কৃষকের মুখে হাসি

সুন্দরগঞ্জে তিস্তার চরাঞ্চলে গমের বাম্পার ফলন

Daily Inqilab মোশাররফ হোসেন বুলু, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) থেকে

৩১ মার্চ ২০২৩, ১০:২০ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৫৭ এএম

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে তিস্তার চরাঞ্চলে এবছর গমের বাম্পার ফলন দেখা দিয়েছে। কৃষকরা আশাবাদী তারা এবার লাভবান হবেন। বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। এ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬টি ইউনিয়নই নদী বিধ্বস্ত। এই ৬টি ইউনিয়নে কমপক্ষে ২০টি চর রয়েছে। এই চরাঞ্চলে এবছর ব্যাপক গমের চাষাবাদ করেছেন কৃষকরা। তাদের চরের জমিতে গমের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রকার রবি ফসলও লাগিয়েছেন। ফলন ভালো হওয়ায় রবি ফসলকে ঘিরে নদী গর্ভে নিঃস্ব হওয়া হাজার হাজার মানুষের মুখে এখন সুখের হাসি। কারণ রবি ফসলের ৭০ ভাগই চরাঞ্চলে চাষাবাদ হয়।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, এ বছর গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে ৯২০ হেক্টর। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ হেক্টর বেশি। গমের প্রণোদনা হিসেবে এক হাজার ৪৫০ জন কৃষককের প্রতিজনকে এক বিঘা করে জমি চাষের বীজ ও সার দেয়া হয়। এছাড়াও কৃষকরা ভুট্টা, মসুর, সরিষা, মরিচ, রসুন, পিয়াজ, আলু, ধনিয়া, তিল, তিসি, মিষ্টি আলু, চিনা বাদাম কালোজিরা, শাক-সবজি, মাসকালাই, বাকলা ডাল, অড়হর, খেসারী, মুখসহ বিভিন্ন প্রকার শাক-সবজি চাষাবাদ করেছেন। তিস্তা নদীর করাল গ্রাসে হাজার হাজার পরিবার আবাদী জমি, বসতবাড়ী হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছিল। এই নিঃস্ব পরিবারগুলো বাঁচার তাগিদে তাদের বংশীয় ঐতিহ্য ত্যাগ করে রিক্সা, ভ্যান চালাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে শ্রম বিক্রি করতে বাধ্য হয়। কিন্তু তিস্তা নদীর নাব্যতা হ্রাস পাওয়ায় জেগে উঠে ছোট ছোট অসংখ্য বালু চর। এই চরে রবি ফসল চাষ করা যায় নির্ভয়ে। ফলনও হয় খুব ভাল। তাই রবি মৌসুমে কৃষকরা ব্যাপক চাষাবাদে মাঠে নেমে পড়ে কোমড় বেঁধে। ধু-ধু বালু চরে যেখানে যে ফসল প্রযোজ্য তাই চাষাবাদ করেছেন কৃষকরা। গত বন্যায় আমনে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা আগাম করে রবি ফসল চাষ করেছেন। তাদের এক বুক আশা আমনের লোকসান যেন রবিতে উঠে আসে। বিশেষ করে কৃষকরা আগ্রহ দেখিয়েছেন গম চাষে। কারণ গম চাষে অধিক লাভ হয়। ২/৩ বার সেচ দিলেই চলে। তাই অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর গমের আবাদ হয়েছে খুব ভালো। প্রতি বিঘা জমিতে গড়ে ১৩ থেকে ১৫ মণ করে গমের ফলন হয়েছে।
খোর্দ্দা চর গ্রামের কৃষক মোস্তাক মিয়া জানান, এবছর তিন বিঘা জমিতে গমের আবাদ করেছি। কম খরচে অধিক ফলন হওয়ায় লাভজনক গম আবাদের দিকে ঝুঁকছি। বিঘা প্রতি ১৪ মণ গমের ফলন হয়েছে। তাছাড়া গমের ফসল তোলার পর একই জমিতে সঠিক সময়ে তোষা পাট লাগানো যায়। কৃষক রফিকুল ইসলাম ইনকিলাবকে জানান, গমের আবাদ খুব ভালো হয়েছে। কিন্তু অনেক সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের স্বপ্ন ভেঙ্গে দেয়। এবছর এখনো কাল বৈশাখী ঝড়সহ কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেয়নি। তাই শান্তিপূর্ণভাবে ফলন ঘরে তুলছি। কৃষক আয়নাল হক জানান, সকল কৃষককে কৃষি বিভাগের প্রশিক্ষণ দেয়া দরকার। কারণ যারা প্রশিক্ষণ পেয়েছে তাদের ফলন বেশি ভালো হয়েছে। তিনি আরো জানান কৃষকের আশা-ভরসার শেষ সম্বল এ চর যেন আর ভাসিয়ে না নেয় সর্বনাশা তিস্তা নদী।
উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক ও লিটন মিয়া জানান, কৃষকরা যেন কম খরচে অধিক ফলন ফলাতে পারে সেজন্য পরামর্শ দেয়া হয়। যারা পরামর্শ মোতাবেক চাষাবাদ করেন তাদের ফলন বরাবরই ভালো হয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রাশিদুল কবির জানান, কৃষকের হাতে উপযুক্ত সময়ে প্রণোদনার বীজ, সার তুলে দেয়ায় লাভজনক গমের চাষ দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। তাছাড়া ধানের চেয়ে গমের পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। গমের বাজার মূল্যও বেশি। স্থানীয় জাতের চেয়ে উন্নত জাতের ফলন বেশি হয়। গম চাষে সেচ লাগে কম। তাছাড়া কৃষকরা উন্নত জাতের বীজ সংরক্ষণ করে পরবর্তী মৌসুমে বিক্রি করে অধিক লাভবান হতে পারে। মেশিন দিয়ে গম মাড়াইয়ের ফলে উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় কৃষক বেশি লাভবান হচ্ছে।


বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

সাকিবকে সেদিনই অনুৎসাহিত করেছি : হাফিজ উদ্দিন
দেশেই বাস উৎপাদন করতে চায় বিআরটিসি
আট দিনেও যোগাযোগ হয়নি, নিরব ভূমিকায় জলদস্যুরা
খালেদা জিয়ার স্থায়ী মুক্তির আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আজ
খালেদা জিয়ার স্থায়ী মুক্তির আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আজ
আরও

আরও পড়ুন

সঞ্চয়পত্রের কোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছেন পোস্ট মাস্টার

সঞ্চয়পত্রের কোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছেন পোস্ট মাস্টার

যমুনার বুকে বঙ্গবন্ধু রেল সেতু নির্মানের কাজ দৃশ্যমান ৮০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন

যমুনার বুকে বঙ্গবন্ধু রেল সেতু নির্মানের কাজ দৃশ্যমান ৮০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন

জবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে শিক্ষার্থীদের ‘লালকার্ড’ প্রদর্শন

জবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে শিক্ষার্থীদের ‘লালকার্ড’ প্রদর্শন

আদালতে আত্মসমর্পনের পরে বরিশালে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ১৪ নেতাকর্মী কারাগারে

আদালতে আত্মসমর্পনের পরে বরিশালে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ১৪ নেতাকর্মী কারাগারে

৩ মাসের মধ্যে সালাম মুর্শেদীকে গুলশানের বাড়ি ছাড়ার নির্দেশ হাইকোর্টের

৩ মাসের মধ্যে সালাম মুর্শেদীকে গুলশানের বাড়ি ছাড়ার নির্দেশ হাইকোর্টের

এবার বরিশালে তরমুজের আবাদ ৩০ ভাগ হ্রাস পেল

এবার বরিশালে তরমুজের আবাদ ৩০ ভাগ হ্রাস পেল

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে ভুয়া পুলিশ গ্রেপ্তার

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে ভুয়া পুলিশ গ্রেপ্তার

ওয়ালটন ফ্রিজ কিনে ৩২তম মিলিয়নিয়ার হলেন কুমিল্লার ভ্যানচালক হুমায়ুন

ওয়ালটন ফ্রিজ কিনে ৩২তম মিলিয়নিয়ার হলেন কুমিল্লার ভ্যানচালক হুমায়ুন

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিবাদ

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিবাদ

রোমাঞ্চকর ফাইনালে মুলতানকে হারিয়ে পিএসএল চ্যাম্পিয়ন ইসলামাবাদ

রোমাঞ্চকর ফাইনালে মুলতানকে হারিয়ে পিএসএল চ্যাম্পিয়ন ইসলামাবাদ

কুবিতে 'অবৈধ' ডিন নিয়োগের প্রতিবাদে সিন্ডিকেট সদস্যের পদত্যাগ

কুবিতে 'অবৈধ' ডিন নিয়োগের প্রতিবাদে সিন্ডিকেট সদস্যের পদত্যাগ

সাকিবকে সেদিনই অনুৎসাহিত করেছি : হাফিজ উদ্দিন

সাকিবকে সেদিনই অনুৎসাহিত করেছি : হাফিজ উদ্দিন

‘নাগরিকত্ব দেয়ার আগে পুরুষাঙ্গ পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত!’ মন্তব্যে ভারতজুড়ে নিন্দার ঝড়

‘নাগরিকত্ব দেয়ার আগে পুরুষাঙ্গ পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত!’ মন্তব্যে ভারতজুড়ে নিন্দার ঝড়

পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া কল্পনাপ্রসূত : দোকান মালিক সমিতি

পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া কল্পনাপ্রসূত : দোকান মালিক সমিতি

খুলনাসহ ৪ অঞ্চলে ঝড়ো বৃষ্টির আভাস

খুলনাসহ ৪ অঞ্চলে ঝড়ো বৃষ্টির আভাস

খুলনাসহ ৪ অঞ্চলে ঝড়ো বৃষ্টির আভাস

খুলনাসহ ৪ অঞ্চলে ঝড়ো বৃষ্টির আভাস

ইতিহাসের সর্বোচ্চ ৬২ ডিগ্রি তাপদাহ ব্রাজিলে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা

ইতিহাসের সর্বোচ্চ ৬২ ডিগ্রি তাপদাহ ব্রাজিলে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা

কয়রা ত্যাগ করলেন সুইডেনের রাজকন্যা

কয়রা ত্যাগ করলেন সুইডেনের রাজকন্যা

সাাংবাদিকের পত্নি বিয়োগ,বিভিন্ন নেতৃবৃন্দের শোক প্রকাশ

সাাংবাদিকের পত্নি বিয়োগ,বিভিন্ন নেতৃবৃন্দের শোক প্রকাশ

দেশেই বাস উৎপাদন করতে চায় বিআরটিসি

দেশেই বাস উৎপাদন করতে চায় বিআরটিসি