উম্মতের জন্য রাসূল (সা.) এর ভালোবাসা-২
২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১:০৫ পিএম | আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:০০ এএম

রাসূল (সা.) উম্মতদের বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি থেকে বাঁচানোর জন্য অবিরাম চেষ্টা করেছেন। কোন কাজ করলে নেক আমল হয় এবং কোনটি করলে নাফারমানি হয়, সে সম্পর্কে তাঁর উম্মতদের শিক্ষা দিয়েছেন। উম্মতের ইহকালীন ও পরকালীন সকল সমস্যার এবং সকল ধরনের ক্ষতি থেকে সব সময় চেষ্টা করেছেন। সকল ধরনের ক্ষতি থেকে উম্মতকে রক্ষার জন্য নবী মুহাম্মদ (সা.) বেশি চিন্তিত থাকতেন। পাহাড়ের চূড়ায় উঠে রাসূল (সা.) সবসময় ভাবতেন যে, কীভাবে মানুষকে অন্যায়-অবিচার কাজ থেকে বিরত রাখা যায়। নিজেকে বিলীন করে দিয়েছিলেন তাঁর উম্মতের সার্বিক কল্যাণের জন্য।
আল্লাহ তায়ালা বলেন : ‘ওই সমস্ত লোক ঈমান আনছে না এ কারণে কি তাদের চিন্তায়ও পেরেশানীতে আপনি নিজেকে শেষ করে দিবেন।’ (সূরা শুরা : আয়াত-৩)। রাসূল (সা.) গুনাহগার উম্মতের প্রতি বিশেষ স্নেহশীল ছিলেন। উম্মতের অনাগতদের প্রতি রাসূল (সা.)-এর ছিল তীব্র ভালোবাসা। কেননা, তারা না দেখেই রাসূলের জন্য সাক্ষ্য দেবে। তাই তাদের দেখার বাসনা ছিল তাঁর। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত : রাসূল (সা.) বলেন, ‘আমার ভাইদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে ইচ্ছা করছে।’ সাহাবীরা বললেন, আমরা কি আপনার ভাই নই? রাসূল (সা.) বললেন, ‘তোমরা তো আমার সাহাবী তথা সঙ্গী। আমার ভাই হলো, যারা আমার উপর ঈমান আনবে; কিন্তু আমাকে দেখবে না।’ (মুসনাদে আহমাদ : ১২৭১৮)।
উম্মতের সবার পক্ষ থেকে রাসূল (সা.)-এর কোরবানি ছিল ভালোবাসার চূড়ান্ত নমুনা। তিনি পুরো মুসলিম উম্মাহর পক্ষ থেকে নিজেই কোরবানি করতেন। আবু রাফে (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূল (সা.) কোরবানির সময় দু’টি মোটাতাজা শিং বিশিষ্ট দুম্বা ক্রয় করতেন। নামাজ আদায় করে খুতবা প্রদান করতেন। অতঃপর তিনি নামাজের স্থানে দাঁড়ানো থাকতেই একটি দুম্বা নিয়ে আসা হতো। তা নিজ হাতে ছুরি দিয়ে জবাই করে বলতেন, ‘হে আল্লাহ, এটা আমার পুরো উম্মতের পক্ষ থেকে, যারা আপনার তাওহিদের সাক্ষ্য দিয়েছে এবং আমার রিসালাত পৌঁছে দেয়ার সাক্ষ্য দিয়েছে।’ (মুসনাদে আহমাদ : ২৭৭৮২)।
মোহাম্মদ (সা.) সব সময় উম্মতের জন্য পেরেশান ছিলেন। বদরের যুদ্ধে ৩১৩ জন সাহাবী যখন যুদ্ধ করতে গেল, তখন প্রিয় নবী মহান প্রভুর দরবারে তাঁর সাহাবীদের জন্য দোয়া করলেন; হে আল্লাহ! এই সাহাবীরা আমার অনেক আদরের; এই সাহাবীদের তুমি মেরো না, এদের তুমি রক্ষা কর। উহুদে রাসূল (সা.)-এর দাঁত ভেঙ্গেছে, মাথা ফেঁটেছে, খন্দকের যুদ্ধে মাটি বহন করতে করতে নিজ শরীরে দাগ হয়ে গিয়েছে; তায়েফে ইসলাম প্রচার করতে গিয়ে তায়েফের দুষ্ট ছেলেরা রাসূল (সা.)-এর সাথে ঠাট্টা করেছে, গালমন্দ করেছে, তারা রাহমাতুল্লিল আলামিনের উপর কঙ্কর নিক্ষেপ করেছে। তবুও তিনি এসব হাসিমুখে সহ্য করেছেন উম্মাহের সার্বিক মুক্তির জন্য।
মুমিনগণের প্রতি রাসূল (সা.) অতিশয় স্নেহশীল ও দয়ালু ছিলেন। মানবজাতি কোন দুঃখ-কষ্টে লিপ্ত হবে এবং আযাব-গযবে পড়বে-এটা সহ্য করতে পারতেন না। এ কথার প্রমাণ স্বয়ং কুরআন মাজীদে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন : ‘ তোমাদের মধ্য থেকেই তোমাদের নিকট একজন রাসূল এসেছেন, তোমাদেরকে যা কিছু কষ্ট দেয় তা তাঁর নিকট খুবই কষ্টদায়ক। সে তোমাদের কল্যাণকামী, মু’মিনদের প্রতি করুণাসিক্ত, বড়ই দয়ালু।’ (সূরা তাওবাহ : ১২৮)।
অন্যত্র ইরশাদ করেন : ‘নবী (সা.) মুমিনদের ব্যাপারে এতটুকু স্নেহ-মমতা রাখেন, যতটুকু মুমিনগণ স্বীয় নফস সম্পর্কে স্নেহ-মমতা রাখে না। অর্থাৎ আমরা নিজেকে যতটুকু মোহাব্বাত করি নবী (সা.) তাঁর চেয়ে বেশি আমাদেরকে মুহাব্বাত করেন।’ (সূরা আহ্যাব : ৬)। নবী (সা.) গুনাহগার উম্মতের প্রতি যে এত মুহাব্বাত রাখেন, তার প্রমাণ নবী (সা.)-এর প্রতিটি কাজ-কর্ম থেকে প্রকাশ পেয়েছে। আর তিনি দুনিয়াতে উম্মতকে বাঁচানোর জন্য চেষ্টা-ফিকির করে শেষ করেছেন এমন নয়, বরং তিনি আখিরাতেও গুনাহগার উম্মাতকে বাঁচানোর জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করবেন।
তিনি সর্বাবস্থায় এ ফিকিরে নিমগ্ন থাকতেন যে, কীভাবে সকল মানুষ ঈমানদার হয়ে যায় এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে জান্নাতী হয়। হযরত আবু যর গিফারী (রা.) বলেন : একটি পাখি যদি আপন দুই ডানা মেলে আকাশে উড়তো, তবে রাসূল (সা.) তা থেকে আমাদেরকে একটি নসীহত বা জ্ঞানের কথা বলতেন।’ (তাফসীর ইবনে কাছীর : খ. ২, পৃ ৪১২)।
রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন : ‘আল্লাহ তায়ালা কতিপয় বস্তুকে হারাম করেছেন অথচ তিনি এটাও অবগত আছেন যে, তোমাদের অনেকেই তাতে লিপ্ত হবে। আর আমি তোমাদের কোমর ধরে ধরে ওই সব হারাম কাজ থেকে তোমাদের হিফাজত করেছি। অথচ তোমরা পতঙ্গের মতো সেই আগুনের মধ্যে ঝাঁপ দিতে উদ্যত হচ্ছো।’ (সহীহ বুখারী : ৬৪৮৩)।
এসব হাদিস থেকে বোঝা যায় উম্মতের প্রতি রাসূলের ভালোবাসার প্রমাণ। আল্লাহ্পাক আমাদের অন্তরেও রাসূল (সা.) এর মোহাব্বাত অধিক থেকে অধিকতর করে দিন। আল্লাহ্ আমাদের জীবনকে সুন্নাতে উদ্ভাসিত করে দিন।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

