প্রশ্ন: হাশরের ময়দানে পাঁচটি কি প্রশ্ন করা হবে?
২২ মে ২০২৫, ১২:২৩ এএম | আপডেট: ২২ মে ২০২৫, ১২:২৩ এএম

ভয়াবহ হাশরের মাঠ। সেদিন পাপী গোনাহগারেরা ঘামতে থাকবে। পাপের সাথে মিল রেখে প্রত্যেকের কষ্টের ও ঘামের পরিমাণ হবে। আবু হুরাইরা রা: হতে বর্ণিত। রাসুলূল্লাহ সা: বলেছেন: কিয়ামতের দিন মানুষের ঘাম ঝরবে। এমনকি তাদের ঘাম যমীনে সত্তর হাত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়বে এবং তাদের মুখ পর্যন্ত ঘামে ডুবে যাবে; এমনকি কান পর্যন্ত। (বুখারী:৬৫৩২, কিতাবুর রিকাক, বাবু ক্বাউলিহি তা’আলা:আলা ইয়াজুন্নু উলাইকা......, মুসলিম:২৮৬৩, আহমাদ:৯৪২৬. আ.প্র:৬০৮২, ইফা:৬০৮৮) সে মাঠের সময়ের পরিক্রমা সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেন, “সেই দিনের পরিমাণ তোমাদের গণনায় সহস্্র বৎসর।”(সুরা সাজদা:৫) “ওই দিনের ব্যাপ্তি পঞ্চাশ হাজার বছর।”(সুরা মা’আরিজ:৪)
সেদিনের সেই ভয়াবহ হাশরের মাঠে আদম সন্তানের ৫টি প্রশ্নের উত্তর না দেয়া পর্যন্ত দু’পা উঠাতে দেয়া হবে না। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা: হতে বর্ণিত। নবী সা: বলেছেন: কিয়ামতের দিবসে পাঁচটি বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ হওয়ার আগ পর্যন্ত আদম সন্তানের পদদ্বয় আল্লাহর নিকট হতে সরতে পারবে না।
ক. তার জীবনকাল সম্পর্কে, কিভাবে অতিবাহিত করেছে?
খ. তার যৌবনকাল সম্পর্কে, কি কাজে তা বিনাশ করেছে?
গ. তার ধন-সম্পদ সম্পর্কে, কোথা হতে তা উপার্জন করেছে?
ঘ. এবং তা কি কি খাতে খরচ করেছে ?
ঙ. এবং সে যতটুকু জ্ঞান অর্জন করেছিল সে মোতাবেক কি কি আমল করেছে?
(তিরমিযি:২৪১৬, কিতাবু সিফাতিল কিয়মাহ ওয়ার রিকায়িকি......., বাবুল কিয়ামাহ)
মানুষের নৈতিক চরিত্র সংশোধনের জন্য, আল্লাহর ভয় ও আখিরাতের জবাবদিহির অনুভূতি জাগ্রত করার জন্য উল্লেখিত হাদীসটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহর ভয় ও আখিরাতের জবাবদিহিতার অনুভূতি ছাড়া মানুষের নৈতিক চরিত্র সংশোধনের আশা করা যায় না। দুনিয়ার জীবনের পর অনন্ত অসীম একটি জীবন আছে, সেখানে প্রতিটি মানুষকে দুনিয়ার প্রতিটি কাজ ও কথার জবাব দিতে হবে। সেখানে একটি শক্তিশালী আদালত কায়েম করা হবে, সে আদালতের বিচারপতি হবেন স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন। সেখানে কেউ কারো উপকারে আসবে না, সর্বময় ক্ষমতা থাকবে একমাত্র আল্লাহ তা’আলার। আল্লাহ তা’আলা বলেন,“এটি সেই দিন যখন কারোর জন্য কোন কিছু করার সাধ্য কারোর থাকবে না। ফায়সালা সেদিন একমাত্র আল্লাহর ইখতিয়ারাধীন থাকবে।”(সুরা ইনফিতার:১৯) অর্থাৎ কাউকে সেখানে তার কর্মফল ভোগ করার হাত থেকে নিস্কৃতি দান করার ক্ষমতা কারোর থাকবে না। কেউ সেখানে এমন প্রভাবশালী হবে না যে, আল্লাহর আদালতে তাঁর রায়ের বিরুদ্ধে বেঁকে বসে এ কথা বলতে পারে, উমুক ব্যক্তি আমার আত্মীয়, প্রিয় বা আমার সাথে সম্পর্কিত, কাজেই দুনিয়ায় সে যত খারাপ কাজ করে থাকুক না কেন তাকে তো মাফ করতেই হবে। সেদিন পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দিয়ে সামনে এগুতে হবে। ভালো করে মনে রাখতে হবে যে, এই প্রশ্নগুলোর সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আদম সন্তানের পদদ্বয় আল্লাহর নিকট হতে সরতে পারবে না।
প্রথম প্রশ্ন: তার জীবনকাল সম্পর্কে, কিভাবে অতিবাহিত করেছে?
মানুষের জন্য দুনিয়া মুলত: একটা পরীক্ষাগার। যে জিনিসকে সে বয়স বা আয়ুস্কাল বলে মনে করে আসলে তা পরীক্ষার সময় যা তাকে এ দুনিয়ায় দেয়া হয়েছে। দুনিয়ায় যে ক্ষমতা ও যোগ্যতা তাকে দেয়া হয়েছে, যে সব বস্তুকে কাজে লাগানোর সুযোগ তাকে দেয়া হয়েছে, যে মর্যাদা নিয়ে বা অবস্থানে থেকে সে এখানে কাজ করছে এবং তার ও অন্যান্য মানুষের মধ্যে যে সম্পর্ক বিদ্যমান তার সবই মূল অসংখ্য পরীক্ষপত্র। জীবনের সর্বশেষ মুহুর্ত পর্যন্ত নিরবিচ্ছিন্নভাবে পরীক্ষা চলবে। এ পরীক্ষার ফলাফল দুনিয়ায় প্রকাশ পাবে না। বরং আখেরাতে তার সমস্ত পরীক্ষা পত্র পরীক্ষা ও যাঁচাই-বাচাই করে ফায়সালা দেয়া হবে। সে সফল না বিফল। তার সফলতা ও বিফলতা সবটাই নির্ভর করবে এ বিষয়ের ওপর যে, সে তার নিজের সম্পর্কে কি ধারণা নিয়ে এখানে কাজ করছে এবং তাকে দেয়া পরীক্ষার পত্রসমূহে সে কিভাবে জবাব লিখেছে। নিজের সম্পর্কে যদি সে মনে করে থাকে যে, তার কোন আল্লাহ নেই অথবা নিজেকে সে বহু সংখ্যক ইলাহর বান্দা মনে করে থাকে এবং পরীক্ষার সবগুলো পত্রে এ বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে জবাব লিখে থাকে যে, আখিরাতে তার ¯্রষ্টার সামনে কোন জবাবদিহি করতে হবে না তাহলে তার জীবনের সমস্ত কর্মকা- ভুল হয়ে গিয়েছে। আর যদি সে নিজেকে একমাত্র আল্লাহর বান্দা মনে করে আল্লাহর মনোনীত পথ ও পন্থা অনুসারে কাজ করে থাকে এবং আখেরাতে জবাবদিহির চেতনা বিবেচনায় রেখে তা করে থাকে তাহলে সে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে গেলো। এ বিষয়টি আল কুরআনুল মাজিদে এত বেশী জায়গায় ও এত বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যে, এখানে সবগুলো উল্লেখ করা সম্ভব হলো না। আল্লাহ তা’আলা বলেন,“ তিনি আল্লাহ যিনি হায়াত ও মওত সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য যে, কে তোমাদের মধ্যে আমলের দৃষ্টিতে উত্তম আর কে অধম। তিনি মহাপরাক্রমশালী ও ক্ষমাশীল।”(সুরা মূলক:২)
উত্তর দিচ্ছেন : জাফর আহমদ, গবেষক, কলামিস্ট, শিক্ষাবিদ।
বিভাগ : ইসলামী প্রশ্নোত্তর
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

