রাজধানীর উত্তরায় ‘সমন্বয়ক’ পরিচয়ে বেসরকারি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে চাঁদা দাবি, ভাঙচুর-লুট-পাট এবং অপহরণের ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বায়োটেক কর্পোরেশন নামের একটি মেডিকেটেড কসমেটিকস প্রতিষ্ঠানে এ ঘটনা ঘটে। প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুরের পর ম্যানেজারকে অপহরণ করে ১০ কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। পরে ম্যানেজার মো. রিয়াজুল ইসলামকে উদ্ধারসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন,বরিশাল রামপটি গ্রামের কাজী সালামের ছেলে কাজী জোবায়ের এবং শরিয়ত পুরের ডামুড্যা উপজেলার চর নারায়ণপুর গ্রামের নান্নু মিয়া ছৈয়ালের ছেলে আবির হাসান। কাজী জোবায়ের উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টর এবং আবির তুরাগের পাকুরিয়া এলাকার বাসিন্দা। উত্তরা পশ্চিম থানা সুত্রে জানা যায়, কাজী জোবায়ের এর আগে ও আরেকটি চাঁদাবাজি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিল।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে উত্তরার ৫ নং সেক্টর ৬ /এ নং সড়কের ১৩ নং বাড়ির একটি প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর এবং ম্যানেজার অপহরণের ঘটনা ঘটে। ঐ রাতেই উদ্ধার হওয়ার পর ম্যানেজার রিয়াজুল ইসলাম বাদী হয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা করেন।
রিয়াজুল ইসলাম বলেন, প্রথমে দুজন তাদের অফিসে আসে। পরে আরও ১৫ থেকে ২০ জন আসে। এসে প্রথমে তারা ব্যবসার আগ্রহ প্রকাশ করেন। তখন তাদেরকে আমি বলি, যদি ব্যবসা করতে হয়, আমাদের স্যার আছে ওনার সঙ্গে কথা বলেন। এই কথা বলার পর তারা আমাদের চেয়ারম্যান ও এমডি-র ছবি দেখিয়ে বলে ওনারা এখন কই? আমরা ওনাদের খুঁজতে আসছি। আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক।
তিনি আরো বলেন, তখন আমি তাদের বলি—স্যারের ছোট বোন মারা গেছেন, তিনি সেখানে গেছেন। তখন যোবায়েরসহ ঐ লোক ফোন দিয়ে আরও লোকজন নিয়ে আসে। তারা অফিসে ঢুকেই সিসি টিভি ক্যামেরা ভাঙচুর করে, ডিভিআর ভাঙচুর করে। ক্যাশে তিন লাখ টাকার মতো ছিল সেগুলো নিয়ে যায়।তাদের সবগুলো মোবাইল ফোনও একটি ল্যাপটপ নিয়ে যায়। তারপর তাকে অফিস থেকে মোটর সাইকেলে করে উঠিয়ে নিয়ে যায়। পরে জমজম টাওয়ারে ওখান থেকে কালো একটি গাড়িতে করে ৬ নং সেক্টরে নিয়ে যায়।
এ সময় ম্যানেজার আরও বলেন, তখন তারা আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে বলেন, তোর স্যারকে ফোন দিয়ে বল আমাদের ১০ কোটি টাকা দিতে।
বায়োটেক কোম্পানির চেয়ারম্যান মো. আহমেদুল কবীর বলেন, ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয়ে ১৫ থেকে ২০ জন লোক তাদের অফিসে এসে ভাঙচুর চালিয়ে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা নিয়ে যায়। ম্যানেজারকে অপহরণ করে ১০ কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। পরে তাৎক্ষণিক পুলিশকে বিষয়টি জানালে পুলিশ দুজনকে গ্রেপ্তার করে।
এ বিষয়ে উত্তরা পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ মো. হাফিজুর রহমান বলেন, বায়োটেক কর্পোরেশনের ম্যানেজারকে অপহরণের খবর তারা বিকেল ৩টার দিকে পায়। তারপর তারা ঘটনাস্থল ও আশপাশের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে ফুটেজ দেখে কয়েকজনকে শনাক্ত করে।
ওসি হাফিজুর আরও বলেন,চাঁদার টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় সমন্বয়ক পরিচয়ধারীরা পুলিশ বা সেনাবাহিনী দিয়ে তাদের ধরিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। পরবর্তীতে তারা তথ্যপ্রযুক্তির সহযোগিতায় গতকাল রাত ৮.৩০ মিনিটের দিকে অপহৃত ম্যানেজারকে উদ্ধার করে। উদ্ধারের সময় অফিস থেকে ছিনিয়ে নেওয়া ল্যাপটপসহ কাজী জোবায়ের এবং আবির হাসান নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এ ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত দুজনসহ আরও ১১ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ২ থেকে ৩ জনকে অজ্ঞাত নামা আসামি করে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ওসি হাফিজুর রহমান আরো বলেন, ভুক্তভোগীর অফিস থেকে লুটপাট করে নিয়ে যাওয়া অন্যান্য মালামাল উদ্ধার ও পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা তাদের অব্যাহত রয়েছে।