উত্তরপ্রদেশে নজরদারীতে ৮০ মাদরাসা

অনেক দেশ আত্মসমর্পণ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কাছে

চরম ভোগান্তিতে শ্রমজীবীরা

দেশবাসী সরকারের ক্ষমতা কুক্ষিগত করার মনোবাসনা পূরণ হতে দেবে না- জামায়াতে ইসলামী

নির্বাচনী হলফনামায় নজরদারি করবে দুদক

নতুন শিক্ষা কারিকুলাম নতুন প্রজন্মের সর্বনাশ করবে, বাতিল করুন -মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী

বিএনপি নেতার মৃত্যু হলো নাটোর জেলা কারাগারে

অনুপ্রেরণাদায়ী ‘লুমিয়ের’ দের নিয়ে গ্রামীণফোনের টক শো

ইচ্ছাকৃতভাবে ‘অপ্রয়োজনীয়’ সিজারে ঝুঁকছেন মায়েরা: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

১৯ শিশু হত্যায় জড়িত মার্কিন অস্ত্র, অ্যামনেস্টির প্রতিবেদন খতিয়ে দেখবে যুক্তরাষ্ট্র

গার্ড ‘সংকট’, পাঁচ মিনিটের বদলে ট্রেন থামলো সোয়া একঘন্টা

ইসিতে ১৫৫ জন প্রার্থীর আপিল আবেদন তৃতীয় দিনে

ইসরায়েলে এবার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইয়েমেনের হুথিরা

হুইপ সামশুলের বিরুদ্ধে সিইসির কাছে নৌকার প্রার্থীর অভিযোগ

ইসলামি সংগীতে যেভাবে জনপ্রিয় হলেন জুনায়েদ জামশেদ

কুমিল্লা দেবিদ্বার আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থীকে স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতার হুমকি

৪১তম বিসিএস নন-ক্যাডারে সুপারিশ পেলেন ৩১৬৪ জন

প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি

নাগরিক সেবার বিভিন্ন কাজে অটোমেশনে জোর দিচ্ছে ডিএনসিসি

কালীগঞ্জে অবরোধের সমর্থনে ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল