মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য যুদ্ধের মধ্যে, চীন আরও কৃষিপণ্য আমদানির জন্য ব্রাজিলের দিকে ঝুঁকেছে এবং এপ্রিল মাসে দক্ষিণ আমেরিকার দেশটি থেকে সয়াবিনের চালান উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারক সিসিটিভির সাথে সম্পর্কিত সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট ইউয়ুয়ান তান্তিয়ানের সোমবারের প্রতিবেদন অনুসারে, এ মাসে নিংবো ঝোশান বন্দরে ব্রাজিলের সয়াবিন বহনকারী আনুমানিক ৪০টি জাহাজ আসবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা বছরের পর বছর ৪৮ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, জাহাজগুলি বন্দরে প্রায় ৭০০,০০০ টন সয়াবিন খালাস করবে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩২ শতাংশ বৃদ্ধি। গত সপ্তাহে আমেরিকা থেকে ১২,০৩০ মেট্রিক টন মাংসের অর্ডার বাতিল করার পর, এটি চীনের মার্কিন কৃষি আমদানির উপর নির্ভরতা হ্রাস করার সর্বশেষ প্রমাণ। ২০২০ সালের মে মাসের পর এটিই সবচেয়ে বড় বাতিলকরণ। ওয়াশিংটন এ বছর এখন পর্যন্ত চীনা আমদানির উপর মোট ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, যার ফলে কার্যকর শুল্ক হার প্রায় ১৫৬ শতাংশে পৌঁছেছে। হোয়াইট হাউস কর্তৃক প্রকাশিত একটি তথ্যপত্র অনুসারে, চীন এখন ২৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্কের মুখোমুখি - এই পরিসংখ্যানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় প্রশাসনের পূর্ববর্তী শুল্ক অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ইতিমধ্যে, মার্কিন পণ্যের উপর বেইজিংয়ের নতুন শুল্ক ১২৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, যা পূর্বে আরোপিত শুল্কের উপরেও রয়েছে।

আমেরিকান সয়াবিন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যালেব র‌্যাগল্যান্ড এই মাসের শুরুতে এক অনলাইন বিবৃতিতে বলেছেন, ‘চীনকে মার্কিন সয়াবিনের বৃহত্তম রপ্তানি বাজার হিসেবে বিবেচনা করা আমেরিকার সয়াবিন বাণিজ্যের উপর এটি হচ্ছে একটি কঠিন আঘাত’। ‘আমরা প্রশাসন এবং চীন উভয়কেই একে অপরের সাথে বিরতি নিতে এবং একটি দ্বিতীয় পর্যায়ের বাণিজ্য চুক্তি অনুসরণ করার জন্য অনুরোধ করছি যা মার্কিন বাণিজ্য উদ্বেগগুলিকে গঠনমূলক উপায়ে মোকাবেলা করবে এবং আমাদের নির্ভরশীল বাজারগুলিকে সংরক্ষণ করবে,’ র‌্যাগল্যান্ড বলেন। সিনহুয়া অনুসারে, ব্রাজিল তার পক্ষ থেকে চীনের সাথে তার কৃষি বাণিজ্য সম্পর্ক সম্প্রসারণের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে বলে দেশটির কৃষি ও পশুপালন মন্ত্রী কার্লোস ফাভারো ১৭ এপ্রিল ব্রাসিলিয়ায় ব্রিকস কৃষি কর্মী গোষ্ঠীর বৈঠকে সভাপতিত্ব করার সময় জানিয়েছিলেন।

নভেম্বরে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তির ফলে চীনের তিল ও জোয়ার বাজার ব্রাজিলের জন্য উন্মুক্ত করাকে ফাভারো একটি উল্লেখযোগ্য সুযোগ হিসেবে তুলে ধরেন, আশা করা যায় যে ব্রাজিল চীনা বাজারের একটি অংশ নিশ্চিত করতে পারবে। ২০১৮ সালে প্রথম বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে বিশ্বের দুটি বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে বাণিজ্য বিরোধ থেকে ব্রাজিল উপকৃত হয়েছে। তারপর থেকে, চীন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরতা কমাতে দেশটি থেকে সয়াবিন ক্রয় বৃদ্ধি করে আসছে। ২০২৪ সালে, চীন মোট ১০৫ মিলিয়ন টন সয়াবিন আমদানি করেছে, যার মধ্যে ২২.১৪ মিলিয়ন টন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছে, যা মোট আমদানির ২১.১ শতাংশ - ২০১৮ সালের তুলনায় ১৩.৩ শতাংশ কম। এদিকে, কাস্টমস তথ্য অনুসারে, ব্রাজিল থেকে চীনের আমদানি গত বছর ৭৪.৬৫ মিলিয়ন টনে পৌঁছেছে, যা ৭১.১ শতাংশ।

চীন থেকে আবারও পণ্য কিনছে ওয়ালমার্ট : চীনের জিয়াংসু এবং ঝেজিয়াং প্রদেশের কিছু নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে ওয়ালমার্ট এবং অন্যান্য প্রধান আমেরিকান খুচরা বিক্রেতারা সাম্প্রতিক দিনগুলোতে শিপমেন্ট পুনরায় শুরু করতে বলেছে বলে বার্তা সংস্থা সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট জানতে পেরেছে। ওই প্রতিষ্ঠানগুলো মার্কিন-চীন বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। পূর্বাঞ্চলীয় শহর নিংবোতে স্টেশনারি এবং অফিস পণ্যের একটি প্রধান রপ্তানিকারক সোমবার ওয়ালমার্ট থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্বাভাবিক ডেলিভারি পুনরায় শুরু করার জন্য একটি বিজ্ঞপ্তি পেয়েছে, বিশ্বের দুটি বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে ধারাবাহিকভাবে শুল্ক বৃদ্ধির ফলে চালান হ্রাস পেয়েছে।

নতুন আমদানি শুল্কের খরচ মার্কিন ক্লায়েন্টরা বহন করবে, সংস্থাটি বলেছে। ‘আমাদের দীর্ঘকালীন অংশীদার ওয়ালমার্ট আমাদের (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে) আরও বেশি শিপিং শুরু করতে বলেছে, এবং (চীনা পণ্যের উপর) নতুন শুল্কের অতিরিক্ত খরচ আমাদের বহন করতে হবে না,’ কোম্পানির ভাইস-প্রেসিডেন্ট সোমবার পোস্টকে জানিয়েছেন। জিয়াংসুতে কমপক্ষে একজন রপ্তানিকারককে চাহিদা পুনরুদ্ধারের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। ‘আমরা জানতে পেরেছি যে প্রধান খুচরা বিক্রেতারা তাদের চীনা বিক্রেতাদের অর্ডার পুনরায় শুরু করার পরামর্শ দিয়েছেন,’ মাইনেত্তির আঞ্চলিক পরিচালক পল তাই বলেছেন, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপ জুড়ে বিক্রি হওয়া পোশাকের হ্যাঙ্গার এবং প্যাকেজিং পণ্য ডিজাইন এবং রপ্তানি করে। তিনি আরও বলেন, ২৩ এপ্রিলের প্রথম দিকে মার্কিন ক্লায়েন্টরা একই ধরণের নোটিশ প্রচার করেছিলেন। সূত্র : সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট।