ইউক্রেনকে রক্ষা করা যুক্তরাষ্ট্রের অত্যাবশ্যক স্বার্থ নয়

মার্কিন পররাষ্ট্র নীতি বদলেযেতে পারে ২০২৪ সালে

Daily Inqilab ইনকিলাব

২৯ মার্চ ২০২৩, ১২:১৪ এএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ০৬:১২ এএম

২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নির্বাচনের প্রাথমিক পর্যায় তথা প্রেসিডেন্সিয়াল প্রাইমারীতে সবচেয়ে ফলপ্রসূ মার্কিন পররাষ্ট্র নীতি পুন:প্রতিষ্ঠা সংক্রান্ত বিতর্কের দিকে এগোচ্ছে। এটি বদলে দিতে পারে ১৯৫২ সালের ইতিহাসে একটি মোড়, যখন সোভিয়েত ইউনিয়নকে ধারণ করার জন্য আন্তর্জাতিকতাবাদ এবং ইউরোপের সাথে জোট তৈরি কারিগর ডোয়াইট আইজেনহাওয়ার প্রেসিডেন্ট পদে সিনেটর রবার্ট টাফ্টকে পরাজিত করেন, যিনি ইউরোপকে রক্ষা করার থেকে চীনকে মোকাবেলার দিকে যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্যকে পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন। একই ধরনের বিভাজন এখন রিপাবলিকানদের মধ্যে শুরু হয়েছে। একদিকে, টাফটের নীতি এখন প্রতিধ্বনিত হচ্ছে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিস্যান্টিসের মধ্যে। জাতীয় নির্বাচনে লড়ার জন্য উভয় রিপাবলিকান প্রার্থী ঘোষণা করেছেন যে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে রক্ষা করা যুক্তরাষ্ট্রের অত্যাবশ্যক স্বার্থ নয় এবং এটি চীনের মোকাবিলা করা আরও গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ থেকে বিভ্রান্ত করছে। অন্যদিকে, অন্যান্য সম্ভাব্য ২০২৪ প্রার্থী যেমন প্রাক্তন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স এবং জাতিসংঘের সাবেক রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি আইজেনহাওয়ারের নীতি সমর্থন করে বলেছেন যে, রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউরোপকে রক্ষা করতে যুক্তরাষ্ট্রকে অবিচল থাকতে হবে এবং জোর দিয়েছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের ইউক্রেন ত্যাগ করা চীন এবং অন্যান্য সম্ভাব্য শত্রুদের উৎসাহিত করবে। কিন্তু ডিস্যান্টিস তার এক সাক্ষাৎকারে ইউক্রেনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের উন্মুক্ত সমর্থনের বিষয়ে তার সংশয় পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি না যে, আমাদের আরও সম্পৃক্ততা বাড়ানোর মতো এটি যথেষ্ট ফলদায়ক।’ তবে, কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্সের সভাপতি এবং জর্জ ডব্লু বুশের অধীনে স্বরাষ্ট্র নীতি পরিকল্পনার সাবেক পরিচালক রিচার্ড হাস বলেন, 'ট্রাম্প-ইজম হল রিপাবলিকান পররাষ্ট্রনীতিতে প্রভাবশালী প্রবণতা এবং এটি বিচ্ছিন্নতাবাদী, এটি একতরফাবাদী, এটি অনৈতিক।’ কিন্তু সমসাময়িক রিপাবলিকান জোটে এটি সমর্থনের যথেষ্ট ভিত্তি রয়েছে যে, রবার্ট টাফটের নীতি অনুসারে ইউরোপ-কেন্দ্রিক আন্তর্জাতিক জোটের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি হ্রাস করা এবং চীনের প্রতি তার প্রতিরোধকে কঠোর করা উচিত। এই মাসের শুরুর দিকে প্রকাশিত একটি গ্যালাপ জরিপে, রিপাবলিকান ভোটাররা রাশিয়ার চেয়ে চীনকে বিশ্বের প্রধান মার্কিন প্রতিপক্ষ হিসাবে চিহ্নিত করেছে, যেখনে ডেমোক্র্যাটরা চীনের চেয়ে বেশি রাশিয়াকে প্রাধান্য দিয়েছে।