ট্রাম্পের বিশ্বাসঘাতকতা
২৩ জুন ২০২৫, ০১:১০ এএম | আপডেট: ২৩ জুন ২০২৫, ০১:১০ এএম

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের আলোচনা চলাকালীন গত ১৩ জুন আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ইরানে হামলা চালায় ইসরাইল। এ হামলাকে শুরু থেকেই সমর্থন দিয়ে আসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর পর গত বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউজের তরফে জানানো হয়েছিল, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট সিদ্ধান্ত নেবেন, ইরানের উপরে সামরিক অভিযান চালানো হবে কি-না। কিন্তু দুদিন পরই শনিবার রাতে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। হঠকারী এ হামলার পর ট্রাম্প গর্ব করে বলেছেন, ‘আমরা ফোরদো, নাতানজ, ইসফাহানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা করেছি।’
ট্রাম্প জানিয়েছেন, ‘ফোরদোতে মাটির তলায় পরমাণু কেন্দ্র ধ্বংস হয়ে গেছে।’ এর আগে ইসরাইল ইরানের অন্য পারমাণবিক স্থাপনায় আক্রমণ করলেও ফোরদো আক্রমণ করেনি। এবার যুক্তরাষ্ট্র সেখানে আক্রমণ চালাল। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ হামলায় বি-টু বোমারু বিমান জড়িত। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স একজন মার্কিন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে। এর আগে, মার্কিন বি-টু স্টিলথ বোমারু বিমানগুলোকে মার্কিন দ্বীপপুঞ্জ গুয়ামে স্থানান্তরিত করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছিল। যার ফলে জল্পনা- কল্পনা শুরু হয় যে, বিমানটি ইরানে মার্কিন হামলায় জড়িত থাকতে পারে।
এদিকে, আনুষ্ঠানিকভাবে ফোরদো, নাতানজ এবং ইসফাহানের হামলার কথা স্বীকার করেছে ইরান। দেশটির কর্মকর্তারা গণমাধ্যমে বিষয়টি জানিয়েছে। হামলার জবাবে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি এক টেলিভিশন ভাষণে বলেছেন, এই হামলার মাধ্যমে ট্রাম্প শুধু ইরানই নয়; বরং আমেরিকার জনগণের সাথেও ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ করেছেন। তিনি বলেন, ‘ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্ট হন, তখন বলেছিলেনÑ তিনি মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার দীর্ঘ ও ব্যয়বহুল যুদ্ধে জড়ানো বন্ধ করবেন। কিন্তু এখন তিনি তা না করে উল্টো আমাদের সঙ্গে কূটনীতির নামে প্রতারণা করেছেন এবং আমেরিকার জনগণকেও ঠকিয়েছেন। তিনি এমন একজন যুদ্ধাপরাধীর নির্দেশে কাজ করছেন, যিনি বহুদিন ধরে আমেরিকার মানুষ ও তাদের অর্থ ব্যবহার করে ইসরাইলের স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছে।’
হামলার সিদ্ধান্ত অসাংবিধানিক, মত মার্কিন আইন প্রণেতাদের : ইরানে ট্রাম্পের হামলার পরে ট্রাম্পের তীব্র সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের অনেক প্রভাবশালী আইন প্রণেতা। কয়েকজন সিনেটর যেমন এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন, তেমনি তার দলেরই অনেকে এটিকে ‘অসাংবিধানিক’ বলে সমালোচনাও করেছেন। ওহাইওর রিপাবলিকান প্রতিনিধি ওয়ারেন ডেভিডসন, যিনি সাধারণত ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, ‘ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত ন্যায়সঙ্গত হতে পারে, কিন্তু এটিকে সংবিধানসম্মত বলা কঠিন।’ কেন্টাকির রিপাবলিকান প্রতিনিধি থমাস ম্যাসি ট্রাম্পের ঘোষণার জবাবে বলেন, ‘এটি সাংবিধানিক নয়’। তিনি এ সপ্তাহে একটি দ্বিদলীয় প্রস্তাবনা উত্থাপন করেন, যেখানে বলা হয়েছেÑ কংগ্রেস কর্তৃক যুদ্ধ ঘোষণা বা নির্দিষ্ট অনুমোদন ছাড়া ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নিষিদ্ধ থাকবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ট্রাম্পের ট্রুথ সোশ্যালের পোস্টটি পুনরায় শেয়ার করেছেন, তবে এখনো পর্যন্ত এই হামলা সম্পর্কে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেননি।
শনিবার রাতে হোয়াইট হাউজ থেকে ট্রাম্প হামলার পক্ষে সাফাই দেন কিন্তু এর সাংবিধানিক ভিত্তি নিয়ে কিছু বলেননি। ডেমোক্র্যাট সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স এক ভাষণে ট্রাম্পের কর্মকা-কে ‘চরম অসাংবিধানিক’ বলে আখ্যা দেন। ওকলাহোমার তুলসা শহরে সমাবেশে তিনি বলেন, ‘এই দেশে যুদ্ধ ঘোষণা করার ক্ষমতা কেবল কংগ্রেসের রয়েছে। প্রেসিডেন্টের কোনো একক অধিকার নেই।’ তার বক্তব্যের সময় শ্রোতারা ‘আর যুদ্ধ নয়!’ সেøাগানে মুখর হয়। ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসওম্যান আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্তেজ বলেন, ‘কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া প্রেসিডেন্টের ইরানে বোমাবর্ষণ করা স্পষ্ট ও পরিষ্কারভাবে অভিশংসনযোগ্য অপরাধ।’ তিনি ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে সংবিধান ও কংগ্রেসের যুদ্ধক্ষমতা আইনের গুরুতর লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেন। ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি শন কাস্টেন বলেন, ‘কোনো প্রেসিডেন্টের এমন কোনো অধিকার নেই যে, তিনি কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়া কোনো দেশে বোমাবর্ষণ করবেন, যদি সেই দেশ যুক্তরাষ্ট্রের ওপর তাৎক্ষণিক হুমকি না হয়ে থাকে। এটি স্পষ্টভাবে অভিশংসনযোগ্য অপরাধ।’ তিনি হাউস স্পিকার মাইক জনসনকে আহ্বান জানান, যেন তিনি কংগ্রেসের যুদ্ধক্ষমতা রক্ষায় নেতৃত্ব দেন। তবে মাইক জনসন ট্রাম্পের পক্ষ নিয়ে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট কংগ্রেসের ক্ষমতা শ্রদ্ধা করেন এবং এই প্রয়োজনীয়, সীমিত ও লক্ষ্যভিত্তিক হামলাটি অতীতের উভয় দলের প্রেসিডেন্টদের গৃহীত পদক্ষেপের ধারাবাহিকতায় হয়েছে।’ সিনেট সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা রিপাবলিকান জন থুন ট্রাম্পের সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েছেন, যা রিপাবলিকান-নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেসে ট্রাম্পের জন্য রাজনৈতিকভাবে সহায়ক হতে পারে। এছাড়া হাউজের সংখ্যালঘু নেতা হাকিম জেফরিজ বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট কংগ্রেসের অনুমোদন না নিয়ে সামরিক পদক্ষেপ নিয়ে এক বিপজ্জনক পথে হেঁটেছেন, যা আমাদের মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে।’ হাউজ ডেমোক্র্যাটদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা ক্যাথারিন ক্লার্ক আরো সরাসরি বলেন, ‘যুদ্ধ ঘোষণা করার ক্ষমতা একমাত্র কংগ্রেসের। প্রেসিডেন্টের এককভাবে ইরানে হামলা চালানো অবৈধ ও অসাংবিধানিক। এর মাধ্যমে তিনি আমাদের সেনা ও কূটনৈতিক কর্মীদের ঝুঁকির মুখে ফেলেছেন।’ সিনেট সংখ্যালঘু নেতা চাক শুমার ডেমোক্র্যাট সিনেটর টিম কেইনের একটি প্রস্তাব সমর্থন করেছেন, যেখানে প্রেসিডেন্টকে সামরিক পদক্ষেপ নেয়ার আগে কংগ্রেসের অনুমোদন নিতে বাধ্য করার কথা বলা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘২০১৬ সালের নির্বাচনে ট্রাম্প ইরাক যুদ্ধের সমালোচনার মাধ্যমে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন, আর আজ তিনি নিজেই সেই ভুলের পুনরাবৃত্তি করছেন।’
তার এই পদক্ষেপকে মার্কিন সংবিধানের ‘লঙ্ঘন’ বলে অভিহিত করেছে মার্কিন কংগ্রেসের সদস্যা রশিদা তালাইব। এক্স মাধ্যমে তিনি লিখছেন, ‘আবেগপ্রবণ হয়ে এমন একটি যুদ্ধ তিনি শুরু করেছেন যা আমেরিকার প্রজন্মের পর প্রজন্মকে শেষ করে দিতে পারে।’ কংগ্রেসের আর এক মহিলা সদস্য আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজও একই কথা বলছেন, যে এই বোমাবর্ষণ সংবিধান এবং কংগ্রেসের যুদ্ধ ক্ষমতার ‘গুরুতর লঙ্ঘন’। আর এক কংগ্রেস সদস্য জিম ম্যাকগভর্ন বলছেন, ট্রাম্প কংগ্রেসের অনুমাতি ছাড়াই ইরানে বোম ফেলেছেন। অবৈধভাবে আমেরিকানদের মধ্যপ্রাচ্য চলা উত্তেজনার মধ্যে টেনে নিয়ে গিয়েছেন। যদিও এই পদক্ষেপের জন্য ট্রাম্পের প্রশংসা করেছেন রিপাবলিকান সেনেটর মিচ ম্যাককনেল। যদিও সেনেটের ইন্টেলিজেন্স কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান মার্ক ওয়ার্নার বলেছেন, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আরো একটি যুদ্ধে টেনে নিয়ে যেতে পারে। আর তেমন হলে আগামী কয়েক বছর ধরে আমেরিকানদের জীবন ও সম্পদের বিরাট ক্ষতি হতে পারে।
ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ‘ধ্বংসপ্রাপ্ত’ : ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার পরদিন পেন্টাগনে ব্রিফিং করেছেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ। ব্রিফিংয়ের শুরুতেই তিনি জানান, শনিবার রাতের হামলা পরিকল্পিতভাবে ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা ‘দুর্বল’ এবং ‘ধ্বংস’ করার জন্য চালানো হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘এই হামলায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ‘ধ্বংসপ্রাপ্ত’ হয়েছে। তবে সামরিক বা বেসামরিক লোক হতাহত হয়নি’। হেগসেথ আরো বলেন, ‘বহু প্রেসিডেন্টই ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে চূড়ান্ত আঘাত হানার স্বপ্ন দেখেছেন। কিন্তু ট্রাম্প ছাড়া কেউই তা বাস্তবায়ন করতে পারেননি।’ যে কারণে এই অভিযানকে সাহসী ও দুর্দান্ত বলেও আখ্যা দেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। ‘যখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কথা বলেন, তখন বিশ্বের তা শোনা উচিত’ যোগ করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া আর কোনো দেশই এ ধরনের অভিযান চালাতে পারত না।’
