ঢাকা   রোববার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ | ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
পঙ্গু হাসপাতালে তোপের মুখে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা

হুইল চেয়ারে রাস্তায় দীর্ঘ অপেক্ষা

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০১ এএম

জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) চিকিৎসা নেওয়া আহতরা হাসপাতালটির সামনের রাস্তায় অবস্থান করেন। এদের কেউ আছেন হুইল চেয়ারে, আবার কেউ ভাঙা পা নিয়েই একটা চেয়ার পেতে বসে আছেন। তাদের ভাষ্য উপদেষ্টারা না আসা পর্যন্ত রাস্তা ছাড়বেন না এবং হাসপাতালের ভেতরে ফিরেও যাবেন না।

গতকাল বুধবার দুপুর সোয়া ১টার দিকে নিটোরের সামনের রাস্তা বন্ধ করেন আহতরা। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত প্রায় ৬ ঘণ্টা ধরে তারা রাস্তায় অবস্থান করছেন। আগারগাঁও থেকে শ্যামলী ও শ্যামলী-আগারগাঁও উভয়মুখী সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ সড়কে তারা অবস্থান নিয়েছেন। ফলে এ সড়কের নিটোরের অংশ দিয়ে জরুরি সেবার গাড়ি ছাড়া অন্য কোনো গাড়ি যাতায়াত করতে পারছে না।

এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক ও স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম নিটোর পরিদর্শনে যান। তারা চতুর্থ তলার পুরুষ ওয়ার্ডে এক ঘণ্টারও বেশি সময় নিয়ে ঘুরে দেখেন। সেখানে ছিলেন জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের একাংশের আহতরা, বাকিরা ছিলেন তৃতীয় তলায়। কিন্তু তৃতীয় তলার ওয়ার্ডে থাকা আহতদের দেখতে না যাওয়ায় সেখানে থাকা আহতরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা নিচে এসে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি গাড়ি আটকে দেন। ধরনা করা হচ্ছিল গাড়িটি স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম ব্যবহার করতেন। কিন্তু পরিস্থিতি বেগতিক দেখে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ব্রিটিশ হাইকমিশনারের গাড়িতে উঠে হাসপাতাল ত্যাগ করেন। তবে বিষয়টি ধরতে পারেননি আহতরা। তারা আগের গাড়িটি ও পুলিশের একটি প্রোটোকল গাড়ি আটকে দেন। এরপর তারা দুপুর সোয়া ১টার পর রাস্তায় আসেন।

কিন্তু সেসময় শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশ সদস্যরা বিষয়টি সামাল দিতে পারেননি। পরে র‌্যাব-২ এর সদস্যরাও ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তারপর দুপুর ২টা ২০ মিনিটের দিকে সেনাবাহিনীর পাঁচটি ইউনিট হাজির হয়। কিন্তু কোনো বাহিনীর সদস্যরাই আহত আন্দোলনকারীদের থামাতে পারেননি। পরে ধীরে ধীরে সবাই চলে যান। বর্তমানে কিছু পুলিশ সদস্য সেখানে মোতায়েন করা আছে।

রাস্তায় অবস্থান নেয়া আহত শিক্ষার্থী মো. হাসান বলেন, আমাদের এক একটা ওয়ার্ডে ৪৮ জন মানুষ আছে। কিন্তু উনারা উনাদের পছন্দের বিদেশি পাঁচজন সাংবাদিক নিয়ে এসেছেন এবং আমাদের দেশীয় সাংবাদিকদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তারা দু’একজনের সঙ্গে কথা বলে চলে গেছেন। কিন্তু আমাদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। আমরা কথা বলতে গেলেও আমাদের বাধা দেওয়া হয়েছে। আমাদেরকে সামান্য ট্রিটমেন্ট দিয়ে তিন মাস বসিয়ে রাখা হয়েছে। আমার পায়ে নয়টি অপারেশন করা হয়েছে, তারপরও এখন পর্যন্ত সুস্থ হতে পারিনি। আমাদেরকে অপারেশনে শুধু নিয়ে যায়। আমরা চাই তারা আমাদের সঙ্গে কথা বলুক। আমাদের জন্য ঘোষণা করা সেই এক লাখ টাকা দিক এবং ভালো মানের চিকিৎসা দিক।

প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম জুলাই-আগস্টে আন্দোলনে আহত ব্যক্তিদের খোঁজখবর নিতে পঙ্গু হাসপাতালে যান। তিনি আহত কয়েকজনের খোঁজখবর নিয়ে হাসপাতালের পরিচালক ও চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর বেরিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে যান। ততক্ষণে সেখানে আহত ব্যক্তিরা ভিড় করেন। তাঁদের সরে যেতে বললে আহত ব্যক্তিরা উপদেষ্টার গাড়ির সামনে পথ আটকে দাঁড়ান। কেউ গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েন। তাঁদের মধ্যে দু-একজনকে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার গাড়ির ওপরে উঠতে দেখা যায়। তারা স্বাস্থ্য উপদেষ্টার গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ করেন।

