যশোরে কিশোর গ্যাং প্রকাশ্যে
১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম
যশোরে বেপরোয়া চাঁদাবাজি, হত্যা, চুরি-ছিনতাই ও ডাকাতির মতো অপরাধে জড়িত কিশোর গ্যাং। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তথ্যমতে-যশোর বড়বাজার, শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন মহল্লায় ৪০টি কিশোর গ্যাং সক্রিয় রয়েছে। রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর অপরাধ দমনে যৌথবাহিনী দেশজুড়ে অভিযান চালাচ্ছে। যশোরে কিছু মাদক কারবারী, খুনি ও অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। তবে এখনো পর্যন্ত কথিত ‘বড়ভাই’রা রয়েছেন ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। তারা আন্ডারগ্রাউন্ডে থেকেও ‘অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণ করছে-এমন তথ্য মিলেছে গোয়েন্দা সূত্রে। ভুক্তভোগী মহলের অভিযোগ যৌথবাহিনীর অভিযান চলমান থাকলেও অপরাধীরা বহালতবিয়তে চাঁদাবাজি করছে। বড়বাজার থেকে শুরু করে শহরের এমন কোনো পাড়া-মহল্লা নেই, যেখানে কিশোর গ্যাং চাঁদাবাজি করছে না। এসব অপরাধীদের দলে নতুন নতুন মুখ দেখা যাচ্ছে। যারা পতিত সরকারের আমলে পলাতক ছিলেন তারাও প্রকাশ্যে নানা অপরাধ কর্মকাণ্ডে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে। ভুক্তভোগী মহল থেকে অভিযোগ আসছে। তাদের অভিযোগ থানায় অভিযোগ দেয়া হচ্ছে কিন্তু দৃশ্যমান কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না পুলিশের। সচেতন মহল আক্ষেপ, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অপরাধ নির্মূলের আভাস পাচ্ছিলাম। যৌথবাহিনী অভিযানও পরিচালনা করছে কিন্তু অপরাধ নির্মূলের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। দেদারছে চাঁদাবাজি হচ্ছে। বিকাশে চাঁদা নেয়ার অভিযোগও পাওয়া যাচ্ছে। কিশোর গ্যাং দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সারা শহরে। যেকারণে ভয়ে মানুষ টু-শব্দ করতে পারছে না।
বিভিন্ন মহল ও গোয়েন্দা সূত্রে পাওয়া তথ্যমতে, মাদক-অস্ত্র কারবারী, চাঁদাবাজি ও খুন-খারারির নেতৃত্ব দিচ্ছে বহুল আলোচিত ‘গডফাদার’রা চক্র। তারা ভারতে পালিয়েছে ‘প্রচার দিয়ে আন্ডারগ্রাউন্ডে থেকে অপরাধ জগত নিয়ন্ত্রণ করছে। কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা তাদের আশ্রয়-প্রশয়দাতা কথিত বড়ভাইদের নির্দেশে বড়বাজারসহ বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় চাঁদাবাজি, খুন-খারাবি, হত্যা ও হত্যার হুমকি দেয়াসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে যাচ্ছে। ভুক্তভোগীদের অনেকে থানা পুলিশের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। তবে থানা পুলিশ এসব নিয়ে নিরব ভূমিকায় রয়েছে। ডিবি পুলিশের কিছু তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। যৌথবাহিনীর অভিযানে এখন পর্যন্ত ‘গডফাদারদের কেউ গ্রেফতার হয়নি।
এরমধ্যে যশোর শহরতলী খড়কি-খোলাডাঙ্গায় অন্তত ৩ জনকে খুন করা হয়েছে। এসব হত্যায় জড়িত কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশ। ক্লুলেস মামলার আসামিদের গ্রেফতারে কাজ করছে পিবিআই। র্যাব আগের মতো বড় ধরনের সাফল্য দেখাতে পারছে না- এমন অভিযোগ বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার ভুক্তভোগীদের। তাদের অভিযোগ-কথিত বড়ভাইরা আত্মগোপনে থাকলেও তাদের কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারা আগের মতোই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটাচ্ছে। ভুক্তভোগীরা যৌথবাহিনীর ক্যাম্পে যাওয়ার সাহস পাচ্ছে না। তাদের ভয় কোনো রকম নাম ফাঁস হলে সন্ত্রাসীদের হাত থেকে বেঁচে ফেরা যাবে না।
