বিশ্বকে কি নতুন অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিলেন ট্রাম্প
২৩ জুন ২০২৫, ১২:১০ এএম | আপডেট: ২৩ জুন ২০২৫, ১২:১০ এএম

বিভিন্ন প্রশাসনের মধ্যপ্রাচ্য নীতিতে কাজ করা সাবেক মার্কিন কূটনীতিক ব্রেট ম্যাগার্কের মতে, ‘এই যুদ্ধের ভবিষ্যৎ কীÑ তা কেউই জানে না। কেউ যদি দাবি করে জানে, তাহলে সে মিথ্যা বলছে।‘ ট্রাম্প হয়তো মনে করছেন, এই হামলা তার নেতৃত্বের শক্তি, সাহস এবং কৌশলগত বিচক্ষণতার প্রমাণ। কিন্তু ইতিহাস বলছে, যুদ্ধ শুরু করা সহজ, শেষ করা কঠিন। আফগানিস্তান ও ইরাকÑ দুই জায়গাতেই শুরুতে ‘বিজয়’ পাওয়া গিয়েছিল, কিন্তু এরপর তা পরিণত হয়েছিল দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে, যা বহু প্রাণহানির কারণ হয়েছে। শনিবার মধ্যরাতে যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এমন একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যা শুধু যুক্তরাষ্ট্র বা ইরানের মধ্যকার সংঘাতকেই তীব্রতর করল না, বরং গোটা মধ্যপ্রাচ্য এবং বৈশ্বিক রাজনীতিকেও এক ভয়ঙ্কর মোড়ের দিকে ঠেলে দিল। বি-২ স্টিলথ বোমারু বিমানের মাধ্যমে ইরানের তিনটি প্রধান পারমাণবিক স্থাপনায় আঘাত হেনেছে যুক্তরাষ্ট্র। যার মধ্যে অন্যতম ফোর্দো পারমাণবিক কেন্দ্র। পর্বতের গভীরে অবস্থিত এই পারমাণবিক কেন্দ্রটি দীর্ঘদিন ধরে ইসরাইল ও পশ্চিমা দেশগুলোর নজরদারিতে ছিল। ট্রাম্পের দাবি, এই হামলায় ইরানের পরমাণু সক্ষমতা ‘সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস’ করা হয়েছে। কিন্তু বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ দাবির সত্যতা এখনো যাচাই হয়নি। অনেকের সন্দেহ, ইরান তাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম গোপন জায়গায় চালিয়ে যেতে পারে। আংশিক সক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে পারে, যা পরবর্তীতে আবার সক্রিয় হতে পারে। এই হামলা আসলে একটি বিশাল ঝুঁকি ও রাজনৈতিক বাজি। ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, ‘ইরানকে এখন শান্তি গ্রহণ করতে হবে, না হলে ভবিষ্যতের আঘাত হবে আরো ভয়াবহ।‘ তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ। এই হামলার জন্য তিনি কংগ্রেসের অনুমতি নেননি, এমনকি আমেরিকান জনগণ বা বিশ্বের সামনে কোনো প্রমাণও হাজির করেননি যে, ইরান কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পরমাণু অস্ত্র বানিয়ে ফেলত। বিভিন্ন প্রশাসনের মধ্যপ্রাচ্য নীতিতে কাজ করা সাবেক মার্কিন কূটনীতিক ব্রেট ম্যাগার্কের মতে, ‘এই যুদ্ধের ভবিষ্যৎ কীÍতা কেউই জানে না। কেউ যদি দাবি করে জানে, তাহলে সে মিথ্যা বলছে।’ তাৎক্ষণিকভাবে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলÍইরান কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে? যদিও ইসরাইল গত আট দিন ধরে ইরানে বোমাবর্ষণ চালিয়ে তাদের কিছুটা দুর্বল করে দিয়েছে, তবুও ইরান এখনো পুরোপুরি নিশ্চেষ্ট হয়ে বসে নেই। তারা যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিতে, উপসাগরীয় অঞ্চলে মিত্রদের বিরুদ্ধে, কিংবা হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দিয়ে বৈশ্বিক তেল সরবরাহে বন্ধ করে দিতে পারে। এই ঘটনার রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়াও জোরালো হচ্ছে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এই হামলাকে ‘বিপজ্জনক উত্তেজনার বিস্তার’ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ‘এটি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার সরাসরি হুমকি।‘ ইরান বলেছে, তারা তাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। এই ‘আইনবহির্ভূত আগ্রাসনের’ স্থায়ী প্রতিক্রিয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে তেহরান। এই হামলার ভেতরে একটি কৌশলগত মানসিকতা কাজ করেছে। ট্রাম্প মনে করছেন, ইসরাইলকে একটি স্থায়ী নিরাপত্তা দিচ্ছেন, একই সঙ্গে নিজের রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা এবং ‘শক্তিশালী নেতা’ হিসেবে ভাবমূর্তি গড়ে তুলছেন। তবে সমালোচকেরা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রকে একটি নতুন দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধে জড়াতে পারেÑ যা ছিল তার নীতির সম্পূর্ণ বিপরীত। কারণ তিনি ক্ষমতায় এসেছিলেন ‘যুদ্ধের অবসান ঘটানো’-এর অঙ্গীকার নিয়ে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি তার দেশের পরমাণু কর্মসূচিকে জাতীয় মর্যাদা ও বিপ্লবের প্রতীক হিসেবে দেখেন। এখন, সেই কর্মসূচির ওপর সরাসরি হামলা তার নেতৃত্বের চরম অপমানÑ এমনকি ব্যক্তিগত হুমকি হিসেবেও বিবেচিত হতে পারে। এ অবস্থায় তার নীরব থাকা অসম্ভব। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, এটি ইরানের অভ্যন্তরে দমনপীড়নের মাত্রা বাড়াতে পারে, এমনকি গৃহযুদ্ধ বা শাসনব্যবস্থার ভেঙে পড়ার আশঙ্কাও তৈরি হতে পারে। ইসরাইল মনে করছে, তাদের এই কৌশল হয়তো ইরানি শাসনব্যবস্থাকে দুর্বল করবে। কিন্তু অনেক বিশ্লেষক বলছেন, এতে হয়ত আরো বিপজ্জনক পরিস্থিতির তৈরি হবে। ট্রাম্প হয়তো মনে করছেন, এই হামলা তার নেতৃত্বের শক্তি, সাহস এবং কৌশলগত বিচক্ষণতার প্রমাণ। কিন্তু ইতিহাস বলছে, যুদ্ধ শুরু করা সহজ, শেষ করা কঠিন। আফগানিস্তান ও ইরাকÑ দুই জায়গাতেই শুরুতে ‘বিজয়’ পাওয়া গিয়েছিল, কিন্তু এরপর তা পরিণত হয়েছিল দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে, যা বহু প্রাণহানির কারণ হয়েছে। এই হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক মানচিত্র হয়তো বদলে যাবে। কিন্তু এই পরিবর্তন শান্তির দিকে যাবে, না আরো সংঘাতেরÍতা নির্ধারিত হবে আসন্ন সপ্তাহগুলোতে ইরান কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা কীভাবে কূটনৈতিক পরিসরে সংকট মোকাবিলা করে এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণÍএই যুদ্ধের মানবিক পরিণতি কতটা ভয়াবহ হয়ে ওঠে তার ওপর। কারও মতে ট্রাম্প সাহসিকতা দেখিয়েছেন। আরেক পক্ষের মতে, বিশ্বকে ঠেলে দিয়েছেন এক নতুন অন্ধকারের দ্বারপ্রান্তে। সিএনএন।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

