ঢাকা   সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ট্রাম্পের জয় রাশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও চীনের জন্য কী বোঝায়

Daily Inqilab অনলাইন ডেস্ক

০৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:২৮ পিএম | আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:২৮ পিএম



হোয়াইট হাউসের মসনদে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্যের মতো বিশ্বের যুদ্ধ এবং অনিশ্চয়তা গ্রস্ত অঞ্চগুলোতে এবং রাশিয়া ও চীনসহ একাধিক নীতিতে সম্ভাব্য আমূল পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এখন মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিকে নতুন আকার দেয়ার জন্য প্রস্তুত।
রাশিয়া, ইউক্রেন ও ন্যাটো: নির্বাচনী প্রচারণাগুলোতে ট্রাম্প বারবার বলেছেন যে, তিনি রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যকার যুদ্ধ একদিনেই শেষ করতে সক্ষম। মে মাসে ট্রাম্পের দুই প্রাক্তন জাতীয় নিরাপত্তা প্রধানের লেখা একটি গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রাখা উচিত, তবে রাশিয়ার সাথে শান্তি আলোচনায় প্রবেশের জন্য কিয়েকের প্রতি সমর্থনকে শর্তযুক্ত করা উচিত।
রাশিয়াকে শান্ত করতে পশ্চিমারা ন্যাটোতে ইউক্রেনের বহু কাক্সিক্ষত প্রবেশ বিলম্বিত করার প্রতিশ্রুতি দিতে পারে। ট্রাম্পের প্রাক্তন উপদেষ্টারা বলেছেন যে, ইউক্রেনের রাশিয়ার দখল থেকে তার সমস্ত অঞ্চল ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়, তবে এটিকে বর্তমান যুদ্ধ পরিস্থিতির ভিত্তিতে আলোচনা করা উচিত।
ন্যাটো এখন ৩২ টি দেশের একটি সংস্থা। এবং ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরে ন্যাটো জোটের বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করে আসছেন এবং ইউরোপের বিরুদ্ধে মার্কিন সুরক্ষার প্রতিশ্রুতির সুযোগকে অপব্যবহার করার অভিযোগ এনেছেন। তিনি ন্যাটো থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করবেন কিনা, যা প্রায় এক শতাব্দীর মধ্যে উত্তর আটলান্টিক প্রতিরক্ষা সম্পর্কের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেবে, তা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে।
মধ্যপ্রাচ্য: ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এর অর্থ, তিনি গাজায় ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ এবং লেবাননে ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ যুদ্ধের ইতি টানবেন। ব্যাপকভাবে বলতে গেলে, ট্রাম্প সম্ভবত হামাসকে সমর্থনকারী হিজবুল্লাহ্র পৃষ্ঠপোষক ইরানের বিরুদ্ধে বৃহত্তর নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগের চেষ্টা করবেন।
