জুলাইবিপ্লবের রক্তাক্ত দলিল
০৭ মার্চ ২০২৫, ১২:২৮ এএম | আপডেট: ০৭ মার্চ ২০২৫, ১২:২৮ এএম

‘জুলাইবিপ্লবের রক্তাক্ত দলিল’গ্রন্থ মূলত একটি পেপার ডকুমেন্টারি। ১৯২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট, এ ৩৬ দিন বাংলাদেশ জুড়ে ছাত্র-জনতার যে আন্দোলন চলছিল সেই সমস্ত আন্দোলনের খবরা-খবর, ছবি, বিশ্লেষণ, মন্তব্য, সম্পাদকীয়, উপ-সম্পাদকীয়, বাংলাদেশের এবং বিদেশের বিভিন্ন সংস্থার রিপোর্ট, বিশ্লেষণ, মন্তব্যসহ বাস্তব ঘটনা বাংলাদেশের বিভিন্ন কাগজে প্রকাশিত হয়েছিল। সেই সকল প্রকাশিত সংবাদ নিয়ে এই বই ৫টি খ-ে এবং ১১টি অধ্যায়ে ভাগ করে প্রকাশিত হয়। কোটা আন্দোলন থেকে ফ্যাসিস্ট বিরোধী আন্দোলনে সফল হওয়ার সংবাদ যেমন এই বইতে আছে, তেমনি আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে হাসিনা সরকার ও তার দোসর ছাত্রলীগ যুবলীগ তথা হ্যালমেট বাহিনীর অত্যাচারের সংবাদ এবং ছবিও এই বইতে আছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এস এম বিপাশ আনোয়ার-এর পরিকল্পনাও সম্পাদনায় ‘জুলাইবিপ্লবের রক্তাক্ত দলিল’।
এ গ্রন্থ ২০২৪-এর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের রক্তাক্ত দলিলপত্রও স্মারক।এই গণ অভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতা, কৃষক, শ্রমিক, মেহনতী মানুষসহ বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, সাংবাদিক, অনলাইন নিউজ পোর্টাল, ইউটিউব, ব্যবসায়ী, বুদ্ধিজীবী, সংবাদপত্রের মধ্যে অভূতপূর্ব স্বতঃস্ফূর্ত ঐক্য পরিলক্ষিত হয়েছিল, এই বইয়ের পর্বে পর্বে তারই তথ্য, প্রমাণ, চিত্র সংকলিত হয়েছে। যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই আন্দোলনে ছাত্র-জনতা সামিল হয়েছে এবং আন্দোলনকে সফল করে তুলেছে। এ গ্রন্থের পাতায় পাতায় তার অথ্য-প্রমাণ সন্নিবেশিত রয়েছে। ২৪-এর বিপ্লবের সংগ্রামী সময়ের সাক্ষী হয়ে অনবদ্য, তথ্যবহুল ও প্রামান্য গ্রন্থ হিসেবে সংকলনটি বহুযুগ ধরে এই অঞ্চলের রাজনৈতিক, সামাজিক ইতিহাসে উজ্জ্বল স্মারক হিসেবে প্রতীয়মান থাকবে।
ফ্যাসিস্ট, স্বৈরাচারী সময়ে যাবতীয় প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে এদেশের বীর জনগণের সংগ্রামী ও কৃতিত্বপূর্ণ সাফল্যের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্মারক এই বই।
যুগ যুগ ধরে বাংলাদেশের বিভিন্ন লাইব্রেরি, সরকারি-বেসরকারি সংস্থা এবং বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসগুলিতে ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে বইটি দীর্ঘকাল প্রাসঙ্গিক
থাকবে। বাংলাদেশের এই বিপ্লবের ওপরে গবেষণা ও পঠন-পাঠনের জন্য এই বই সকল মানুষের কাছে প্রধান দলিল হিসেবে বিবেচিত হবে।
দুই হাজারেরও অধিক জীবন ও ৩০ হাজারেরও বেশি লোকের অঙ্গহানির বিনিময়ে রচিত ২৪-এর গণঅভ্যুত্থানের এই বীরত্বগাথা যাতে মানুষ ভুলে না যায়, এই গল্প যেন হারিয়ে না যায়, এই বিপ্লব যেন মানুষের নিত্য চর্চার অংশ হয়ে থাকে তাঁর জন্য এই বই যুগযুগ ধরে ভূমিকা রেখে যাবে বলে আমার বিশ্বাস।
এই বই প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা তার মূল্যবান বাণী দিয়ে বইটাকে ঋদ্ধ করেছেন। বিশিষ্ট সাংবাদিক এবং কূটনীতিক মুশফিকুল ফজল আনসারী এই বইয়ের সার্বিক তত্ত্বাবধানে রয়েছেন। বইয়ের মুখবন্ধ লিখেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী, ভূমিকা লিখেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা আক্তার। কমবেশি ৩০ জন দেশপ্রেমিক সাদামনের মানুষ চারমাস অক্লান্ত পরিশ্রম করে এই বইকে আলোর মুখ দেখিয়েছেন।
‘জুলাইবিপ্লবের রক্তাক্ত দলিল’গ্রন্থটি ৫ খ-ে বিভক্ত
প্রথম খ- : বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান সংক্রান্ত উল্লেখযোগ্য রিপোর্ট-১।
দ্বিতীয় খ- : বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান সংক্রান্ত উল্লেখযোগ্য রিপোর্ট-২।
তৃতীয়খ- : বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান সংক্রান্ত উল্লেখযোগ্য রিপোর্ট-৩। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান নিয়ে আওয়ামী সরকারের ভাষ্য।
চতুর্থ খ- : বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের হতাহতের/পুলিশের নির্মমতার খবর।
পঞ্চম খ- : বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান সংক্রান্ত সম্পাদকীয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান সংক্রান্ত উপ-সম্পাদকীয়/নিবন্ধ। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক নেতাদের বিবৃতি, বক্তব্য, মন্তব্য, কর্মসূচি, প্রতিক্রিয়া। দেশি-বিদেশি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মন্তব্য,বিবৃতি, প্রোগ্রাম, কর্মসূচি। রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতার হামলা, মামলা, নির্যাতনের খবর ও এনজিও, সুশীলসমাজ, সাংস্কৃতিক সংগঠন, সাংস্কৃতিক কর্মী, বিশিষ্ট ব্যক্তি সেলিব্রেটি, খেলোয়াড়দের আন্দোলন সংশ্লিষ্টক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া মন্তব্য, বিবৃতি, মতামত।