মুক্তির অপেক্ষায় জয়ার ৩ সিনেমা

হাসপাতালে কিয়ারা, আজই হতে পারেন মা

ঢাকায় ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদে কলাপাড়ায় মশাল মিছিল

উত্তরা সেনাবাহিনীর হাতে চাঁদাবাজ মিলনসহ গ্রেফতার ৬

মিটফোর্ডে প্রকাশ্যে খুন: তদন্তে অগ্রগতি, বিভ্রান্তিকর প্রচারে ডিএমপির সতর্কবার্তা

ফের লর্ডস টেস্টে হাসল রাহুলের ব্যাট,তিন দিন শেষে সমানে সমান ভারত-ইংল্যান্ড

যারা সরাসরি সংশ্লিষ্ট রহস্যজনকভাবে সেই মূল তিন আসামীকে বাদ দেয়া হয়েছে :যুবদল সভাপতি

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনকে অবশ্যই ‘সঠিক পথ’ খুঁজে বের করতে হবে

বিচারহীনতা ও রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতার জঘন্য পরিণতি সোহাগ হত্যাকাণ্ড :বিভিন্ন ইসলামী দলের তীব্র প্রতিবাদ

অমীমাংসিত কিছু বিষয়, শুল্কছাড় নিয়ে আবার আলোচনায় বসবে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ

এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার আগে জ্বালানি সুইচ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল

ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে চাই -স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

মূল্য যুদ্ধের অবসান ঘটাতে পদক্ষেপ নিচ্ছে চীন

রূপগঞ্জে ৩৪ বছর পর মসজিদের ওয়াকফকৃত ৪১ শতক জমি উদ্ধার করল গ্রামবাসী

বন্দরে বিএনপি নেতাদের চাঁদা না দেয়ায় মসজিদের বালু ভরাট কাজ বন্ধ

পাল্টা শুল্কের শঙ্কায় বাংলাদেশ থেকে পোশাকের ক্রয়াদেশ পিছিয়েছে ওয়ালমার্ট

দুই হত্যার প্রাপ্ত টাকা মসজিদে দান করে দেয় র্যাব কর্মকর্তা

মালয়েশিয়ায় আন্তর্জাতিক মেশিনারি মেলায় অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ

টাকা পয়সার সঙ্গে জামা জুতাও নিয়ে যায় ছিনতাইকারী

সউদী আরবে সম্পত্তি কিনতে পারবেন বিদেশিরা