ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫ | ২৬ আষাঢ় ১৪৩২

নজরুলের সাহিত্য দর্শনে দেশাত্মবোধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা

Daily Inqilab ড. বি এম শহীদুল ইসলাম

১৩ জুন ২০২৫, ১২:১৪ এএম | আপডেট: ১৩ জুন ২০২৫, ১২:১৪ এএম

বাংলা ও বাঙালির প্রগতিশীল চিন্তা ও চেতনার অন্যতম প্রধান কবি কাজী নজরুল ইসলাম। তার কবিতা, গান, প্রবন্ধ, গল্প, উপন্যাসসহ সকল সৃষ্টিকর্মে আছে দ্রোহ, দেশপ্রেম, মানবপ্রেম, মানবিকতা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা। তার ক্ষুরধার লেখনী ও বক্তৃতা-বিবৃতির মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে-সাম্য, মানুষ ও মানবতার জয়গান। মানুষে মানুষে ভেদাভেদ, ধর্মীয় ভেদাভেদ তার সাহিত্য দর্শনে অনুপস্থিত। তিনি স্বাধীনতা ও মুক্তির চেতনায় দেদীপ্যমান। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে নজরুলই প্রথম কবি, যিনি গণমানুষের পক্ষে এবং ফ্যাসিস্ট শাসক শ্রেণির বিরুদ্ধে লেখার জন্য কারাবরণ করেছেন। তার গ্রন্থ বাজেয়াপ্ত হয়েছে, পত্রিকা বন্ধ করা হয়েছে। বিদেশি শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে তার ‘দ্রোহ’ ছিল বুকের গহীন গভীর থেকে উৎসারিত। তার প্রতিবাদী কণ্ঠ পৌঁছে গিয়েছিল পরাধীন ভারতবর্ষের স্বাধীনতাকামী সব মানুষের চিত্তচরণে ও চেতনার মনিকোঠায়। তাই তাকে দ্রোহের কবি বা বিদ্রোহী কবি নামে অভিহিত করা হয়। সত্যিই তিনি বিদ্রোহী কবি হিসেবে সার্থকতা লাভ করেছেন।

বিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যে নজরুলই ছিলেন অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় উচ্চকণ্ঠ। তার কবিতা ও গানে সত্য ও সুন্দরের বাণী এবং সুর-ব্যঞ্জনার প্রতিফলন ঘটেছে সব সময়। অগ্নিবীণা হাতে তার প্রবেশ, ধূমকেতু হয়ে প্রকাশ। সৃষ্টিকর্ম ও জীবনাচরণ-সর্বত্রই দ্রোহের আগুন জ্বালিয়েছেন। তিনি ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছেন। প্রকাশ করেছেন বিদ্রোহীর মতো অতুলনীয় কবিতা ও ভাঙার গানের মতো বিখ্যাত কাব্য, ধুমকেতুর মতো জ্বালাময়ী সাময়িকী। ব্রিটিশ শাসকের কারাবন্দি হয়ে লিখেছেন ‘রাজবন্দির জবানবন্দি’র মতো নির্ভীক ও সাহসী সাহিত্যকর্ম। তার সৃষ্টিকর্মে সাম্রাজ্যবাদী শাসকদের বিরোধিতা ছিল যেমন প্রবল, তেমনি পরাধীন ভারতবাসীর স্বাধীনতা ও মুক্তির আকাঙ্ক্ষা ছিল দুর্নিবার। অবহেলিত ও সাধারণ জনগণের প্রতি ছিল কবি নজরুলের প্রগাঢ় ভালোবাসা ও সম্মানবোধ। পরাধীন ভারতের মুক্তির জন্য তিনি ছিলেন সদা ব্যাকুল। সাম্রাজ্যবাদী শোষণ থেকে ভারতবর্ষকে মুক্ত করার জন্য, স্বাধীনতার প্রেরণা জুগিয়েছেন তিনি ভারতবাসীর অন্তরে অন্তরে। পরাধীন দেশে স্বাধীনতার জন্য যে গণজাগরণ প্রয়োজন, নজরুল লেখনীর মাধ্যমে সেই গণজাগরণ সৃষ্টিতে পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেছেন। কবি নজরুল মনন ও মানসে হিন্দু ও মুসলমান বৈপরীত্যের দ্যোতক নয়, বরং পরিপূরক। কারণ, তার সাম্যবাদী চিন্তা। তাই তিনি ভারতবর্ষের মুক্তির জন্য হিন্দু-মুসলমান বিভেদের পরিণতি সতর্ক করে লিখেছেন, ‘কান্ডারী হুঁশিয়ার’ নামক কবিতা। বলেছেন, ‘হিন্দু না ওরা মুসলিম? ওই জিজ্ঞাসে কোনজন? কান্ডারী বলো ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মার।’ আবার ‘হিন্দু-মুসলমান’ কবিতায় তিনি লিখেছেন, মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু মুসলমান, মুসলিম তার নয়নমণি, হিন্দু তার প্রাণ।’

