সন্তানদের সাথে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-২

মাওলানা মুহাম্মাদ ইমরান হুসাইন

২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম | আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০০ এএম

নবীজীর পুত্রগণ শৈশবেই ইন্তেকাল করেন। ইবরাহিম রা. ১৬ বা ১৮ মাস বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর ওফাতের সময় মহানবী (সা.) এর হৃদয়ে কেমন ব্যাকুলতা ও অস্থিরতা ছেয়ে গিয়েছিল তা বোঝা যায় সায়্যিদুনা আনাস রা.-এর বর্ণনা থেকে : ইবরাহিমকে দেখার জন্য নবীজীর সাথে আমরা আবু সাইফের বাড়িতে গেলাম। ইবরাহিমের তখন প্রাণ ওষ্ঠাগত। তা দেখে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর চোখ থেকে অশ্রু ঝরতে লাগল।

আবদুর রহমান ইবনে আউফ রা. বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনিও (কাঁদছেন)? তিনি বললেন, এটা হলো রহমত। এরপর আবারো তাঁর চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল এবং তিনি বললেন : নিশ্চয় চক্ষু অশ্রু ঝরাচ্ছে এবং হৃদয় বিগলিত হচ্ছে। তবে আমরা মুখে কেবল তাই বলব, যা আমাদের রব পছন্দ করেন। তোমার বিরহে আমরা বড়ই ব্যথিত হে ইবরাহিম! (সহিস বুখারি-১৩০৩)

কন্যার প্রতি মহানবী (সা.) এর হৃদয় ছিল আদর-স্নেহ ও প্রীতি-ভালোবাসায় ভরপুর। নবীজীর বড় মেয়ে জয়নব রা.-এর বিয়ে হয় আবুল আস ইবনে রবির সঙ্গে। হিজরতের সময় আবুল আস রা. ইসলাম গ্রহণ করেননি। কুরাইশ যখন যুদ্ধ করার জন্য বদর প্রান্তে রওনা হলো আবুল আসও তাদের সঙ্গী হলেন এবং কুরাইশ বন্দিদের সাথে তিনিও বন্দি হলেন। উম্মুল মুনিনিন আয়েশা রা. বলেন, মক্কার লোকেরা নিজেদের বন্দিদের মুক্তির জন্য মুক্তিপণ পাঠায়। জয়নব রা.-ও আপন স্বামী আবুল আসের মুক্তির জন্য কিছু জিনিস পাঠান।

তাতে একটি হার ছিল, যা খাদিজা রা. জয়নব রা.-কে বিয়ের সময় দিয়েছিলেন। হারটি দেখে (কন্যার স্নেহে) নবী করিম (সা.) অতিশয় বিগলিত হয়ে পড়েন। তিনি সাহাবায়ে কেরামকে উদ্দেশে বললেন : তোমরা ভালো মনে করলে জয়নবের বন্দিকে মুক্তি দিয়ে দাও এবং তার হারটি ফেরত পাঠিয়ে দাও। তারা বললেন, অবশ্যই, ইয়া রাসূলুল্লাহ! এরপর তারা আবুল আসকে মুক্তি দিয়ে দেন এবং জয়নবের হারটি ফেরত পাঠিয়ে দেন। (সুনানে আবু দাউদ-২৬৯২)

নবী করিম (সা.) এর দ্বিতীয় কন্যা হজরত রুকাইয়া রা.। তার বিয়ে হয় হজরত উসমান রা.-এর সাথে। বদরযুদ্ধের সময় রুকাইয়া রা. খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর সেবা-শুশ্রƒষার জন্য নবী করিম (সা.) উসমান রা.-কে যুদ্ধে না গিয়ে মদিনায় থাকার নির্দেশ দেন এবং তাকে সান্ত¡না দিয়ে বলেন : নিশ্চয় তুমি বদরযুদ্ধে যোগদানকারী একজন মুজাহিদের সমান সওয়াব এবং তার সমপরিমাণ গণিমতের অংশ পাবে। (সহিহ বুখারি-৩১৩০) তৃতীয় কন্যা উম্মে কুলসুম রা.-এর ওফাতের পর নবী করিম (সা.) তাঁর কবরের পাশে গিয়ে বসলেন। তাঁর চোখ থেকে তখন অবিরাম অশ্রু ঝরছিল। (সহিহ বুখারি-১২৮৫)।

নবী করিম (সা.) এর সর্বকনিষ্ঠ কন্যা হজরত ফাতেমা রা.। তার প্রতি নবীজীর আদর-সোহাগ ছিল সবচেয়ে বেশি। তিনি নবীজীর ঘরে এলে পিতৃস্নেহের উষ্ণতা দিয়ে তাঁকে বরণ করতেন। আয়েশা রা. শোনাচ্ছেন যে, আল্লাহর রাসূল (সা.) এর সাথে উঠা-বসা, আচার-অভ্যাস, চালচলন, আখলাক-চরিত্রে ফাতেমার চেয়ে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ আর কাউকে আমি দেখিনি। ফাতেমা নবীজীর কাছে এলে তিনি এগিয়ে গিয়ে তার হাত ধরতেন, তাকে চুমু দিতেন এবং নিজের আসনে বসাতেন। আর নবী করিম (সা.)ও যখন ফাতেমার কাছে যেতেন তিনিও উঠে এসে পিতাকে চুমু দিতেন এবং নিজের আসনে বসাতেন। (সুনানে আবু দাউদ-৫২১৭)

নবী করিম (সা.) কখনো কখনো কন্যাদের সাদর সম্ভাষণ জানাতেন। আয়েশা রা. বলেন, একবার ফাতেমা হেঁটে আসছিল। তার হাঁটার ধরন ছিল রাসূল (সা.) এর মতোই। তাকে আসতে দেখে নবীজী বলে উলঠেন : আমার কন্যাকে স্বাগতম! এরপর তাকে নিজের ডানে বা বামে বসালেন। (সহিহ বুখারি-৩৬২৩) এই ঘটনা কটি নিয়ে চিন্তা করলেই বোঝা যায়, সন্তানের প্রতি রাসূল (সা.)-এর স্নেহ-ভালোবাসা কত গভীর ছিল!

বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম