দলীয় বিবেচনায় দেয়া অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড সবাই বাতিল চায়
১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০১ এএম
ফ্যাসিবাদের দোসর, হত্যা মামলার আসামিসহ আরো অনেক সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে সাংবাদিক নামধারীদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করছে তথ্য অধিদফতর (পিআইডি)।
ইতোমধ্যে তিন দফায় মোট ১৬৭ জন সাংবাদিকের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল হয়েছে। পিআইডির তথ্য মতে, গত জুলাই বিপ্লবের পূর্ব পর্যন্ত অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দেয়া হয়েছে তিন হাজার ৮৫৭টি অর্থাৎ প্রায় চার হাজার। এর মধ্যে বাতিল হয়েছে মাত্র ১৬৭ জনের কার্ড। এ বিষয়টিকে কেউ কেউ সমালোচনা করছেন। আবার কেউ এ নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করছেন। তারা বলছেন, ঢালাওভাবে সাংবাদিকদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করা হচ্ছে। এতে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে। যদিও আমরা এখন পূর্ণস্বাধীনতা ভোগ করছি। তবে ঢালাওভাবে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিলের বিষয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ভুলবার্তা যাচ্ছে। অন্যদিকে সম্পাদক পরিষদ ১২ নভেম্বর এক বিবৃতিতে ঢালাওভাবে সাংবাদিকদের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এক বিবৃতিতে সম্পাদক পরিষদ বলেছে, অ্যাক্রিডিটেশন কার্ডের কোনো অপব্যবহার হলে তা রিভিউ করার অধিকার তথ্য মন্ত্রণালয় রাখে। তবে এভাবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ও অপরাধের প্রমাণ ছাড়াই ঢালাওভাবে প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিলের পদক্ষেপ সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য হুমকি ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিতের অন্তরায়।
তবে এ বিষয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, গণমাধ্যমের ওপর সরকারের কোনো চাপ নেই, এই স্বাধীনতা কাজে লাগিয়ে গণমাধ্যমকে সাহসের সঙ্গে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে হবে। যথাযথ প্রক্রিয়া মেনেই অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল হচ্ছে। তারপরও যদি প্রফেশনাল কারো কার্ড বাতিল হয়ে থাকে তাহলে সেটা রিভিউয়ের সুযোগ আছে।
তবে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড কমিটি ঢালাওভাবে কার্ড বাতিল হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে তা সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন। তারা বলছেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে এসব কার্ড বাতিল হয়েছে। এছাড়া প্রায় চার হাজার কার্ডের মধ্যে মাত্র ১৬৭ জনের কার্ড বাতিল হয়েছে। এটাকে ঢালাওভাবে বাতিল হচ্ছে এমনটা বলা মোটেও যুক্তিসঙ্গত নয়। এ বিষয়ে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড কমিটির সদস্য জিয়াউল কবির সুমন ইনকিলাবকে বলেন, ঢালাওভাবে কার্ড বাতিল হচ্ছে এটা মোটেও সত্য নয়। কারণ এখন পর্যন্ত প্রায় চার হাজার কার্ডের মধ্যে মাত্র ১৬৭ জনের কার্ড বাতিল হয়েছে। এর মধ্যে ২৮ জনের নামে হত্যা মামলা আছে। প্রায় ১০০ জনের মতো আছেন যাদের কার্ডের মেয়াদ আরো পাঁচ-ছয় বছর আগে শেষ হয়েছে। তারা আর রিনিউ করেননি। এ ছাড়া অনেকের অফিস থেকে আবেদন করে কার্ড বাতিল করা হয়েছে। কারণ তারা আগে প্রধানমন্ত্রী বিট বা সচিবালয় বিটে কাজ করতেন। এখন তাদের অন্য বিটে দেয়া হয়েছে। এজন্য তাদের আর অ্যাক্রিডিটিশন কার্ডের প্রয়োজন নেই। তাই যারা বলছেন ঢালাওভাবে কার্ড বাতিল করা হচ্ছে এটা সঠিক নয়। যথাযথ কারণেই কার্ড বাতিল করা হচ্ছে।
দীর্ঘ ১৬ বছর ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসন আমলে দেশের সংবাদপত্রের কোন স্বাধীনতা ছিল না। সাংবাদিকদের কণ্ঠ রোধ করতে আইসিটি অ্যাক্ট, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট এসব নামে কালাকনুন করে সাংবাদিকদের নিপীড়ন-নির্যাতন করা হয়েছে। তখন এক শ্রেণির দালাল সাংবাদিক ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের তোষণে লিপ্ত ছিল। তখন তারা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিয়ে কোন কথা বলেনি। আইসিটি অ্যাক্টে ২০১৪ সালে প্রথম মামলা করা হয় দৈনিক ইনকিলাবের সম্পাদক এ এম এম বাহাউদ্দীন, পত্রিকার বার্তা সম্পাদক, প্রধান প্রতিবেদক ও সংশ্লিষ্ট রিপোর্টারের নামে। এরপর অফিস থেকে বার্তা