সরাসরি নজরুল কবি মানসে মানবতাবোধ তথা সত্যসন্ধানের প্রকাশ ঘটেছে সাম্যবাদী (১৯২৫), সর্বহারা (১৯২৬), ফণিমনসা (১৯২৭), সন্ধ্যা (১৯২৯) ও প্রলয়শিখা (১৯৩০) কাব্যে। এসব কাব্যে তিনি সব ব্যবধান পেরিয়ে মানুষের জয়গান গেয়েছেন। হুমায়ুন কবিরের মতে, বাংলার বিপুল কৃষক সমাজের সঙ্গে ছিল নজরুলের গভীর আত্মীয়তা। সুভাষ মুখোপাধ্যায়ও বলেছেন, নজরুল কৃষক পরিবারের সন্তান; সে কারণেই তার রচনা এত দ্রুত জনসমাজকে আচ্ছন্ন করতে পেরেছে। জনসমাজে গৃহীত হওয়ার একটা কারণ তার রাজনীতি ও রাজনৈতিক চেতনার দর্শন। ত্রিশের মেধাবী কবিরা যখন বিচ্ছিন্নতাবাদী কাব্যচর্চা করছিলেন, তখন ভারতীয় সমাজের মেধাবী অপরাংশ সংগঠিত হচ্ছিল ব্রিটিশবিরোধী লড়াইয়ে। তাদের সঙ্গে জেগেছিল সাধারণ মানুষও। নজরুল এই অপরাংশের ভাব ও তৎপরতাকে ভাষা দিয়েছেন রঙিন করেছেন। তাই তো ধূমকেতু পত্রিকাকে বিভিন্ন বিপ্লবী দল নিজেদের পত্রিকা মনে করত। মুজফফর আহমদ লিখেছেন; আমাদের ভাষার জোর নেই, সংগ্রামশীলতা নেই, এই ধারণা আমাদের মধ্যে বদ্ধমূল ছিল বলেই আমরা সেøাগান দিতাম হিন্দুস্থানীতে। নজরুল ইসলামের অভ্যুদয়ের পর আমরা বুঝেছি, বাংলা ভাষাও জোরালো, সংগ্রামশীল ও অসীম শক্তিশালী। যেমন: পরাধীনতার শৃঙ্খল ভাঙতে ‘ভাঙার গান’-এ কবির দুঃসাহসী উচ্চারণ, ‘কারার ঐ লোহ-কপাট, ভেঙে ফেল, কররে লোপাট, রক্ত-জমাট, শিকল-পুজোর পাষাণ-বেদী!’ আবার অর্থনৈতিক শোষণের চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে কবি ‘কুলি-মজুর’ কবিতায় লিখছেন, দেখিনু সেদিন রেলে, কুলি ব’লে এক বাবু সা’ব তারে ঠেলে দিল নিচে ফেলে! চোখ ফেটে এল জল, এমনি ক’রে কি জগৎ জুড়িয়া মার খাবে দুর্বল?’ ধর্মীয় ভন্ডামী ও গোঁড়ামীর বিরুদ্ধে ধিক্কার জানিয়ে নজরুল ‘মানুষ’ কবিতায় লিখছেন, ‘হায় রে ভজনালয়, তোমার মিনারে চড়িয়া ভন্ড গাহে স্বার্থের জয়! মানুষেরে ঘৃণা করি’ ও কারা কোরান, বেদ, বাইবেল চুম্বিছে মরি’ মরি’... পূজিছে গ্রন্থ ভরে দল! মূর্খরা সব শোন, মানুষ এনেছে গ্রন্থ; গ্রন্থ আনেনি মানুষ কোনো’। আবার নারীর সমান অধিকারের কথা বলতে গিয়ে কবি ‘নারী’ কবিতায় বলছেন, ‘সাম্যের গান গাই, আমার চোখে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই।’ আর সকল মানুষের সমতার কথা বলতে গিয়ে মধ্যযুগের বাঙালি কবির ‘সবার ওপরে মানুষ সত্য, তাহার ওপরে নাই’ সেই বিখ্যাত উক্তির সঙ্গে সুর মিলিয়ে নজরুল বলছেন, ‘গাহি সাম্যের গান-মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহিয়ান, নাই দেশ কাল পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্ম জাতি, সব দেশে সব কালে ঘরে ঘরে তিনি মানুষের জ্ঞাতি।’

১৯২০ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর, সৈনিক জীবন ত্যাগ করে তরুণ নজরুল গেলেন কলকাতায়। মনোনিবেশ করলেন সাহিত্য চর্চায়। মোসলেম ভারত, বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা, উপাসনা প্রভূতি পত্রিকায় তার লেখা প্রকাশ হতে থাকল। কলকাতার সাহিত্য সমাজে বেশ কিছু লেখা প্রশংসিত হলো তার। ফলে কবি, সাহিত্যিক ও পাঠকসমাজে নজরুলের পরিচিতি ও গ্রহণযোগ্যতা ব্যাপকভাবে তৈরি হল। বিশিষ্ট কবি, সাহিত্যিকদের সঙ্গে গড়ে ওঠল তার অসীম বন্ধুত্ব। ১৯২০ সালের ১২ জুলাই শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের সম্পাদনায় প্রকাশিত হলো সান্ধ্য দৈনিক নবযুগ। নজরুলের জীবন নতুন মোড়ে আচ্ছাদিত হল। নবযুগে যোগ দিয়ে শুরু হলো তার সাংবাদিক জীবন। নিয়মিত লিখছেন। কিন্তু ওই বছরই ‘মুহাজিরীন হত্যার জন্য দায়ী কে?’ শিরোনামে তার প্রবন্ধের জন্য পত্রিকাটির জামানত বাজেয়াপ্ত হল। নজরুলের ওপর শুরু হল পুলিশের নজরদারি। দমলেন না নজরুল। রাজনীতিক ও সাংবাদিকদের সংস্পর্শে এসে দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা নিবিড়ভাবে প্রত্যক্ষ করার সুযোগ হলো তার। ফলে নানা রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়লেন। বামপন্থি নেতা মুজফফর আহমদের সঙ্গে বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতির অফিসে বসবাস ও বন্ধুত্বের সুবাদে তার রাজনৈতিক চিন্তাধারায় প্রভাবিত হলেন নজরুল। মুজাফফর আহমদ ছিলেন এ দেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের অগ্রদূত। তার কাছ থেকেই নজরুলের রাজনৈতিক চেতনার বিকাশ শুরু হয়। মুজাফফর আহমদের সঙ্গে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক সভা-সমিতি ও বক্তৃতায় অংশ নেন। এ সময় নজরুল সমাজতান্ত্রিক আদর্শের সঙ্গে পরিচিত হন। উল্লেখ্য, ১৯২১ সালের সেপ্টেম্বরে মুজফফর আহমদ ও নজরুল তালতলা লেনের যে বাড়িতে ছিলেন, সে বাড়িতেই ভারতের প্রথম সমাজতান্ত্রিক দল গঠিত হয়। তবে কমরেড মুজফফর ঘনিষ্ঠ বন্ধু হওয়া সত্ত্বেও এই দলে যোগ দেননি নজরুল।