ছাত্র-জনতার এ সফল অভ্যুত্থান পৃথিবীর সভ্যতার ইতিহাসে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে একটি বিরল ঘটনা। জগতের কোন সভ্য দেশে এই উদাহরণ বিরল যে সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থাসংস্কার করার জন্য ছাত্র সমাজের দাবি শুরুতেই ছোটখাটো আন্দোলনে রূপ নিলে। সে আন্দোলনকে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ভীষণভাবে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে মন্তব্য করলে আন্দোলন ক্রমান্বয়ে দাবানলে রূপান্তরিত হয়। এই অবস্থায় রাষ্ট্রীয় বাহিনী দ্বারা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে নৃশংসভাবে গুলি চালানো হয়। এতে ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ৩৬ দিনে ২০০০ এরও বেশি শিশু-কিশোর, ছাত্র-জনতা শাহাদাৎ বরণ করেন এবং ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হয়। এছাড়া চোখ হারিয়েছেন বহুসংখ্যক মানুষ। অনেকে হারিয়েছেন হাত-পা। শতশত ছররা গুলি শরীরে ধারণ করে প্রতিমুহূর্তে কাতরাচ্ছেন অগণিত মানুষ। পরিবার ও সমাজের বোঝা হয়ে তাদের এই দুর্বিষহ জীবন আমৃত্যু বয়ে বেড়াতে হবে।
২৪-এর জুলাই বিপ্লব এ বীরের জাতির জীবনে আরেকটা মাইলফলক। এমন ছাত্র-জনতার বিপ্লব পৃথিবী আগে দেখেনি। প্রধানমন্ত্রী থেকে চৌকিদার পর্যন্ত পালিয়ে যায়। মন্ত্রী থেকে ইউপি মেম্বার পর্যন্ত পালিয়ে যায়, এমনকি মসজিদের ইমামের পালিয়ে যায়। পুলিশ পালিয়ে যাওয়া এবং সরকারি আহ্বান সত্ত্বেও পুনরায় চাকরিতে ফিরে আসার সাহস না থাকা, পৃথিবীর ইতিহাসে আর কোথাও ঘটেছে কি-না?। এই উদাহরণ পৃথিবীর ইতিহাসে দ্বিতীয়টি আর নেই। কেন এই অবস্থা, কেন এই পরিণতি, কিভাবে সম্ভব হলো এই জাতির বুকের ওপর চেপে থাকা জগদ্দল পাথরের মত এক বিশ্ববিখ্যাত ফ্যাসিস্টকে উৎখাত করাÑতারই ঘটনা বর্ণনা, ছবি, প্রভৃতি এই বইতে স্থান পেয়েছে। পৃথিবীতে জাস্টিস ও গণতন্ত্রের ইতিহাসে এই ঘটনা মাইলফলক হিসেবে মানুষকে পথ দেখাবে।
একটা অবৈধ সরকার জোরপূর্বক দখলদারিত্ব কায়েম করে দিনের পর দিন বৈষম্যের মাত্রা চক্রবৃদ্ধি হারেবৃদ্ধি করতে থাকে। জনবিচ্ছিন্নতা থাকায় অন্যায়-অসঙ্গতির সঙ্গে আপস করেই তাদের টিকে থাকতে হয়। নিয়মিত চর্চার অংশ হিসেবে ধরাকে সরা জ্ঞানকরা একটা পর্যায়ে অভ্যাসে পরিণত হয়। সরকারি চাকরিতে মাত্রাতিরিক্ত কোটা সংরক্ষণ পদ্ধতি বৈষম্যদোষে দুষ্ট। দীর্ঘদিনধরেই বৈষম্যমূলক এই পদ্ধতি সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছে শিক্ষার্থীরা। কিন্তু সরকার প্রতিবারই কখনো ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে, কখনো সন্ধির নাটক করে আবার কখনো-বা দেশদ্রোহী আখ্যা দিয়ে যৌক্তিক ও ন্যায্য এই দাবি দমন করে আসছে। তবে দুঃশাসনের ভারমাত্রা অতিক্রম করে ক্রমশ অসহনীয় হয়ে উঠতে উঠতে যখন দেয়ালেপিঠ ঠেকে যায়, তখন প্রতিরোধ ব্যতীত আর কোনো উপায় থাকেনা। সেই ধারাবাহিকতায় ছাত্র-জনতা সম্মিলিতভাবে এক অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানঘটিয়ে স্বৈরাচারী শেখহাসিনার ১৬ বছরের দুঃশাসনের শৃঙ্খলছিন্ন করেছে। এই অভ্যুত্থান দীর্ঘদিনধরে শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ মদদ ও তত্ত্বাবধানে চলে আসাহত্যা-গুম-খুন-বাক স্বাধীনতা হরণের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার পুঞ্জীভূত ক্ষোভের রক্তাক্ত বহিঃপ্রকাশ। এসএম বিপাশ আনোয়ার সম্পাদিত ৫ খ-ে প্রকাশিত ‘জুলাই বিপ্লবের রক্তাক্ত দলিল’ সেই সময়কে ধারণ করা কঠিন সত্য নিষ্ঠইতি বৃত্ত। বাংলাদেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান সংক্রান্ত সম্পাদকীয়, উপ-সম্পাদকীয়, রিপোর্ট, এমনকি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় ঐতিহাসিক চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে আওয়ামী সরকারের ভাষ্য ও সন্নিবেশিত করা হয়েছে। গ্রন্থটি এক দিকে আগ্রহী পাঠকের জুলাই অভ্যুত্থান সংক্রান্ত জিজ্ঞাসা ও উত্তর প্রাপ্তির সন্তোষ জনক ও যথার্থ উৎস; অন্যদিকে আগ্রহী গবেষকের আর্কাইভাল রিসার্চের আধার।
এ গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে টিএ্যান্ডটি পাবলিশার্স এ্যান্ড প্রিন্টিং। প্রতি খ-ের মূল্য ৩ হাজার টাকা। বাঁধাই মজবুত। আকর্ষনীয় প্রচ্ছদ। পাঠক পাঠকরা মাত্রই জুলাই বিপ্লবের রাজপথের রক্তাক্ত অন্দোলনের ৩৬ দিনের সচিত্র বর্ণনা জানার তেষ্ঠা মিটবে। আমি ৫ খ-ে প্রকাশিত ‘জুলাই বিপ্লবের রক্তাক্ত দলিল’এর সাফল্য কামনা করছি। -গ্রন্থ আলোচক: আলম শামস
বিভাগ : সাহিত্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

