কে এই আয়াতুল্লাহ খামেনি? যাকে ভয় করে পশ্চিমা বিশ্ব

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

১৮ জুন ২০২৫, ০৩:৩১ পিএম | আপডেট: ১৮ জুন ২০২৫, ০৩:৩২ পিএম

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা যখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে, তখন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সরাসরি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে আক্রমণের ইঙ্গিত দিয়েছে। এই সময়েই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এমন মন্তব্য করেন, যা বিশ্লেষকদের মতে, পুরো অঞ্চলে ভয়াবহ সংঘাত ডেকে আনতে পারে। এর মধ্যেই প্রশ্ন উঠছে—কে এই আয়াতুল্লাহ খামেনি, যাকে হত্যা করতে এতটা আগ্রহ দেখাচ্ছে পশ্চিমা শক্তি?

 

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েল আক্রমণের পর থেকেই ইরান-ইসরায়েল সংঘাত নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। এরপর গাজায় ব্যাপক যুদ্ধ, হেজবুল্লাহর ওপর হামলা, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বোমাবর্ষণ এবং শীর্ষ জেনারেলদের লক্ষ্য করে ইসরায়েলের হামলার ঘটনায় পুরো অঞ্চল উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এরই প্রেক্ষাপটে খামেনিকে সরাসরি নিশানা করার হুমকি উচ্চারণ করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, যেটিকে কেবল কথার ঝাঁঝ নয়, বরং একটি সম্ভাব্য সামরিক পদক্ষেপের ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে।

 

আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ইরানের সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা। গত প্রায় ৪০ বছর ধরে তিনি দেশের সর্বোচ্চ পদে রয়েছেন এবং ইরানের বিচার বিভাগ, পার্লামেন্ট, সামরিক বাহিনী, বিপ্লবী গার্ড এবং কুদস ফোর্সসহ সকল রাষ্ট্রীয় কাঠামোর উপর চূড়ান্ত নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছেন। এই কুদস ফোর্সই লেবাননের হেজবুল্লাহ, গাজার হামাস ও ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের সহায়তা করে থাকে, যাদেরকে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র ‘প্রক্সি মিলিশিয়া’ হিসেবে দেখে।

 

খামেনি জন্মগ্রহণ করেন ১৯৩৯ সালে ইরানের মাশহাদ শহরে। তিনি ছিলেন ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনির ঘনিষ্ঠ অনুসারী। বিপ্লবের পরপরই রাজতন্ত্র উৎখাত করে ইসলামি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়, যার ভিত্তিতে গড়ে ওঠে আধুনিক ইরান। ১৯৮১ সালে এক বোমা হামলায় তার ডান হাত আংশিক বিকল হয়ে পড়ে। ১৯৮৯ সালে খোমেনির মৃত্যুর পর তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হন এবং তখন থেকেই তিনি দেশটির পররাষ্ট্রনীতি ও সামরিক কৌশলের প্রধান নির্ধারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

 

খামেনি আঞ্চলিক কৌশলে ‘অ্যাক্সিস অব রেজিস্ট্যান্স’ নামে পরিচিত জোটের মাধ্যমে লেবানন থেকে সিরিয়া, ইরাক, ইয়েমেন পর্যন্ত রাজনৈতিক ও সামরিক প্রভাব বিস্তার করেন। যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তার কড়া অবস্থান, পারমাণবিক কর্মসূচিতে দৃঢ়তা এবং অভ্যন্তরীণ বিরোধ কঠোরভাবে দমন—তাকে একজন কট্টরপন্থী শক্তিশালী নেতায় পরিণত করেছে। কিন্তু ২০২৩ সালের পরে একের পর এক ইসরায়েলি হামলা ও অভ্যন্তরীণ আন্দোলন তার অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে বলে মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক।

 

এই প্রেক্ষাপটে, খামেনির বিরুদ্ধে সরাসরি হামলার ইঙ্গিত মধ্যপ্রাচ্যে ভয়ানক অস্থিরতা ডেকে আনতে পারে। একজন ধর্মীয় নেতা ও রাষ্ট্রনেতার বিরুদ্ধে হত্যার মতো পদক্ষেপ কেবল ইরান নয়, বরং গোটা অঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ ও প্রতিশোধের পথ খুলে দিতে পারে। এ ছাড়া, শিয়া-মুসলিম বিশ্বের একাংশে এমন পদক্ষেপ বিপুল রোষ ও সহিংসতার জন্ম দিতে পারে।

 

বিশ্লেষকরা বলছেন, খামেনির ওপর যদি হামলা হয়, তাহলে তা শুধু একটি দেশের নয়, পুরো মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা কাঠামো ভেঙে পড়তে পারে। ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে খামেনি হচ্ছেন বহু মানুষের শ্রদ্ধার প্রতীক। তাঁকে হত্যার অর্থ হবে সরাসরি 'যুদ্ধ ঘোষণা'—যার প্রতিক্রিয়া হতে পারে বিস্ফোরক। তথ্যসূত্র : সিএনএন

