চীনের বিরল মৃত্তিকা রফতানি বিধি-নিষেধ কেন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ধাক্কা?
১৮ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০৫ এএম

চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ যতো তীব্র হচ্ছে, দুই দেশ একে অপরের ওপর ক্রমবর্ধমান উচ্চ হারের ‘যথাযথ’ শুল্ক আরোপ করছে। এ সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন বাণিজ্য বিভাগকে দেশের গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উৎপাদন বৃদ্ধি এবং আমদানির ওপর নির্ভরতা কমানোর উপায় খুঁজে বের করার নির্দেশ দিয়েছেন, যা এই গুরুত্বপূর্ণ খাতকে পুনরুদ্ধার করার জন্য ওয়াশিংটনের একটি প্রচেষ্টা।
প্রত্যুত্তরে, চীন ৪ এপ্রিল থেকে বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ বিরল মাটির খনিজ এবং চুম্বকের ওপর রফতানি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। চীনের বাইরে বিরল মাটি এবং চুম্বক পাঠানোর জন্য সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে এখন থেকে বিশেষ রফতানি প্রশংসাপত্র নিতে হবে। কারণ পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী হিসেবে, চীনের ‘দ্বৈত ব্যবহার্য পণ্য’তে বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রয়েছে। সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ (সিএসআইএস)-এর মতে, এটি যুক্তরাষ্ট্রকে বিশেষভাবে অসহায় করে তুলেছে, কারণ চীনের বাইরে অন্য কোথাও ভারী বিরল মৃত্তিকা প্রক্রিয়াজাতকরণের কোনো ক্ষমতা নেই, যা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি বড় ধাক্কা। কিন্তু ওয়াশিংটনের ওপর শুল্ক আরোপই বেইজিংয়ের প্রতিশোধ নেয়ার একমাত্র উপায় নয়।
বিরল মৃত্তিকা উত্তোলনের পাশাপাশি, পরিশোধন করার ক্ষেত্রেও চীনের প্রায় একচেটিয়া আধিপত্য রয়েছে। আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থা (আইইএ)-এর অনুমান, বিরল মৃত্তিকা উৎপাদনের প্রায় ৬১ শতাংশ এবং সেগুলোর প্রক্রিয়াকরণের ৯২ শতাংশতে চীন আধিপত্য করে থাকে। এর অর্থ হলো বর্তমানে দেশটি বিরল মৃত্তিকা সরবরাহ শৃঙ্খলে আধিপত্য বিস্তার করে রয়েছে এবং কোন্ প্রতিষ্ঠানগুলো এগুলো উপলব্ধ করতে পারবে এবং পারবে না, তা নির্ধারণ করার ক্ষমতা রাখে।
বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ গবেষণা ফেলো গ্যাভিন হার্পার বলেন, ‘বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে, চীন তার বিরল মাটির খনন এবং প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতার উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়ে ছিলো, প্রায়শই অন্যান্য দেশের তুলনায় কম পরিবেশগত মান এবং শ্রম খরচে। এটি তাদের বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগীদের হ্রাস করতে এবং খনন ও পরিশোধন থেকে শুরু করে চুম্বকের মতো সম্পন্নকৃত পণ্য তৈরি পর্যন্ত সমগ্র মূল্য শৃঙ্খলে প্রায় একচেটিয়া অধিকার গড়ে তুলতে সক্ষম করেছে।’
একটি মার্কিন ভ‚তাত্তি¡ক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে, যুক্তরাষ্ট্র তার সমস্ত বিরল মাটির যৌগ এবং ধাতু আমদানির ৭০ শতাংশের জন্য চীনের ওপর নির্ভরশীল ছিলো। এর অর্থ হলো চীনের নতুন বিধিনিষেধগুলো যুক্তরাষ্ট্রকে কঠোরভাবে আঘাত করার ক্ষমতা রাখে।
কিন্তু কেন বিরল মৃত্তিকা এতো গুরুত্বপূর্ণ এবং কীভাবে এগুলো যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য যুদ্ধকে নাড়া দিতে পারে?
বিরল মৃত্তিকা হলো ১৭টি রাসায়নিকভাবে অনুরূপ উপাদানের একটি সমষ্টি, যা অনেক উচ্চ-প্রযুক্তি পণ্য তৈরির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জিঞ্জার ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টের পরিচালক থমাস ক্রুয়েমার বলেন, ‘আপনি যা কিছু চালু বা বন্ধ করতে পারেন, সম্ভবত বিরল মৃত্তিকাতে চলে।’
এগুলোর বেশিরভাগই প্রকৃতিতে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়, তবে ‘বিরল’ হিসেবে পরিচিত, কারণ এগুলো বিশুদ্ধ আকারে পাওয়া বিরল এবং এগুলো নিষ্কাশন করা খুবই বিপজ্জনক। এই দুর্লভ মৃত্তিকা উত্তোলন এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ উভয়ই ব্যয়বহুল এবং দূষণকারী। সমস্ত বিরল সম্পদে তেজস্ক্রিয় উপাদান থাকে, যে কারণে ইইউসহ অন্যান্য অনেক দেশ এগুলো উৎপাদন করতে অনিচ্ছুক।
ভারী বিরল মৃত্তিকা সামরিক ক্ষেত্রে যেমনÑ ক্ষেপণাস্ত্র, রাডার এবং স্থায়ী চুম্বক তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। সিএসআইএস-এর একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এফ-৩৫ জেট, টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র এবং মনুষ্যবিহীন আকাশযান প্রিডেটরসহ প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিগুলো এই খনিজগুলোর ওপর নির্ভরশীল।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছেÑ যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় পাঁচ থেকে ছয় গুণ দ্রæত গতিতে তার যুদ্ধাস্ত্র উৎপাদন সম্প্রসারণ এবং উন্নত অস্ত্র ব্যবস্থা এবং সরঞ্জাম তৈরির ক্ষমতা রয়েছে চীনের। ক্রুমার বলেন, ‘মার্কিন প্রতিরক্ষা শিল্পের ওপর এর যথেষ্ট প্রভাব পড়বে।’
কেবল মার্কিন প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রই নয়, দেশটির উৎপাদন ব্যবস্থা, যা ট্রাম্প তার শুল্ক আরোপের মাধ্যমে পুনরুজ্জীবিত হওয়ার আশা করছেন, তা মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হতে পারে। ড. হার্পার বলেন, ‘নির্মাতারা, বিশেষ করে প্রতিরক্ষা এবং উচ্চ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে, স্থগিত চালান এবং সীমিত মজুদের কারণে সম্ভাব্য ঘাটতি এবং উৎপাদন বিলম্বের সম্মুখীন হচ্ছেন।’
ড. হার্পার আরো বলেন, ‘গুরুত্বপূর্ণ বিরল মাটির উপকরণের দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে, যার ফলে স্মার্টফোন থেকে শুরু করে সামরিক যন্ত্র পর্যন্ত বিস্তৃত পণ্যে ব্যবহৃত উপাদানগুলোর তাৎক্ষণিক খরচ বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত মার্কিন কোম্পানিগুলোর উৎপাদনে ধীরগতি দেখা দিতে পারে।’
এটি ইতোমধ্যেই ট্রাম্পের চিন্তার বিষয় হয়ে উঠেছে। এই সপ্তাহে তিনি এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নির্ভরতার ফলে সৃষ্ট জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
ট্রাম্পের নির্দেশে বলা হয়েছেÑ ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্বীকার করেছেন, বিদেশি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ এবং তাদের থেকে উৎপাদিত পণ্যের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা মার্কিন প্রতিরক্ষা সক্ষমতা, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনকে বিপন্ন করতে পারে। জাতীয় নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক স্থিতিস্থাপকতার জন্য বিরল মৃত্তিকা উপাদানসহ গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ অপরিহার্য।’ সূত্র : বিসিসি।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও






আরও পড়ুন

ঝিনাইদহে গ্রাম আদালত বিষয়ক প্রশিক্ষণ ”অল্প সময়ে স্বল্প খরচে সঠিক বিচার পেতে চলো যায় গ্রাম আদালতে”

শাহরাস্তিতে বিএনপি নেতার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আওয়ামীলীগ নেতার হামলা ও ভাংচুর

প্যারাবন কেটে ঘের নির্মাণের পায়তারা আওয়ামী ভূমিদস্যু চক্রের

ইরানের মধু রপ্তানি বেড়েছে ২০ শতাংশ

বিভাজন মিটিয়ে ফের এক হওয়ার আহ্বানে যা বললেন জুলাই যোদ্ধারা

সৈয়দপুরে সড়ক থেকে অতিরিক্ত স্পিড ব্রেকার অপসারণের দাবিতে গণস্বাক্ষর ও মানববন্ধন

জুলাই-আগস্টের আন্দোলন তারেক রহমানের নির্দেশেই পরিচালিত হয়েছে - শফিউদ্দিন আহম্মেদ সেন্টু

সীমান্ত অনুপ্রবেশের সময় বিজিবি'র হাতে আটক ২ জন

ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান মির্জাপুরে সড়কে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ৩ ব্যবসায়ীর জরিমানা

ঈশ্বরদীর পদ্মা নদীতে বালুমহালের আধিপত্যের দ্বন্দ্বে দুই গ্রুপের বন্দুকযুদ্ধে ৭ জন গুলিবিদ্ধ

কাশ্মীরে স্বাধীনতাকামী সঙ্গে সংঘর্ষে ভারতীয় সেনা নিহত

কুষ্টিয়ায় দুধ দিচ্ছে পাঠা

মনোহরগঞ্জ উপজেলার নবাগত নির্বাহী অফিসারের মতবিনিময় সভা

সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার আহ্বান আমীরে জামায়াতের

কৃষক দল নেতাকে গুলি করে হত্যা

যশোরে অভয়নগরে কৃষকদল সভাপতিকে গুলি করে হত্যা

যুক্তরাষ্ট্রে সান দিয়েগোর একটি আবাসিক এলাকায় বাড়িঘরের ওপর বিমান বিধ্বস্ত!

দেশের রিজার্ভ আরও বাড়ল

এনবিআর এখনই বিলুপ্ত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই: অর্থ মন্ত্রণালয়

ছাগলনাইয়ায় ঔষধ ব্যবসায়ীদের চার দফা দাবী আদায়ের দাবিতে মানববন্ধন