সম্পাদক রবিউল্লাহ রবি, তখনকার প্রধান প্রতিবেদক রফিক মুহাম্মদ ও রিপোর্টার আহমদ আতিককে ডিবি গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। ইনকিলাব অফিসের প্রেসে তালা লাগিয়ে দেয়া হয়। সম্পাদকের বাসায় হামলা-ভাঙচুর করা হয়। বিগত সরকারের সময় ইনকিলাবের ২৮টি কার্ডে মধ্যে ২০টি বাতিল করা হয়। এ রকম আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে অফিস থেকে গ্রেফতার করা হয়। আমার দেশ পত্রিকার প্রেস বন্ধ করে দেয়া হয়। আমার দেশের রিপোর্টার অলিউল্লাহ নোমানকে প্রাণ বাঁচাতে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়। এ রকম দেশ ছেড়েছেন অ আরো অনেক সাংবাদিক। সিনিয়র সাংবাদিক দৈনিক যায়যায় দিনের সম্পাদক শফিক রেহমানকে দেশ ছেড়ে যেতে হয়েছে। দৈনিক সংগ্রামের প্রবীণ সম্পাদক আবুল আসাদকে অফিস থেকে গ্রেফতার করা হয়। এ রকম সাংবাদিক নির্যাতনের আরো বহু ঘটনা ঘটেছে, তখন এ নিয়ে কেউ কোনো কথা বলতে পারেনি বা বলেনি। দৈনিক দিনকাল পত্রিকা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। দিগন্ত টিভি, চ্যানেল ওয়ান, ইসলামী টিভিসহ আরো অনেক মিডিয়া বন্ধ করা হয়েছে। দৈনিক সংগ্রাম, নয়া দিগন্ত, দিনকাল, ইনকিলাব এসব পত্রিকার বেশির ভাগ অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করা হয়েছে। তখন কেই কোনো কথা বলেনি। আর এখন কয়েকজনের কার্ড বাতিল হওয়াতেই সমালোচনা শুরু হয়েছে।
এ বিষয়ে দৈনিক দিনকালের বার্তা সম্পাদক রাশেদুল হক ইনকিলাবকে বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার আগে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড ছিল মাত্র হাজার থেকে বার শ’-এর মতো। আর এখন এই কার্ডের সংখ্যা হয়েছে প্রায় চার হাজার। এরা সবাই কি সাংবাদিক? ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমলে যুবলীগ, ছাত্রলীগের কর্মীদের ঢালাওভাবে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দেয়া হয়েছে। তারা এ কার্ড দিয়ে সচিবালয়ে ঢুকে তখন তদবির করেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের মালিকরা তাদের ছেলে, মেয়ে, স্ত্রী, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার তাদের নামে কার্ড নিয়েছে। এসব এখন ভালভাবে তদন্ত করে বাতিল করতে হবে। ছাত্রলীগ, যুবলীগের যে সব নেতাদের কার্ড দেয়া হয়েছে তারা এসব ব্যবহার করে সচিবালয়ে ঢুকে যেকোনো অঘটন ঘটাতে পারে। তাই সরকারকে এসব বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রফেশনাল সাংবাদিক যারা তাদের কার্ডের বিষয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু স্বৈরাচার হাসিনার দোসর যারা তাদের কার্ড অবশ্যই বাতিল করতে হবে। তা না হলে জুলাই বিপ্লবের চেতনার সাথে বেঈমানি করা হবে।
এ ব্যাপারে দৈনিক সংগ্রামের চিফ রিপোর্টার শামসুল আরেফিন ইনকিলাবকে বলেন, বিগত সরকারের আমলে আমাদের পত্রিকার অনেক কার্ড বাতিল করা হয়েছে। সে সরকার দলীয় বিবেচনায় অনেককে কার্ড দিয়েছে। এসব কার্ড অবশ্যই বাতিল হওয়া উচিত। তবে পেশাদার সাংবাদিক যারা তাদের কার্ড যেন বাতিল না হয় সে বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
নাটকীয় শেষ দশ মিনিটে দুই গোল শোধ করে বার্সাকে রুখে দিল সেল্তা
বিবর্ণ সিটিকে ইতিহাদেই বিধ্বস্ত করলো টটেনহ্যাম
নটিংহ্যামকে হারিয়ে চার ম্যাচের জয়খরা কাটালো আর্সেনাল
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের দাবী অত্যন্ত যৌক্তিক
পাঠ্যবই ছাপায় অনিয়মে আনন্দ প্রিন্টার্সকে সতর্কতা
দক্ষিণ লেবাননে ৬ চিকিৎসাকর্মী নিহত
জনগণের সাথে জনসংযোগ বাড়াতে হবে
আমরা যুদ্ধে বিশ্বাসী না কেউ গায়ে পড়লে জবাবের প্রস্তুতি রাখতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথের কাছে ২৭ রেফারির চিঠি
ফের বাড়লো সোনার দাম, ভরি ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা
বাংলাদেশে খেলা নিয়ে অনিশ্চিয়তায় হামজা!
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই হবে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফের খেলা
সিলেটে মাজিদের ফিফটি
অ্যাম্বাসেডর কাপ উশুতে সেনাবাহিনী চ্যাম্পিয়ন
মাদক শুধু ব্যক্তিকে নয় পরিবারকেও ধ্বংস করে
সাধারণ মানুষের পেটে লাথি মেরে আ.লীগ নিজেদের ভাগ্য গড়েছে : এমরান সালেহ প্রিন্স
ধর্মদ্রোহী সরকারের সময় কোনো ধর্মই নিরাপদ ছিল না
দৌলতখানে শীতকালীন সবজি পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক
সুন্দরগঞ্জে ছয় পা বিশিষ্ট বাছুরের জন্ম
বৈষম্যের শিকার কুমিল্লার ১৫ হাজার এতিম শিশু