হরিরামপুরে কৃষিতে কাজ করছে কয়েক হাজার নারী শ্রমিক

Daily Inqilab হরিরামপুর (মানিকগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা

১০ মার্চ ২০২৩, ০৮:০৭ পিএম | আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২৩, ০১:২২ পিএম

মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে কৃষি ও গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করছে কয়েক হাজার নারী শ্রমিক। পুরুষের পাশাপাশি আজ কৃষিকাজে নারীরাও সমানতালে এগিয়ে। তবে এক্ষেত্রে বিধবা এবং তালাকপ্রাপ্ত অসহায় নারীর সংখ্যাই বেশি।
সরেজমিনে দেখা যায়, ফাল্গুনের ক্রান্তিকালে এসেও সকালের হালকা কুয়াশায় আবৃত এ উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের ফসলের মাঠ। ওপরে খোলা নীল আকাশ। গ্রামের দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠ। আস্তে আস্তে সূর্যের প্রখরতায় রৌদ্রের তাপ অনেকটা শরীরকে স্পর্শ করছে। উপজেলার বাল্লা ইউনিয়নের ঝিটকা এলাকার এমনি এক রৌদ্রের উষ্ণ তাপে ফসলের মাঠে ইরি ক্ষেতে আগাছা পরিস্কার করছেন ষাটোর্ধ বিধবা নারী শ্রমিক কুলসুম বেগম। তিনি শিবালয়ের নয়াকান্দি গ্রামের মৃত শহীদের স্ত্রী। স্বামীর জমিজমা পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে গেলে বাল্লা ইউনিয়নের বাল্লা গ্রামে ইছামতী নদীর পাড়ে ঘর তুলে বসবাস করছেন। এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তাদের দাম্পত্য জীবন। মেয়ের বিয়ে হয়েছে। ছেলে রিক্সা চালায়। প্রায় ১৫ বছর আগে গাছ থেকে পড়ে মারা যান স্বামী শহীদ। ছেলের আয়ে সংসার চলে না কুলসুম বেগমের। বাধ্য হয়ে নিজেই শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। কখনও রাস্তায় মাটি কাটার কাজ আবার কখনও কৃষি জমিতে। তিনি জানান, “স্বামী হারিয়ে ছেলেমেয়ে নিয়ে খুব কষ্ট আছি। তাই প্যাটের দায়ে বাধ্য হইয়া ক্ষেতে নামছি। জিনিসপত্রের যে দাম, তাতে পোলার কামাইতে সংসার চলে না। এ কাজে দিন প্রতি সে চার শো টাকা মজুরি পান। “
তার সাথে পাশেই আরেক ত্রিশরোর্ধ নারী হাসনা বেগম । গালা ইউনিয়নের গালা গ্রামের সেকেন মিয়ার সাথে বিয়ে হয় হাসনার। দাম্পত্য জীবনে তার এক ছেলে ও এক মেয়ে। কিন্তু স্বামীর সাথে বনিবনা না হওয়ায় ছয় মাস আগে তালাক নিয়ে বাবার চলে আসেন । ছেলে ও মেয়ে নিয়ে রাস্তার পাশে ঘর তুলে বসবাস করছেন। ছেলেমেয়েদের খরচ চালাতে কৃষি শ্রমিক হিসেবে দিন মজুরের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। হাসনা বেগম জানান, স্বামীর অত্যাচার সহ্য করবার না পাইরা চইলা আইছি। ছোট দুইডা বাচ্ছা। কি করুম। বাধ্য হইয়া দিন মজুরের কামে আাইছি।”
তাদের সাথেই কাজ করছিলেন জবেদা বেগম (৬৫)। সে আরুয়া ইউনিয়নের বাউলিকান্দা গ্রামের কছের আলীর স্ত্রী। জমিজমা হারিয়ে বসবাস করছেন বাল্লা গ্রামে। স্বামী বার্ধক্য জনিত কারণে অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে আছেন। একমাত্র ছেলে অন্যের বাড়ি কামলা দেয়। ছেলের আয়ে সংসার না চলায় জবেদা বেগমও মাটি কাটার কাজসহ অন্যের কৃষি জমিতে দিন মজুরের কাজ করেন। তিনি বছর দেড়েক যাবৎ বয়স্ক ভাতার কার্ড পেলেও সংসারের অভাব অনটনে কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। তিনি জানান, স্বামী অসুস্থ কামাই রোজগার নাই। পোলায় কামলা দিয়া যা পায়, তাতে তারই বৌ পোলাপান নিয়া চলে না। তাই বাধ্য হয়েই দিন মজুরের কাম করছি। ক্ষেত খামারের কাজ না থাকলে রাস্তায় মাটি কাটার কামও করতে অয়।
জানা যায়, এ উপজেলায় মোট নারী শ্রমিকের সংখ্যা সঠিকভাবে জানা না গেলেও উপজেলার চরাঞ্চল আজিমনগর, সুতালড়ী ও লেছড়াগঞ্জ এই তিন ইউনিয়নেই প্রায় সহস্রাধিক নারী শ্রমিক কৃষি কাজের সাথে জড়িত রয়েছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলার ৩৬৩ জন নিবন্ধিত নারী শ্রমিক অতি দরিদ্রের কর্মসংস্থান ৪০ দিনের কর্মসূচিতে কাজ করেন। এ ছাড়াও এ উপজেলায় দুটি ইট ভাটায় প্রায় ৪০ জন নারী শ্রমিক নিয়মিত কাজ করেন। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. মানিকুজ্জামান বলেন, পুরুষের পাশাপাশি বর্তমানে নারীরাও বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে সহযোগিতা করছেন।
উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা আব্দুল গাফ্ফার জানান, আদিকাল থেকেই কৃষিতে নারীদের ভূমিকা ছিল। তারা ঘরের কাজের পাশাপাশি কৃষি কাজেও সহযোগিতা করে আসছে। আগে গ্রামীণ পটভূমিতে একমাত্র পুরুষরাই মাঠে কৃষি কাজ করতো। বর্তমানে নারীরা প্রত্যক্ষভাবে কৃষিকাজে এগিয়ে এসেছে। তারা পুরুষের সঙ্গে সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছে। এতে খাদ্য নিরাপত্তা, কৃষি উৎপাদন বিশেষ করে রবিশস্য উৎপাদন, গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগি পালন, সবজি ও মৎস্য চাষসহ বিভিন্ন পেশায় নারীরা পুরুষদের পাশাপাশি সমান অবদান রাখছে।