থানা পুলিশের তথ্যানুযায়ী, যশোর বড়বাজার, শহর ও শহরতলীর বিভিন্ন মহল্লায় অন্তত ৪০টি কিশোর গ্যাং সক্রিয় রয়েছে। একেকটি গ্রুপে অন্তত ৮ থেকে ১৬ জন করে সদস্য রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। এমনকি কোনো কোনো এলাকায় একই সঙ্গে ৩/৪টি গ্রুপও তৎপরতা চালাচ্ছে। আর এসব গ্রুপের সঙ্গে জড়িতদের বয়স ১৪ থেকে ২১ বছর বয়সের মধ্যে। সরকার পরিবর্তনের পর অপরাধীদের পাল্লা আরো ভারী হয়েছে। তবে সবাই নজরদারীর ভেতর রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, যশোর শহরের বড়বাজার, রেলবাজার, বেজপাড়া, শংকরপুর, বকচর, খড়কি-খোলাডাঙ্গা, চাঁচড়া, রেলগেট, তুলোতলা, ভাতুড়িয়া, শংকরপুর বাস টার্মিনাল, রেল রোড, মুজিব সড়ক, ষষ্টিতলাড়া, মুজিব সড়ক বাইলেন, মণিহার, উপশহর, পালবাড়ি, ধর্মতলা, রেল স্টেশন, বিরামপুর, নীলগঞ্জ, সিটি কলেজপাড়া, বারান্দিপাড়া, খড়কি কলাবাগান, পুলেরহাট, বিরামপুর, হামিদপুর, তেঁতুলতলা ও শেখহাটিতে গ্রুপ ভিত্তিক কিশোর অপরাধীর তৎপরতার অভিযোগ বেশি পাওয়া যাচ্ছে।
এরবাইরে শহরতলীর ঝুমঝুমপুর, হামিদপুর, ঝাউদিয়া, চুড়ামনকাটি, হাসিমপুর, সুজলপুর, ভেকুটিয়া, ইছালী, কিসমত নওয়াপাড়া, এনায়েতপুরে আরো কয়েকটি গ্রুপ দেশি অস্ত্র চাকু নিয়ে সরব হয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব এলাকাসহ অর্ধশত স্থানে কিশোররা গ্রুপ তৈরি করেছে। সন্ত্রাসী চক্রের উঠতি সদস্যদের সাথে যুক্ত হচ্ছে এসব কিশোররা।
পুলিশ বলছে, গত বছর ও চলতি বছরে যশোর টিবি ক্লিনিক পাড়ার সোলাইমান, সুজলপুরের ইরিয়ান, শংকরপুরের আফজাল হোসেন, কলেজছাত্র সুলতানপুরের আব্দুল্লাহ, শংকরপুরের টুনি শাওন, উপশহরের এহসানুল হক ইমু, শংকরপুরে বিএনপি নেতা বদিউজ্জামান ধনি, খালধার রোডের পন্ডিত পুকুরপাড়ের হাবিবুর রহমান হবির ছেলে অনুরাগ ইসলাম অপু ওরফে আশিকুর ইসলাম অপু, শংকরপুরে আশ্রম রোডের ধনাঢ্য রোশনি বেগম হত্যাকান্ড এবং চাঁচড়া বর্মণপাড়া শ্মশান ঘেঁষা খালে ফেলে রনি হত্যাকাণ্ডের মতো চাঞ্চল্যকর ঘটনার সঙ্গে কিশোর গ্যাং জড়িত।
সর্বশেষ খড়কি খোলাডাঙ্গায় আসাদুল ও সজলসহ ৩ জন খুন হয়েছে। এরমধ্যে কয়েকজনকে আটক করা সম্ভব হয়েছে। বেজপাড়া সাদেক দারোগার মোড়ে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আসাদ, খড়কি ধোপাপাড়ার ইরফান ফরাজী, বারান্দিপাড়ার কিশোর নাহিদ ও ঘুরুলিয়ার ইউনুছ হত্যাকাণ্ডেও কিশোর গ্যাংয়ের সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের ভেতরেই ৩ বন্দি কিশোরকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে।
যশোর থানা ও জেলা পুলিশের মিডিয়া সেল ও র্যাব জানায়, এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলো ছাড়াও যশোর শহর ও শহরতলীর অর্ধশত স্পটে অভিযান চালিয়ে কিশোর সন্ত্রাসীদের আটক করেছে ডিবি ও পিবিআই।
বকচরের চাঞ্চল্যকর রাকিব সরদার হত্যাকান্ডের ঘটনায় বকচর, শংকরপুর, সিটি কলেজ পাড়াসহ আরো কয়েকটি এলাকার কিশোর গ্যাংএর ৯ সদস্যকে আটক করে র্যাব-৬।
এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাদক, দারিদ্রতা, পারিবারিক সংকট, সামাজিক অস্থিরতা, রাজনৈতিক আশ্রয়ের মতো ঘটনাগুলো কিশোর অপরাধের পেছনে কাজ করছে।
কিশোরদের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার পেছনে কথিত বড়ভাইরা অনেকাংশে দায়ি। তারা কিশোর পরিবারগুলো দরিদ্রতা, সামাজিকও পারিবারিক সমস্যাকে কাজে লাগিয়ে আধিপত্য বিস্তার করেছেন। এখনো তারা আত্মগোপনে থেকে তাদের মাদক-অস্ত্র বেচাবিক্রির কারবার পরিচালনার পাশাপাশি চাঁদাবাজি ও খুন-জখমের নির্দেশ দিচ্ছে বলে বিভিন্ন মহল সূত্রে খবর আসছে।
ভুক্তভোগী মহলের দাবি-কথিত বড় ভাইরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকলেও তাদের আশ্রয়-প্রশয়ে এখনো কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে খুন-জখম করছে। যৌথবাহিনীর অভিযান চলমান রয়েছে কিন্তু কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা এলাকা ছাড়েনি। তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়ার সাহস অনেকেরই নেই। একারণে সাড়াশী অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার ও অস্ত্র উদ্ধার করা জরুরী। অন্যত্থায় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সুফল মানুষ পাবে না। এক্ষেত্রে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা বাজার থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লায় অপরাধ নির্মূলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তাদেরও এগিয়ে আসার দাবি ভুক্তভোগী মহলের। ##
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
গণতন্ত্রের মোড়কে বাকশাল কায়েম করতে চেয়েছিলেন শেখ হাসিনা: জোনায়েদ সাকি
নির্বাচনের মাধ্যমে জাতীয় সরকার চায় - মাওলানা এবিএম জাকারিয়া
বৈশ্বিক নিরাপত্তা ইস্যুতে ট্রাম্পের সঙ্গে ন্যাটো প্রধানের বৈঠক
রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
অর্থবহ সংস্কারের আগে নির্বাচন নয় -প্রিন্সিপাল মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী
শেখ হাসিনা বাংলাদেশের বৈধ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন না
অপরিকল্পিত বাধ-রাস্তা নির্মাণে মাছের বিচরণ ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি হয়েছে: প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা
সাটুরিয়ায় তেলের পাম্পে ভয়াবহ আগুন
নির্বাচনব্যবস্থা আমূল পুনর্গঠনের তাগিদ রাষ্ট্রচিন্তাবিদদের
কর্মস্থলে অনুপস্থিত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা
ডেঙ্গুতে ১০ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ৮৮৬
রাজশাহীর বাঘায় আম বাগানে যুবকের লাশ
মতামত গ্রহণে ওয়েবসাইট চালু করেছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন
ওরেশনিক সমগ্র ইউরোপে হামলা করতে পারে: রুশ কমান্ডার
দানে পাওয়া কাপড়ের মনোরম ডিজাইনে ভাইরাল ভারতীয় একদল ডিজাইনার
কেমন হল ভিভো ভি৪০ লাইটের অভিজ্ঞতা!
তাদের রাজনীতি করতে দেবে কি-না তা দেশের মানুষই সিদ্ধান্ত নেবে: জামায়াতে সেক্রেটারি
উত্তরায় হাসপাতালে সন্ত্রাসী হামলাও লুটপাটের ঘটনায় থানায় মামলা
পাকিস্তানে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় নিহত ৩২
আল্লাহকে পেতে হলে রাসুলের পথ অনুসরণ অপরিহার্য: মাওলানা রুহুল আমিন খান