 


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় একদিনেই নিহত ১১০ ফিলিস্তিনি

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় একদিনেই নিহত ১১০ ফিলিস্তিনি

মুক্তির অপেক্ষায় জয়ার ৩ সিনেমা

মুক্তির অপেক্ষায় জয়ার ৩ সিনেমা

হাসপাতালে কিয়ারা, আজই হতে পারেন মা

হাসপাতালে কিয়ারা, আজই হতে পারেন মা

ঢাকায় ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদে কলাপাড়ায় মশাল মিছিল

ঢাকায় ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদে কলাপাড়ায় মশাল মিছিল

উত্তরা সেনাবাহিনীর হাতে চাঁদাবাজ মিলনসহ গ্রেফতার ৬

উত্তরা সেনাবাহিনীর হাতে চাঁদাবাজ মিলনসহ গ্রেফতার ৬

মিটফোর্ডে প্রকাশ্যে খুন: তদন্তে অগ্রগতি, বিভ্রান্তিকর প্রচারে ডিএমপির সতর্কবার্তা

মিটফোর্ডে প্রকাশ্যে খুন: তদন্তে অগ্রগতি, বিভ্রান্তিকর প্রচারে ডিএমপির সতর্কবার্তা

ফের লর্ডস টেস্টে হাসল রাহুলের ব্যাট,তিন দিন শেষে সমানে সমান ভারত-ইংল্যান্ড

ফের লর্ডস টেস্টে হাসল রাহুলের ব্যাট,তিন দিন শেষে সমানে সমান ভারত-ইংল্যান্ড

যারা সরাসরি সংশ্লিষ্ট রহস্যজনকভাবে সেই মূল তিন আসামীকে বাদ দেয়া হয়েছে :যুবদল সভাপতি

যারা সরাসরি সংশ্লিষ্ট রহস্যজনকভাবে সেই মূল তিন আসামীকে বাদ দেয়া হয়েছে :যুবদল সভাপতি

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনকে অবশ্যই ‘সঠিক পথ’ খুঁজে বের করতে হবে

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনকে অবশ্যই ‘সঠিক পথ’ খুঁজে বের করতে হবে

বিচারহীনতা ও রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতার জঘন্য পরিণতি সোহাগ হত্যাকাণ্ড :বিভিন্ন ইসলামী দলের তীব্র প্রতিবাদ

বিচারহীনতা ও রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতার জঘন্য পরিণতি সোহাগ হত্যাকাণ্ড :বিভিন্ন ইসলামী দলের তীব্র প্রতিবাদ

অমীমাংসিত কিছু বিষয়, শুল্কছাড় নিয়ে আবার আলোচনায় বসবে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ

অমীমাংসিত কিছু বিষয়, শুল্কছাড় নিয়ে আবার আলোচনায় বসবে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ

এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার আগে জ্বালানি সুইচ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল

এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার আগে জ্বালানি সুইচ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল

ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে চাই -স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে চাই -স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

মূল্য যুদ্ধের অবসান ঘটাতে পদক্ষেপ নিচ্ছে চীন

মূল্য যুদ্ধের অবসান ঘটাতে পদক্ষেপ নিচ্ছে চীন

রূপগঞ্জে ৩৪ বছর পর মসজিদের ওয়াকফকৃত ৪১ শতক জমি উদ্ধার করল গ্রামবাসী

রূপগঞ্জে ৩৪ বছর পর মসজিদের ওয়াকফকৃত ৪১ শতক জমি উদ্ধার করল গ্রামবাসী

বন্দরে বিএনপি নেতাদের চাঁদা না দেয়ায় মসজিদের বালু ভরাট কাজ বন্ধ

বন্দরে বিএনপি নেতাদের চাঁদা না দেয়ায় মসজিদের বালু ভরাট কাজ বন্ধ

পাল্টা শুল্কের শঙ্কায় বাংলাদেশ থেকে পোশাকের ক্রয়াদেশ পিছিয়েছে ওয়ালমার্ট

পাল্টা শুল্কের শঙ্কায় বাংলাদেশ থেকে পোশাকের ক্রয়াদেশ পিছিয়েছে ওয়ালমার্ট

দুই হত্যার প্রাপ্ত টাকা মসজিদে দান করে দেয় র‌্যাব কর্মকর্তা

দুই হত্যার প্রাপ্ত টাকা মসজিদে দান করে দেয় র‌্যাব কর্মকর্তা

মালয়েশিয়ায় আন্তর্জাতিক মেশিনারি মেলায় অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ

মালয়েশিয়ায় আন্তর্জাতিক মেশিনারি মেলায় অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ

টাকা পয়সার সঙ্গে জামা জুতাও নিয়ে যায় ছিনতাইকারী

টাকা পয়সার সঙ্গে জামা জুতাও নিয়ে যায় ছিনতাইকারী