গাজায় ইসরায়েলি হামলার মধ্যেই ব্যাপক বিক্ষোভ ফিলিস্তিনিদের

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

২৬ মার্চ ২০২৫, ১০:১৭ এএম | আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২৫, ১০:৩৭ এএম

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিনের বোমা হামলায় নিহত হয়েছেন বহু সাধারণ মানুষ। ভয়াবহ এ পরিস্থিতির মধ্যেই গাজার শত শত বাসিন্দা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন। তারা গাজার ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী হামাসের শাসন থেকে মুক্তি চেয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

 

সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ শুরুর পর এটিই গাজায় হামাসবিরোধী সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ। বিক্ষোভকারীরা গাজার শাসন থেকে হামাসকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। তবে মুখোশধারী হামাস যোদ্ধারা— কেউ বন্দুক নিয়ে, কেউ লাঠি হাতে— বিক্ষোভকারীদের থামানোর চেষ্টা করেন এবং জোরপূর্বক ছত্রভঙ্গ করে দেন। তবু জনগণ হামাসবিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন।

 

মঙ্গলবার উত্তর গাজার বেইত লাহিয়ায় বিক্ষোভকারীদের ‘হামাস নিপাত যাক’ স্লোগান দিতে দেখা যায়, যা পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। অন্যদিকে, হামাসপন্থি সমর্থকরা এ বিক্ষোভকে খাটো করে দেখিয়ে অংশগ্রহণকারীদের বিশ্বাসঘাতক বলে অভিযুক্ত করেছেন। হামাস এখনো এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। এদিকে, গাজার আরেক সশস্ত্র গোষ্ঠী ইসলামিক জিহাদ ইসরায়েলে রকেট হামলা চালানোর একদিন পর এই বিক্ষোভ শুরু হয়। এর ফলে ইসরায়েল বেইত লাহিয়ার বিশাল অংশ খালি করার সিদ্ধান্ত নেয়, যা স্থানীয় জনগণের মধ্যে আরও ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।

 

প্রায় দুই মাসের যুদ্ধবিরতির পর ইসরায়েল নতুন করে গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করেছে, যেখানে নারী ও শিশুসহ শত শত ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। ইসরায়েল হামাসকে দায়ী করছে যুদ্ধবিরতি দীর্ঘায়িত করার মার্কিন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের জন্য। অন্যদিকে, হামাস দাবি করছে, ইসরায়েল নিজেই জানুয়ারিতে স্বাক্ষরিত মূল চুক্তি পরিত্যাগ করেছে। গত ১৮ মার্চ বিমান হামলার মাধ্যমে ইসরায়েলি বাহিনী তাদের সামরিক অভিযান পুনরায় শুরু করে, যার ফলে হাজারো ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হন।

 

বিক্ষোভকারীদের একজন, বেইত লাহিয়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ দিয়াব, যিনি এক বছর আগে ইসরায়েলি হামলায় তার ভাইকে হারিয়েছেন, জানান, ‘আমরা কারও রাজনৈতিক এজেন্ডার জন্য জীবন দিতে চাই না। হামাসকে পদত্যাগ করতে হবে এবং শোকাহতদের কণ্ঠস্বর শুনতে হবে।’ বিক্ষোভের ভিডিও ফুটেজে অনেককে ‘হামাসের শাসন নিপাত যাক, মুসলিম ব্রাদারহুডের শাসন নিপাত যাক’ বলে চিৎকার করতে দেখা যায়।

 

হামাস ২০০৭ সাল থেকে গাজার শাসন ক্ষমতায় রয়েছে। ২০০৬ সালের ফিলিস্তিনি নির্বাচনে জয়ের পর তারা গাজার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে। তবে ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর হামাসের প্রতি জনসমর্থন কতটা কমেছে, তা নির্ধারণ করা কঠিন। যদিও হামাসের বিরুদ্ধে ক্ষোভ নতুন নয়, তবে এত বড় আকারে বিক্ষোভ সাধারণত দেখা যায়নি।

 

গাজার জনগণ এখন দুই দিক থেকে চাপে রয়েছে— একদিকে ইসরায়েলি হামলা, অন্যদিকে হামাসের কঠোর শাসন। বর্তমান পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হলে গাজার অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিবেশে বড় পরিবর্তন আসতে পারে।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বিতর্কিত ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে ভারতে মুসলিমদের ব্যাপক বিক্ষোভ
‘ইস্টার যুদ্ধবিরতি’ ঘোষণার পরও রুশ হামলা চলছে: জেলেনস্কি
মিয়ানমারের দুই শতাধিক নাগরিক পালিয়ে থাইল্যান্ডে এসেছে, দাবি থাই কর্তৃপক্ষের
টিটিপি দমনে যৌথ উদ্যোগে একমত পাকিস্তান-আফগানিস্তান, বাড়ছে আঞ্চলিক সহযোগিতা
ভারত সফরে আসছেন ইলন মাস্ক, প্রযুক্তি বিনিয়োগে নতুন সম্ভাবনা
আরও
X