হোয়াইট হাউসে এর আগের মেয়াদে ট্রাম্প জোরালোভাবে ইসরায়েলপন্থী নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের জাতীয় ও ধর্মীয় জীবনের ঐতিহাসিক কেন্দ্র জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী করেছিলেন এবং তেল আবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস সেখানে স্থানান্তর করেছিলেন। ওয়াশিংটন জেরুজালেমের প্রতি ফিলিস্তিনিদের দাবি প্রত্যাখ্যান করায় তারা ট্রাম্প প্রশাসনকে বয়কট করেছিল।
ফিলিস্তিনিরা বিশ^ থেকে আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, যখন ট্রাম্প ইসরায়েল এবং বেশ কয়েকটি আরব ও মুসলিম দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য তথাকথিত 'আব্রাহাম অ্যাকর্ডস'-এর মাধ্যমে মধ্যস্থতা করেছিলেন। ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিনিময়ে জড়িত দেশগুলিকে অত্যাধুনিক মার্কিন অস্ত্রের উপলব্ধের সুবিধা দেয়া হয়েছিল। ফিলিস্তিনিরা সেই সময় তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন অবস্থানে নিজেদের আবিষ্কার করেছিল।
যুক্তরাষ্ট্রই একমাত্র পরাশক্তি যা সত্যিই যেকোনও সংঘর্ষে উভয় পক্ষের জন্য সুবিধা প্রয়োগ করতে পারে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বিনইয়ামিন নেতানিয়াহুর সাথে ট্রাম্পের একটি জটিল, মাঝে মাঝে নেতিবাচক সম্পর্ক রয়েছে, তবে অবশ্যই তার উপর চাপ প্রয়োগ করার ক্ষমতা ট্রাম্পের রয়েছে।
হামাসের সাথে যোগাযোগ আছে এমন গুরুত্বপূর্ণ আরব দেশগুলোর নেতাদের সাথেও ট্রাম্পের দৃঢ় সম্পর্কের ইতিহাস রয়েছে। তিনি ইসরায়েলি নেতৃত্বের প্রতি দৃঢ় সমর্থন দেখানোর অভিপ্রায় এবং যুদ্ধ বন্ধ করার চেষ্টার মধ্যে কীভাবে ভারসাম্য রক্ষা করবেন, তা স্পষ্ট নয়।
চীন ও মার্কিন বাণিজ্য: চীনের প্রতি মার্কিন দৃষ্টিভঙ্গি তার পররাষ্ট্রনীতির সবচেয়ে কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। এবং এটি বৈশ্বিক নিরাপত্তা এবং বাণিজ্যের ওপর সবচেয়ে বড় প্রভাব ফেলে। পূর্ববর্তী মেয়াদে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে কিছু চীনা আমদানির উপর শুল্ক আরোপ করেছিলেন। জবাবে চীনও মার্কিন আমদানির ওপর শুল্ক আরোপ করেছে।
ট্রাম্প সম্ভবত চীনকে মোকবেলা করার জন্য অন্যান্য আঞ্চলিক দেশগুলির সাথে শক্তিশালী মার্কিন সুরক্ষা অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার বাইডেন প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সরে আসবেন বলে মনে হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র স্বায়ত্বশাসিত তাইওয়ানের জন্য সামরিক সহায়তা বজায় রেখেছে, যা চীন একটি বিচ্ছিন্ন প্রদেশ হিসাবে দেখে এবং শেষ পর্যন্ত বেইজিংয়ের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে।
ট্রাম্প অক্টোবরে বলেছিলেন যে, তিনি যদি হোয়াইট হাউসে ফিরে আসেন, তাহলে তাইওয়ানে চীনা কর্তৃত্ব ঠেকাতে তাকে সামরিক শক্তি ব্যবহার করতে হবে না, কারণ তিনি চীনা পণ্য আমদানির উপর পঙ্গুকারী শুল্ক আরোপ করবেন, যদি তেমনটা ঘটে থাকে। সূত্র: বিবিসি।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ভারত বিরোধী স্লোগানে উত্তাল খুলনা

