হজ ও কুরবানির মাস জিলহজ এ মাসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

Daily Inqilab ডা.মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ

২৪ মে ২০২৫, ১২:৩৩ এএম | আপডেট: ২৪ মে ২০২৫, ১২:৩৩ এএম

জিলহজ ত্যাগ ও তিতিক্ষার মাস। নফসের খাহেশাত কুরবানির মাস। এ মাসে সংঘঠিত হয়েছে দুনিয়ার সেরা আত্মত্যাগ। যা করে দেখিয়েছিলেন হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম। আল্লাহর নির্দেশ পালনে নিজের প্রাণপ্রিয় সন্তান হজরত ইসমাইল আলাইহিস সালামকে কুরবানির মাধ্যমে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন তিনি। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর মাঝে হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের আত্মত্যাগের প্রচলনকে আবশ্যক করে জারি রেখেছেন। যা অব্যাহত থাকবে কিয়ামত পর্যন্ত। যা সংঘঠিত হয়েছিল এ জিলহজ মাসে। পবিত্র জিলহজ মাসটি কুরআনে ঘোষিত হারাম মাসসমূহের মধ্যেও একটি। এ মাসটিতে ইসলাম পূর্ব যুগে যেমন যুদ্ধ-বিগ্রহ, মারামারি, হানাহানির মতো যে কোনো অন্যায়-অকর্মে লিপ্ত হওয়াকে অপরাধ মনে করা হত। ইসলামের আগমনের পরেও এ মাসের সে মর্যাদা ও সম্মান অক্ষুন্ন রয়েছে। এ মাসের ৮ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত হজের কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। আরার এ মাসটিই কুরবানির মাস। আত্মত্যাগ বা কুরবানির এ মাসে রয়েছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল ও করণীয়।

যে কারণে এ মাস মর্যাদাসম্পন্ন : জিলহজ মাসের মর্যাদা ও গুরুত্ব বেশি হলেও এ মাসের প্রথম দশ দিনের গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক বেশি। এ মাসের রয়েছে আমল-করণীয় ও আলাদা বৈশিষ্ট এবং মর্যাদা। আল্লাহ তাআলা সুরা ফজরের শুরুতেই জিলহজের প্রথম দশ রাতের কসম খেয়েছেনে। তিনি বলেন, ‘কসম ফজরের এবং দশ রাতের।’ এ দশ রাত দ্বারা জিলহজ মাসের প্রথম দশকই প্রমাণিত। জিলহজ মাসের প্রথম দশকের দিনগুলোর মর্যাদা এত বেশি যে, ৯ জিলহজকে হজে অংশগ্রহণকারী সব মানুষকে নিষ্পাপ হিসেবে কবুল করে নেয়ার দিন। আবার ৯ জিলহজ দিবাগত রাতকে (মুজদালিফার রাত) শবে কদরের চেয়েও মর্যাদা সম্পন্ন হিসেবে মনে করা হয়। এ রাতের ইবাদত বন্দেগিতে আল্লাহ তাআলা জুলুমকারীকেও ক্ষমা করে দেন।

প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে এ দিনগুলোর আমলের চেয়ে অন্য কোনো দিনের আমল অধিক প্রিয় নয়। সাহাবায়ে কেরাম জানতে চাইলেন, ‘আল্লাহর পে জিহাদও নয়? উত্তরে প্রিয়নবি বললেন, ‘না’, আল্লাহর পে জিহাদও নয়। তবে হ্যাঁ যদি কোনো ব্যক্তি নিজের জান ও মাল নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে বের হন এবং সে কোনো কিছু নিয়ে ফিরে না আসেন। (বুখারি)।

মুসনাদে আহমদে এসেছে, ‘জিলহজ মাসের প্রথম দশকের শেষ দুদিন অর্থাৎ ‘ইয়াওমে আরাফা ও ইয়াওমে নাহর (কুরবানির দিন)’হওয়ায় তা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।’ জিলহজ মাসের মর্যাদা বেশি হওয়ার আরো দুটি কারণ হলো- এ মাসেই হজ ও কুরবানি আদায় করতে হয়। যা মর্যাদাপূর্ণ মাস রমজানেও আদায় করা সম্ভব নয়।

জিলহজ্ব মাসে মুসলিম উম্মাহর করণীয় : কোনো ওজর আপত্তি না দেখিয়ে আর্থিক ও শারীরিক সক্ষম ব্যক্তিদের হজ আদায় করা। যাদের ওপর কুরবানি ওয়াজিব, তাদের কুরবানি আদায় করা। আর যাদের ওপর কুরবানি ওয়াজিব নয়, আল্লাহর সন্তুষ্টির অন্যতম মাধ্যম আত্মত্যাগের নিদর্শন কুরবানি আদায় করা। কারণ সম্পদহীন ব্যক্তি কুরবানির আগ্রহ প্রদানে আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তিকে স্বচ্ছলতা দান করতে পারেন। জিলহজ মাসের চাঁদ দেখার পর থেকে কুরবানি সম্পাদনের আগে পর্যন্ত নখ, চুল ও মোচ ইত্যাদি না কাটা। হাদিস এসেছে-হজরত উম্মে সালমা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত,রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন তোমরা জিলহজ মাসের চাঁদ দেখতে পাবে, এবং তোমাদের কেউ কুরবানি করার ইচ্ছা করে তবে সে যেন চুল নখ কাটা থেকে বিরত থাকে। (মুসলিম, ইবনে হিব্বান)।

জিলহজ মাসের পাঁচ দিন তাকবিরে তাশরিক আদায় করা আদায় করা। তাকবিরে তাশরিক হলো-‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।’আর তা শুরু হয় ৯ জিলহজ ফজর নামাজের পর থেকে। আর শেষ হবে ১৩ জিলহজ আসার নামাজে। যা এ পাঁচ দিন প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর পড়া ওয়াজিব। চাই নামাজ একাকী আদায় করা হোক বা জামাআতে। তাকবিরে তাশরিক পুরুষরা উচ্চ স্বরে আর মহিলার স্বশব্দে পড়বে। অর্থাৎ মহিলাদের তাকবিরের শব্দ যেন (গাইরে মাহরাম) অন্য লোকে না শোনে। শুধু ঈদের দিন (১০ জিলহজ) ব্যতিত জিলহজের প্রথম দশকে রোজা রাখা অনেক ফজিলতপূর্ণ ইবাদত। প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (ঈদের দিন ব্যতিত) জিলহজের প্রথম ৯ দিন রোজা পালন করতেন।

এ মাসের নবম দিন ও রাত আল্লাহর নিকট অনেক গুরুত্বপূর্ণ। দিনটি হলো আরাফাতের ময়দানে সমবেত হওয়ার দিন। আর রাতটি হলো মুজদালিফায় (শবে কদরের মতো গুরুত্বপূর্ণ) অবস্থানের রাত। বিশেষ করে ৯ জিলহজ রোজা আদায়ের ব্যাপারে প্রিয়নবি সবচেয়ে বেশি আশাবাদী ছিলেন যে, এ দিনের রোজা পালনকারীর বিগত এক বছর এবং আগাম (সামনের) এক বছরের গোনাহ মাফ করে দেবেন। পরিশেষে বলতে চাই, এ মাসের প্রথম দশকের আমল আল্লাহর নিকট এতটাই গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাশীল যে, মুসলিম উম্মাহর প্রত্যেককেই বেশি বেশি নেক আমল করা উচিত।আল্লাহর দেয়া বিধানগুলো যথায আদায়ের সঙ্গে সঙ্গে সুন্নাত, নফল, মোস্তাহাব নফল নামাজ আদায়, কুরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকার, দান-অনুদান, সাহায্য-সহায়তা বেশি বেশি করা জরুরি। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জিলহজ মাসব্যাপী নামাজ, রোজা (ঈদের দিন ব্যতীত), দান-অনুদান, হজ, কুরবানি, জিকির আজকার, কুরআন তেলাওয়াত ইত্যাদি কল্যাণকর কাজ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।