১৯১৭ সালের রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব তাকে প্রভাবিত করে। নতুন সমাজতান্ত্রিক সভ্যতার প্রতি তার আন্তরিক ঝোঁক ছিল প্রবল। ফলে তার লাঙ্গল ও গণবাণী পত্রিকায় প্রকাশ করেন সাম্যবাদী ও সর্বহারা কবিতাগুচ্ছ। এরই সঙ্গে প্রকাশ করেছিলেন কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনালের অনুবাদ জাগো অনশন বন্দী ওঠো রে যত...। শুধু ইন্টারন্যাশনালের অনুবাদ নয়, তিনি ‘শুদ্রের মাঝে যে রুদ্রের জাগরণ’ দেখেছেন তার তাৎপর্য ও গভীরতা সামান্য নয়। কারণ তিনি বলেছেন : স্বর্গ যে আজ জয় করেছে অত্যাচারী শক্তি চাড়াল। তার লেবার স্বরাজ পার্টি গঠন, তার কর্মসূচিতে কারখানা জাতীয়করণের বিধান, সর্বহারা শ্রমিক কুলি-মজুরদের নিয়ে কবিতা রচনা, বইয়ের নাম ‘সাম্যবাদী’ রাখা, সাম্রাজ্যবাদীদের ডাকাত পরের রাজ্য লুট করে খায়। ডাকাত ওরা ডাকাত নামে অভিহিত করা সবকিছু মিলে নজরুলের যে চরিত্র সৃষ্টি হয় তা সেকালের পক্ষে ছিল অভাবনীয়। লেনিন পুশকিনের কবিতা থেকে ‘ইস্ক্রা’ শব্দ নিয়ে পত্রিকার নামকরণ করেছিলেন। ইস্ক্রা মানে ‘স্ফুলিঙ্গ’। স্ফুলিঙ্গ থেকে দাবানলের সৃষ্টি হবে এই ছিল লেনিনের বিশ্বাস; হয়েছিলও তাই। নজরুল নিজের পত্রিকার নাম রেখেছিলেন ‘ধূমকেতু’; ইস্ক্রার খুব কাছাকাছি। নিতান্তই কি কাকতালীয় যোগাযোগ? তিনি যখন ধূমকেতু সম্পর্কে বলেন : ওই ধূমকেতু আর উল্কায় চায় সৃষ্টিটাকে উল্টাতে তখন তার মধ্যে একটা সূচিন্তিত যোগাযোগই আবিষ্কার করা যায়। তার পত্রিকায় প্রকাশিত হয় রেডফ্লাগের অবলম্বনে রচিত রক্তপতাকার গান। এ সময় সাম্যবাদী চেতনায় দীক্ষিত হন নজরুল। একই সঙ্গে তার কবিতা ও সংগীতচর্চাও চলে বিরামহীনভাবে।

উপমহাদেশের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামের কবি, সাংবাদিক ও রাজনৈতিক কর্মী নজরুল ১৯২২ সালের ১২ আগস্ট ধূমকেতু পত্রিকা প্রকাশ করেন। স্বরাজ গঠনে যে সশস্ত্র বিপ্লববাদের আবির্ভাব ঘটে, তাতে অর্ধ-সাপ্তাহিক ধূমকেতুর বিশেষ অবদান ছিল। এই পত্রিকাকে আশীর্বাদ করে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘কাজী নজরুল ইসলাম কল্যাণীয়েষু, আয় চলে আয়রে ধূমকেতু,আঁধারে বাঁধ অগ্নিসেতু, দুর্দিনের এই দুর্গশিরে, উড়িয়ে দে তোর বিজয় কেতন! অলক্ষণের তিলকরেখা, রাতের ভালে হোক না লেখা, জাগিয়ে দে-রে চমক মেরে, আছে যারা অর্ধ-চেতন।’ পত্রিকার প্রথম পাতার শীর্ষে এই বাণী লেখা থাকত সজ্জিত আকারে।

১৯২২ সংখ্যায় নজরুলের কবিতা ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ প্রকাশিত হয়। অক্টোবরে প্রকাশিত হয় অগ্নিবীণা কাব্য ও যুগবাণী প্রবন্ধ গ্রন্থ। আনন্দময়ীর আগমনে রাজনৈতিক কবিতা হওয়ায় ধূমকেতুর ৮ নভেম্বর সংখ্যা নিষিদ্ধ করে সরকার। ২৩ নভেম্বর বাজেয়াপ্ত করে যুগবাণী। ওই দিনই তাকে কুমিল্লায় গ্রেপ্তার করা হয়। নেওয়া হয় কলকাতায়। ১৯২৩ সালের ৭ জানুয়ারি নজরুল আত্মপক্ষ সমর্থন করে জবানবন্দি দেন। চিফ প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট সুইনহোর আদালতে প্রদত্ত ওই জবানবন্দি বাংলা সাহিত্যে ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’ নামে বিশেষ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত। ১৯২৩ সালের ২২ জানুয়ারি, আলিপুর জেলে বন্দি নজরুল। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ তার বসন্ত গীতিনাট্য গ্রন্থটি উৎসর্গ করলেন তাকে। লিখলেন, ‘শ্রীমান কবি নজরুল ইসলাম স্নেহভাজনেষু’। উল্লসিত নজরুল। জেলে বসে লিখলেন কবিতা, ‘আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে’। মে মাসে হুগলী জেলে নজরুল অনশন ধর্মঘট শুরু করলেন। রবীন্দ্রনাথ টেলিগ্রাম পাঠালেন। ডিসেম্বরে নজরুল কারামুক্ত হলেন। কিন্তু সরকার একের পর এক তার গ্রন্থ বাজেয়াপ্ত করতে থাকে। প্রকাশের পরপরই বাজেয়াপ্ত হয় বিশের বাঁশি, ভাঙার গান ও প্রলয়শিখা। প্রলয়শিখার জন্য প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট কবিকে ছয় মাসের সশ্রম কারাদ- দিলেন। হাইকোর্টে কবি জামিন পেলেন। পরে গান্ধী-আরউইন চুক্তির ফলে ‘সরকার পক্ষ আপত্তি না করায়’ তিনি পেলেন অব্যাহতি, পেলেন মুক্তি।

বস্তুতপক্ষে কাজী নজরুল ইসলাম প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী বাংলার তারুণ্যের প্রতিমূর্তি। বিশ শতকের প্রথম চার দশকের বাংলা সাহিত্যের অন্যতম পথিকৃৎ। ইউরোপ সম্পর্কে মোহভঙ্গ এবং ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামের বলিষ্ঠ কলম সৈনিক। নজরুলের কবিতা, গান, প্রবন্ধ ও বক্তব্য তৎকালীন পরাধীন ভারতের তরুণসমাজ তো বটেই, আজও বাংলার প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামকে অনুপ্রাণিত করে। কবি নজরুলের ভাবাদর্শ ও চিন্তা-চেতনায় পরিস্কার উপলব্ধি করা যায় যে, তিনি সত্যিকার অর্থে একজন সাম্যের কবি ছিলেন। যা তার সাহিত্যে প্রকাশ পায়। তার রাজনৈতিক দর্শনে ছিল অসাম্প্রদায়িক চেতনার উদ্ভব।


বিভাগ : সাহিত্য


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

জুলাই-আগস্টে গণহত্যা: হাসিনা-কামালের বিচার শুরুর আদেশ

জুলাই-আগস্টে গণহত্যা: হাসিনা-কামালের বিচার শুরুর আদেশ

আবারও ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, বেজে উঠল সাইরেন

আবারও ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, বেজে উঠল সাইরেন

অর্থকষ্টে ফর্ম ফিলাপ করতে না পারা শিক্ষার্থীর পাশে ইবি ছাত্রদল নেতা

অর্থকষ্টে ফর্ম ফিলাপ করতে না পারা শিক্ষার্থীর পাশে ইবি ছাত্রদল নেতা

১০০ বছর পূরণ করলেন আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার মাহাথির