বিভাগ : অভ্যন্তরীণ


আরও পড়ুন

'সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে অপহরণের ঘটনা রাষ্ট্রীয় ফ্যাসিবাদেরই উলঙ্গ বহিঃপ্রকাশ'

'সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে অপহরণের ঘটনা রাষ্ট্রীয় ফ্যাসিবাদেরই উলঙ্গ বহিঃপ্রকাশ'

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীর শোক প্রকাশ

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীর শোক প্রকাশ

আলেমদের স্বাবলম্বী হওয়ার কথা বললেন মাওলানা শুয়াইব আহমদ আশ্রাফী

আলেমদের স্বাবলম্বী হওয়ার কথা বললেন মাওলানা শুয়াইব আহমদ আশ্রাফী

চট্টগ্রামে আবারও বৃষ্টির কারণে খেলা শুরু হয়নি

চট্টগ্রামে আবারও বৃষ্টির কারণে খেলা শুরু হয়নি

উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ে নেই বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি উত্তোলন করেন না পতাকাও

উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ে নেই বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি উত্তোলন করেন না পতাকাও

বহিরাগতদের হাতে মারধরের শিকার কুবি শিক্ষার্থী

বহিরাগতদের হাতে মারধরের শিকার কুবি শিক্ষার্থী

বাখমুতে গুরুত্বপূর্ণ কারখানার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে রুশ সেনা

বাখমুতে গুরুত্বপূর্ণ কারখানার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে রুশ সেনা

সুলতানা কামাল, রামেন্দু মজুমদারসহ ২৫ জন এখনি জামায়াত নিষিদ্ধ চান

সুলতানা কামাল, রামেন্দু মজুমদারসহ ২৫ জন এখনি জামায়াত নিষিদ্ধ চান

শিবগঞ্জে যুবকের কবজি কর্তনের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১

শিবগঞ্জে যুবকের কবজি কর্তনের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১

নেতানিয়াহুকে আপাতত হোয়াইট হাউজে আমন্ত্রণ জানাবেন না বাইডেন

নেতানিয়াহুকে আপাতত হোয়াইট হাউজে আমন্ত্রণ জানাবেন না বাইডেন

বগুড়ায় এনজিওর কিস্তির জ্বালায় নারীর আত্মহত্যা!

বগুড়ায় এনজিওর কিস্তির জ্বালায় নারীর আত্মহত্যা!

ইমরান খানের বিরুদ্ধে সানাউল্লাহর ‘হুমকিপূর্ণ মন্তব্যে’ নিন্দা খলিলজাদের

ইমরান খানের বিরুদ্ধে সানাউল্লাহর ‘হুমকিপূর্ণ মন্তব্যে’ নিন্দা খলিলজাদের

দোয়ারাবাজারে মুদি দোকানে বিক্রি হচ্ছে কীটনাশক সার, স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে জনগণ

দোয়ারাবাজারে মুদি দোকানে বিক্রি হচ্ছে কীটনাশক সার, স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে জনগণ

প্রধান বিচারপতির ক্ষমতা কমাচ্ছে শেহবাজ সরকার

প্রধান বিচারপতির ক্ষমতা কমাচ্ছে শেহবাজ সরকার

দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করাই বর্তমান সরকারের লক্ষ্য : শেখ হাসিনা

দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করাই বর্তমান সরকারের লক্ষ্য : শেখ হাসিনা

নতুন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে মহড়া শুরু রাশিয়ার

নতুন ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে মহড়া শুরু রাশিয়ার

স্কুলের খরচে ওমরাহ করলেন ড্রাইভারসহ ৮ কর্মী

স্কুলের খরচে ওমরাহ করলেন ড্রাইভারসহ ৮ কর্মী

বাইডেনের আইসক্রিম প্রতিক্রিয়ায় বিতর্ক

বাইডেনের আইসক্রিম প্রতিক্রিয়ায় বিতর্ক

বাড়িতেই ৭টি বন্দুক লুকিয়ে রেখেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সেই হামলাকারী

বাড়িতেই ৭টি বন্দুক লুকিয়ে রেখেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সেই হামলাকারী

চীন সীমান্তে ৩৭ টি নতুন রাস্তা তৈরি করছে ভারত

চীন সীমান্তে ৩৭ টি নতুন রাস্তা তৈরি করছে ভারত