বিভাগ : ইসলামী জীবন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

তিন সেঞ্চুরিতে ভারতের ৪৭১,পোপের ব্যাটে জবাব দিচ্ছে ইংল্যান্ড

তিন সেঞ্চুরিতে ভারতের ৪৭১,পোপের ব্যাটে জবাব দিচ্ছে ইংল্যান্ড

উচ্চ আদালত খুলছে আজ

উচ্চ আদালত খুলছে আজ

উচ্চ আদালত খুলছে আজ

উচ্চ আদালত খুলছে আজ

ফরাসি সংস্থাকে তাড়িয়ে ইউরেনিয়াম খনি জাতীয়করণ করছে নাইজার

ফরাসি সংস্থাকে তাড়িয়ে ইউরেনিয়াম খনি জাতীয়করণ করছে নাইজার

তুর্কি সাংবাদিক উজায় বুলুতের প্রবন্ধ প্রোপাগান্ডামূলক ও ভিত্তিহীন : প্রেস উইং

তুর্কি সাংবাদিক উজায় বুলুতের প্রবন্ধ প্রোপাগান্ডামূলক ও ভিত্তিহীন : প্রেস উইং

ওআইসি সম্মেলনে মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যের ডাক এরদোগানের

ওআইসি সম্মেলনে মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যের ডাক এরদোগানের

ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদ মোকাবেলায় ইসলামী শক্তির ঐক্য অপরিহার্য

ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদ মোকাবেলায় ইসলামী শক্তির ঐক্য অপরিহার্য

উৎসবমুখর পরিবেশে অভয়নগরে বিজ্ঞানমেলা

উৎসবমুখর পরিবেশে অভয়নগরে বিজ্ঞানমেলা

মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে দেশে বিভাজন সৃষ্টি করা হয়েছে : ঝিনাইদহে প্রেস কাউন্সিল চেয়ারম্যান

মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে দেশে বিভাজন সৃষ্টি করা হয়েছে : ঝিনাইদহে প্রেস কাউন্সিল চেয়ারম্যান

হাতিয়ায় তাঁতীদল নেতার বিরুদ্ধে অন্যের জমিতে রাস্তা নির্মাণের অভিযোগ

হাতিয়ায় তাঁতীদল নেতার বিরুদ্ধে অন্যের জমিতে রাস্তা নির্মাণের অভিযোগ

মৌলভীবাজার জেলার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন সভা

মৌলভীবাজার জেলার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন সভা

কিশোরগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীর ওপর হামলা

কিশোরগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীর ওপর হামলা

চৌদ্দ বা আঠারো মার্কা নির্বাচন জনগণ মেনে নেবে না- মাওলানা এটিএম মাসুম

চৌদ্দ বা আঠারো মার্কা নির্বাচন জনগণ মেনে নেবে না- মাওলানা এটিএম মাসুম

"দখলদার দের বিরুদ্ধে আন্দোলন, খুনিদের বিরুদ্ধে আন্দোলন, মানুষের অধিকারকে প্রতিষ্ঠানের আন্দোলন"

"দখলদার দের বিরুদ্ধে আন্দোলন, খুনিদের বিরুদ্ধে আন্দোলন, মানুষের অধিকারকে প্রতিষ্ঠানের আন্দোলন"

এনবিআরে ফের কলম বিরতি

এনবিআরে ফের কলম বিরতি

লক্ষ্মীপুরে ছালেহা হত্যার ক্লু ৬ দিনেও উদঘাটন হয়নি

লক্ষ্মীপুরে ছালেহা হত্যার ক্লু ৬ দিনেও উদঘাটন হয়নি

সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বিরুদ্ধে মামলা করবে বিএনপি

সাবেক তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বিরুদ্ধে মামলা করবে বিএনপি

ওএসডি হলেন শরীয়তপুরের বিতর্কিত জেলা প্রশাসক

ওএসডি হলেন শরীয়তপুরের বিতর্কিত জেলা প্রশাসক

হিলি স্থলবন্দরের পানামাপোর্টের শ্রমিকদের কর্ম বিরতি পালন

হিলি স্থলবন্দরের পানামাপোর্টের শ্রমিকদের কর্ম বিরতি পালন

হিলি স্থলবন্দর আন্দোলন প্রত্যাহার কাজে ফিরেছে শ্রমিকীরা

হিলি স্থলবন্দর আন্দোলন প্রত্যাহার কাজে ফিরেছে শ্রমিকীরা