১০০ বছর পূরণ করলেন আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার মাহাথির

শ্রমিক কল্যাণে বেক্সিমকো ফার্মার ৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকা অনুদান

শ্রমিক কল্যাণে বেক্সিমকো ফার্মার ৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকা অনুদান

দুমকীতে জেলা বিএনপির নবনির্বাচিত নের্তৃবৃন্দের সৌজন্যে সাক্ষাৎ

দুমকীতে জেলা বিএনপির নবনির্বাচিত নের্তৃবৃন্দের সৌজন্যে সাক্ষাৎ

বাবার চিকিৎসার জন্য গিয়ে ভারতীয়দের রোষানলে বাংলাদেশি যুবক! ভিডিও ভাইরাল

বাবার চিকিৎসার জন্য গিয়ে ভারতীয়দের রোষানলে বাংলাদেশি যুবক! ভিডিও ভাইরাল

ফরিদপুরে ডেঙ্গুসহ ঠাণ্ডাজনিত রোগী হাসপাতাল ঠাঁসা , রোগী সুস্থের ফল আপেল- মাল্টা - আঙুর বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে

ফরিদপুরে ডেঙ্গুসহ ঠাণ্ডাজনিত রোগী হাসপাতাল ঠাঁসা , রোগী সুস্থের ফল আপেল- মাল্টা - আঙুর বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে

আরও সাতটি দেশের পণ্যে নতুন পাল্টা শুল্ক আরোপ করলেন ট্রাম্প

আরও সাতটি দেশের পণ্যে নতুন পাল্টা শুল্ক আরোপ করলেন ট্রাম্প

ইয়েমেনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় হতচকিত ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র

ইয়েমেনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় হতচকিত ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্র

চিরিরবন্দরে ডাম্পট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে ইপিজেড কর্মী নিহত

চিরিরবন্দরে ডাম্পট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে ইপিজেড কর্মী নিহত

এবার সউদী আরবে সম্পত্তি কিনতে পারবে প্রবাসীরা

এবার সউদী আরবে সম্পত্তি কিনতে পারবে প্রবাসীরা

অবশেষে ২০ দিন পর খুলছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ

অবশেষে ২০ দিন পর খুলছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ

‘হাসিনাকে রক্ষা করা অনৈতিক’—ভারতের প্রতি প্রেস সচিবের কড়া বার্তা

‘হাসিনাকে রক্ষা করা অনৈতিক’—ভারতের প্রতি প্রেস সচিবের কড়া বার্তা

বকশীগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে নারীসহ সাত জনকে পুশইন

বকশীগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে নারীসহ সাত জনকে পুশইন

হাসিনার গুলির নির্দেশ: ফাঁস হওয়া অডিও যাচাইয়ের পদ্ধতি প্রকাশ করল বিবিসি

হাসিনার গুলির নির্দেশ: ফাঁস হওয়া অডিও যাচাইয়ের পদ্ধতি প্রকাশ করল বিবিসি

হাসিনাসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ আজ

হাসিনাসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ আজ

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের তিন দিনের শুল্ক আলোচনা শুরু

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের তিন দিনের শুল্ক আলোচনা শুরু

হাবিপ্রবিতে কর্মকর্তাদের মধ্য হতে রেজিস্ট্রার, পরিচালক নির্ধারিত পদে নিয়োগের দাবিতে কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি

হাবিপ্রবিতে কর্মকর্তাদের মধ্য হতে রেজিস্ট্রার, পরিচালক নির্ধারিত পদে নিয়োগের দাবিতে কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি

জুনিয়রদের সমকামিতায় বাধ্য করায় সাত ইসরায়েলি সেনা আটক

জুনিয়রদের সমকামিতায় বাধ্য করায় সাত ইসরায়েলি সেনা আটক