পাকিস্তানে হামলা করলেই যেকারণে লেজে-গোবরে অবস্থা হবে ভারতের
৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:২০ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:২০ পিএম

জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা আবারও তীব্র হয়ে উঠেছে। এই হামলার পর ভারতের অভ্যন্তরে যুদ্ধোন্মাদনা বাড়ছে। উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের পক্ষ থেকে পাকিস্তানে হামলা চালাতে ব্যাপক অভ্যন্তরীণ চাপ সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিবেশী দেশ দুটির পাল্টাপাল্টি এমন অবস্থান নতুন করে যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি করেছে।
এদিকে, কাশ্মীরের পহেলগামে বন্দুক হামলার জবাব দিতে দেশের সশস্ত্র বাহিনীকে ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ দিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) নিজ বাসভবনে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল, চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ (সিডিএস) জেনারেল অনিল চৌহানসহ তিন বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে মোদি স্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছেন, ভারতীয় সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী ও নৌসেনারা ‘যখন খুশি, যেখানে খুশি’ পহেলগামে হামলার বদলা নিতে পারে। কোথায়-কীভাবে হামলা চালানো হবে, কীভাবে পরিকল্পনা করা হবে- সেই সংক্রান্ত বিষয়ে কোনো বাহিনীর হাত-পা বেঁধে রাখা হবে না।
তবে ভারতীয় বিমান বাহিনীর অতীত লজ্জাজনক রেকর্ড এবং বর্তমান ফ্লিটের বেহাল অবস্থা তাদের যুদ্ধ সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, তারা কি আসলেই বড় ধরনের সংঘাতে কার্যকরভাবে লড়তে সক্ষম? এমন প্রশ্ন রেখে বিশ্লেষকেরা বলছেন, উগ্র হিন্দুত্বাবাদী জনগোষ্ঠীর খায়েশ মেটাতে ভারত পাকিস্তানে হয়তো লোক দেখানো হামলা করবে। কিন্তু তার জবাবে পাকিস্তানের পক্ষে থেকে যে পাল্টা জবাব দেওয়া হবে তাতে ভারতের লেজে-গোবরে অবস্থা হওয়ার যথেষ্ঠ শঙ্কা রয়েছে।
অপরদিকে, আগামী ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে ভারত পাকিস্তানে হামলা করতে পারে বলে গোয়েন্দা তথ্যের বরাত দিয়ে গতকাল জানিয়েছে দেশটি। এমন অবস্থায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে কাশ্মিরের আকাশে। ভারতীয় বিমান বাহিনীর ৪টি রাফাল যুদ্ধবিমান কাশ্মির অঞ্চলে টহল দেওয়ার সময় পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান দেখে পালিয়ে গেছে।বুধবার (৩০ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন।
সম্প্রতি নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত ও পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের উত্তেজনা শেষবার যখন সংঘর্ষে রূপ নিয়েছিল, তখন ভারতীয় কর্মকর্তারা এক অস্বস্তিকর বাস্তবতার সম্মুখীন হতে বাধ্য হন। ওই সময় দেশটির বিশাল সামরিক বাহিনীকে অনেকটা ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানো হয়েছিল; তারা ছিল সেকেলে এবং সীমান্তে হুমকি মোকাবিলায় অপ্রস্তুত।
পাকিস্তানের হাতে ২০১৯ সালে একটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত হওয়ার ঘটনায় লজ্জায় পড়ে যায় দেশটি। এতে ভারতের সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়নের প্রচেষ্টাকে ত্বরান্বিত করার প্রয়োজনীয়তা তৈরি হয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সামরিক বাহিনীতে কয়েক শ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেন। অস্ত্র কিনতে নতুন আন্তর্জাতিক মিত্র খুঁজে নেন। দেশীয়ভাবে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদন বাড়ান। এসব প্রচেষ্টায় ঠিক কতটুকু পরিবর্তন এসেছে, হয়তো খুব শিগগিরই তার পরীক্ষা হবে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভারতের সামরিক বাহিনী এখনো আধুনিকায়নের পর্যায়ে রয়েছে। এ অবস্থায় দুর্বলতা ফাঁস হওয়ার ভয়ে জবাব দেওয়ার ক্ষেত্রে সংযমী হতে পারে ভারত।
২০১৮ সালে এক সংসদীয় প্রতিবেদনে জানানো হয়, ভারতের ৬৮ শতাংশ সামরিক সরঞ্জাম ‘সেকেলে’, ২৪ শতাংশ এখনকার মানের এবং মাত্র ৮ শতাংশ ‘সর্বাধুনিক’। পাঁচ বছর পর ২০২৩ সালে দেওয়া এক হালনাগাদ প্রতিবেদনে সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তারা স্বীকার করেন, বিশাল আকারের বাহিনী হওয়ার চ্যালেঞ্জের কারণে পর্যাপ্ত পরিবর্তন আসেনি।
যদিও ২০২৩ সালের সংসদীয় শুনানিতে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভারতের সর্বাধুনিক সামরিক সরঞ্জাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে, তবু একটি আধুনিক সেনাবাহিনীর মানের বিবেচনায় এটি অনেক কম। অর্ধেকেরও বেশি সরঞ্জাম এখনো পুরোনোই রয়ে গেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব সীমাবদ্ধতার কারণে নরেন্দ্র মোদি তুলনামূলক সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যভিত্তিক হামলার পথ বেছে নিতে পারেন। যেমন, সীমিত পরিসরে বিমান হামলা বা পাকিস্তান সীমান্তের কাছে বিশেষ বাহিনীর অভিযান। এসব অভিযান জনরোষ প্রশমিত করবে, সম্ভাব্য বিব্রতকর ভুলের ঝুঁকি কমাবে এবং প্রতিশোধমূলক হামলা এড়াতে কাজে আসবে। এদিকে পাকিস্তান সরকার ইতিমধ্যে সতর্ক করেছে, ভারত হামলা করলে তারাও একই ধরনের জবাব দেবে।