পঙ্গু হাসপাতালে জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে আহত ৮৪ জন এখনো চিকিৎসাধীন বলে হাসপাতালের একটি সূত্র জানিয়েছেন।
আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে হুইলচেয়ারে বসে আহত মো. মাসুম বলেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা এসে তাঁদের সঙ্গে দেখা না করা পর্যন্ত তারা রাস্তা ছাড়বেন না। তিন মাস পর হাসপাতালে এলেও তিনি তাঁদের উপেক্ষা করেছেন।
মো. মাসুম বলেন, আমাদের রক্তের ওপর দিয়ে তিনি উপদেষ্টা হয়েছেন। জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে এক লাখ টাকা করে দেওয়ার কথা থাকলেও এখনো বেশির ভাগই তা হাতে পাননি।

জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট থেকে এসে বিক্ষোভে যোগ দেওয়া আল মিরাজ নামের এক ছাত্র জানান, তার ডান চোখের রেটিনা ছিঁড়ে গেছে। চিকিৎসকেরা বলেছেন, দেশে তার চিকিৎসা নেই। তাই তাঁকে বিদেশে পাঠিয়ে চিকিৎসা করিয়ে আনতে সরকারের কাছে দাবি জানান। মিরাজ বলেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা পঙ্গু হাসপাতালে আহত ব্যক্তিদের খোঁজ নিতে এলেও তিনি আজ চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন চোখে পাওয়া ব্যক্তিদের খোঁজ নিতে যাননি।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের দাবী অত্যন্ত যৌক্তিক
পাঠ্যবই ছাপায় অনিয়মে আনন্দ প্রিন্টার্সকে সতর্কতা
জনগণের সাথে জনসংযোগ বাড়াতে হবে
আমরা যুদ্ধে বিশ্বাসী না কেউ গায়ে পড়লে জবাবের প্রস্তুতি রাখতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
ফের বাড়লো সোনার দাম, ভরি ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা
আরও

আরও পড়ুন

নটিংহ্যামকে হারিয়ে চার ম্যাচের জয়খরা কাটালো আর্সেনাল

নটিংহ্যামকে হারিয়ে চার ম্যাচের জয়খরা কাটালো আর্সেনাল

স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের দাবী অত্যন্ত যৌক্তিক

স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের দাবী অত্যন্ত যৌক্তিক

পাঠ্যবই ছাপায় অনিয়মে আনন্দ প্রিন্টার্সকে সতর্কতা

পাঠ্যবই ছাপায় অনিয়মে আনন্দ প্রিন্টার্সকে সতর্কতা

দক্ষিণ লেবাননে ৬ চিকিৎসাকর্মী নিহত

দক্ষিণ লেবাননে ৬ চিকিৎসাকর্মী নিহত

জনগণের সাথে জনসংযোগ বাড়াতে হবে

জনগণের সাথে জনসংযোগ বাড়াতে হবে

আমরা যুদ্ধে বিশ্বাসী না কেউ গায়ে পড়লে জবাবের প্রস্তুতি রাখতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

আমরা যুদ্ধে বিশ্বাসী না কেউ গায়ে পড়লে জবাবের প্রস্তুতি রাখতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথের কাছে ২৭ রেফারির চিঠি

বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথের কাছে ২৭ রেফারির চিঠি

ফের বাড়লো সোনার দাম, ভরি ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা

ফের বাড়লো সোনার দাম, ভরি ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা

বাংলাদেশে খেলা নিয়ে অনিশ্চিয়তায় হামজা!

বাংলাদেশে খেলা নিয়ে অনিশ্চিয়তায় হামজা!

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই হবে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফের খেলা

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই হবে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফের খেলা

সিলেটে মাজিদের ফিফটি

সিলেটে মাজিদের ফিফটি

অ্যাম্বাসেডর কাপ উশুতে সেনাবাহিনী চ্যাম্পিয়ন

অ্যাম্বাসেডর কাপ উশুতে সেনাবাহিনী চ্যাম্পিয়ন

মাদক শুধু ব্যক্তিকে নয় পরিবারকেও ধ্বংস করে

মাদক শুধু ব্যক্তিকে নয় পরিবারকেও ধ্বংস করে

সাধারণ মানুষের পেটে লাথি মেরে আ.লীগ নিজেদের ভাগ্য গড়েছে : এমরান সালেহ প্রিন্স

সাধারণ মানুষের পেটে লাথি মেরে আ.লীগ নিজেদের ভাগ্য গড়েছে : এমরান সালেহ প্রিন্স

ধর্মদ্রোহী সরকারের সময় কোনো ধর্মই নিরাপদ ছিল না

ধর্মদ্রোহী সরকারের সময় কোনো ধর্মই নিরাপদ ছিল না

দৌলতখানে শীতকালীন সবজি পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক

দৌলতখানে শীতকালীন সবজি পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক

সুন্দরগঞ্জে ছয় পা বিশিষ্ট বাছুরের জন্ম

সুন্দরগঞ্জে ছয় পা বিশিষ্ট বাছুরের জন্ম

বৈষম্যের শিকার কুমিল্লার ১৫ হাজার এতিম শিশু

বৈষম্যের শিকার কুমিল্লার ১৫ হাজার এতিম শিশু

দালালচক্রে জিম্মি রোগীরা

দালালচক্রে জিম্মি রোগীরা

ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকোই সাটুরিয়ার শিশু শিক্ষার্থীদের ভরসা

ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকোই সাটুরিয়ার শিশু শিক্ষার্থীদের ভরসা