ফ্যাসিবাদ চক্র অধরা
২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০২ এএম
অধরা থাকছে গণপূর্ত অধিদপ্তরে দুর্নীতিবাজ চক্ররা। ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের নিয়োগ পাওয়া সাবেক দুই সচিব খন্দকার শহিদুল্লাহ ও সাবেক সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিনের নিয়ন্ত্রণে এখনো রয়েছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। তারা না থাকলেও তাদের রেখে যাওয়া গণপূর্তে ঠিকাদার গোপালগঞ্জের সাবিন্দার কে এম নাজমুল ইসলামের দাপটে চলছে এ অধিদপ্তর। প্রধান প্রকৌশলীসহ যারাই বাধা দিচ্ছেন তিনি মামার (সচিব) ভয় দেখিয়ে কাজ বাগিয়ে নিচ্ছেন। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিনের লোক হিসেবে পরিচিত ছিলেন এক প্রকৌশলী। সচিব আরেক দফায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাচ্ছেন। সচিবের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ হলেই এক সপ্তাহের মধ্যে প্রধান প্রকৌশলী পদে দায়িত্ব দেয়া হবে। সেই প্রকৌশলীর কাছে ২০ কোটি টাকা নিয়েছিলেন ঠিকাদার নাজমুল বলে অভিযোগ রয়েছে। গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলী পদের জন্য বড় অংকের বাজেট নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন ঠিকাদার নাজমুল। এটা মোটামুটি চাউর হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তা আর হয়ে উঠলো না। তবে তাই বলে বসে নেই প্রকৌশলী। তিনি এখন নতুন কৌশলে একই মিশনে নেমেছেন যাতে ২০ কোটি টাকা ফেরত দিতে না হয়।
এ বিষয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার ইনকিলাবকে বলেন, গণপূর্তে ঠিকাদার গোপালগঞ্জের বাসিন্দার কে এম নাজমুল ইসলামের দাপট দেখাচ্ছেন। গণপূর্ত অধিদপ্তরে দুর্নীতিবাজ একজন ঠিকাদার। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের সাবেক দুই সচিব খন্দকার শহিদুল্লাহ ও সাবেক সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিনের মামার (সচিব) ভয় দেখিয়ে কাজ বাগিয়ে নিতে চান। প্রতিদিন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ভয় ভীতি দেয়াচ্ছেন। ঠিকাদার নাজমুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গত ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি তার পরিচয় পাল্টে ফেলেন তিনি নিজেকে বিএনপির নেতা পরিচয় দিয়ে অধিদপ্তরের বিভিন্ন অফিসারদের মামলার ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করেছেন। বড় একটি প্রতারক চক্র গড়ে তোলেন। তার নেতৃত্বে দেশের বিভিন্ন জেলার সচেতন নাগরিক সেজে মামলা শুরু করা হয়। যেখানে অনেক নিরীহ মানুষকে আসামি করা হয় এবং পরবর্তীতে তাদেরকে ফোন দিয়ে টাকা দাবি করা হয় মামলা থেকে নাম প্রত্যাহারের জন্য। কে এম নাজমুল ইসলাম সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে গোপালগঞ্জের বাসিন্দা দাবি করতেন। সম্প্রতি নাজমুলের ছোট ভাইকে এম শাহরিয়ার শুভ বাদী হয়ে বিজ্ঞ চিফ মেট্রোপলিটন আদালতে একটি মামলা করেন।জানা গেছে, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে গণপূর্ত অধিদপ্তর বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নির্মাণ ও তার সংস্কার কাজের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এই মন্ত্রণালয়টির উপর নজরদারী ও ক্ষমতার ভাগ বসাতে দেশের ক্ষমতাশীলরা সর্বদাই তৎপর থাকে। এই মন্ত্রণালয় ঘিরে অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়নে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকার কাজ সম্পাদন হয়। আর এ কারণেই এই মন্ত্রণালয়টি অন্যান্য মন্ত্রণালয় থেকে বেশী গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ করে ঠিকাদার ও ব্যবসায়ীদের নিকট। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অনিয়ম ও দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশিত হলেও বাস্তবিক অর্থে তা নিয়ে বিভাগীয় প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করার নজির তেমন একটা নাই বললেই চলে। প্রতিদিনই কোন না কোন গণমাধ্যমে উঠে আসছে দুর্নীতি আর অনিয়মের চিত্র। দিন দিন বাংলাদেশ যেখানে উন্নতির দিকে অগ্রসরমান হচ্ছে, সেখানে কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা দেশের উন্নতির পথে বাধা হয়ে দাড়াচ্ছে। সংস্কার কাজের নামে বেশির ভাগ অর্থ লুটপাট হয়। যে কোনো সংস্কার কাজের ক্ষেত্রে কমবেশি লাগামহীন এ দুর্নীতি চলে আসছে। কিন্তু এর মধ্যে নগর গণপূর্ত বিভাগ একেবারে শীর্ষে অবস্থান করছে। এখানে প্রতি অর্থবছরে আবাসিক ও অনাবাসিক মিলে সর্বনিম্ন ৪০ কোটি টাকার বরাদ্দ থাকে। কাজ দেখিয়ে বিল তুলে নেওয়া হয়। মিন্টো রোড, হেয়ার রোড, বেইলি রোড, সচিব নিবাস, বঙ্গভবনসহ এসব ভিআইপি এলাকায় সংস্কার কাজ করে থাকে নগর গণপূর্ত বিভাগ। এখানে দোতলা বাংলো আছে ৪৫টি। বাংলোগুলোয় প্রতিবছর গড়ে বিপুল অঙ্কের সংস্কার কাজ দেখানো হয়। কোনো কোনো ভবনে এর পরিমাণ কোটি টাকার কাছাকাছি। প্রতি অর্থবছরে একই বাসার নামে দুই-তিনবার সংস্কার কাজ দেখানো হয়। নিয়মানুযায়ী যে বাসায় একবার সংস্কার কাজ হবে, পরের বছর সেখানে আর কোনো সংস্কার কাজ করা যাবে না। আবার এসব কাজও করে ঘুরেফিরে কয়েকটি প্রভাবশালী ঠিকাদার। কাগজেকলমে ভুয়া কাজ দেখিয়ে বিল তুলে নেওয়ার সংখ্যাও কম নয়। অনেক সময় ঠিকাদারের কাছ থেকে অগ্রিম ৫০ শতাংশ টাকা নিয়ে বাকি টাকার মধ্যে ৩০ শতাংশ কাজ করে বাকি ২০ শতাংশ টাকা ঠিকাদারকে লাভ হিসাবে দেওয়া হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রকৌশলী, ঠিকাদার ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, প্রতিবছর নগর গণপূর্ত বিভাগে বরাদ্দ থাকে প্রায় ৪০ কোটি টাকা। এছাড়া থোক বরাদ্দ থেকে আরও নেওয়া হয় প্রায় ২০ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে প্রায় ৬০ কোটি টাকার সংস্কার কাজ করা হয়। এছাড়া শুধু গণপূর্ত বিভাগ নয়, সরকারি প্রতিটি দপ্তরের সংস্কার কাজে ব্যাপক লুটপাট হচ্ছে।যার প্রতিটি কাজ সচিবের ভাগিনা নাজমুল জড়িত বলে গণপূর্ত অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
গণপূর্ত অধিদপ্তর থেকে সুযোগ সুবিধা গ্রহন করে এর সাথে সম্পৃক্ত ঠিকাদার ও কিছু দুর্নীতি পরায়ণ প্রকৌশলী শত শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছে। এই কার্যক্রম অতীতেও ছিলো এবং বর্তমানেও চলমান আছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গণপূর্ত অধিদপ্তরে অভ্যন্তরীন অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে মন্ত্রনালয়ের বর্তমান উপদেষ্টা ও সচিব বরাবরে যে সুপারিশ মালা দিয়েছে তা যদি বাস্তবিক অর্থে পালিত হতো তাহলে আর দুর্নীতিবাজ ঠিকাদার ও প্রকৌশলীগন দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম করার সাহস দেখাতে পারত না।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত অধিদপ্তর ঘিরে দীর্ঘদিন যাবৎ একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় থেকেও বার বার পার পেয়ে যাচ্ছিল। আর এই সিন্ডিকেটকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করার ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে থাকা শক্তিশালী একটি গ্রুপ কাজ করছিল। এবার দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে গৃহায়ণ ও গনপূর্ত মন্ত্রনালয়। দায়িত্বভার গ্রহনের প্রথমদিনেই গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর হুশিয়ারি দিয়েছেন। এমনকি বিভিন্ন অধিদপ্তরের একাধিক সভাতেও দুর্নীতিবাজ ও তেলবাজ কর্মকর্তা এবং ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা গেছে উপদেষ্টার ও সচিবকে।
উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান “দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স” নীতি বাস্তবায়নের দিকে এগোচ্ছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হামিদুর রহমান খান এবং গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী শামীম আক্তার অধিদপ্তরকে ঢেলে সাজানোর এক মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে নির্দেনা দিয়েছেন উপদেষ্টা বলে জানা গেছে। ইতিমধ্যে গনপূর্ত মন্ত্রনালয়ে দীর্ঘদিন রাজত্ব করা প্রভাবশালী সিন্ডিকেট গুড়িয়ে দিতে উপেেশ একাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা শুরু হয়েছে।গত কয়েকদিনে একজন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, একজন নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এদিকে কমিশনের বিনিময়ে কাজ প্রদান, উন্নয়ন কাজ না করেই সরকারি বরাদ্দের কোটি কোটি টাকা তুলে নিয়ে ঠিকাদারের সাথে ভাগাভাগি করার অভিযোগ রয়েছে সাবেক দুই সচিব এবং ঠিকাদার নাজমুলের বিরুদ্ধে। মামলা নং সি আর ৮৭৪/২০২৪ (পল্টন)। যেখানে ফরিদপুরের অসংখ্য নিরীহ মানুষসহ গণপূর্ত অধিদপ্তরের শীর্ষ প্রায় ২০ কর্মকর্তার নাম দেওয়া হয়েছে। বাদী কে এম শাহরিয়ার শুভর আপন বড় ভাই হলেন কে এম নাজমুল ইসলাম। নাজমুল ইসলাম যে মোবাইলটি ব্যবহার করেন তা তসলিমা জাহান মিম নামে এক মহিলার নামে নেওয়া। যার বাসা মাদারীপুর শিবচর। তবে এই মহিলার সঙ্গে মামলাবাজ প্রতারক নাজমুলের কি সম্পর্ক তা এখনো জানা যায়নি। শাহরিয়ার শুভ, নাজমুল ইসলাম এবং তসলিমা জাহান মিমকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে পুরো প্রতারক চক্রটিকে ধরা যাবে বলে অনুসন্ধানী টিম মনে করে। গত ১২ অক্টোবর মোহাম্মদপুর থানায় আরেকটি মামলা করা হয়েছে, যেখানে ৭৬ জন কৃষি কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে। যেহেতু সকল মামলার ধরন একই রকম। তাই ধারণা করা হচ্ছে, প্রতারণা করার উদ্দেশ্যেই এই মামলাগুলো করা হয়েছে এবং একই প্রতারক চক্র এ কাজগুলো করছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, যারা ভুয়া মামলা করবেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সাধারণ জনগণ দ্রুত এ প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন দেখতে চায়। নাহলে এ প্রতারক চক্রের ফাঁদে অসংখ্য নিরীহ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। দেশজুড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যে মহৎ উদ্দেশ্যকে সামনে নিয়ে সংঘটিত হয়েছিল, শত শত শহীদের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়েছিল। সেই উদ্দেশ্যকে অনেকটা ম্লান করে দিচ্ছে নাজমুলদের মতো প্রতারক চক্র। এ ব্যাপারে ঠিকাদার কে এম নাজমুল ইসলামের মোবাইলে ফোনে করা হলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের দাবী অত্যন্ত যৌক্তিক
পাঠ্যবই ছাপায় অনিয়মে আনন্দ প্রিন্টার্সকে সতর্কতা
দক্ষিণ লেবাননে ৬ চিকিৎসাকর্মী নিহত
জনগণের সাথে জনসংযোগ বাড়াতে হবে
আমরা যুদ্ধে বিশ্বাসী না কেউ গায়ে পড়লে জবাবের প্রস্তুতি রাখতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথের কাছে ২৭ রেফারির চিঠি
ফের বাড়লো সোনার দাম, ভরি ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা
বাংলাদেশে খেলা নিয়ে অনিশ্চিয়তায় হামজা!
বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই হবে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফের খেলা
সিলেটে মাজিদের ফিফটি
অ্যাম্বাসেডর কাপ উশুতে সেনাবাহিনী চ্যাম্পিয়ন
মাদক শুধু ব্যক্তিকে নয় পরিবারকেও ধ্বংস করে
সাধারণ মানুষের পেটে লাথি মেরে আ.লীগ নিজেদের ভাগ্য গড়েছে : এমরান সালেহ প্রিন্স
ধর্মদ্রোহী সরকারের সময় কোনো ধর্মই নিরাপদ ছিল না
দৌলতখানে শীতকালীন সবজি পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক
সুন্দরগঞ্জে ছয় পা বিশিষ্ট বাছুরের জন্ম
বৈষম্যের শিকার কুমিল্লার ১৫ হাজার এতিম শিশু
দালালচক্রে জিম্মি রোগীরা
ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকোই সাটুরিয়ার শিশু শিক্ষার্থীদের ভরসা
পঞ্চগড়ে চিকিৎসক পদায়নের দাবিতে সড়ক অবরোধ