মোসুলের ঐতিহ্য ফিরছে, ধ্বংসের পর নতুন করে জেগে উঠছে শহর
০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:২০ পিএম | আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:২৩ পিএম

ইরাকের ঐতিহাসিক শহর মোসুল একসময় ছিল বিভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতির মিলনস্থল। কিন্তু ২০১৪ সালে চরমপন্থী গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) শহরটি দখল করে, ধ্বংসযজ্ঞ চালায় এবং বহু ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়। তবে, শহরের মানুষ, বিভিন্ন সংস্থা এবং ইউনেস্কোর সহায়তায় মোসুল আবার জেগে উঠছে। বহু বছর পর, ধ্বংসস্তূপ থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে এই শহর, ফিরে আসছে পুরোনো সৌন্দর্য ও ঐতিহ্য।
২০১৭ সালে এক ভয়াবহ যুদ্ধের পর আইএস-এর দখল থেকে মুক্ত হয় মোসুল। এই যুদ্ধে শহরের ৮০ শতাংশ এলাকা বিধ্বস্ত হয়, বিশেষ করে পুরনো শহর। ইউনেস্কো ২০১৮ সালে পুনর্গঠনের কাজ শুরু করে, যাতে বিভিন্ন মসজিদ, গির্জা, প্রাচীন ভবন ও আবাসস্থল পুনরুদ্ধার করা হয়। এই প্রকল্পের জন্য সংস্থাটি ১১.৫ কোটি ডলার সংগ্রহ করে, যার বেশিরভাগ এসেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনুদান থেকে।
মোসুলের সবচেয়ে বিখ্যাত স্থাপনা, "আল-হাদবা মিনার", যা শত শত বছর ধরে শহরের প্রতীক হিসেবে পরিচিত ছিল, ধ্বংস হয়ে যায় যুদ্ধের সময়। একইভাবে, আল-নুরি মসজিদকেও বিস্ফোরণে উড়িয়ে দেয় আইএস। আজ এই স্থাপনাগুলো নতুন করে নির্মিত হয়েছে এবং আবারও মোসুলের আকাশরেখায় তাদের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে।
শুধু স্থাপনা নয়, এই পুনর্গঠন প্রকল্পের মাধ্যমে স্থানীয় জনগণের জীবনও পরিবর্তিত হয়েছে। ইউনেস্কোর তথ্য অনুযায়ী, ১৩০০ জন স্থানীয় যুবককে ঐতিহ্যবাহী নির্মাণশৈলীতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এবং প্রায় ৬০০০ নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে।
পুরনো শহরের আল-সা’আ কনভেন্ট, যা প্রায় ২০০ বছর পুরনো, সেটিও পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে। ডোমিনিকান পাদ্রী অলিভিয়ের পোকুইলন বলেন, “শুধু ভবন পুনর্গঠন করলেই হবে না, আমাদের প্রথম কাজ হলো হারানো বিশ্বাস ফিরিয়ে আনা।”
স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের পুরনো ঘরে ফিরে যেতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত। মুস্তাফা নামে এক ব্যক্তি বলেন, “আমার বাড়িটি ১৮৬৪ সালে নির্মিত হয়েছিল, কিন্তু যুদ্ধের সময় ধ্বংস হয়ে যায়। আমি মনে করেছিলাম আর কখনো সেখানে ফিরতে পারবো না, কিন্তু এখন তা নতুনভাবে নির্মিত হয়েছে এবং আমি আবারও সেখানে ফিরে এসেছি।”
এই পুনর্গঠনের ফলে মোসুলের ঐতিহ্যবাহী সাম্প্রদায়িক সৌহার্দ্যও ফিরে আসছে। মুসলিম, খ্রিস্টানসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ একসঙ্গে কাজ করে তাদের শহরকে পুনরুজ্জীবিত করছে।
মোসুলের পুনর্জন্ম কেবল ভবন বা স্থাপনার পুনর্নির্মাণ নয়, এটি শহরের সাংস্কৃতিক পরিচয় পুনরুদ্ধারের একটি বড় প্রচেষ্টা। নতুন প্রজন্ম এখন আবারও তাদের ঐতিহ্যের গৌরব সম্পর্কে জানতে পারছে এবং এর সংরক্ষণে অংশ নিচ্ছে।
শহরের ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার যেমন আস্থার বার্তা বহন করে, তেমনি এটি ভবিষ্যতের জন্য এক নতুন আশার আলো জ্বালিয়ে দেয়। মোসুলের এই পুনর্জাগরণ প্রমাণ করে, ধ্বংসের মাঝেও পুনর্গঠনের শক্তি থাকে, আর ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় যেকোনো শহর নতুন করে প্রাণ ফিরে পেতে পারে। তথ্যসূত্র : বিবিসি
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে আয়ারল্যান্ডের টানা তৃতীয় জয়

ঝিনাইদহে বিএনপির মামলায় আ’লীগের ৩ ইউপি চেয়ারম্যান কারাগারে

ইলন মাস্কের লন্ডনের মেট্রো স্টেশনে বাংলা সাইনবোর্ডে আপত্তি

টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে বাস চাপায় দুইজন নিহত, বাস জব্দ

ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি হামলায় অন্তঃসত্ত্বা নারী নিহত

টাঙ্গাইলে যুবকের মরদেহ উদ্ধার

আশ্বাসে ১০ দিন আন্দোলন স্থগিত করলেন ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীরা
টাঙ্গাইলের সন্তোষে ঐতিহাসিক কাগমারী সম্মেলনের আটষট্রি বছর আজ

কুড়িগ্রামে খাসজমি দখল নিয়ে দুই গ্রুপে সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৫

কাপাসিয়ায় আওয়ামী লীগের ১২ নেতা-কর্মী গ্রেফতার

সিরাজগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য চয়ন শ্রীপুরে গ্রেফতার

ডেভিল হান্টে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারাও ছাড় পায়নি: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

মহাকুম্ভ মেলার পথে ৩০০ কিলোমিটারের যানজট

ট্রাম্পের নতুন বাণিজ্য নীতি, ‘স্টিল-অ্যালুমিনিয়ামে শুল্ক আসছে’

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য কারিগরি শিক্ষা বাধ্যতামূলক হচ্ছে

বিদেশি পিস্তলসহ ঠাকুরগাঁওয়ে এজেন্ট ব্যাংকের কর্মচারী আটক

জাতীয় ঈদগাহে সম্পন্ন হলো বিচারপতি আব্দুর রউফের জানাজা

পাবনায় খানাখন্দ সড়কে লাখো মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগ

কমিটিতে আহবায়ক মোতাহার হোসেন -সদস্য সচিব সোবহান তালুকদার

জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ও শহীদ পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান শুরু