সিনহা হত্যা মামলার রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশনের

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

২৬ এপ্রিল ২০২৫, ০২:১১ পিএম | আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ০২:১২ পিএম

মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যাকাণ্ডের মতো একটি চাঞ্চল্যকর ও হৃদয়বিদারক ঘটনার বিচার নিয়ে আবারও সোচ্চার হয়েছে দেশের অবসরপ্রাপ্ত সামরিক বাহিনীর সদস্যদের সংগঠন ‘এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন’। তারা দাবি করেছে, এই হত্যার বিচার যেন আইনের পূর্ণ মর্যাদা পায় এবং বিচারের নামে কোনো বিলম্ব বা ছলচাতুরি না ঘটে। রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে শনিবার (২৬ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এক মাসের মধ্যে উচ্চ আদালতে রায় ঘোষণার দাবি জানায় এবং বলেন, রায় ঘোষণার সাতদিনের মধ্যেই তা কার্যকর করতে হবে, নতুবা কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেওয়া হলো।

 

২০২০ সালের ৩১ জুলাই কক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর সিনহা। ঘটনার পর নিহত সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস মামলা দায়ের করেন এবং র‍্যাবের তদন্তে প্রমাণিত হয়, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড ছিল। এই মামলার বিচার ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে শেষ হয়। আদালত তখন টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমার দাশ এবং পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে মৃত্যুদণ্ড দেন, ছয়জনকে যাবজ্জীবন এবং সাতজনকে খালাস দেন। বর্তমানে মামলাটি হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স ও আপিল পর্যায়ে বিচারাধীন রয়েছে, বিচারপতি মুস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি সগীর হোসেনের বেঞ্চে। এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন চায়, এই আপিল শুনানি এক মাসের মধ্যেই শেষ করে রায় ঘোষণা করতে হবে এবং এরপর সাত কার্যদিবসের মধ্যে তা কার্যকর করতে হবে।

 

সংগঠনের সদস্য সচিব লেফটেন্যান্ট (অব.) সাইফুল্লাহ খাঁন সাইফ বলেন, প্রদীপ কুমার দাশ তার চাকরিজীবনে একাধিকবার ক্ষমতার অপব্যবহার করে নানা অপরাধে যুক্ত ছিলেন। ওসি হিসেবে তিনি তথাকথিত ক্রসফায়ারে অন্তত ১৪৫ জনকে হত্যা করেন এবং অপরাধ থেকে প্রাপ্ত অর্থে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলেন। এমনকি ২০০৪ সালে চট্টগ্রামে এক নারীকে জমি দখলের চেষ্টা করায় তাকে বরখাস্তও করা হয়েছিল। তিনি অভিযোগ করেন, প্রদীপের মতো কর্মকর্তাদের সাথে দুর্নীতিগ্রস্ত কিছু রাজনীতিক ও মাদক ব্যবসায়ীর সম্পর্ক বিচার বিলম্বের জন্য দায়ী। এ বিষয়ে সরকার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আদালতের কাছে পরিষ্কার বার্তা দেওয়া হয়—এই মামলায় কোনো চাপ, প্রলোভন বা রাজনৈতিক প্রভাব যেন বিচারকে প্রভাবিত না করে।

 

সংগঠনটি শুধু সিনহা হত্যাই নয়, শিশু আছিয়া, পারভেজ, তোফাজ্জল হত্যাকাণ্ড এবং জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যার বিচারও দ্রুত শেষ করার দাবি জানায়। তারা বলেন, দেশে যাতে কোনো বিচারেই বৈষম্য না হয়, সেদিকে নজর রাখতে হবে। এক্স-ফোর্সেস অ্যাসোসিয়েশন মনে করে, আইনের শাসন ও মানবাধিকারের সুরক্ষায় এই মামলাটি একটি দৃষ্টান্ত হতে পারে। সুতরাং এই মামলার রায় কার্যকর না হলে জনগণের বিচারপ্রাপ্তির আশা ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং ভবিষ্যতে রাষ্ট্রের আইন শৃঙ্খলার প্রতি আস্থা দুর্বল হবে। জনগণের চোখ এখন এই মামলার দিকে তাকিয়ে, আর বিচারের স্বচ্ছতা ও সময়মতো কার্যকরের মাধ্যমেই ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা সম্ভব।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

