আন্তবর্তীকালীন সরকারের সময় বিগত আওয়ামী সরকারের আমলের বড় দুর্নীতিবাজ মাফিয়াদের রক্ষায় মরিয়া একাধিক প্রভাবশালী কুচক্র। এ চক্রগুলোর সাথে সম্পৃক্ত হয়ে কাজ করছেন কতিপয় সাবেক চরম দুর্নীতিবাজ সেনা কর্মকর্তা, আওয়ামী নেতা ও দুদকের কতিপয় অসৎ কর্মকর্তা। দুদকের চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ্য, দেশপ্রেমিক ও সৎ কর্মকর্তাদের ঠেকাতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নেমেছে কুচক্রের সদস্যরা। আর এ জন্যই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ২২ জন সামরিক কর্মকর্তার পাসপোর্ট বাতিলের চিঠি ইস্যু করা হয়েছে এবং এসব কর্মকর্তার মধ্যে অতি সৎ, যোগ্য, দেশপ্রেমিক ও কঠোরভাবে দুর্নীতিবাজ দমনে কাজ করার ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য সাবেক সেনা কর্মকর্তা লে. জেনারেল মতিউর রহমান জুয়েলের নাম আনা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ২২ জন সামরিক কর্মকর্তার পাসপোর্ট বাতিলের চিঠি ইস্যু করা হলেও একজন সেনা কর্মকর্তাকে টার্গেট করে বেশ তড়িঘড়ি করে এই চিঠিটি ইস্যু করতে অন্যায় প্রভাব খাটিয়েছেন বহু অপকর্মের সাথে জড়িত সাবেক একজন লে. জেনারেল। একই সাথে গণমাধ্যমে মিথ্যা তথ্য দিয়েও সংবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে সাবেক সেনা কর্মকর্তা লে. জেনারেল মতিউর রহমান সম্পর্কে।

সামরিক বিশেষজ্ঞ ও দুর্নীতি নিয়ে কাজ করেছেন এমন দু’জন সাবেক সেনা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইনকিলাবকে বলেন, বর্তমান আন্তবর্তীকালীন সরকার বিগত আওয়ামী শাসন আমলের চরম দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে বিশ্বের কাছে রোল মডেল হতে পারে। এ জন্য দুদকের মতো প্রতিষ্ঠানে সৎ, যোগ্য, দেশপ্রেমিক ও কঠোরভাবে দুর্নীতিবাজ দমনে কাজ করার ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে চেয়ারম্যান হিসেবে পদায়ন অতি জরুরি। বর্তমান সরকারের বয়স ১০০ দিনের বেশি হলেও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ভুয়া মামলা এখনো প্রত্যাহার করা হয়নি। কোটি মানুষের প্রাণের নেতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মামলাও শেষ করা হয়নি। অন্যদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতা, এমপি-মন্ত্রী, সরকারি আমলা ও ব্যবসায়ীদের শত শত কোটি টাকা বিদেশে পাচার বা দুর্নীতির কোনো তদন্তের উদ্যোগ নেই দুদকের। এমনকি দুদকের কতিপয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও অনেক সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। যা তদন্ত করা অতি জরুরি। লে. জেনারেল মতিউর রহমানের মতো সাবেক সেনা কর্মকর্তা দুদকের মতো প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নিলে দুর্নীতিবাজ চক্রের ঘুম হারাম হবে এবং দুর্নীতি দমনের মাধ্যমে বর্তমান সরকারের ইমেজ বিশ্বে উজ্জ্বল হবে বলে কুচক্র এ ধরনের কাজ করছে বলে ওই কর্মকর্তারা মন্তব্য করেন।

একাধিক সূত্র জানিয়েছে, অসাধারণ একজন মানুষ হিসেবে পুরো সেনাবাহিনীতে সমাদৃত কমান্ডো লে. জেনারেল মতিউর রহমান জুয়েল। তার মতো একজন সৈনিককে সম্মান করতে পারাটা হবে দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নেয়া। অতিসাহসী, চৌকস ও সৎ এই সেনা কর্মকর্তার যোগ্যতাকে মূল্যায়ন করা হলে দেশ এগিয়ে যাবে। এ ধরনের একজন সত্যিকার দেশপ্রেমিক ও যোগ্য কর্মকর্তাকে এ দেশের সাধারণ মানুষ অবশ্যই মূল্যায়ন করবে। এ দেশকে এগিয়ে নিতে হলে তার মতো বহু গুণের অধিকারী ব্যক্তিদের খুঁজে দেশসেবায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিতে হবে। যারা এ জাতিকে নেতৃত্ব দেয়ার দায়িত্বে রয়েছেন তাদের উচিত এ ধরনের মানুষদের খুঁজে বের করে সরকার পরিচালনায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেয়া।

সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ২২ জন সামরিক কর্মকর্তার পাসপোর্ট বাতিলের চিঠি ইস্যুর কারণ জানা গেছে। মূলত একজন সেনা কর্মকর্তাকে টার্গেট করে বেশ তড়িঘড়ি করে এই চিঠিটি ইস্যু করতে অন্যায় প্রভাব খাটিয়েছেন বহু অপকর্মের সাথে জড়িত সাবেক একজন লে. জেনারেল। আর নেপথ্যে মূল কলকাঠি নেড়েছেন অতি জনপ্রিয় একজন সাবেক সেনাপ্রধান। এই ঘটনার পেছনে রয়েছে দুটি কারণ, অত্যন্ত স্পর্শকাতর সব দুর্নীতির তথ্য যেন প্রকাশ না পায় এবং আওয়ামী রেজিমের দুর্নীতি রাজ্যের গেটকিপার হিসেবে সাবেক ওই সেনাপ্রধান নিজেই দুদক চেয়ারম্যান হওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন।

বিগত সরকারের সময় হাতেগোনা যে কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তা নিজ যোগ্যতার বলে মেজর জেনারেল গণ্ডি পেরিয়ে লে. জেনারেল পদবি পর্যন্ত পৌঁছাতে পেরেছিলেন, তাদের অন্যতম ছিলেন এস এম মতিউর রহমান। এই সামরিক কর্মকর্তা নিজ বাহিনীর অতি গুরুত্বপূর্ণ সব পদে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। র‌্যাবে থাকার সময় অধিকাংশ সময় তিনি অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রশাসন ছিলেন। ডিজিএফআইতে থাকাকালীন তার আমলে আয়নাঘর নামে কিছু ছিল না বলে জানা যায়। ২০২০ সালে তাকে আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ডের জিওসি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ২০২২ সালের প্রথম দিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার বিশেষ একটি অনৈতিক অনুরোধ রক্ষা না করায় শাস্তি হিসেবে তার চাকরি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়। যদিও রাষ্ট্রদূত হিসেবে পদায়ন করা হয় কিন্তু ২০২২ এর জুলাই থেকে এই কর্মকর্তা এক প্রকারের ওএসডি হয়েই ছিলেন। তার ছিল না কোনো কার্যালয়, ভারতবিরোধী হওয়ায় দূরে রাখা হয় সব সেনাবাহিনী সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ড থেকে। একরকম গৃহবন্দি অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করেছেন আওয়ামী রেজিমের শেষ তিনটি বছর।

একটি সূত্র দাবি করেছে, শেখ হাসিনা সরকারের অত্যন্ত গোপন সব তথ্য জানার কারণে, কুখ্যাত সাবেক সেনা কর্মকর্তা তারিক আহমেদ সিদ্দিকী এই কর্মকর্তাকে হত্যার পরিকল্পনাও করেন। ২০২৩ সালের নভেম্বরে একরকমের নিভৃতভাবে অবসরে যান এই তিন তারকা জেনারেল। তিন দশকের বেশি যেই সেনাবাহিনীতে অত্যন্ত সম্মানের সাথে চাকরি করেছেন, সেই বাহিনী থেকে কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই তাকে অবসর গ্রহণ করতে হয়। কেবল শেখ পরিবারের অন্যায় আদেশ না মানার কারণে। পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সম্প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান পদের জন্য তার মতামত গ্রহণ করা হলে তিনি সাদরে ওই পদ গ্রহণে সম্মতি দেন। মূলত এর পরপরই সাবেক ওই সেনাপ্রধান ও তার সহযোগী সাবেক এক লে. জেনারেল মতিউরের পথরোধের পরিকল্পনা করেন। কেবল তাকে ফাঁসানোর জন্যে ২২ জন সেনাকর্মকর্তার নামে গুমে জড়িত থাকার অভিযোগে পাসপোর্ট বাতিলের চিঠি ইস্যু করানো হয়, যেখানে এস এম মতিউরের নামটিও ঢুকিয়ে দেয়া হয়। হাসিনা রেজিমের প্রতি অনুগত ওই সেনা কর্মকর্তারা অবশ্যই অবগত আছেন যে, লে. জেনারেল মতিউর দুদক চেয়ারম্যানের পদে বসলে বহু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে। কিন্তু নতুন বাংলাদেশে কি এভাবে একজন অকুতোভয় সৈনিকের পথ রোধ করা যাবে? সম্ভবত সময়ই তা বলে দেবে।