পাকিস্তানে হামলা চালাতে জনমত নরেন্দ্র মোদির জন্য সহায়ক হলেও, ভারতের গণতান্ত্রিক কাঠামো একই সঙ্গে তাঁর ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে যাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায়।
এদিকে, এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতির মধ্যেই আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে ভারতীয় বিমানবাহিনীর (আইএএফ) যুদ্ধ সক্ষমতা।
পাকিস্তানের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা দ্য নিউজ রোববার প্রকাশিত এক বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তান-ভারত সংঘর্ষের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। আর সেসব সংঘর্ষে ভারতীয় বিমানবাহিনীর সক্ষমতা বারবার প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক বছরে পাকিস্তান কর্তৃক ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি মিগ-২১ ভূপাতিত করা এবং পাইলট অভিনন্দন বর্তমানকে আটক করা, ভারতীয় বিমানবাহিনী আবারও আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে।
ভারতীয় সরকারি মিডিয়ার প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভারতীয় বিমানবাহিনী মোট ২,৩৭৪টি বিমান দুর্ঘটনায় হারিয়েছে। এর মধ্যে ১,১২৬টি ছিল ফাইটার জেট এবং ১,২৪৮টি ছিল অন্যান্য শ্রেণির বিমান। এ ছাড়াও ২২৯টি প্রশিক্ষণ বিমান এবং ১৯৬টি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়েছে। এসব দুর্ঘটনার ফলে ১,৩০৫ জন দক্ষ পাইলটের করুণ মৃত্যু হয়েছে।
এই বিপুল ক্ষতির পরিসংখ্যান ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দুর্বলতাগুলোকে স্পষ্ট করে তুলেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে বিমানবাহিনীর আধুনিকীকরণে গাফিলতি এবং পুরোনো প্রযুক্তিনির্ভরতা এর প্রধান কারণ। তারা বলছেন, এছাড়াও আইএএফের কমব্যাট এয়ারক্রাফটের ঘাটতি ভারতের প্রতিরক্ষা সক্ষমতার একটি গুরুতর দুর্বলতা।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ইতিহাসের একাধিক যুদ্ধে আইএএফ উল্লেখযোগ্য ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। ১৯৪৭-৪৮, ১৯৬৫ এবং ১৯৭১ সালের বড় যুদ্ধে এবং ১৯৯৯ সালের কারগিল সংঘাতে ভারতীয় বিমানবাহিনী বিমানের পাশাপাশি অভিজ্ঞ পাইলটও হারিয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইএএফর মোট ক্ষতির তুলনায় যুদ্ধক্ষেত্রের ক্ষয়ক্ষতির হার কম- মাত্র ১৪৩টি বিমান যুদ্ধক্ষেত্রে হারিয়েছে, যা মোট ক্ষতির প্রায় এক-অষ্টমাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশেষ করে ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের সময় পাকিস্তান বিমানবাহিনীর (পিএএফ) প্রাথমিক হামলায় ভারতীয় বিমানবাহিনীর ৫৯টি বিমান ঘাঁটিতেই ধ্বংস হয়, যা ভারতীয় গোয়েন্দা এবং প্রস্তুতির ব্যর্থতার একটি বড় উদাহরণ। আইএএফ নিজেও তাদের সরকারি রিপোর্টে স্বীকার করেছে, ১৯৬৫ সালের যুদ্ধে তারা পিএএফের তুলনায় অস্বাভাবিকভাবে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিল।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুদ্ধবাজ ভাষণ ও শক্তি প্রদর্শনের আগে ভারতের উচিত হবে তার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ভেতরের দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করা এবং আধুনিকীকরণে মনোনিবেশ করা।
পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীকে খুব সহজেই প্রতিহত করতে পারবে বলে ভারত আত্মবিশ্বাস দেখাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে এ দাবির যদি পরীক্ষা নেওয়া হয়, তাহলে ভারতের আরেক প্রতিবেশী চীন তাতে নিবিড় নজর রাখবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সীমান্তে পাকিস্তানের চেয়ে চীনকে বড় সংকট হিসেবে বিবেচনা করছে ভারত। বিশেষ করে ২০২০ সালে হিমালয়ের উঁচু এলাকায় দুই দেশের সেনাদের মধ্যে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ এবং ভারতীয় ভূখণ্ডে চীনাদের বারবার অনুপ্রবেশের পর থেকে এ অবস্থা তৈরি হয়। ফলে দেশটির সামরিক নেতৃত্বকে দুই ফ্রন্টে লড়তে হবে এমন এক যুদ্ধের সম্ভাবনা বিবেচনায় নিয়েই প্রস্তুতি নিতে হয়েছে। এ ধরনের বহুমুখী চাপ তাদের সামর্থ্যকে ভাগ করে ফেলে।
২০২০ সালে সংঘর্ষের পরে চীন সীমান্তে চার বছর ধরে হাজার হাজার সেনা মোতায়েন রাখার ব্যয়বহুল উদ্যোগ ভারতের সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়নের প্রক্রিয়াকে পিছিয়ে দেয়। আরেকটি বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ইউক্রেন যুদ্ধ। এটি ভারতের সবচেয়ে বড় উৎস রাশিয়া থেকে অস্ত্র সরবরাহে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
২০২০ সালে চীনের সঙ্গে সংঘাতের এক বছরের একটু বেশি সময় আগে পাকিস্তান ভারতীয় একটি যুদ্ধবিমান গুলি করে ভূপাতিত করে এবং এর পাইলটকে আটক করে।
বিভাগ : আন্তর্জাতিক
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

