গাজায় ইহুদি হত্যাকাণ্ডে শহীদ ফিলিস্তিনি ৫০ হাজার ছাড়াল

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

২৪ মার্চ ২০২৫, ০৩:২৫ এএম | আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২৫, ০৩:২৫ এএম

গাজা উপত্যকায় ইহুদিরা নৃশংস অভিযানে অর্ধ লাখের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। গতকাল হামাসের নিয়ন্ত্রণাধীন গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট। ১৫ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ১৯ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় গাজায় যুদ্ধবিরতির চুক্তির বাস্তবায়ন হয়। চুক্তির প্রথম ধাপ চলাকালীন দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে আলোচনা চূড়ান্ত হওয়ার কথা ছিল। দ্বিতীয় ধাপে স্থায়ীভাবে যুদ্ধের নিরসন, হামাসের হাতে বন্দী সব জিম্মির মুক্তি ও গাজা থেকে চিরতরে ইহুদি সেনা প্রত্যাহারের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু প্রথম ধাপের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও ওই আলোচনায় কোনো আগ্রহ দেখায়নি বর্বর ইহুদিরা। বরং হামাসকে প্রস্তাব দিয়েছে প্রথম ধাপের মেয়াদ বাড়িয়ে বাকি জিম্মিদের মুক্তি দিতে। স্বভাবতই, এতে রাজি হয়নি হামাস। ১ মার্চ প্রথম ধাপের মেয়াদ শেষে চুক্তি বাড়ানোর চাপ দিতে থাকে ইহুদিরা। এ চাপের অংশ হিসেবে গাজায় সব ধরনের পণ্য আনা-নেওয়া বন্ধ করে দেয়া হয়। এতেও কাজ না হওয়ায় আবারও বিমান ও স্থল হামলা শুরু করে অভিশপ্ত ইহুদিরা।
এর আগে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস। এ হামলায় নিহত হন এক হাজার ২০০ মানুষ ও হামাসের হাতে জিম্মি হন ২৫০ জন ব্যক্তি। ওই হামলার পর গাজায় প্রতিশোধমূলক ও নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরাইল, যা আজও চলছে।
ইতোমধ্যে বেশিরভাগ জিম্মি মুক্তি পেলেও এখনো গাজায় ৫৯ জন জিম্মি আটক আছেন। তাদের মধ্যে ২৪ জন সর্বশেষ সংঘাত শুরুর আগে জীবিত ছিলেন বলে ধারণা করা হয়। প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বড় আকারে হামলা চালিয়েও হামাসকে নির্মূল করতে ব্যর্থ হয়েছে ইসরাইল।
২০০৭ সাল থেকে গাজা শাসন করছে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠনটি।
জানুয়ারির যুদ্ধবিরতির আওতায় ৩৩ জন জিম্মি মুক্তি পাওয়ার পাশাপাশি ইসরাইলি কারাগারে আটক হাজারো ফিলিস্তিনি বন্দী মুক্তি পান। প্রাথমিক প্রস্তাব অনুযায়ী, তিন ধাপে গাজার যুদ্ধবিরতি চুক্তির মাধ্যমে ওই অঞ্চলে স্থায়ীভাবে সংঘাতের অবসান ও শান্তি প্রতিষ্ঠা হওয়ার কথা ছিল। তবে শুরু থেকেই এই চুক্তিকে ‘ভঙ্গুর’ বলে এসেছেন বিশ্লেষকরা। এমন কি, খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও দ্বিতীয় মেয়াদ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন।
চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর উদ্যোগ ভেস্তে গেলে ১৮ মার্চ থেকে আবারও বড় আকারে হামলা শুরু করে গাজার ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি চুক্তির লঙ্ঘন করে ইসরাইল। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ওই হামলা শুরুর পর থেকে মোট ৬৭৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
গতকাল রোববার দুপুর নাগাদ মন্ত্রণালয় জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় নিহতের সংখ্যা ৪১। পাশাপাশি, নিহতের তালিকায় আরো ২৩৩ ‘নিখোঁজ’ ব্যক্তির নাম যোগ হয়। নিখোঁজ ঘোষিত ব্যক্তিদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করার দায়িত্বে থাকা একটি কমিটি এ সংখ্যা হালনাগাদ করে। যার ফলে, সব মিলিয়ে গাজায় নিহতের সংখ্যা অর্ধ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। চিকিৎসাকর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, গত এক সপ্তাহের হামলায় নিহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। আল জাজিরার প্রতিবেদন মতে, মোট নিহতের ১৭ হাজারই শিশু।
এ মুহূর্তে হামাসের সিনিয়র কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল। ইতোমধ্যে ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ইসাম আল-দা’আলিস এবং হামাস পরিচালিত স্বরাষ্ট্র ও বিচারবিভাগের বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন।
এছাড়া গতকাল গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিস শহরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় হামাসের শীর্ষ রাজনৈতিক নেতা সালাহ আল-বারদাউইল নিহত হয়েছেন। গতকাল ভোরে হামাসের একজন কর্মকর্তা বিবিসিকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
গাজা সিটি থেকে আল-জাজিরার প্রতিবেদক হানি মাহমুদ এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, নিহতের প্রকৃত সংখ্যা ৫০ হাজারের চেয়ে আরও বেশি।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়য় শুধু নথিবদ্ধ হতাহতের হিসাবে রেখেছে। এমন অসংখ্য নিহত ব্যক্তিকে কবর দেওয়া হয়েছে, যাদের নথিবদ্ধ করেনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তা ছাড়া অনেকে নিখোঁজ রয়েছে, তাদের ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। আর অনেকে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে।
অল্প সময়ে এত বেশি শিশু নিহত হওয়ায় একটি জনগোষ্ঠী রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে, যা বর্তমান প্রজন্ম সহজে কাটিয়ে উঠতে পারবে না।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

‘ইস্টার যুদ্ধবিরতি’ ঘোষণার পরও রুশ হামলা চলছে: জেলেনস্কি
মিয়ানমারের দুই শতাধিক নাগরিক পালিয়ে থাইল্যান্ডে এসেছে, দাবি থাই কর্তৃপক্ষের
টিটিপি দমনে যৌথ উদ্যোগে একমত পাকিস্তান-আফগানিস্তান, বাড়ছে আঞ্চলিক সহযোগিতা
ভারত সফরে আসছেন ইলন মাস্ক, প্রযুক্তি বিনিয়োগে নতুন সম্ভাবনা
মার্কিন নাগরিকদের বাংলাদেশ ভ্রমণে সতর্কতা জারি
আরও
X

আরও পড়ুন

আশুলিয়ায় নারী পোশাক শ্রমিককে হত্যার পর ঘরে আগুন, স্বামী পলাতক

আশুলিয়ায় নারী পোশাক শ্রমিককে হত্যার পর ঘরে আগুন, স্বামী পলাতক

রাজধানীতে যুবদল নেতাকে গুলি, অবস্থা আশঙ্কাজনক

রাজধানীতে যুবদল নেতাকে গুলি, অবস্থা আশঙ্কাজনক

আজ সন্ধ্যায় স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন পেশ

আজ সন্ধ্যায় স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন পেশ

লালপুরে ফসলের মাঠ থেকে কবিরাজের মরদেহ উদ্ধার

লালপুরে ফসলের মাঠ থেকে কবিরাজের মরদেহ উদ্ধার

বিচার ব্যবস্থাকে আরও সহজ করতে হবে: আসিফ নজরুল

বিচার ব্যবস্থাকে আরও সহজ করতে হবে: আসিফ নজরুল

‘ইস্টার যুদ্ধবিরতি’ ঘোষণার পরও রুশ হামলা চলছে: জেলেনস্কি

‘ইস্টার যুদ্ধবিরতি’ ঘোষণার পরও রুশ হামলা চলছে: জেলেনস্কি

সবাই চায় স্বৈরাচার মুক্ত একটি বাংলাদেশ–বাঁধন

সবাই চায় স্বৈরাচার মুক্ত একটি বাংলাদেশ–বাঁধন

মিয়ানমারের দুই শতাধিক নাগরিক পালিয়ে থাইল্যান্ডে এসেছে, দাবি থাই কর্তৃপক্ষের

মিয়ানমারের দুই শতাধিক নাগরিক পালিয়ে থাইল্যান্ডে এসেছে, দাবি থাই কর্তৃপক্ষের

কোটচাঁদপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চল ছয়লাব পার্থেনিয়ামে এই গাছ হতে পারে মৃত্যুর কারণ

কোটচাঁদপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চল ছয়লাব পার্থেনিয়ামে এই গাছ হতে পারে মৃত্যুর কারণ

টিটিপি দমনে যৌথ উদ্যোগে একমত পাকিস্তান-আফগানিস্তান, বাড়ছে আঞ্চলিক সহযোগিতা

টিটিপি দমনে যৌথ উদ্যোগে একমত পাকিস্তান-আফগানিস্তান, বাড়ছে আঞ্চলিক সহযোগিতা

বরিশালে ক্যান্সার হৃদরোগ ও কিডনি হাসপাতাল ভবন নির্মাণ, কাজের অগ্রগতি বর্ধিত সময়ের ১ বছর পরেও মাত্র ৬৫ ভাগ

বরিশালে ক্যান্সার হৃদরোগ ও কিডনি হাসপাতাল ভবন নির্মাণ, কাজের অগ্রগতি বর্ধিত সময়ের ১ বছর পরেও মাত্র ৬৫ ভাগ

ভারত সফরে আসছেন ইলন মাস্ক, প্রযুক্তি বিনিয়োগে নতুন সম্ভাবনা

ভারত সফরে আসছেন ইলন মাস্ক, প্রযুক্তি বিনিয়োগে নতুন সম্ভাবনা

মেঘনায় অবৈধ বালু উত্তোলনের প্রতিবাদে বিএনপির বিক্ষোভ

মেঘনায় অবৈধ বালু উত্তোলনের প্রতিবাদে বিএনপির বিক্ষোভ

মার্কিন নাগরিকদের বাংলাদেশ ভ্রমণে সতর্কতা জারি

মার্কিন নাগরিকদের বাংলাদেশ ভ্রমণে সতর্কতা জারি

যতই তথ্যসন্ত্রাস করেন আমি ভারত আর র-এর বিরুদ্ধে কথা বলা থামাব না: প্রথম আলোকে হাসনাত

যতই তথ্যসন্ত্রাস করেন আমি ভারত আর র-এর বিরুদ্ধে কথা বলা থামাব না: প্রথম আলোকে হাসনাত

জকিগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মামলায় আওয়ামীলীগ নেতা এমএজি বাবর গ্রেফতার

জকিগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মামলায় আওয়ামীলীগ নেতা এমএজি বাবর গ্রেফতার

ইয়েমেনে আবারও বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র

ইয়েমেনে আবারও বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র

যিশু খ্রিস্টের কষ্টের সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের দুর্দশার তুলনা করলেন কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট

যিশু খ্রিস্টের কষ্টের সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের দুর্দশার তুলনা করলেন কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট

উত্তরায় মিনি বাসচাপায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের শ্রমিক নিহত, সড়ক অবরোধ

উত্তরায় মিনি বাসচাপায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের শ্রমিক নিহত, সড়ক অবরোধ

অভিনয় করেছেন ইসরাইলি অভিনেত্রী,তাই নিষিদ্ধ সিনেমা

অভিনয় করেছেন ইসরাইলি অভিনেত্রী,তাই নিষিদ্ধ সিনেমা