ইরানে মার্কিন বর্বরোচিত হামলা বিশ্বমানবতাকে ভাবিয়ে তুলছে

কমিটি গঠনের ২দিন পরই স্থগিত হলো শেরপুরের নালিতাবাড়ী এনসিপির কমিটি !

প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নিয়ে বিএনপির নতুন প্রস্তাব

রাতের ভোটের নুরুল হুদাকে ধরে পুলিশে দিলো বিক্ষুব্ধ জনতা

ট্রাম্পের বিশ্বাসঘাতকতা

সাহেবাবাদ ডিগ্রি কলেজের গভর্নিং বোর্ডের সভাপতি হলেন ব্যারিস্টার আব্দুল আল মামুন

মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক এমপি ফয়সল বিপ্লব গ্রেপ্তার

শেরপুরে জনপ্রিয় ষাড়ের মই দৌড় প্রতিযোগীতায় আনন্দে মেতে উঠে হাজারো মানুষ

শাহরাস্তিতে ডাকাতিয়া নদীতে পড়ে শিশু নিখোঁজের ৫ ঘন্টা পর মৃত উদ্ধার করলো ডুবুরিরা

জকিগঞ্জে ‘মৃত ব্যক্তি’ জীবিত ফিরে এলেন: দাফনের আগ মুহূর্তে চাঞ্চল্যকর ঘটনা

কুড়িগ্রামে ট্রাক চাপায় প্রাণ গেলো যুবকের

ডা. জোবাইদা রহমানের জন্মদিনে রূপগঞ্জে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি উদ্বোধন

আজ ‘মার্চ টু সচিবালয়’ ঘোষণা চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের

অবশ্যই ইসি পুনঃগঠন হবে : এনসিপি

চার্জ গঠন বিষয়ে শুনানি ২৯ জুন

উন্নতমানের গবেষণার পরিবেশ পেলে মেধাবীরা আবার দেশে ফিরবে : সালাহ উদ্দিন আহমেদ

সচিবালয়ের ভেতর সব সংগঠন বাতিলের নির্দেশনা চেয়ে রিট

দুদকের মামলায় স্ত্রীসহ খালাস পেলেন বিএনপি নেতা দুলু

নিজের সুরক্ষা চেয়ে মা-বাবার বিরুদ্ধে মেয়ের মামলা

দক্ষিণ সিটিতে সকল নাগরিক সেবা প্রদানের আহ্বান, গাফিলতিতে ব্যবস্থা