এবার ভারতীয় মিডিয়ার ‘ভুয়া খবরের ক্ষেপণাস্ত্র’ পাকিস্তানের দিকে
১০ মে ২০২৫, ১২:২০ এএম | আপডেট: ১০ মে ২০২৫, ১২:২০ এএম

গত বছরের আগস্টের ঘটনা। তখন গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যান বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে বাংলাদেশ নিয়ে ভুয়া খবর ছড়াতে থাকে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো। এবার তাদের প্রোপাগান্ডা বা ‘ভুয়া খবরের ক্ষেপণাস্ত্র’ তাক করা হয়েছে পাকিস্তানের দিকে।
গত ৬ মে রাতে ভারত পাকিস্তান ও পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরের লক্ষ্যবস্তুতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ভারতের ওই হামলার পর জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উত্তেজনা নিরসনের ডাক দেয়। সীমান্তে একের পর এক হামলা ও গোলাগুলির ঘটনার ফলে পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশের মধ্যে আরও বড় ধরনের সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এটি দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি। ৮ মে উভয় পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে নতুন করে সামরিক তৎপরতার অভিযোগ আনে।
পাকিস্তানে ভারতের হামলা নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে বিভিন্ন সংবাদ প্রচার হতে থাকে। তবে এর মধ্যে ছড়াতে থাকে নানা ভুয়া খবরও। পাকিস্তান বিমানবাহিনীর (পিএএফ) একটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ভারত ভূপাতিত করেছে-ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর এমন দাবি স্পষ্ট মিথ্যাচার ও ভুয়া সংবাদ। পাকিস্তানের নিরাপত্তা সূত্র গণমাধ্যমকে জানায়, বিপদের আশঙ্কায় এখন ভারত ভবিষ্যতের সম্ভাব্য আগ্রাসনকে যৌক্তিকতা দেওয়ার চেষ্টা করছে। তাই তারা রাজস্থান, পাঠানকোট ও ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে হামলার গল্প সাজাচ্ছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, ২০১৯ সালের ‘অপারেশন সুইফট রিটর্ট’-এর সময় ভারতের ভুয়া প্রচারণার সঙ্গে বর্তমান বিভ্রান্তিকর প্রচারের ব্যাপক মিল রয়েছে। সেই সময় পাকিস্তান বলেছিল, ভারতের বালাকোটে বিমান হামলার প্রতিক্রিয়ায় তারা দুইটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে। ভারত অবশ্য দাবি করেছিল, তাদের উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান একটি পাকিস্তানি এফ-১৬ গুলি করে ভূপাতিত করেন। যিনি মিগ-২১ থেকে বের হওয়ার পর পাকিস্তানে বন্দি হন, তিনি একটি মিগ-২১ যুদ্ধবিমান থেকে বের হওয়ার পর পাকিস্তানে বন্দি হন। কিন্তু পাকিস্তান তা অস্বীকার করেছিল।
পরে মার্কিন সাময়িকী ফরেন পলিসি সূত্র জানায়, মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা পাকিস্তানের সব এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের হিসাব নিয়েছেন এবং কোনোটি নিখোঁজ নেই-যা ভারতের দাবিকে ভুল প্রমাণ করে। এরপর পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র বলেন, ভারতের দাবি ও এর পরিণতি ভিত্তিহীন। ভারতের উচিত এখন তাদের দ্বিতীয় বিমান হারানোর সত্যটি স্বীকার করা।
তবে স্বাধীনভাবে এসব তথ্য যাচাই না করেই, ভারতের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোবিন্দ অভিনন্দন বর্তমানকে ‘পাকিস্তানি এফ-১৬ ভূপাতিত করার’ জন্য একটি পদক দেন, যেটি ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ সামরিক পদক। এদিকে, পাঠানকোট, জয়সালমির ও শ্রীনগরে পাকিস্তানের সাম্প্রতিক হামলার যে অভিযোগ ভারতীয় সংবাদমাধ্যম প্রচার করছে, তা “ভিত্তিহীন ও দায়িত্বজ্ঞানহীন” বলে কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা বলেছে, এসব দাবির কোনো ভিত্তি নেই এবং এগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও বেপরোয়া প্রচার। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গণমাধ্যমকে বলেন, বারবার মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপন ভারতের একটি কৌশলগত পরিকল্পনার অংশ, যাতে করে তারা আগ্রাসনের অজুহাত তৈরি করতে পারে এবং পুরো অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, রাতের আকাশে ছুটে যাচ্ছে ক্ষেপণাস্ত্র। বহু ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ভিডিওটি সম্প্রচার করেছে এবং দাবি করেছে, এটি পাকিস্তানের বাহাওয়ালপুরে ভারতের হামলার দৃশ্য। তবে ভারতীয় ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা অল্ট নিউজ জানায়, ভিডিওটি আসলে ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলের গাজা আক্রমণের সময়ের। একটি রিভার্স ইমেজ সার্চে দেখা যায়, ভিডিওটি স্পুটনিক আমেরিকার ২০২৩ সালের ১৩ নভেম্বর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের।
বিবিসি ভেরিফাইও বিষয়টি নিশ্চিত করেছে যে ভিডিওটির সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার কোনো সংঘর্ষ বা ভারত-পাকিস্তান পরিস্থিতির সম্পর্ক নেই। তবে ততক্ষণে ভারত ও পাকিস্তানের অনেক প্রভাবশালী সাংবাদিক ভিডিওটি এক্স (সাবেক টুইটার)-এ পোস্ট করে ক্যাপশনে উল্লেখ করেন যে এটি বাহাওয়ালপুরে হামলার দৃশ্য, যা বিভ্রান্তি ছড়ানোর ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে।
আবার ফেরা যাক বাংলাদেশে। ২০২৪ সালের ১২ আগস্ট থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়কালে অন্তত ৪৯টি ভারতীয় গণমাধ্যম বাংলাদেশ সম্পর্কে ১৩টির বেশি ভুয়া খবর ছড়ায়-এমন তথ্য উঠে আসে বাংলাদেশের ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা রিউমার স্ক্যানারের এক তদন্ত প্রতিবেদনে। ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশ সম্পর্কে ভুয়া সংবাদের বিস্তার-শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে ভুয়া দাবিগুলো যাচাই করে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যমগুলোর নামও উল্লেখ করা হয় যারা ভুল বা মিথ্যা তথ্য প্রচার করে।
রিউমার স্ক্যানার জানায়, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর থেকেই ভারতীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে একের পর এক গুজব ছড়ানো শুরু হয়। সবচেয়ে বেশি ভুয়া খবর ছড়ানোর ক্ষেত্রে শীর্ষে ছিল রিপাবলিক বাংলা, যারা মোট পাঁচটি ভুয়া তথ্য সম্প্রচার করে। হিন্দুস্তান টাইমস, জি নিউজ, এবং লাইভ মিন্ট-প্রতিটি তিনটি করে ভুয়া খবর প্রকাশ করে।
এ ছাড়া, রিপাবলিক, ইন্ডিয়া টুডে, এবিপি আনন্দ, এবং আজ তাক-প্রতিটি দুটি করে গুজব প্রচার করে। বাকি ৪১টি গণমাধ্যম প্রতিটি একটি করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভুয়া খবর ছড়ায়।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও






আরও পড়ুন

হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর ওরসে থাকবে না ‘শিরক-বিদআত’

ভারত ও চীনের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধানোর চেষ্টা করছে পশ্চিমা বিশ্ব : রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ভিডিও করার অভিযোগ, রাজবাড়িতে যুবককে পিটিয়ে হত্যা

সরকারি অফিস-ব্যাংক আজ খোলা

ওড়িশায় বজ্রপাতে একদিনেই ৯ জনের মৃত্যু

বিবর্ণ ইউনাইটেডকে হারিয়ে পয়েন্ট টেবিলে চতুর্থে চেলসি

পানিকে মারণাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে ভারত

আলোচিত শিশু আছিয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলার রায় আজ

এক হাজার বন্দি বিনিময়ে সম্মত রাশিয়া-ইউক্রেন, শান্তি আলোচনায় অগ্রগতি

জনগণের নিরাপত্তা রক্ষা করা কর্মকর্তাদের শরয়ি দায়িত্ব : আফগান প্রতিরক্ষামন্ত্রী

আফগানিস্তান ও রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্ক জোরদারে ৫টি চুক্তি স্বাক্ষর, নতুন যুগের সূচনা

যুক্তরাষ্ট্রে ঝড়ের তাণ্ডবে নিহত অন্তত ৪

ফের ইসরায়েলি হামলায় গাজায় একদিনে নিহত ১১৫ ফিলিস্তিনি

সাভারে ছাত্র জনতা হত্যা মামলার আসামি ছাত্রলীগ নেতা গ্রেফতার

‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’: জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সচিত্র দলিল

এনসিপির ‘জাতীয় যুবশক্তি’র ১৩১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা

ওড়ার পর খুলে পড়ল বিমানের চাকা, ঢাকায় জরুরি অবতরণ

ফারাক্কা বাঁধ এদেশে কারবালা তৈরি করেছে -উপদেষ্টা ফরিদা আখতার

মু’মিন হওয়ার জন্য শরিয়তের শিক্ষাকে আঁকড়ে ধরতে হবে : জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ান

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিলো সরকার