আমিরাতের উন্নয়নে বাংলাদেশিদের অবদানের প্রশংসা এবং সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ
কৃষিপণ্য রপ্তানিতে ভাটা, উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা
ব্রিফিংয়ে জয়সোয়াল আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার ঘটনায় ভারতের উদ্বেগ!
আমদানি বৃদ্ধি ও শুল্ক কমানোর পণ্য তালিকা চূড়ান্ত হচ্ছে
আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করে না: প্রেস উইং
আরও
X
  

আরও পড়ুন

গাজায় যুদ্ধ থামবে না, হুঁশিয়ারি নেতানিয়াহুর

গাজায় যুদ্ধ থামবে না, হুঁশিয়ারি নেতানিয়াহুর

ইসরায়েলি নৃশংস হামলায় গাজায় নিহত অন্তত ৮১ ফিলিস্তিনি

ইসরায়েলি নৃশংস হামলায় গাজায় নিহত অন্তত ৮১ ফিলিস্তিনি

কালিগঞ্জে প্রশাসনের নাকের ডগায় অবৈধ বালু উত্তোলন, পরিবেশ বিপর্যয়ের সম্ভাবনা

কালিগঞ্জে প্রশাসনের নাকের ডগায় অবৈধ বালু উত্তোলন, পরিবেশ বিপর্যয়ের সম্ভাবনা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি-প্রক্টরের পদত্যাগ চায় ছাত্রদল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি-প্রক্টরের পদত্যাগ চায় ছাত্রদল

রিয়াল ছেড়ে কেন ব্রাজিলে আনচেলত্তি

রিয়াল ছেড়ে কেন ব্রাজিলে আনচেলত্তি

দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত ঢাবি ছাত্রদল নেতা, বিক্ষোভ প্রতিবাদে উত্তাল ক্যাম্পাস

দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত ঢাবি ছাত্রদল নেতা, বিক্ষোভ প্রতিবাদে উত্তাল ক্যাম্পাস

সেমি-ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ নেপাল

সেমি-ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ নেপাল

এই প্রথমবারের মতো  ‘বাবার কারাবাস’ নিয়ে প্রকাশ্যে  কথা বললেন ইমরান খানের সন্তানদ্বয়

এই প্রথমবারের মতো ‘বাবার কারাবাস’ নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বললেন ইমরান খানের সন্তানদ্বয়

আমিরাতের উন্নয়নে বাংলাদেশিদের অবদানের প্রশংসা এবং সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ

আমিরাতের উন্নয়নে বাংলাদেশিদের অবদানের প্রশংসা এবং সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ

কৃষিপণ্য রপ্তানিতে ভাটা, উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা

কৃষিপণ্য রপ্তানিতে ভাটা, উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কা

ব্রিফিংয়ে জয়সোয়াল আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার ঘটনায় ভারতের উদ্বেগ!

ব্রিফিংয়ে জয়সোয়াল আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার ঘটনায় ভারতের উদ্বেগ!

আমদানি বৃদ্ধি ও শুল্ক কমানোর পণ্য তালিকা চূড়ান্ত হচ্ছে

আমদানি বৃদ্ধি ও শুল্ক কমানোর পণ্য তালিকা চূড়ান্ত হচ্ছে

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করে না: প্রেস উইং

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করে না: প্রেস উইং

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করে না: প্রেস উইং

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করে না: প্রেস উইং

চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে পতিত সরকারের করা চুক্তি স্থগিত করুন

চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে পতিত সরকারের করা চুক্তি স্থগিত করুন

কমলো উড়োজাহাজের তেলের দাম

কমলো উড়োজাহাজের তেলের দাম

লিবিয়ায় ভয়াবহ সংঘর্ষ, বাসিন্দাদের ঘরে থাকার নির্দেশ

লিবিয়ায় ভয়াবহ সংঘর্ষ, বাসিন্দাদের ঘরে থাকার নির্দেশ

আমরা কি নতুন কোনও যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে যাচ্ছি? প্রশ্ন মেজর হাফিজের

আমরা কি নতুন কোনও যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে যাচ্ছি? প্রশ্ন মেজর হাফিজের

মঙ্গলের মাটির তলায় তরল পানির সন্ধান

মঙ্গলের মাটির তলায় তরল পানির সন্ধান

পুঁজিবাজারে আবারো বড় দরপতন

পুঁজিবাজারে আবারো বড় দরপতন