আরও পড়ুন

ঝিনাইদহে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ-সমাবেশ

ঝিনাইদহে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ-সমাবেশ

কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকারে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা জারি

কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকারে তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা জারি

বাংলাদেশে স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে ১৩৮ মিলিয়ন ডলার দেবে চীন : উপদেষ্টা

বাংলাদেশে স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে ১৩৮ মিলিয়ন ডলার দেবে চীন : উপদেষ্টা

গণহত্যার বিচার ও আওয়ামীলীগকে নিষিদ্ধ করে জাতীয় সরকার গঠনের দাবী জুলাই মঞ্চের

গণহত্যার বিচার ও আওয়ামীলীগকে নিষিদ্ধ করে জাতীয় সরকার গঠনের দাবী জুলাই মঞ্চের

আসামিদের গ্রেপ্তারে অনুমতি আদেশ চ্যালেঞ্জ, হাইকোর্টে রিট

আসামিদের গ্রেপ্তারে অনুমতি আদেশ চ্যালেঞ্জ, হাইকোর্টে রিট

লাঞ্চের পর বৃষ্টির বাগড়া

লাঞ্চের পর বৃষ্টির বাগড়া

ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদ জানালো ফুলকুঁড়ি আসর তারার মেলা

ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদ জানালো ফুলকুঁড়ি আসর তারার মেলা

শেরপুরে আড়াই শ’ বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ- “মাইসাহেবা মসজিদ”

শেরপুরে আড়াই শ’ বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ- “মাইসাহেবা মসজিদ”

নারী চিকিৎসক দিয়ে নারীর মরদেহের ময়নাতদন্ত কেন নয়: হাইকোর্ট

নারী চিকিৎসক দিয়ে নারীর মরদেহের ময়নাতদন্ত কেন নয়: হাইকোর্ট

লক্ষ্মীপুরে দুর্বৃত্তের দেওয়া আগুনে পুড়ে মরলো ৩ গরু

লক্ষ্মীপুরে দুর্বৃত্তের দেওয়া আগুনে পুড়ে মরলো ৩ গরু

মাগুরায় মা সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা

মাগুরায় মা সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা

শিক্ষার্থী ফাইয়াজের মামলার তদন্ত দ্রুত শেষ করার আহ্বান আইন উপদেষ্টার

শিক্ষার্থী ফাইয়াজের মামলার তদন্ত দ্রুত শেষ করার আহ্বান আইন উপদেষ্টার

মার্কিন শুল্কে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এক হাজার পোশাক কারখানা, মালিকদের শঙ্কা

মার্কিন শুল্কে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এক হাজার পোশাক কারখানা, মালিকদের শঙ্কা

ঢাকায় তৎপর ‘র’! জুলকারনাইন এর চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস!

ঢাকায় তৎপর ‘র’! জুলকারনাইন এর চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস!

ভবেশের মৃত্যুতে ভারতের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান বাংলাদেশের

ভবেশের মৃত্যুতে ভারতের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান বাংলাদেশের

শার্শায় দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরার পথে ব্যবসায়ীর টাকা ছিনতাই, আটক ২

শার্শায় দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরার পথে ব্যবসায়ীর টাকা ছিনতাই, আটক ২

সার্বজনীন না করে সেকুলার নারীদের দিয়ে কমিশন গঠন করায় একটা ক্যাচাল তৈরি হয়েছে  : রাশেদ খান

সার্বজনীন না করে সেকুলার নারীদের দিয়ে কমিশন গঠন করায় একটা ক্যাচাল তৈরি হয়েছে : রাশেদ খান

আশুলিয়ার শীর্ষ সন্ত্রাসী জিয়া দেওয়ান পিস্তলসহ গ্রেফতার

আশুলিয়ার শীর্ষ সন্ত্রাসী জিয়া দেওয়ান পিস্তলসহ গ্রেফতার

ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে ফের বৈঠকে বিএনপি

ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে ফের বৈঠকে বিএনপি

বিতর্কিত ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে ভারতে মুসলিমদের ব্যাপক বিক্ষোভ

বিতর্কিত ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে ভারতে মুসলিমদের ব্যাপক বিক্ষোভ