ছিনতাইকারী ও কিশোর গ্যাং সদস্যদের উৎপাতের হটস্পট গুলোতে প্রশাসনের অব্যাহত সাঁড়াশি অভিযানে উত্তরা এলাকায় কমেছে চুরি-ছিনতাই, টানা পার্টি-অজ্ঞান পাটি ও কিশোর গ্যাং-এর উৎপাত।
এখানকার সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদেরকে সুরক্ষা দিতে উত্তরা বিভাগের পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার জোরদার করা হয়েছে। এমনটা জানিয়েছেন উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহিদুল ইসলাম। এ ছাড়াও প্রশাসনের পক্ষ থেকে আরো বলা হয়েছে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, পাড়া মহল্লায় কিশোর গ্যাং এর উৎপাত ও ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে তারা।
সম্প্রতি উত্তরা বিভাগের প্রতিটি থানায় পাল্লা দিয়ে বেড়েছে অপরাধীদের গ্রেফতার অভিযান। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, উত্তরা আর্মি ক্যাম্প, হাজী ক্যাম্প আর্মি ক্যাম্প,পূর্বাচল আর্মি ক্যাম্প ও র্যাব-১ এর নেতৃত্বে উত্তরা জুড়ে চলছে অভিযান। গত দুইমাসে প্রশাসনের বিভিন্ন বাহিনীর সাঁড়াশি
অভিযানে গত দুই মাসে প্রায় ৩ শতাধীক ছিনতাইকারী, মাদক ব্যবসায়ী ও কিশোর গ্যাং সদস্য গ্রেফতার হয়েছে।
প্রশাসনের অভিযানে ছিনতাইকারী ও কিশোর গ্যাং সদস্যরা গা ডাকা দিয়েছে। অপরাধ দমনে বিশেষ অবদান রাখায়, এপ্রিল মাসের মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (অতিরিক্ত ডিআইজি) মুহিদুল ইসলাম পিপিএম-কে ডিএমপির শ্রেষ্ঠ ডিসির বিশেষ সম্মাননা প্রদান করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
তার নেতৃত্ব উত্তরার প্রশাসন অপরাধ দমনে অসাধারণ সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে তাকে এই মর্যাদা দেয়া হয়। এছাড়াও উত্তরা পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ হাফিজুর রহমানও পেয়েছেন ডিএমপির শ্রেষ্ঠ অফিসার ইনচার্জ এর সম্মাননা পদক।জুলাই ২৪ গণ অভ্যুত্থানের পর থেকে ঢাকার অন্যতম ক্রাইম জোন হিসেবে পরিচিত উত্তরা-আব্দুল্লাহপুর ও বিমানবন্দর এলাকা।
এখানকার বাসা বাড়িতে চুরি, সড়কে ছিনতাই ও কিশোর গ্যাং-এর উৎপাত প্রতিরোধে ও সার্বিক নিরাপত্তা বিষয়ে উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মুহিদুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, ছিনতাইকারীরা যাতে মানুষের ক্ষতি করতে না পারে সে জন্য আমরা উত্তরা ডিভিশনকে বিশেষ নজরদারিতে রেখেছি।
এ সময় তিনি বলেন,বিশেষ করে আব্দুল্লাপুর- কামারপাড়া, আব্দুল্লাহপুর থেকে এয়ারপোর্ট গোল চক্কর পর্যন্ত ছিনইয়ের ঘটনা বেশি ঘটে।এই সব এরিয়াতে তারা ফুট-পেট্রোল রেখেছেন, পুলিশ সেখানে হেঁটে হেঁটে ডিউটি করছে।পাশাপাশি তাদের মোবাইল পেট্রোল টিম রয়েছে, মোবাইল পেট্রোল টিম ঝুঁকি পূর্ণ এলাকাতে কাজ করছে, তিনি আরো বলেন আমাদের আরো রয়েছে হুন্ডা পেট্রোল, এরা সিভিলে হুন্ডা চড়ে কাজ করে। তারা যেন নিশ্চিন্তে কাজ করতে পারে, দুষ্কৃতিকারী ও ছিনতাইকারীরা যাতে তাদেরকে চিনতে না পারে,সে জন্য সাদা পোশাকে কাজ করছে পুলিশ সদস্যরা। এছাড়াও তাদের রয়েছে হুন্ডা পেট্রোল টিম, সড়কে কিশোর গ্যাং সদস্যদের আনাগোনা দেখলেই যাতে সাথে সাথে এ্যাকশন নিতে পারে তাদের সাথে রয়েছে ওয়ারলেস।