জাতীয় স্বার্থে দূরদর্শী ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের জন্য সবার প্রতি জামায়াত আমিরের আহবান

বেলগোরোড, কুরস্ক অঞ্চলের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে রুশ সেনা

সুনাম হারাচ্ছে এলন মাস্কের প্রতিষ্ঠানগুলো

চীনের মধ্যস্থতায় ঘনিষ্ঠ হচ্ছে পাকিস্তান-আফগানিস্তান

বিশাল বহর নিয়ে ৩১ মে ঢাকায় আসছেন চীনা বাণিজ্যমন্ত্রী

কাতারের কাছ থেকে বিলাসবহুল জেট গ্রহণ করেছেন ট্রাম্প

মাওবাদী নেতাসহ ৩০ জনকে হত্যা করেছে ভারত : বিরোধী দলগুলোর নিন্দা

গণ-অভ্যুত্থানের পর সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়া ৬২৬ জনের তালিকা দিল সেনাবাহিনী

অধ্যাপক ইউনূস ‘পদত্যাগের বিষয়ে ভাবছেন’ : নাহিদ ইসলাম

ঈদের আগেই বাজারে মিলবে যেসব নতুন নোট

প্রধান উপদেষ্টার কাছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের স্মারকলিপি

জানতে দেয়া হয়নি জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকের সিদ্ধান্ত

পুঁজিবাজারে লেনদেন সূচক বেড়েছে

কালোবাজারি রোধে কঠোর রেল

বিদেশে খেলনার বাজার ৪০ হাজার কোটি টাকা

অবৈধ রেলিক সিটিতে রাজউকের অভিযান, কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা

সেপ্টেম্বরের মধ্যে সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাসহ ৫ দফা দাবি গণ অধিকার পরিষদের

দেশের সংকটময় যেকোনো পরিস্থিতিতে নেতৃত্ব দেন জিয়া পরিবার -ব্যারিস্টার অমি

বন্দরে শহীদ জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভা

চালককে হাতুড়িপেটা করে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ছিনতাই