সন্তান লালন-পালন মা-বাবার কিছু করণীয়-২
২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০৫ এএম

শিশুরা যেকোনো জিনিস খুব সহজে ধারণ করতে পারে। তাদের স্মৃতিতে তা যেন খোদাই হয়ে যায়। গুণীজনরা যথার্থই বলেছেন, ‘শৈশবের শিক্ষা যেন পাথরে অঙ্কিত নকশা।’ সুতরাং সন্তানকে সুসন্তান হিসেবে গড়ে তোলার মূল সময় হচ্ছে শৈশবকাল।
বক্ষমাণ প্রবন্ধে সন্তান লালন-পালনের ক্ষেত্রে তিনটি বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করা হয়েছে : ১. সন্তানের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা। পিতা-মাতার দোয়া আল্লাহ তাআলা কবুল করেন। হাদিস শরিফের ইরশাদ : তিন ব্যক্তির দোয়া কবুল হয়, এতে কোনো সন্দেহ নেই। পিতা-মাতার দোয়া, মুসাফিরের দোয়া ও মজলুমের দোয়া। (সুনানে আবু দাউদ-১৫৩৬)
সন্তান মানুষ হওয়ার ক্ষেত্রে মা-বাবার দোয়ার বড় ভূমিকা রয়েছে। এ জন্য নবীগণ তাদের সন্তানদের জন্য দোয়া করতেন। কুরআন মাজিদে ইবরাহিম আলাইহিস সালামের একাধিক দোয়ার বিবরণ এসেছে। যেমনÑ এবং সেই সময়কে স্মরণ কর, যখন ইবরাহিম (আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করেছিল আর তাতে) বলেছিল, হে আমার প্রতিপালক! এ নগরকে শান্তিপূর্ণ বানিয়ে দিন এবং আমাকে ও আমার পুত্রগণকে মূর্তিপূজা থেকে দূরে রাখুন।’ (সূরা ইবরাহিম-৩৫)
হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম আরো দোয়া করেন : ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকেও নামাজ কায়েমকারী বানিয়ে দিন এবং আমার আওলাদের মধ্য হতেও (এমন লোক সৃষ্টি করুন, যারা নামাজ কায়েম করবে)। হে আমার প্রতিপালক! এবং আমার দোয়া কবুল করে নিন।’ (সূরা ইবরাহিম-৪০)
মারইয়াম রা. ভূমিষ্ঠ হলে তার ও তার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য তার মা দোয়া করেছিলেন : অতঃপর যখন তার কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করল তখন সে বলল... আমি তার নাম রাখলাম মারইয়াম এবং তাকে ও তার বংশধরগণকে অভিশপ্ত শয়তান থেকে হিফাজতের জন্য তোমার আশ্রয়ে অর্পণ করলাম।’ (সূরা আলে ইমরান-৩৬)
সন্তানের ব্যক্তিত্ব গঠনের জন্য পিতা-মাতা আল্লাহর কাছে দোয়া-রোনাজারি করবে সন্তানের জন্মের আগ থেকেই, সন্তান কামনার সময় থেকেই। ইয়াহিয়া আলাইহিস সালামের জন্মের আগে হজরত জাকারিয়া আলাইহিস সালাম তাঁর জন্য দোয়া করেছিলেন। আল্লাহ তাআলা ফরমানÑ ‘এ সময় জাকারিয়া স্বীয় প্রতিপালকের কাছে দোয়া করল। বলতে লাগল, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে তোমার নিকট হতে পবিত্র সন্তান দান করো। নিশ্চয়ই তুমি দোয়া শ্রবণকারী।’ (সূরা আলে ইমরান-৩৮)
সুতরাং সন্তানের জন্য বেশি বেশি নেক দোয়া করতে থাকা। তাদের উত্তম শিক্ষা-দীক্ষার জন্য আল্লাহর সাহায্য চাওয়া। কেন না, তিনিই উত্তম সাহায্যকারী। আল্লাহর কাছে চাইতে থাকলে আল্লাহ অবশ্যই কবুল করবেন।
২. শিশুর কানে তাওহিদ ও রিসালাতের বাণী পৌঁছাতে থাকা। জন্মের পর থেকে নবজাতকের কানে এমন সব শব্দবাক্য বলতে থাকা, যা শিশুর হৃদয়ে আল্লাহ ও রাসূলের মহব্বত পয়দা করবে এবং দ্বীন-ধর্মের ভালোবাসা সৃষ্টি করবে। এ জন্যই সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর তার কানে আজান দেয়া হয়। আবু রাফে রা. বলেন : রাসূলুল্লাহ (সা.) কে দেখেছি ফাতেমা রা.-এর পুত্র হাসান ইবনে আলীর জন্ম হলে তার কানে আজান দিয়েছেন। (সুনানে আবু দাউদ-৫১০৫)
আজানের মধ্যে কী আছে? আজানের প্রথম চারটি বাক্যে আছে আল্লাহর বড়ত্বের ঘোষণা, পরের দুটি বাক্যে আল্লাহর একত্ববাদ ও শিরকমুক্ত হওয়ার সাক্ষ্য, এর পরের দুটি বাক্যে মুহাম্মাদ সা:-কে নবী এবং তাঁর আদর্শকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করার স্বীকারোক্তি, তার পরের দুটি বাক্যে রয়েছে নামাজ তথা আল্লাহর ইবাদতের প্রতি দাওয়াত। পরবর্তী দুটি বাক্যে রয়েছে সফলতার প্রতি আহ্বান। সর্বশেষে পুনরায় আল্লাহর একত্ববাদ ও নবীজীর রিসালাতের ঘোষণা।
সুতরাং অভিভাবকের কর্তব্য, শিশুর কানে সুযোগে সুযোগে এমন শব্দ-বাক্য দেয়া, যা শিশুর হৃদয়ে আল্লাহ তাআলার তাওহিদ জাগ্রত রাখবে, তাঁর প্রতি মহব্বত-ভালোবাসা বৃদ্ধি করবে, রাসূলে কারিম সা:-এর সিরাত ও আদর্শের প্রতি অনুপ্রাণিত করবে এবং আখিরাতের কামিয়াবির জন্য তার মন-মানসিতাকে প্রস্তুত করবে।
সালাফে সালেহিন তথা মহান পূর্বসূরিগণ তাদের সন্তানদেরকে ছোটবেলায় দ্বীনের মৌলিক অনেক বিষয় শিখিয়ে দিতেন। তাদের একটি নীতি ছিল : সাহাবি ও তাবেয়িগণ শিশু স্পষ্ট উচ্চারণে কথা বলতে সক্ষম হলে তার কানের নিকট সাতবার ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পড়তেন। ফলে শিশু সর্বপ্রথম যা উচ্চারণ করত তা হল ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, বর্ণনা-৩৫১৯)
মোটকথা, প্রিয় সন্তান যেন মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে সে জন্য শিশুকাল থেকেই মেহনত করতে হবে। তাকে আল্লাহর গুণাবলির কথা, তাঁর একত্ববাদের কথা, নবীগণের ঘটনাবলি, সাহাবায়ে কেরাম ও অন্যান্য নেককার বান্দাদের কর্ম ও বাণী শোনাতে হবে।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

আইপিএল পুনরায় শুরু শনিবার

টেস্টে কোহলির যত রেকর্ড

আনচেলত্তিই ব্রাজিলের নতুন কোচ

আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত

ওষুধের দাম কমাতে পদক্ষেপ ট্রাম্পের

চীনা বিমানের কাছে পরাস্ত রাফাল সোশ্যাল মিডিয়ায় হাসির খোরাক ভারত

এরদোগানের সঙ্গে ফোনালাপ পুতিনের

ফের বিটকয়েনের দাম ১ লাখ ৫ হাজার ডলার ছাড়াল

মার্কিন-চীন বাণিজ্যের অবনতি রোধ করতে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে ঝুঁকছে নেক্স গ্লোবাল

গাজা যুদ্ধ সামরিক আগ্রাসনের মাধ্যমে সমাধানযোগ্য নয় : জার্মানি

ইউরোপে বন্দি থেকেও ফিলিপাইনে জয়ী হতে যাচ্ছেন দুতার্তে

ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সংলাপ চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা

ফ্যাসিস্ট এমপি মমতাজ বেগম গ্রেফতার

কোটচাঁদপুরে আম সংগ্রহ শুরু

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অচল: দক্ষিণাঞ্চল অচলের ঘোষণা

সুন্দরবনের চারপাশে ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা জারী করে প্রজ্ঞাপন

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির এক দশক পূর্তিতে দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য আয়োজন

করিডোর নিয়ে গোটা দেশের মানুষ ক্ষুব্ধ, বিপন্ন হতে পারে সার্বভৌমত্ব: দরকার জাতীয় ঐক্য

সিলেটে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এক নেতাকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ

মাগুরায় আওয়ামী লীগ এর সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ায় জামায়াতের শুকরানা মিছিল