সন্তানদের সাথে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-৩

Daily Inqilab মাওলানা মুহাম্মাদ ইমরান হুসাইন

৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০৩ এএম

সব দরদী ও মমতাবান পিতাই সন্তানের কল্যাণ প্রত্যাশা করে, নিজ নিজ বিবেচনা অনুযায়ী। কারো কাছে আখেরাতের চিন্তা-ফিকির নেই বা থাকলেও তা গৌণ, দুনিয়াটাই মুখ্য। তারা সন্তানের জন্য দুনিয়ার কল্যাণের আকাক্সক্ষা করে। কেউ অর্থ-বিত্তকে কল্যাণের চাবিকাঠি মনে করে নিজের সন্তানের জন্য সম্পদের প্রাচুর্যের আশা করে। কেউবা পদ-পদবীকে সফলতার মানদন্ড মনে করে সন্তানের উচ্চ পদে সমাসীন হওয়ার কামনা করে। যে জাগতিক শিক্ষাকে সফলতার বিন্দু বিবেচনা করে সে ছেলে-মেয়েকে শিক্ষার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করে। এভাবে যার বিবেচনায় যে বিষয় সুখ-শান্তি ও সফলতার মাধ্যম সে ওই ক্ষেত্রে আপন সন্তানের সার্থক পদচারণার স্বপ্ন দেখে।

মহানবী (সা.)-এর নিকট পার্থিব কোনো বিষয়ই কল্যাণ ও কামিয়াবীর কেন্দ্রবিন্দু নয়। তাই জাগতিক কোনো বিষয়ের প্রতি তাঁর কোনো বাসনা ছিল না। দুনিয়া তো তাঁর নিকট মশার পাখা থেকেও হীন। (সহিহ বুখারী-৪৭২৯) বরং ত্রæটিযুক্ত মৃত ছাগলছানা থেকেও তুচ্ছ। (সহিহ মুসলিম-২৯৫৭) তাঁর দৃষ্টিতে দুনিয়া ভোগ-বিলাস ও আরাম-আয়েশের জায়গা নয়। বরং দুনিয়া ও দুনিয়ার বিলাস সামগ্রি হলো প্রবঞ্চক, প্রতারক। সুতরাং এটাই স্বাভাবিক যে, তিনি সন্তানদের জন্য বিত্ত-বৈভব ও বিলাস সামগ্রি পছন্দ করবেন না।

এক্ষেত্রে আলী (রা.) ও ফাতেমা (রা.)-এর জীবন হলো সুন্দর উদাহরণ। তাঁদের সংসারে দৈন্য ও অভাব-অনটন ছিল নিত্য বিষয়। সংসারের যাবতীয় কাজকর্ম ফাতেমা (রা.) নিজ হাতে সম্পাদন করতেন। তিনি অনেক কষ্ট-ক্লেশের কাজ নিজে আঞ্জাম দিতেন। হাদিস ও সীরাতের কিতাবাদিতে সেসবের কিছু বিবরণ পাওয়া যায়। তিনি নিজ হাতে জাঁতা চালাতেন। এরপর নিজেই রুটি তৈরি করতেন। জাঁতা চালাতে চালাতে তার উভয় হাতে ফোসকা পড়ে গিয়েছিল। (সহিহ বুখারী-৩৭০৫)

মশক দিয়ে পানি টানতে টানতে তাঁর গায়ে দাগ পড়ে গিয়েছিল। নিয়মিত আগুনে রান্না করাতে তাঁর জামা-কাপড় কালচে হয়ে থাকত এবং প্রত্যহ ঘর ঝাড়– দেয়ায় তাঁর কাপড়-চোপড় ধুলা-ধূসরিত হয়ে যেত। (সুনানে আবু দাউদ-২৯৮৮, ৫০৬৩) তাঁরা যে চাদরটা গায়ে দিয়ে ঘুমাতেন তা এত ছোট ছিল যে, পা ঢাকলে মাথা বেরিয়ে যেত, মাথা ঢাকলে পা বেরিয়ে যেত। (মুসনাদে আহমদ-৮৩৮) এভাবে ফাতেমা (রা.) কষ্ট-কঠিন জীবনযাপন করে যাচ্ছিলেন। এরই মাঝে একবার নবীজীর নিকট গনীমতের মাল এবং কিছু গোলাম এলো। ফাতেমা (রা.) নবীজীর খেদমতে নিজের করুণ অবস্থার কিছু বিবরণ দিলেন এবং একজন খাদেমের আবেদন করলেন।

চিন্তা করুন, একজন পিতা, যার রয়েছে সন্তানের প্রতি হৃদয় উজাড় করা স্নেহ-মমতা, কলিজার টুকরা প্রিয় কন্যার এমন কষ্টের কথা শুনলে তাঁর মনে কেমন তোলপাড় সৃষ্টি হতে পারে! কিন্তু নবীজী কী করলেন? শুনুন আলী (রা.)-এর যবানেÑ আলী (রা.) বলেন, রাতে নবীজী আমাদের ঘরে এলেন। আমি এবং ফাতেমার মাঝখানে আমাদের সাথে লেগে বসলেন এবং বললেন, শোনো, তোমরা যা চেয়েছ তারচেয়ে উত্তম জিনিস কি তোমাদের বলব না? তোমরা যখন রাতে ঘুমানোর জন্য বিছানায় যাবে তখন ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদু লিল্লাহ এবং ৩৪ বার আল্লাহু আকবার পড়বে। এটা তোমাদের জন্য খাদেমের চেয়ে উত্তম। (সহিহ বুখারী-৩১১৩) অপর বর্ণনায় এসেছে, তখন ফাতেমা (রা.) উত্তরে বলেছেন, আমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি সন্তুষ্ট। (সুনানে আবু দাউদ- ২৯৮৮)


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

সমাজসেবায় ওয়াকফের ভূমিকা
মানবসেবায় ওয়াকফের ভূমিকা
আল্লাহর স্মরণ ব্যথিত বিপর্যস্ত প্রাণের উপশম-২
আল্লাহর স্মরণ : ব্যথিত বিপর্যস্ত প্রাণের উপশম-১
শিশুদের সাথে নবীজী (সা.)-৩
আরও
X

আরও পড়ুন

বন্দরে শহীদ জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভা

বন্দরে শহীদ জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভা

চালককে হাতুড়িপেটা করে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ছিনতাই

চালককে হাতুড়িপেটা করে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ছিনতাই

ফ্যাসিস্ট আমলে গ্রেফতারকৃত আলেমদের ঈদের আগেই মুক্তি দিতে হবে : খেলাফত আন্দোলনের সভায় নেতৃবৃন্দ

ফ্যাসিস্ট আমলে গ্রেফতারকৃত আলেমদের ঈদের আগেই মুক্তি দিতে হবে : খেলাফত আন্দোলনের সভায় নেতৃবৃন্দ

কারাগারে সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাঙ্গীর

কারাগারে সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাঙ্গীর

এনবিআরের সদস্য আবু সাঈদ মুস্তাকসহ ২ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

এনবিআরের সদস্য আবু সাঈদ মুস্তাকসহ ২ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

চট্টগ্রাম বন্দরে সুবাতাস

চট্টগ্রাম বন্দরে সুবাতাস

সব রেকর্ড ভেঙে ইতিহাসের সর্বোচ্চ দামে বিটকয়েন

সব রেকর্ড ভেঙে ইতিহাসের সর্বোচ্চ দামে বিটকয়েন

মার্কিন সেনাবাহিনীতে থাকছে না কোনো রূপান্তরকামী

মার্কিন সেনাবাহিনীতে থাকছে না কোনো রূপান্তরকামী

পাকিস্তান-ভারত আলোচনার ‘নিরপেক্ষ’ স্থান হতে পারে সউদী -শাহবাজ শরীফ

পাকিস্তান-ভারত আলোচনার ‘নিরপেক্ষ’ স্থান হতে পারে সউদী -শাহবাজ শরীফ

ওয়াশিংটনে ইসরাইলি দূতাবাসের দুই কর্মীকে হত্যা

ওয়াশিংটনে ইসরাইলি দূতাবাসের দুই কর্মীকে হত্যা

ব্যবস্থা নিচ্ছে দুদক ও ইসি : শেখ হাসিনার নির্বাচনী হলফনামায় মিথ্যা তথ্য

ব্যবস্থা নিচ্ছে দুদক ও ইসি : শেখ হাসিনার নির্বাচনী হলফনামায় মিথ্যা তথ্য

ফ্যাসিবাদের দেড় দশকে তারা কোথায় ছিলেন?

ফ্যাসিবাদের দেড় দশকে তারা কোথায় ছিলেন?

রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ দেয়ার আহবান মির্জা ফখরুলের

রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ দেয়ার আহবান মির্জা ফখরুলের

অবরোধ-বৃষ্টিতে ঢাকায় তীব্র যানজট

অবরোধ-বৃষ্টিতে ঢাকায় তীব্র যানজট

মিয়ানমারের সঙ্গে করিডোর নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি

মিয়ানমারের সঙ্গে করিডোর নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি

ব্যক্তির আদর্শ সম্মান ও আবেগের চেয়ে দেশ বড় -মাহফুজ আলম

ব্যক্তির আদর্শ সম্মান ও আবেগের চেয়ে দেশ বড় -মাহফুজ আলম

সাম্য হত্যার বিচার দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো শাহবাগ অবরোধ ছাত্রদলের

সাম্য হত্যার বিচার দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো শাহবাগ অবরোধ ছাত্রদলের

আপিল করবেন রিটকারী : মেয়র হিসেবে ইশরাককে শপথ পড়াতে বাধা নেই -ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন

আপিল করবেন রিটকারী : মেয়র হিসেবে ইশরাককে শপথ পড়াতে বাধা নেই -ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন

যানজটের জন্য চাইলেন ক্ষমা

যানজটের জন্য চাইলেন ক্ষমা

সমাজসেবায় ওয়াকফের ভূমিকা

সমাজসেবায় ওয়াকফের ভূমিকা