পহেলগাম হত্যাকাণ্ড: মোদির রক্তের রাজনীতি
২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০৮ এএম | আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০৮ এএম

পাইন বন, সবুজ তৃণভূমি এবং তুষারাবৃত পাহাড়ের মাঝে অবস্থিত কাশ্মীরের অতুলনীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রতীক পহেলগাম। "মিনি সুইজারল্যান্ড" খ্যাত দর্শনীয় এই স্থানটি দীর্ঘদিন ধরে পর্যটকদের কাছে একটি জনপ্রিয় গন্তব্য। তবে পহেলগামের বৈসরান উপত্যকায় সংঘটিত এক ভয়াবহ হামলায় অন্তত ২৭ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে নৈসর্গিক এই দৃশ্য কালো ছায়ায় আবারও ঢেকে যায়। স্থানীয়রা এই ঘটনাকে সুসংগঠিত এবং রহস্যময় গণহত্যা বলে বর্ণনা করছেন।
এটি কোনও বিচ্ছিন্ন ট্র্যাজেডি নয়। এটি অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরে ভারতের পরিকল্পিত সহিংসতার পদ্ধতিগত ধারাবাহিকতা। পহেলগামে রক্তপাত এমন একটি বিরক্তিকর প্যাটার্নের সাথে খাপ খায় যা কয়েক দশক ধরে পুনরাবৃত্তি হয়ে আসছে। প্রায় ক্ষেত্রেই ভারতীয় সরকারের কৌশলগত কারসাজি সেই রক্তপাতের সাথে জড়িত রয়েছে।
২০০০ সালের মার্চ মাসে একই ধরনের চাট্টিসিংপোরা গণহত্যা হয়েছিল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের ভারত সফরের ঠিক আগে এই হামলায় ৩৫ জন শিখকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। স্থানীয়রা এবং মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলি গভীরভাবে বিশ্বাস করেন, কাশ্মীরি স্বাধীনতা আন্দোলনকে খাটো করতে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি এটি ঘটিয়েছিল। কোনও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত কখনও সত্য প্রকাশ করতে পারেনি। মিথ্যাভাবে দোষারোপ ও কঠোর দমন-পীড়ন, গ্রেপ্তার এবং নিরপরাধ ব্যক্তিদের হত্যার ন্যায্যতা প্রমাণে ঘটনাটিকে ব্যবহার করা হয়।
একইভাবে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে পুলওয়ামা হামলায় ৪০ জন ভারতীয় আধাসামরিক সদস্য নিহত হন। কাকতালীয়ভাবে ভারতে সাধারণ নির্বাচনের ঠিক আগে এই হামলার ঘটনা ঘটে। এটি ভারতীয় মিডিয়া এবং সমাজে উগ্রবাদী উন্মাদনার জন্ম দেয়। ফলে প্রধানমন্ত্রী মোদি নিখুঁত রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলে সক্ষম হয়। পরে, নিরাপত্তা ত্রুটি, জবাবদিহিতার অভাব এবং ঘটনার সন্দেহজনক সময় সম্পর্কে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উত্থাপিত হয়। বিশেষ করে জম্মু ও কাশ্মীরের তৎকালীন রাজ্যপাল স্টে পাক মালিক এ নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তোলেন।
এখন এই ভয়াবহ ট্রাজেডির তালিকায় যুক্ত হয়েছে পহেলগাম। এই ঘটনায় ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্পৃক্ততার লক্ষণ রয়েছে। যেমন হঠাৎ করে উত্তেজনা বৃদ্ধি, স্বচ্ছতার অভাব এবং প্রমাণ ছাড়াই তাৎক্ষণিকভাবে দোষারোপ দৃঢ়ভাবে ইঙ্গিত দেয়, এই হত্যাকাণ্ডটিও ভারতীয় কর্তৃপক্ষের পরিকল্পিত। একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক বয়ান পরিবেশন করতে এই পরিকল্পনা করা হতে পারে।
নরেন্দ্র মোদি ভয়, ঘৃণা এবং শত্রু সৃষ্টিকে শাসনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে হিন্দুত্বের উপর তার রাজনৈতিক ব্র্যান্ড তৈরি করেছেন। তার শাসনামলে কাশ্মীরে প্রতিটি সহিংসতা চালানো হয় ভারতকে সন্ত্রাসের শিকার এবং কাশ্মীরিদের আক্রমণকারী হিসেবে চিত্রিত করতে।
ভারতের ক্রমহ্রাসমান গণতান্ত্রিক ভাবমূর্তি, কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় আন্তর্জাতিক তদন্তের উপর জাতিসংঘ, ওআইসি এবং বিশ্বব্যাপী নাগরিক সমাজের মতো সংস্থাগুলির পক্ষ থেকে ক্রমবর্ধমান চাপ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সবার দৃষ্টি অন্যদিকে সরাতে পারলে নিশ্চিতই মোদি সরকার তা থেকে সুবিধা পাবে এবং পহেলগামের মতো ট্র্যাজেডি ঠিক সেই উদ্দেশ্যই বাস্তবায়ন করবে। তারা বিশ্বব্যাপী সহানুভূতি তৈরি করে হিন্দুত্বের পতাকাতলে দেশীয় ভোটারদের একত্রিত করে আরও সামরিক দমন, গ্রেপ্তার, মিডিয়া সেন্সরশিপ এবং কাশ্মীরিদের কণ্ঠস্বরের উপর নিপীড়ন চালানোকে বৈধ করে নেবে।
পহেলগাম হামলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভারতীয় মূলধারার গণমাধ্যমগুলি কোনও তদন্ত বা প্রমাণ ছাড়াই পাকিস্তানকে দোষারোপ করে গল্প-কাহিনী তৈরি শুরু করে। কাশ্মীরিদের কণ্ঠস্বর স্তব্ধ করে দেওয়া হয় এবং আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের সত্য প্রকাশের জন্য সংবেদনশীল এলাকাগুলিতে যেতে বাধা দেওয়া হয়। এটি একটি বৃহত্তর কৌশলের অংশ, কাশ্মীরে ভারতের কর্মকাণ্ডের সত্যতা যাতে বিশ্ব বিবেকের কাছে না পৌঁছায় সেজন্য বয়ান নিয়ন্ত্রণ করতে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। ভুক্তভোগীদের অমানবিক করে তোলা হয়, সংখ্যায় কমিয়ে আনা হয় এবং যেকোনো ভিন্নমতকে 'জাতীয়তাবিরোধী' হিসেবে চিত্রিত করা হয়। এটি রাষ্ট্রীয় প্রোপাগান্ডাকে প্রবল বাস্তবতায় রূপ দেওয়ার একটি পাঠ্যপুস্তক উদাহরণ।
পহেলগামে গণহত্যা কেবল একটি ট্র্যাজেডি নয় এটি মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। পহেলগাম হত্যাকাণ্ড এবং অন্যান্য ঘটনার স্বাধীন আন্তর্জাতিক তদন্ত, জম্মু ও কাশ্মীরে মৌলিক অধিকার পুনরুদ্ধার, সামরিকীকরণ ও দমন-পীড়ন অবিলম্বে বন্ধ করা এবং জাতিসংঘের একাধিক প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত কাশ্মীরি জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের স্বীকৃতি দাবি করার নৈতিক দায়িত্ব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের।
চাট্টিসিংপোরা থেকে পুলওয়ামা এবং বর্তমানে পহেলগামে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ভারতীয় রাষ্ট্রের রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ে জীবন উৎসর্গ করার এক ভয়ঙ্কর ইচ্ছা পূরণ করা হয়েছে। গুজরাট থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত নিরীহ মানুষের রক্তে মোদির হাত রঞ্জিত, যার ফলে তিনি "মোদি কসাই" উপাধি পেয়েছেন।
বিশ্বকে জেগে উঠতে হবে এবং বুঝতে হবে। এগুলো দুর্ঘটনা নয়। এগুলো কাশ্মীরিদের পিষে ফেলা, সত্যকে দমন করা এবং রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মূলধন তৈরির দীর্ঘ ও নৃশংস অভিযানের পরিকল্পিত পদক্ষেপ। কেবল ভুক্তভোগীদের স্মরণই ন্যায়বিচারের দাবি নয়, বরং ন্যায় বিচারের দাবি হচ্ছে, ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিদের জবাবদিহিতা দাবি করা, যারা তাদের নিজস্ব লাভের জন্য এই নৃশংসতা পরিচালনা করে বা অনুমোদন দেয়।
সূত্র: কাশ্মীর মিডিয়া সার্ভিস
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

২০০ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি, এআই প্রযুক্তিতেও আমিরাতের পাশে যুক্তরাষ্ট্র!

মোরেলগঞ্জে পানি তালের কদর সারাদেশে

দুর্দান্ত ইয়ামালে বার্সার লিগ শিরোপা পুনরুদ্ধার

ফিলিস্তিনিদের ৬০০ ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দিল ইসরাইল

গোপালগঞ্জে বাস-ট্রাক সংঘর্ষে নিহত ৩, আহত ২৮

লাইভ চলাকালীন জনপ্রিয় টিকটকারকে গুলি করে হত্যা

পটুয়াখালীতে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ এর উদ্যোগে অবহিতকরণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত

ভারতে সন্দেহভাজন ‘১৪৮ বাংলাদেশিকে’ ত্রিপুরায় স্থানান্তর, হতে পারে পুশ ব্যাক

বাড়ল ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির সময়সীমা

কৃষ্ণচূড়ার নান্দনিক সাজ এখন আর খুব একটা চোখে পড়ে না শেরপুর গারো পাহাড়ে!

ভারতের আরও একটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করার দাবি পাকিস্তানের

পাকিস্তানের জন্য স্থগিতই থাকছে সিন্ধু পানি চুক্তি, জানাল ভারত

আটঘরিয়ায় বিএনপি-জামায়াত সংঘর্ষ; মোটরসাইকেল ও অফিস ভাঙচুর, আহত ৫

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সমাবেশ আজ

গরু নিয়ে যাওয়া সেই স্বেচ্ছাসেবক দল নেতাকে বহিষ্কার

ট্রাম্প-পুতিন সরাসরি বৈঠক ছাড়া ইউক্রেন সংকটের সমাধান অসম্ভব: রুবিও

ইসরায়েলি হামলায় গাজায় একদিনেই নিহত ১৪৩ ফিলিস্তিনি

স্থূলতা কেবল একটি অস্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার চেয়ে অনেক বেশি কিছু

সাবেক সেনাসদস্যদের আবেদন সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয়েছে : আইএসপিআর

তেজগাঁওয়ে শিশু রোজা মনি মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায় বিচার দাবি ড্যাবের