কুষ্টিয়ায় ধান আনতে গিয়ে বজ্রপাতে ট্রলিচালকের মৃত্যু

আ’লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে সিলেটে রাজপথে এনসিপি

গলা কেটে বৃদ্ধের আত্মহত্যা

শেরপুরে কবর থেকে তোলা হলো আন্দোলনে শহীদ আজিজের মরদেহ

বিরামপুর হাসপাতালে দুদকের অভিযান, পেয়েছে নানা অনিয়ম

বিএনপির তৃণমূলের কর্মীদের কাছে পরীক্ষা দেওয়া ছাড়া কেউ নেতা হওয়ার সুযোগ নাই: আবুল কালাম

ফেনীতে প্রধান উপদেষ্টার আবাসন পেল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ১০০ পরিবার

দেশের স্থিতিশীলতার জন্য দ্রুত নির্বাচন চায় বিএনপি: কাজী শিপন

উত্তরপ্রদেশে মুসলিম ছাত্রের উপর অমানবিক অত্যাচার

হজযাত্রীদের জন্য বাংলাদেশি টাকায় রবির রোমিং প্যাকেজ

প্রোটন বাজারে আনল দেশীয় অ্যাসেম্বল এক্স৭০ এসইউভি গাড়ি

এন্টারপ্রাইজের জন্য ক্লাউড সল্যুশন নিয়ে এলো বাংলালিংক

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সময়কার ২০০ কেজি ওজনের বোমা নিষ্ক্রিয় করলো সিটিটিসি

এসবিসি বিষয়ক গবেষণা রিপোজিটরি ব্যবহার নিশ্চিতের আহ্বান ইউজিসি’র

প্রীতি ফুটবল খেলতে আসছে চীনের মেয়েরা

শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠাই হবে মে দিবসের অঙ্গীকার: শিমুল বিশ্বাস

সিকদার গ্রুপের ২০৩টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ

দলীয় প্রচেষ্টার ফসল এই জয়: শান্ত

৩ মে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশে, ইসলামী গণজাগরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটবে

নতুন এডহক কমিটি পেলো রাজধানীর মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়