বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ভূ-কৌশলগত লড়াইয়ে চীন-রাশিয়া বনাম পশ্চিম
১০ মে ২০২৫, ১২:২০ এএম | আপডেট: ১০ মে ২০২৫, ১২:২০ এএম

এই বছর বিশ্বজুড়ে দেশগুলিতে ধারাবাহিকভাবে সামরিক কুচকাওয়াজের বিরল পর্ব অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যেখানে দেশগুলি আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা সম্পর্কে আলাদা বার্তা পাঠাচ্ছে। ঠিক যেমন, কিয়েভ বৃহস্পতিবার নাৎসিবাদের উপর স্মরণ দিবস ও বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে কুচকাওয়াজ করেছে এবং শত্রুর বিরদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার বার্তা দিয়েছে।
শুক্রবার অনুষ্ঠিত মস্কোর রেড স্কোয়ারে রাশিয়ার বার্ষিক বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজে প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সাথে মূল অতিথি হিসেবে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর উপস্থিতি, যা আরও বেশি ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব তুলে ধরেছে। চীন, মিশর, ভিয়েতনাম, মায়ানমার এবং বেশ কয়েকটি প্রাক্তন সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র সহ ১২টি দেশের সৈন্যরা এই কুচকাওয়াজে রাশিয়ান সৈন্যদের সাথে অংশগ্রহন করেছে।
পর্যবেক্ষকদের মতে, রাশিয়ার এই অনুষ্ঠানটি কেবল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি জার্মানির উপর সোভিয়েত ইউনিয়নের বিজয়ের ৮০ বছর পূর্তি উদযাপন করাই নয়, বরং সামরিক শক্তি এবং ঐতিহাসিক প্রদর্শনীর মাধ্যমে এটি পশ্চিমা চাপের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ইঙ্গিত।
এর লক্ষ্য, ইউক্রেন-রাশিয়ার দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ, চীনের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক যুদ্ধ এবং মস্কোর প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘বিপরীতধর্মী নিক্সন কৌশল’ তথা রাশিয়া ও চীনকে আলাদা করার প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, বিশ্বনেতা হিসেবে শি এবং পুতিনের বৈধতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদের অটুট বন্ধনকে তুলে ধরা।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য হিসেবে চীন ও রাশিয়ার বিশেষ দায়িত্বের কথা তুলে ধরে রবিবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, উভয় দেশ বৈশ্¦িক দক্ষিণকে ঐক্যবদ্ধ করতে, বিশ্ব শাসনকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে, পক্ষপাতিত্ববাদ এবং আধিপত্যবাদী আচরণের দৃঢ় বিরোধিতা করতে হাত মেলাবে।
রাশিয়া বিশেষজ্ঞ এবং সাংহাই একাডেমি অফ গ্লোবাল গভর্নেন্স অ্যান্ড এরিয়া স্টাডিজ-এর নির্বাহী ইয়াং চেং বলেছেন, এই অনুষ্ঠানগুলি মূলত মতবাদের প্রভাব এবং ভূ-রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের জন্য প্রতিযোগিতা। তিনি বলেন, ‘এটি রাশিয়ার কৌশলগত পুনর্গঠনকে প্রতিফলিত করে, বিশেষ করে ট্রাম্প যুগে মার্কিন-চীনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরিবর্তনশীল গতিশীলতার অধীনে, তার ক্রমবর্ধমান ভূ-রাজনৈতিক উদ্বেগের সাথে ঐতিহাসিক স্মৃতিচারণকে সামঞ্জস্য করার জন্য।’
সাংহাই-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক শেন দিংলি উল্লেখ করেছেন যে চীন, রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সেই সকল গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়, যাদের স্বতন্ত্র ভূমিকা এবং যুদ্ধ-পরবর্তী নিজস্ব মতবাদ রয়েছে, তাদের জন্য একই বছরে সামরিক কুচকাওয়াজ করা বিরল।
দিংলি বলেন, ‘সামরিক কুচকাওয়াজ যুদ্ধকালীন জোটের ভাগ করে নেয়া স্মৃতি প্রতিফলিত করে এবং প্রতিটি দেশের ঐতিহাসিক অবস্থানকে পুনর্নিশ্চিত করে। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এগুলো বৈশ্বিক শৃঙ্খলায় প্রতিটি দেশের বর্তমান অবস্থান তুলে ধরে এবং বিস্তৃতভাবে ভিন্ন ভিন্ন বার্তা বহন করে।’
চীন ৩ সেপ্টেম্বর জাপানের পরাজয়ের ৮০তম বার্ষিকী উপলক্ষে নিজস্ব সামরিক কুচকাওয়াজ আয়োজনের পরিকল্পনা করেছে এবং মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমাদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা সত্ত্বেও তার জাতীয় শক্তি এবং সামরিক আধুনিকীকরণ প্রদর্শন করবে। পুতিন এই অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। কারণ, ক্রেমলিন এই সপ্তাহে নিশ্চিত করেছে যে তিনি আগস্টের শেষ থেকে সেপ্টেম্বরের প্রথমদিকের সময়ে চীন সফর করবেন।
এদিকে, ওয়াশিংটনে শেষ সামরিক কুচকাওয়াজ হয়েছিল ১৯৯১ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধের সমাপ্তি উপলক্ষে। এবার ওয়াশিংটন ১৪ জুন মার্কিন সেনাবাহিনীর ২শ’ ৫০তম বার্ষিকী এবং ট্রাম্পের ৭৯তম জন্মদিন ৬হাজার ৬শ’ সৈন্য, ১শ’ ৫০টি যানবাহন এবং ৫০টি বিমান প্রদর্শ্যমে উৎযাপন করবে। ট্রাম্প এই সপ্তাহের ব্যয়বহুল অনুষ্ঠানটিকে সমর্থন করে বলেছেন, এটি করার মূল্য এর মাহাত্ম্যের তুলনায় নিতান্তই তুচ্ছ। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ অস্ত্র রয়েছে এবং আমরা এটি উদযাপন করতে যাচ্ছি।’
ওয়াশিংটনের স্টিমসন সেন্টার-এর চীন প্রকল্পের পরিচালক এবং পূর্ব এশিয়া প্রকল্পের সহ-পরিচালক ইউন সুন বলেন, ট্রাম্পের বার্তাটি বেশ স্পষ্ট, ‹যে বিশ্বযুদ্ধগুলি জয় এবং সমাপ্ত করার জন্য যে কৃতিত্ব নিতে পারবে, সেই শ্রেষ্ঠত্ব এবং বৈধ নেতৃত্বের অধিকারী।›
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ঝড়ের তাণ্ডবে নিহত অন্তত ৪

