জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব : ট্রাম্পের আদেশ নিয়ে বিপাকে মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক :

১৭ মে ২০২৫, ১২:৫৭ এএম | আপডেট: ১৭ মে ২০২৫, ১২:৫৭ এএম

ট্রাম্পের আদেশ কার্যকর হলে প্রতি বছর ১ লাখ ৫০ হাজারের বেশি নবজাতক যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত হবে। জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার সীমিত করে দেওয়া নির্বাহী আদেশ ব্যাপকভাবে প্রয়োগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চেষ্টা নিয়ে মার্কিন সুপ্রিম কোর্টে তুমুল বিতর্ক হয়েছে। প্রেসিডেন্টের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম দিনেই সই হওয়া ওই আদেশ অনুযায়ী, যেসব শিশুর বাবা-মায়ের কেউ মার্কিন নাগরিক বা গ্রিন কার্ডধারী নন, যুক্তরাষ্ট্রে জন্মালেও তারা আর নাগরিকত্ব পাবে না। রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট চাইছেন নাগরিকত্ব নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে দেওয়া প্রচলিত ব্যাখ্যায় বড় পরিবর্তন আনতে, তার এ চেষ্টা সফল হলে তা প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া লাখো শিশুর নাগরিকত্বকে ঝুঁকির মুখে ফেলবে, বলছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। ট্রাম্পের ওই আদেশ বাস্তবায়নে স্থগিতাদেশ দিয়েছেন মেরিল্যান্ড, ওয়াশিংটন ও ম্যাসাচুসেটসের ফেডারেল বিচারকরা। ট্রাম্প প্রশাসন চাইছে, এ বিচারকদের ক্ষমতা খর্ব করতে যেন তাদের আদেশ দেশজুড়ে কার্যকর না হয়। সুপ্রিম কোর্টের রক্ষণশীল বিচারকরা নিম্ন আদালতের বিচারকদের এই ক্ষমতা খর্বে নিমরাজি বলে মনে হলেও তাদের কেউ এখন পর্যন্ত সরাসরি ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের পক্ষে অবস্থান নেননি, বলেছে রয়টার্স। সুপ্রিম কোর্টে রক্ষণশীলদের ৬-৩ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। লিবারেল বিচারকরা বলছেন, ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান এবং নাগরিকত্ব বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আগের আদেশগুলোর লংঘন। ট্রাম্পের আদেশ আটকে দেওয়া স্থগিতাদেশগুলো প্রত্যাহারে প্রশাসনের জরুরি আবেদন নিয়ে বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে দুই ঘণ্টার বেশি শুনানি হয়েছে। সরকারপক্ষের যুক্তি হচ্ছে, ফেডারেল বিচারকরা দেশজুড়ে একসঙ্গে স্থগিতাদেশ দেওয়ার এখতিয়ার রাখেন না। সেজন্য তাদের স্থগিতাদেশগুলো বাতিল করে প্রশাসনকে প্রেসিডেন্টের আদেশ বাস্তবায়নের সুযোগ করে দিতে হবে। প্রশাসনের পক্ষে সলিসিটর জেনারেল ডি জন সাওয়ার বলেন, বিচারকদের দেশজুড়ে স্থগিতাদেশ জারির ক্রমবর্ধমান প্রবণতা ‘বিকারে’ পরিণত হয়েছে। লিবারেল বিচারক সোনিয়া সোটোমেয়র বলেছেন, “আমরা যদি সেই হাজার হাজার শিশুর কথা চিন্তা করি, নাগরিকত্বের কাগজপত্র ছাড়া জন্মগ্রহণ করায় যারা রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়তে পারে এবং তারা সরকারি সুযোগ-সুবিধাও পাবে না, তাহলে অবশ্যই আদালতের এই (নির্বাহী) আদেশের বৈধতা বিবেচনা করা উচিত।” ট্রাম্পের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে যারা মামলা করেছে তারা বলছেন, প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশ কার্যকর হলে প্রতি বছর দেড় লাখের বেশি নবজাতক নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত হবে। মামলাকারীদের তালিকায় ২২টি অঙ্গরাজ্যের ডেমোক্র্যাট অ্যাটর্নি জেনারেলের পাশাপাশি অভিবাসন অধিকার কর্মী ও অন্তঃসত্ত্বা অভিবাসীরাও আছেন। তাদের মতে, ১৮৬৮ সালে দাসপ্রথা বিলুপ্তির পর গৃহযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে গৃহীত ১৪তম সংশোধনী অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া সবাই নাগরিকÑ এটাই দীর্ঘদিনের প্রতিষ্ঠিত ব্যাখ্যা। ১৮৯৮ সালের ‘ওং কিম আর্ক’ মামলায় সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছিলÑঅভিবাসী বাবা-মায়ের ঘরে জন্ম হলেও শিশু নাগরিকত্ব পাবে। ট্রাম্প প্রশাসনের মতে, ওই রায় কেবল ‘স্থায়ীভাবে বসবাসরত’ অভিবাসীদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। বিচারক ব্রেট কাভানা আদেশটির বাস্তবিক প্রয়োগ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন, “আদেশটি কার্যকর হলে হাসপাতালগুলো নবজাতকদের নিয়ে কী করবে? রাজ্যগুলো কীভাবে নাগরিকত্ব দেবে, কিংবা দেবে না?” অনেকে মনে করছেন, সুপ্রিম কোর্ট ট্রাম্পের আদেশের কার্যকারিতা কেবল ওইসব অঙ্গরাজ্যেই স্থগিত রাখতে পারে যেসব অঙ্গরাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেলরা মামলা লড়ছেন। তবে এক্ষেত্রেও নতুন এক জটিলতার সৃষ্টি হবে। “একটি রাজ্যে শিশুরা নাগরিক হবে, আরেকটিতে হবে নাÍএটা সরকারি সেবা পরিচালনায় বড় সমস্যার সৃষ্টি করবে,” বলেছেন আইনজীবী জেরেমি ফেইগেনবাউম। রয়টার্স।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় ভয়াবহ বিমান হামলা

পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় ভয়াবহ বিমান হামলা

মারা গেছেন শিল্পপতি সঞ্জয় কাপুর

মারা গেছেন শিল্পপতি সঞ্জয় কাপুর

ভারতের বিমান দুর্ঘটনায় শোক প্রকাশ করলেন ট্রাম্প

ভারতের বিমান দুর্ঘটনায় শোক প্রকাশ করলেন ট্রাম্প

ইসরায়েলের হামলায় ইরানের ২ পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত

ইসরায়েলের হামলায় ইরানের ২ পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত

বিদেশী জিহাদী কাফেলা আখ্যা দিয়ে ‘কাফেলাতুস সুমুদকে’ প্রতিরোধের ঘোষণা ইসরাইলের

বিদেশী জিহাদী কাফেলা আখ্যা দিয়ে ‘কাফেলাতুস সুমুদকে’ প্রতিরোধের ঘোষণা ইসরাইলের

ঈদের ছুটি শেষ : সরকারি-বেসরকারি কলেজ খুলবে রোববার

ঈদের ছুটি শেষ : সরকারি-বেসরকারি কলেজ খুলবে রোববার

ইসরায়েলের হামলায় ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের প্রধান নিহত

ইসরায়েলের হামলায় ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের প্রধান নিহত

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা, পাল্টা জবাবের আশঙ্কায় ইসরাইলজুড়ে সতর্কতা

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা, পাল্টা জবাবের আশঙ্কায় ইসরাইলজুড়ে সতর্কতা

অবাধে চলছে রেনু পোনা শিকার, ধ্বংস হচ্ছে নদীর জীব বৈচিত্র্য

অবাধে চলছে রেনু পোনা শিকার, ধ্বংস হচ্ছে নদীর জীব বৈচিত্র্য

তেহরানের আবাসিক এলাকায় হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল

তেহরানের আবাসিক এলাকায় হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল

ইরানে হামলা: ট্রাম্পের সহযোগী বলল ‘খেলা শুরু’

ইরানে হামলা: ট্রাম্পের সহযোগী বলল ‘খেলা শুরু’

পটুয়াখালীর গলাচিপায় বিএনপি ও গণঅধিকার পরিষদের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ, বিএনপি অফিস ভাংচুর

পটুয়াখালীর গলাচিপায় বিএনপি ও গণঅধিকার পরিষদের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ, বিএনপি অফিস ভাংচুর

মধ্যরাতে ইরানে ইসরায়েলের হামলা, উত্তেজনা তুঙ্গে

মধ্যরাতে ইরানে ইসরায়েলের হামলা, উত্তেজনা তুঙ্গে

উইম্বলডনের প্রাইজমানি বাড়ল ৭ শতাংশ

উইম্বলডনের প্রাইজমানি বাড়ল ৭ শতাংশ

ঈশ্বরগঞ্জে বিএনপির কর্মী সম্মেলনে মানুষের ঢল

ঈশ্বরগঞ্জে বিএনপির কর্মী সম্মেলনে মানুষের ঢল

যশোর রেলস্টেশনে ভারতীয় কসমেটিকসহ আটক ৩

যশোর রেলস্টেশনে ভারতীয় কসমেটিকসহ আটক ৩

উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যা

উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যা

বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ছাগলনাইয়া মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ

বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ছাগলনাইয়া মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ

রোমাঞ্চকর শেষের অপেক্ষায় লর্ডসের ফাইনাল

রোমাঞ্চকর শেষের অপেক্ষায় লর্ডসের ফাইনাল

টিউলিপ সিদ্দিকীর কূটচাল: বেকায়দায় পড়তে যাচ্ছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী

টিউলিপ সিদ্দিকীর কূটচাল: বেকায়দায় পড়তে যাচ্ছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী