পানির সন্ধান

পুঁজিবাজারে আবারো বড় দরপতন