জাতীয় ঐক্য সমুন্নত রাখার আহ্বান শিবিরের

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

২৪ মে ২০২৫, ১২:৩২ এএম | আপডেট: ২৪ মে ২০২৫, ১২:৩২ এএম

ব্যক্তিগত ও দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে জাতীয় স্বার্থে দেশি-বিদেশি চক্রান্ত মোকাবিলায় দেশপ্রেমিক সকল পক্ষকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। শুক্রবার (২৩ মে) এক যৌথ বিবৃতিতে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম এ আহ্বান জানান।

 

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, ১৭৫৭ থেকে ১৯৪৭ সাল ১৯০ বছর পর ব্রিটিশ শোষণ-বঞ্চনা থেকে এই জনপদ মুক্তি পেলেও শুরু হয় পাকিস্তানি শাসনের নতুন অধ্যায়। ভৌগোলিক দূরত্ব, পাকিস্তানের শাসকদের অপরিণামদর্শিতা ও জুলুম-নির্যাতনের অনিবার্য পরিণতিতে ১৯৭১ সালে জন্ম হয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের। কিন্তু গণতন্ত্রের লেবাসধারী ও ফ্যাসিবাদের প্রতীক শেখ মুজিব সীমাহীন ত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই বিজয়কে বাকশাল কায়েম করে একদলীয় শাসনের মাধ্যমে সমৃদ্ধি ও সম্ভাবনার সকল পথ রুদ্ধ করে দেয়। এ ছাড়াও প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর চক্রান্তের কারণে ১৯৪৭, ১৯৬৯ ও ১৯৯০ সালের আন্দোলনসহ কোনো অভ্যুত্থানকেই প্রকৃত বিপ্লবে রূপদান করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।

 

সকল প্রকার দুঃশাসন ও আধিপত্যবাদের শৃঙ্খল ভেঙে সম্প্রীতি ও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার দাবিতে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ ২০২৪ সালে আবারও একত্রিত হয়। সংঘটিত হয় ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশের প্রতীক—ঐতিহাসিক ৩৬ জুলাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান। সৃষ্টি হয় নতুন দেশ গঠনের এক সুবর্ণ সুযোগ। কিন্তু বরাবরের মতো এবারও জাতির ভাগ্যে ব্যর্থতা ও গোলামির চিহ্ন এঁকে দিতে চায় দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারীরা।

 

নেতৃবৃন্দ বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, গুটিকয়েক ব্যক্তির শিশুসুলভ অপরিপক্ব চিন্তা ও অদূরদর্শিতার কারণে জাতি আজ বিভক্তির পথে। তারা ফ্যাসিবাদী বয়ানগুলোকে সামনে এনে দেশপ্রেমিক শক্তিসমূহকে একে অন্যের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে বিভক্ত করার প্রয়াসে লিপ্ত হয়েছে। শুধু তাই নয়, পরিকল্পিতভাবে সেনাবাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে। অথচ এ বাহিনী জুলাই ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থানসহ ইতিহাসের প্রতিটি সংকটে জাতির পাশে ছিল এবং দেশের শান্তি ও স্থিতির জন্য নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। তবে যারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে জনগণের ওপর জুলুম চালিয়েছে, তারা অপরাধী হিসেবে শাস্তিযোগ্য।’

 

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, জাতির এই ক্রান্তিকাল থেকে উত্তরণে প্রয়োজন জুলাই স্পিরিটকে ধারণের মাধ্যমে জাতীয় ঐক্য সুদৃঢ় ও সুসংহত করা। জাতীয় ঐক্য কোনো স্লোগান নয়, এটি সময়ের দাবি, ইতিহাসের শিক্ষা এবং ভবিষ্যতের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের আবশ্যকীয় শর্ত। বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক রাজনীতির কঠিন বাস্তবতায়, বিশেষ করে ভারতীয় আধিপত্যবাদের চতুর, সর্বগ্রাসী ও নির্মম কৌশলের মুখে, আমাদের সামনে একটি মাত্র পথ খোলা রয়েছে; সেটি হলো ঐকমত্যের ভিত্তিতে শক্তিশালী জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো। এর পরিবর্তে জাতীয় ঐক্য বিনাশে যারা ভূমিকা রাখবে, ইতিহাস তাদের ‘জুলাই গাদ্দার’ হিসেবে চিহ্নিত করবে।

 

নেতৃবৃন্দ বলেন, জুলাইয়ের স্পিরিট— ব্যক্তিগত এবং দলীয় স্বার্থ ও পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে একতাবদ্ধ হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়ে যাওয়ার দৃঢ়তা আমাদের সামনে যেকোনো সংকট জয় করার পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করবে। তাই আমরা সকল ছাত্রসংগঠন, রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, সাংস্কৃতিক প্লাটফর্ম ও নাগরিকদের ক্ষুদ্র স্বার্থ পরিহার করে জাতীয় সংকট মোকাবিলায় ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ থাকার উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। দেশপ্রেমিক প্রতিটি মানুষ এখনো জুলাইয়ের স্পিরিটকে গভীরভাবে লালন করেন। আমরা বিশ্বাস করি নতুন প্রজন্ম জীবন দিয়ে হলেও জুলাইকে সফল করার মাধ্যমে একটি উন্নত, অগ্রসর, সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলবে।


বিভাগ : রাজনীতি


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপার আক্ষেপ ক্লাব বিশ্বকাপে ঘোচাতে চায় ইন্টার

চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপার আক্ষেপ ক্লাব বিশ্বকাপে ঘোচাতে চায় ইন্টার

বিজিবির অভিযানে মে মাসে ১৩৩ কোটি ১১ লক্ষাধিক টাকার চোরাচালান পণ্যসামগ্রী জব্দ

বিজিবির অভিযানে মে মাসে ১৩৩ কোটি ১১ লক্ষাধিক টাকার চোরাচালান পণ্যসামগ্রী জব্দ

পরিবহন আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ৭টি ওমরাহ কোম্পানি স্থগিত

পরিবহন আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ৭টি ওমরাহ কোম্পানি স্থগিত

রাশিয়ার হামলায় কিয়েভে মার্কিন নাগরিকসহ নিহত ১৪

রাশিয়ার হামলায় কিয়েভে মার্কিন নাগরিকসহ নিহত ১৪

সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ বাতিল না হলে আন্দোলন চলবে

সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ বাতিল না হলে আন্দোলন চলবে

জি-৮ থেকে রাশিয়াকে বাদ দেয়া ‘বিশাল ভুল’ ছিল: ট্রাম্প

জি-৮ থেকে রাশিয়াকে বাদ দেয়া ‘বিশাল ভুল’ ছিল: ট্রাম্প

সাকিব আল হাসানসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

সাকিব আল হাসানসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

এস আলমের ২০০ একর জমি জব্দের নির্দেশ আফতাবুলের ৯৪ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ

এস আলমের ২০০ একর জমি জব্দের নির্দেশ আফতাবুলের ৯৪ ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ

নগর ভবন অচলাবস্থার জন্য এই সরকার দায়ী : ইশরাক

নগর ভবন অচলাবস্থার জন্য এই সরকার দায়ী : ইশরাক

বাবার যত্নে ওষুধ, মেডিকেল টেস্ট, হেলথ চেকআপে বিকাশ পেমেন্টে ডিসকাউন্ট ও ক্যাশব্যাক

বাবার যত্নে ওষুধ, মেডিকেল টেস্ট, হেলথ চেকআপে বিকাশ পেমেন্টে ডিসকাউন্ট ও ক্যাশব্যাক

শেখ হাসিনা নিজের ইচ্ছেমতো ইতিহাস ও পাঠ্যবই রচনা করেছিল: রিজভী

শেখ হাসিনা নিজের ইচ্ছেমতো ইতিহাস ও পাঠ্যবই রচনা করেছিল: রিজভী

‘ইসরাইল ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামো ধ্বংস করতে পারবে না’

‘ইসরাইল ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামো ধ্বংস করতে পারবে না’

ইলিয়াস আলীকে ফিরে পাওয়ার দাবীতে বিশ্বনাথে স্বেচ্ছাসেবক দলের বিক্ষোভ-দোয়া মাহফিল

ইলিয়াস আলীকে ফিরে পাওয়ার দাবীতে বিশ্বনাথে স্বেচ্ছাসেবক দলের বিক্ষোভ-দোয়া মাহফিল

দোয়ারাবাজারে সড়ক দূর্ঘটনায় গরুটি মৃত্যু  আহত ৪

দোয়ারাবাজারে সড়ক দূর্ঘটনায় গরুটি মৃত্যু আহত ৪

জুবাইদা রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে ২ দিনব্যাপী বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন

জুবাইদা রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে ২ দিনব্যাপী বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন

সুন্দরগঞ্জে জামের গাছ থেকে পড়ে একজনের মৃত্যু

সুন্দরগঞ্জে জামের গাছ থেকে পড়ে একজনের মৃত্যু

ভবিষ্যতে ছেড়ে দেব এমন কথা বললে তালাক হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে।

ভবিষ্যতে ছেড়ে দেব এমন কথা বললে তালাক হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে।

পরিবার থেকে রাষ্ট্র : ন্যায়ভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের উপায়

পরিবার থেকে রাষ্ট্র : ন্যায়ভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের উপায়

ইরান-ইসরাইল যুদ্ধ এবং জেরুজালেমের মুক্তির প্রশ্ন

ইরান-ইসরাইল যুদ্ধ এবং জেরুজালেমের মুক্তির প্রশ্ন

সকলের দৃষ্টি এখন ডোনাল্ড ট্রাম্পের দিকে

সকলের দৃষ্টি এখন ডোনাল্ড ট্রাম্পের দিকে