ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রিসার্চ এক্সিলেন্স এওয়ার্ডের নামে অর্থ অপচয়
৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১২:১১ এএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১২:১১ এএম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো গবেষণার প্রস্তাবনা থাকলেও সেগুলোতে বরাদ্দ না দিয়ে আগামী ২ মে রিসার্চ এক্সিলেন্স এওয়ার্ড আয়োজনের করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক মামুন আহমেদ। অভিযোগ উঠেছে, অনুষ্ঠানের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ অপচয় হচ্ছে এবং ফ্যাসিবাদের পৃষ্ঠপোষকতা করা হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (শিক্ষা) প্রফেসর ড. মামুন আহমেদের উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়েছেন প্রায় ২৫০ জন অতিথি। তালিকায় রয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিকভাবে ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিবর্গ। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অভিযোগ, এদের অনেকেই অতীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরোধিতা করেছেন এবং পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পক্ষে দৃঢ়ভাবে অবস্থান নিয়েছেন। আমন্ত্রিত অতিথি ও পুরস্কারপ্রাপ্ত অনেকেই শেখ হাসিনার পক্ষে বিবৃতি দিয়ে মানববন্ধন এবং গণভবনের বৈঠকেও অংশগ্রহণ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, প্রো-ভিসি প্রফেসর মামুন আহমেদ একটি বড় অঙ্কের বাজেট প্রস্তাবনা ভিসির নিকট সরাসরি উপস্থাপন করেন, যেখানে নিয়ম অনুযায়ী ট্রেজারারের সুপারিশ প্রয়োজন ছিল। এমনকি এই আয়োজনের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের (শিক্ষক) সাথে কোনো ধরনের আলোচনাও হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। পরবর্তীতে ভিসি প্রস্তাবটি ট্রেজারারের নিকট পাঠালে তিনি এতে সম্মতি দেননি। তার মতে, গবেষণা খাতে চলমান অর্থসংকটের মধ্যে এ ধরনের ব্যয়বহুল আয়োজন সময়োপযোগী নয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষক বলেন, যেখানে আমাদের গবেষণার তহবিল সীমিত, সেখানে আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রস্তাব দায়িত্বজ্ঞানহীন সিদ্ধান্ত বলেই প্রতীয়মান হয়।
অনুষ্ঠানটি নিয়ে ছাত্রসমাজের মধ্যে দেখা দিয়েছে তীব্র অসন্তোষ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী জানান, হলে আবাসনের সংকট, খাদ্যমানের দুর্বলতা এবং পর্যাপ্ত গবেষণা সহায়তার অভাব যখন প্রকট, তখন রাজনৈতিকভাবে বিতর্কিত ব্যক্তিদের নিয়ে এ ধরনের উৎসব আয়োজন অপচয়ের নামান্তর। তারা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে অনুষ্ঠানটি বাতিলের দাবি জানিয়েছে এবং গবেষণা উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, একজন শিক্ষাব্যবস্থার দায়িত্বে থাকা প্রো-ভিসি যদি প্রকৃত গবেষণা কার্যক্রম উপেক্ষা করে রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত প্রচারের উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ব্যয় করেন, তা হলে সেটা প্রতিষ্ঠানের নীতিগত শৃঙ্খলার জন্য হুমকিস্বরূপ।
প্রস্তাবিত বাজেটে দ্বিমত প্রকাশের ব্যাপারে ট্রেজারার প্রফেসর ড. এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট ফাইলটি আমার নিকট এলে তা পর্যালোচনা করে বাজেটের আড়ম্বর ও অস্বাভাবিক উচ্চতা দেখে নীতিগতভাবে আমি দ্বিমত পোষণ করি।আমি কারো প্রতি অসম্মান প্রদর্শন কিংবা বিরোধিতা করার উদ্দেশ্যে নয়, বরং নৈতিক দায়িত্ববোধ থেকেই এই মত প্রকাশ করি। আমি মনে করি, স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মাধ্যমে যে পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে, তার প্রেক্ষিতে আমাদের দায়িত্ব আরও সংবেদনশীল ও জবাবদিহিমূলক হওয়া উচিত। এ প্রেক্ষাপটে এমন আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজন বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
তিনি বলেন, যেখানে শত শত শিক্ষক তাদের গবেষণা প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, সেখানে একটি অনুষ্ঠানের পেছনে এত বড় অংকের অর্থ ব্যয় করাকে আমি কোনোভাবেই যৌক্তিক মনে করি না। এমনকি এই প্রস্তাব আমার বাবাও যদি পেশ করতো তবুও আমি একইরকমভাবে দ্বিমত পোষণ করতাম।
তবে বিষয়টিকে গবেষণায় উদ্ভুদ্ধ করা বলে বিবেচনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (শিক্ষা) প্রফেসর ড. মামুন আহমেদ। তিনি সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে ইনকিলাবকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকগুলো ইনিশিয়েটিভ রয়েছে, তারমধ্যে এটা একটা। এই আয়োজনের পেছনে একটা কমিটি রয়েছে, তারা ভিসি মহোদয়ের নিকট একটি প্রস্তাবনা পেশ করেন এবং তার অনুমোদন হয়। এখানে অর্থের অঙ্কের চেয়ে বড় বিষয় হলো গবেষণার প্রতি শিক্ষকদের উৎসাহিত করা। গবেষকদের জন্য সুন্দর একটা আয়োজন করা তো অবশ্যই একটা গবেষণাবান্ধব বিশ্ববিদ্যালয় তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। আওয়ামী ফ্যাসিস্টের দোসরদের ব্যাপারে তিনি বলেন, যদি কেউ এমন কাউকে দেখাতে পারে তবে তাকে আমরা অতিথি তালিকা থেকে বাদ দিব।
বিভাগ : মহানগর
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও






আরও পড়ুন

ভারত ও আ'লীগ বিরোধী মনোভাবে পরিবর্তন এসেছে-অ্যাডভোকেট শেখ ওয়াদুদ

কেলির ব্যাটে বাংলাদেশের হতাশা

বাংলাদেশের ব্যাটিং বিপর্যয়ের পর বৃষ্টিতে ম্যাচ ড্র

ঈদে গণমাধ্যমে ৫ দিন ছুটি দাবী ডিআরইউ’র

মেঘনায় আওয়ামীলীগের দোসরদের আশ্রয়ের অভিযোগে বিএনপির একাংশের মানববন্ধন

দ্রুত নির্বাচন ও নির্বাচিত সরকারেই কমবে অস্থিরতা, শহীদ জিয়ার উৎপাদনমুখি রাজনীতিতে ফিরতে হবে

তিস্তার পানি আদায়ে কঠোর হতে হবে

তারেক রহমানকে নিয়ে কোন অশালীন মন্তব্য বরদাস্ত করা হবে না: ঢাকা জেলা যুবদল সভাপতি

উচ্চ মূল্যস্ফীতি দারিদ্র্য বাড়াচ্ছে

প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের চিন্তাভাবনা পরিহার করা উচিত

দায়িত্ব শেষ হওয়ার আগে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে পদত্যাগ করতে দিবো না : রাশেদ খাঁন

প্রশ্ন : আমি বিয়ের আগে যে মেয়ের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করেছি, তাকেই বিয়ে করেছি। আমার জিনা হয়েছে কি? বিয়ের পর আমি তওবা করেছি। এখন দ্বিধায় ভুগছি, কেননা আমার স্ত্রী পতিতা ছিল কিন্ত আমি জানতাম না। বিয়ের পরও আমার স্ত্রী টাকার বিনিময়ে শারীরিক সম্পর্ক করেছে অনেকবার, ধরা খাওয়ার পর এখন সে তওবা করেছে, এই পরিস্থিতিতে আমার কি করা উচিত?

দাজ্জালের ফেতনা থেকে বাঁচাবে যে আমল

ছাগলনাইয়ায় অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে কামরুল ফাউন্ডেশন

'সুচিত্রা সেন কোনো দিন আওয়ামী লীগ করেছেন বলে খবর পাওয়া যায় নাই'

বন্ধুত্ব হবে আল্লাহর জন্য শত্রুতাও হবে আল্লাহর জন্য

আরেকটা এক-এগারোর বন্দোবস্ত করার পাঁয়তারা চলছে

হজ ও কুরবানির মাস জিলহজ এ মাসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

বিশুদ্ধ আকিদা-বিশ্বাসের প্রয়োজনীয়তা

হেরা ফেরি-৩ এ অভিনয় করছেন না পরেশ রাওয়াল!