ফের ইসরায়েলি হামলায় গাজায় একদিনে নিহত ১১৫ ফিলিস্তিনি

সাভারে ছাত্র জনতা হত্যা মামলার আসামি ছাত্রলীগ নেতা গ্রেফতার

‘দ্য আর্ট অব ট্রায়াম্ফ’: জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সচিত্র দলিল

এনসিপির ‘জাতীয় যুবশক্তি’র ১৩১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা

ওড়ার পর খুলে পড়ল বিমানের চাকা, ঢাকায় জরুরি অবতরণ

ফারাক্কা বাঁধ এদেশে কারবালা তৈরি করেছে -উপদেষ্টা ফরিদা আখতার

মু’মিন হওয়ার জন্য শরিয়তের শিক্ষাকে আঁকড়ে ধরতে হবে : জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ান

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিলো সরকার

বিপ্লবের পরে বাংলাদেশ : সংস্কারের পথে আশা, আন্দোলন ও আলোচনা

ডিজিটাল রূপান্তরের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান সুযোগ নিশ্চিতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ -প্রধান উপদেষ্টা

আদালতকে অবজ্ঞা

দিল্লি থেকে ৪০ রোহিঙ্গাকে ধরে সাগরে ‘ফেলে দিলো’ ভারত

ওয়াকফ সংশোধনী আইনের শুনানি ফের পেছাল

ট্রাম্পের শুল্কনীতির জন্য পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে ওয়ালমার্ট

ফরিদগঞ্জে পুলিশের বাসা থেকে চুরি অস্ত্র ঢাকা থেকে উদ্ধার : আটক ২

শিশু কিশোরদেরকে আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে : ডা: আবদুল্লাহ খান

ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা

সাভারে বন বিভাগের জমি দখলে বাধা বিট কর্মকর্তাসহ আহত ৫

মানবিক করিডোর ও চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র বরদাশত করা হবে না ইসলামী ঐক্যজোট