ইউক্রেনে মার্কিন সহায়তার জন্য রিপাবলিকান সমর্থনে স্থিতিশীলতারও পতন দেখা গেছে পোল। পিউ রিসার্চ সেন্টার এবং কুইনিপিয়াক ইউনিভার্সিটি দ্বারা পরিচালিত এই বছর জরিপ বলছে যে, রিপাবলিকান ভোটারদের যারা বিশ্বাস করে যে, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেন নিয়ে খুব বাড়াবাড়ি করছে, এদের হার তাদের সাথে সমান যারা মনে করে যে, এটি খুব কম বা উটিত করছে। সাম্প্রতিক শিকাগো কাউন্সিল অন গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স-এর বার্ষিক জরিপে গত বছর যেসব রিপাবলিকান বলেছিলেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ব বিষয়ে সক্রিয় ভূমিকা নেওয়া উচিত, তাদের সংখ্যা এবছর ৫৫ শতাংশে নেমে এসেছে। জরিপে রিপাবলিকানদের একটি সামান্য সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ বলেছে যে, একটি সক্রিয় মার্কিন আন্তর্জাতিক ভূমিকার ব্যয় এখন লাভের চেয়ে বেশি। এদিকে, ট্রাম্প ইঙ্গিত দিচ্ছেন যে, দ্বিতীয় মেয়াদে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সম্ভবত আরও বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং সুরক্ষাবাদী নীতি গ্রহন করবেন। সাম্প্রতিক প্রচারাভিযানের এক ভিডিওতে সেই সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিয়ে তিনি ঘোষণা করেছেন, ‘ন্যাটোর উদ্দেশ্য এবং ন্যাটোর লক্ষ্যকে মৌলিকভাবে পুনর্মূল্যায়ন করার জন্য আমার প্রশাসনের অধীনে যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, তা আমাদের শেষ করতে হবে’। ট্রাম্প আরও বলেছেন যে, ইলেকট্রনিক্স থেকে শুরু করে স্টিল ও ফার্মাসিউটিক্যালস পর্যন্ত সমস্ত প্রয়োজনীয় পণ্যের চীনা আমদানি বন্ধ করতে তিনি চার বছরের পরিকল্পনা আরোপ করবেন। এটা হবে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে একটি ভয়ঙ্কর পরিবর্তন। এই সমস্ত উপায়ে ট্রাম্প সাত দশক আগের রবার্ট টাফ্টের নীতি করার এবং রিপাবলিকানদের দিকনির্দেশনা নির্ধারণে আইজেনহাওয়ারের ঐতিহাসিক বিজয়কে মুছে ফেলার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।যেকোন সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রন ডিস্যান্টিস অনেক এগিয়ে থাকার কারণে, খুব সম্ভবত ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র আইজেনহাওয়ার-শৈলীর আন্তর্জাতিক সহযোগিতা থেকে বিচ্ছিন্নতা এবং একতরফাবাদের একটি অস্থির যৌগের দিকে সরে যেতে থাকবে। এবং এটি বিশ্বজুড়ে বিশাল অস্থিশীলতা সৃষ্টি করতে পারে। ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদ, যেমনটা ডালডার উল্লেখ করেছেন, আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা এবং ঐতিহ্যগত মার্কিন জোটের জন্য একটি বিশৃঙ্খল সময় ছিল। তবে ডালদার যোগ করেছেন, ‘যদি একজন বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা ২০২৪ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন, আপনার এখনও বহু কিছু দেখা বাকি আছে’। সূত্র : সিএএন।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

পাবনায় বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ

পাবনায় বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ

গাজায় দুটি গণকবরের সন্ধান, উদ্বেগ প্রকাশ জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধানের

গাজায় দুটি গণকবরের সন্ধান, উদ্বেগ প্রকাশ জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধানের

পঞ্চগড়ে বৃষ্টির জন্য ইসতেস্কার নামাজ আদায়

পঞ্চগড়ে বৃষ্টির জন্য ইসতেস্কার নামাজ আদায়

রাজধানীর ডেমরায় ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের উদ্যোগে ইসতেস্কার নামাজ অনুষ্ঠিত

রাজধানীর ডেমরায় ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের উদ্যোগে ইসতেস্কার নামাজ অনুষ্ঠিত

বিল পাস, টেনেসিতে বন্দুক নিয়ে স্কুলে যেতে পারবেন শিক্ষকরা

বিল পাস, টেনেসিতে বন্দুক নিয়ে স্কুলে যেতে পারবেন শিক্ষকরা

বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে সামুদ্রিক পরিবহন সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর

বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে সামুদ্রিক পরিবহন সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর

গাজা নিয়ে ইউরোপের নীতির সমালোচনায় অ্যামনেস্টি

গাজা নিয়ে ইউরোপের নীতির সমালোচনায় অ্যামনেস্টি

মার্কিন সিনেটে পাস হলো টিকটক নিষিদ্ধ করার বিল

মার্কিন সিনেটে পাস হলো টিকটক নিষিদ্ধ করার বিল

গণকবরে লাশ খুঁজছেন শত শত ফিলিস্তিনি মা

গণকবরে লাশ খুঁজছেন শত শত ফিলিস্তিনি মা

রাখে আল্লাহ মারে কে, অবশেষে পাশা চেয়ারম্যান

রাখে আল্লাহ মারে কে, অবশেষে পাশা চেয়ারম্যান

তারাকান্দায় ছুরিকাঘাতে যুবককে হত্যা, আটক ২

তারাকান্দায় ছুরিকাঘাতে যুবককে হত্যা, আটক ২

র‍্যাবের নতুন মুখপাত্র কমান্ডার আরাফাত ইসলামর‍্যাবের নতুন মুখপাত্র কমান্ডার আরাফাত ইসলাম

র‍্যাবের নতুন মুখপাত্র কমান্ডার আরাফাত ইসলামর‍্যাবের নতুন মুখপাত্র কমান্ডার আরাফাত ইসলাম

বিএনপির ৭ শীর্ষ আইনজীবীর আদালত অবমাননার আদেশ পেছালো

বিএনপির ৭ শীর্ষ আইনজীবীর আদালত অবমাননার আদেশ পেছালো

ব্যাংককের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করলেন প্রধানমন্ত্রী

ব্যাংককের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করলেন প্রধানমন্ত্রী

ঘন ঘন লোডশেডিং , পানির অভাবে ফাটল ধানক্ষেতে

ঘন ঘন লোডশেডিং , পানির অভাবে ফাটল ধানক্ষেতে

প্রতীক পেয়েই প্রচারণার মাঠে লক্ষ্মীপুরের প্রার্থীরা

প্রতীক পেয়েই প্রচারণার মাঠে লক্ষ্মীপুরের প্রার্থীরা

মুস্তাফিজকে হারের দায় দিতে চান না অধিনায়ক

মুস্তাফিজকে হারের দায় দিতে চান না অধিনায়ক

মঠবাড়িয়ায় ইসতেস্কার নামাজ আদায়

মঠবাড়িয়ায় ইসতেস্কার নামাজ আদায়

সব হিন্দু শরণার্থী নাগরিকত্ব পাবে ভারতের: নির্বাচনী প্রচারণায় অমিত শাহ

সব হিন্দু শরণার্থী নাগরিকত্ব পাবে ভারতের: নির্বাচনী প্রচারণায় অমিত শাহ

ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন জনপ্রিয় ডাচ অভিনেতা

ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন জনপ্রিয় ডাচ অভিনেতা