ভারত বিরোধী স্লোগানে উত্তাল খুলনা

রেকর্ডের মালা গেঁথে বাংলাদেশের সিরিজ জয়

রেকর্ডের মালা গেঁথে বাংলাদেশের সিরিজ জয়

মমতা ব্যানার্জির জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর প্রস্তাবটি বাস্তবতা বিবর্জিত গালগল্প

মমতা ব্যানার্জির জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর প্রস্তাবটি বাস্তবতা বিবর্জিত গালগল্প

গত সাড়ে ১৫ বছর এ জাতি জিম্মি দশায় ছিল- জামায়াত আমির ডা.শফিকুর রহমান

গত সাড়ে ১৫ বছর এ জাতি জিম্মি দশায় ছিল- জামায়াত আমির ডা.শফিকুর রহমান

বেনাপোলের বিএনপির সহ-সভাপতি দ্বীন ইসলামকে হত্যা, সাবেক তিন পুলিশ কর্মকর্তাসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা

বেনাপোলের বিএনপির সহ-সভাপতি দ্বীন ইসলামকে হত্যা, সাবেক তিন পুলিশ কর্মকর্তাসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা

গ্যাস লাইন সংযোগ সহ ১০ দফা দাবিতে সিলেটের জৈন্তাপুরে সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজের সাথে মতবিনিময়

গ্যাস লাইন সংযোগ সহ ১০ দফা দাবিতে সিলেটের জৈন্তাপুরে সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজের সাথে মতবিনিময়

৬ দফার ভিত্তিতে মাসব্যাপী কর্মসূচি জাতীয় নাগরিক কমিটির

৬ দফার ভিত্তিতে মাসব্যাপী কর্মসূচি জাতীয় নাগরিক কমিটির

সব ভারতীয় টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধে হাইকোর্টে রিট

সব ভারতীয় টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধে হাইকোর্টে রিট

উইন্ডিজ শিবিরে নাহিদের জোড়া আঘাত

উইন্ডিজ শিবিরে নাহিদের জোড়া আঘাত

আন্তবিভাগ ফুটবল প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন জবির ফিন্যান্স বিভাগ

আন্তবিভাগ ফুটবল প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন জবির ফিন্যান্স বিভাগ

আগরতলা হাইকমিশনে ভাঙচুরের ঘটনায় ক্ষুব্ধ বাংলাদেশ

আগরতলা হাইকমিশনে ভাঙচুরের ঘটনায় ক্ষুব্ধ বাংলাদেশ

বায়তুল মোকাররমের খতিবসহ ১২ আলেমের বিরুদ্ধে সাদপন্থীদের মামলা

বায়তুল মোকাররমের খতিবসহ ১২ আলেমের বিরুদ্ধে সাদপন্থীদের মামলা

নেতাদের ভুল শুধরে নিয়ে জনগণের পাশে থাকার আহবান তারেক রহমানের

নেতাদের ভুল শুধরে নিয়ে জনগণের পাশে থাকার আহবান তারেক রহমানের

‘বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা ক্ষুন্ন করতে জাতিসংঘে সেনাবাহিনীর আহবান করেছে মমতা ব্যানার্জি’

‘বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা ক্ষুন্ন করতে জাতিসংঘে সেনাবাহিনীর আহবান করেছে মমতা ব্যানার্জি’

‘উগ্রহিন্দুদের আট দাবিতে বাংলাদেশকে অখণ্ড ভারতের অংশ বানানোর পরিকল্পনা চলছে’

‘উগ্রহিন্দুদের আট দাবিতে বাংলাদেশকে অখণ্ড ভারতের অংশ বানানোর পরিকল্পনা চলছে’

ফুটবল মাঠে সংঘর্ষ, ৫৬ জন নিহত

ফুটবল মাঠে সংঘর্ষ, ৫৬ জন নিহত

বিগ ব্যাশে খেলবেন না রিশাদ

বিগ ব্যাশে খেলবেন না রিশাদ

ভারতে বাংলাদেশ দূতাবাসে হামলা, ঢাবিতে ছাত্র অধিকারের বিক্ষোভ

ভারতে বাংলাদেশ দূতাবাসে হামলা, ঢাবিতে ছাত্র অধিকারের বিক্ষোভ

হিন্দুত্ববাদী ভারত কোনোদিন বাংলাদেশের স্বাধীনতা মেনে নিতে পারেনি: মাহমুদুর রহমান

হিন্দুত্ববাদী ভারত কোনোদিন বাংলাদেশের স্বাধীনতা মেনে নিতে পারেনি: মাহমুদুর রহমান

খরা ও ভূমি ক্ষয়ের বিরুদ্ধে জরুরি বৈশ্বিক পদক্ষেপের আহ্বান পরিবেশ উপদেষ্টার

খরা ও ভূমি ক্ষয়ের বিরুদ্ধে জরুরি বৈশ্বিক পদক্ষেপের আহ্বান পরিবেশ উপদেষ্টার