ওয়ারলেসের মাধ্যমে তারা ব্যাকআপ পার্টিকে ইনকাম করতে পারেন। অন্যদেরকে ইনকাম করলে তারা যেন সাথে সাথে সাপোর্ট দিতে পারে এজন্য তারা ব্যাপক পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। পাশাপাশি উত্তরার ঝুকিপূর্ণ যে সকল মোড় ও মার্কেট গুলো রয়েছে ঔখানে বিশেষ নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে।
ডিসি মুহিদুল ইসলাম আরো বলেন,তাদের বিশেষ সোর্স ও রয়েছে, যাতে যে কোন ঘটনা ঘটলে তাদেরকে আগাম নোটিশ দিতে পারে ইনফর্ম করতে পারে।এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপত্তার স্বার্থে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও কিশোর গ্যাং চক্রের সদস্যদের ধরতে তারা মাঝে মাঝে বেশি সংখ্যক লোক নিয়ে সড়কে ব্লক দিচ্ছে।
এ সময় তিনি আরো বলেন, চুরি ছিনতাই প্রতিরোধ ও কিশোর গ্যাং নির্মূলে তাদের রয়েছে সিভিল টিম। পথচারীরা যেন ছিনতাই ও চাঁদাবাজির কবলে না পরে, এজন্য আমরা কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা রেখেছি। আমরা এ সকল ব্যবস্থা নিয়েছি যাতে এখানকার ব্যবসায়ীরা বিপাকে না পড়ে। এজন্য আমরা বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছি, সাধারণ মানুষ সড়কে নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে এজন্য আমাদের বিশেষ নজরদারি রয়েছে।
কিশোর গ্যাং সদস্যদের উৎপাত ও গ্রেফতার বিষয়ে বিমানবন্দর থানা অফিসার ইনচার্জ তাসলিমা আক্তার ইনকিলাবকে বলেন,প্রতিদিনই তারা অভিযানের মাধ্যমে ছিনতাইকারী আটককরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দিয়ে সরাসরি আদালতে চালান করছেন।তিনি বলেন, চলতি মাসে একজন কিশোর গ্যাং সদস্য গ্রেফতার হয়েছে,তবে টানা পার্টির সদস্য ও ছিনতাইকারীসহ প্রায় ৫০ জন গ্রেফতার হয়েছে। উত্তরা পূর্বথানা অফিসার ইনচার্জ গোলাম মোস্তফা ইনকিলাবকে বলেন,গত এক মাসে তার থানায় কিশোর গ্যাং সদস্য গ্রেফতার হয়নি।তবে কয়েকজন ছিনতাইকারী গ্রেফতার হয়েছে। উত্তরা পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ হাফিজুর রহমান বলেন,এখানকার বেশির ভাগ কিশোর গ্যাং সদস্য জেল হাজতে। গত দুই মাসে তারা ৩ শতাধিক ছিনতাইকারী গ্রেফতার করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দিয়ে সরাসরি জেল হাজতে পাঠিয়েছেন।
বর্তমানে কিশোর গ্যাংসদস্যদের উৎপাত নেই বল্লেই চলে। তিনি আরো বলেন তাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, উত্তরায় কিশোর গ্যাং সদস্যদের উৎপাত ও ছিনতাই বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী টঙ্গীর মাজার বস্তিতে অভিযান চালায়। কয়েকদফা অভিযানে ছিনতাইকারী ও কিশোর গ্যাং সদস্য গ্রেফতার করেন তারা। সেনাবাহিনীর অব্যাহত সাঁড়াশি অভিযানে গ্রেফতারের ভয়ে কিশোর গ্যাং সদস্যরা গা ডাকা দিয়েছে।
ভুক্তভোগী পথচারীরা বলেন,গত একমাস যাবত উত্তরা আর্মি ক্যাম্পের সেনা সদস্যরা এবং র্যাব -১ এর সদস্যরা যে ভাবে বিমানবন্দর মহাসড়ক ও উত্তরাজুড়ে যৌথ অভিযান চালাচ্ছে এই মূহুর্তে কিশোর গ্যাং সদস্যরা গ্রেফতারের ভয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে। তারা আরো বলেন,থানা পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও র্যাব এর অভিযান অব্যাহত থাকলে উত্তরায় সাধারণ মানুষ শান্তিতে ঘুমাতে পারবে।