আগেই পারমাণবিক উপকরণ সরানো হয়েছে : ইরানের তিন পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার কথা নিশ্চিত করে ইরান জানিয়েছে, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহানেও পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা হয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার আগেই তিনটি পরমাণু কেন্দ্রের পারমাণবিক উপকরণ সরিয়ে নেয়া হয়েছিল। তাই তিন পারমাণবিক স্থাপনায় কোনো পদার্থ নেই যা তেজষ্ক্রিয়তা সৃষ্টি করে। ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভির উপ-রাজনৈতিক পরিচালক হাসান আবেদিনি বলেন, আগেই আমরা তিনটি পরমাণু কেন্দ্র আগেই খালি করে ফেলেছিলাম। যদি ট্রাম্পের কথা সত্যি হয়ও আমরা বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়িনি। কারণ পারমাণবিক উপকরণ আগেই সরিয়ে ফেলা হয়েছিল।
তেল আবিব ও হাইফায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি : ইসরাইলে নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। গতকাল ইসরাইলজুড়ে বেশ কিছু লক্ষ্যবস্তুকে উদ্দেশ্য করে এসব ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ে দেশটি। ইরানের এই হামলার মধ্যে জেরুজালেমে একাধিক বিস্ফোরণের শব্দও শোনা গেছে। এছাড়া তেল আবিব ও হাইফায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ইরান থেকে দুটি দফায় মোট ২৭টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া হয়েছে। প্রথম দফায় ২২টি এবং দ্বিতীয় দফায় পাঁচটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া হয়। হামলার লক্ষ্যবস্তুও ছিল বেশ বিস্তৃতÑ সিরিয়ার দখলীকৃত গোলান হাইটস অঞ্চল থেকে শুরু করে আপার গ্যালিলি, আবার উত্তর ও মধ্য উপকূলীয় এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত অংশে হামলা চালানো হয়। এ পর্যন্ত ১০টি ভিন্ন স্থানে ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি বা বড় আকারের শার্পনেলের আঘাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে তেল আবিব ও হাইফা শহরে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা বেশি। তবে ঠিক কোন ধরনের ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ইসরাইলের মেডিকেল সার্ভিস প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে, এই হামলায় ১৬ জন পর্যন্ত আহত হতে পারে। চিকিৎসা দলগুলো এখনো ঘটনাস্থলে তল্লাশি চালাচ্ছে, যেন কেউ চিকিৎসাবিহীন অবস্থায় পড়ে না থাকে। এদিকে ইরান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া হয়েছে, এমন সতর্কবার্তার পরই জেরুজালেমে একাধিক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।
পুতিনের সাথে বৈঠক করতে রাশিয়ায় যাচ্ছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী : যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সাথে সাক্ষাতের কথা জানিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি। আজ সোমবার ভøাদিমির পুতিনের সাথে আলোচনা করবেন তিনি। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেছেন, তিনি (রোববার) সন্ধ্যায় মস্কো যাবেন এবং আগামীকাল (সোমবার) রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সাথে আলোচনা করবেন। আরাঘচি বলেছেন, ‘আমি আগামীকাল রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করব এবং আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।’ ইরানের ওপর মার্কিন হামলার স্পষ্ট নিন্দা জানানো দেশগুলোর মধ্যে চীনের পাশাপাশি রাশিয়া এবং মিসর ও ওমানের মতো বেশ কয়েকটি আরব দেশও রয়েছে। এই বছরের শুরুর দিকে রাশিয়া এবং ইরান একটি কৌশলগত জোট চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। যার প্রথম ধারাটি সামরিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতার উপর জোর দেয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রকে অনুশোচনা করানোর হুমকি ইরানের বিপ্লবী গার্ডের : যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর প্রথম প্রতিক্রিয়ায় ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডস বা বিপ্লবী বাহিনী বলেছে, তারা ওয়াশিংটনকে এমনভাবে পাল্টা জবাব দেবে যে, তারা অনুশোচনা করতে বাধ্য হবে। তারা দাবি করেছে, আমেরিকার ওই হামলা ‘প্রকাশ্য অপরাধ’ ও ‘আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন’।
যুক্তরাষ্ট্রকে তীব্র নিন্দা বিশ্বনেতাদের : ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলার পর বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় সব পক্ষকে আলোচনায় বসে শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সতর্ক করেছেন, যদি এটি ‘নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়’ তবে তা মানবজাতির জন্য ‘বিপর্যয়কর’ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। এই কথাগুলোর মাধ্যমে গুতেরেস যুক্তরাষ্ট্রের হামলার সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছেন।
সউদী আরব ইরানের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছে। অন্যদিকে, ওমানÑযেখানে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে আলোচনা হয়েছেÑ এই হামলার নিন্দা জানিয়ে উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানিয়েছে। ইরান ঘিরে উত্তেজনা বৃদ্ধির নিন্দা জানিয়েছে মিসর। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ‘বর্তমান বিপজ্জনক উত্তেজনা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিকভাবে বিপর্যয়কর পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যেতে পারে।’ ইরাকও ইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচিকে লক্ষ্যবস্তু কররার মাধ্যমে বিপজ্জনকভাবে উত্তেজনা বৃদ্ধি ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি তৈরি হচ্ছে। উত্তেজনা প্রশমনে দ্রুত কূটনৈতিক আলোচনার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে ইরাক। লেবাননের প্রধানমন্ত্রী জোসেফ আউন বলেছেন, ‘ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা উত্তেজনা আরো বাড়িয়ে দিতে পারে, যার ফলে আঞ্চলিক ও একাধিক দেশের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে।’
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলায় জোরালো নিন্দা জানিয়েছে রাশিয়া ও চীন। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, আন্তর্জাতিক আণবিক সংস্থার নজরদারিতে থাকা ওই স্থাপনাগুলোয় হামলায় তারা জোর নিন্দা জানাচ্ছে, যা জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘন। এই ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা আরো বাড়িয়ে দেবে জানিয়ে সব পক্ষকে হামলা বন্ধ করা ও দ্রুত আলোচনায় ফেরার জন্য তাগিদ দিয়েছে চীন। অন্যদিকে মার্কিন হামলার জোর সমালোচনা করেছে রাশিয়া। দেশটি বলেছে, ‘কোনো ন্যায্যতা ছাড়া একটি সার্বভৌম দেশের ওপর এই হামলা একটি ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন সিদ্ধান্ত’, যা জাতিসংঘ সনদ, আন্তর্জাতিক আইন ও নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবনার লঙ্ঘন।’ ‘সকল ধরনের আগ্রাসন’ বন্ধের দাবি জানিয়েছে রাশিয়া। সেই সাথে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টির জন্য আহ্বান জানিয়েছে।
লাতিন আমেরিকায়, চিলি, বলিভিয়া, ভেনেজুয়েলা এবং কিউবার রাষ্ট্রপ্রধানরা যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছেন। বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট লুইস আর্স এবং কিউবার প্রেসিডেন্ট রাফায়েল দিয়াস-কানেল একমত হন যে যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত জাতিসংঘ সনদের লঙ্ঘন এবং আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী। ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর প্রশাসনের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলা ‘একটি অবৈধ, অযৌক্তিক এবং অত্যন্ত বিপজ্জনক আগ্রাসনের কাজ’। চিলির প্রেসিডেন্ট গাব্রিয়েল বোরিচ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর আহ্বান জানান। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা এই অর্থে ব্যবহার করা উচিত নয় যে তারা ‘মানবজাতি হিসেবে আমরা যেসব নিয়ম তৈরি করেছি, তা লঙ্ঘন করতে পারে।’
অন্যদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কায়া কাল্লাস বলেন, ‘ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে দেয়া যাবে না, কারণ এটি আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি হবে।’ তিনি আরো বলেন, সব পক্ষকে ‘সংযত হওয়া, আলোচনার টেবিলে ফিরে আসা এবং ‘ভবিষ্যৎ উত্তেজনা এড়ানো’ উচিত। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার মন্তব্য করেছেন, ট্রাম্প প্রশাসন এমন পদক্ষেপ নিয়েছে যা ইরানকে পারমাণবিক শক্তিতে পরিণত হওয়ার হুমকি ‘হ্রাস’ করতে সহায়ক হবে। সূত্র : আল-জাজিরা, বিবিসি, এনবিসি, তাসনিম, রয়টার্স।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও






আরও পড়ুন

ডাকসুতে ভোটার হতে পারবে না ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ‘অছাত্ররা’

দুপুর ২টায় ওয়েবসাইটে আপলোড হবে এসএসসির ফল

১৮৮ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষনা করলো সিলেট মহানগর হেফাজত

আমি জুলাই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত: সাবেক আইজিপি মামুন

টঙ্গীতে ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে কিশোর নিহত

ফরিদপুর - ভাঙ্গায় ভুয়া কাগজপত্রে জমি রেজিস্ট্রিরি করে দেওয়ার অভিযোগ সাবরেজিস্টারের বিরুদ্ধে

ভারী বৃষ্টিপাতে কেশবপুরে পানি বদ্ধতার সৃষ্টি, গাছ উপরে পড়ে বসত ঘরের ক্ষতি

বিদেশি ডিজাইনে জুলহাস এবার বানালেন ‘এয়ার বোট’

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় বাংলাদেশে স্থাপন নিয়ে কড়া হুঁশিয়ারী হেফাজত নেতা মাও. ইসলামাবাদীর

বকশীগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে নারীসহ সাতজনকে পুশইন

শ্রীমঙ্গলে চা-বাগানে সেপটিক ট্যাংকের বিষাক্ত গ্যাসে ৪ শ্রমিকের করুণ মৃত্যু

মুকসুদপুরে প্রধান উপদেষ্টার সহায়তায় শিক্ষাবৃত্তি প্রদান

বাতাসের টানে বিমানের ইঞ্জিনে ঢুকে যাত্রীর মৃত্যু

ফেনীতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, ৯৮ গ্রাম প্লাবিত

জুলাই-আগস্টে গণহত্যা: হাসিনা-কামালের বিচার শুরুর আদেশ

আবারও ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, বেজে উঠল সাইরেন

অর্থকষ্টে ফর্ম ফিলাপ করতে না পারা শিক্ষার্থীর পাশে ইবি ছাত্রদল নেতা

১০০ বছর পূরণ করলেন আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার মাহাথির

শ্রমিক কল্যাণে বেক্সিমকো ফার্মার ৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকা অনুদান

দুমকীতে জেলা বিএনপির নবনির্বাচিত নের্তৃবৃন্দের সৌজন্যে সাক্ষাৎ