পুলিশবিহীন ঢাকায় নিরাপত্তাহীনতায় জনগণ
০৭ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ০৭ আগস্ট ২০২৪, ১২:০৫ এএম
রাজধানীর ৫১টি থানার প্রায় সবগুলোই এখন পুলিশ বিহীন। অগ্নিকাণ্ড, লুটপাট ও হামলার শিকার অধিকাংশ থানা। সেখানে অবস্থানরত বেশিরভাগ সদস্য কমবেশি আহত হয়েছেন। নিহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। শেখ হাসিনার পালিয়ে যাবার খবর ছড়িয়ে পড়তেই রাস্তায় আর পুলিশ সদস্যদের দেখা মেলেনি। থানায় আটকে পড়া পুলিশ সদস্যরা নিজেদের রক্ষা করতে সিনিয়রদের পদক্ষেপ নেয়ার আকুতি জানিয়ে মেসেজ পাঠালেও তারা সাড়া দেননি। সদ্য বিদায়ী আ’লীগের দলকানা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনেকেই রয়েছেন আত্মগোপনে। আর থানা ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছেন বাকিরা। ভেঙ্গে পড়েছে পুলিশের চেইন অব কমাণ্ড। থানায় আটকে পড়া এবং নিরাপদে থাকা পুলিশ সদস্যদের মধ্যেও রয়েছে আতঙ্ক। যেখানে পুলিশ নিজেই নিরপত্তাহীনতায় সেখানে তাদের জননিরাপত্তা দেয়ার বিষয়টি পরের প্রশ্ন। গতকাল নিরাপত্তার জন্য কোথাও কোনো পুলিশ বা র্যাব সদস্যের দেখা মেলেনি। পুলিশের অনুপস্থিতিতে সাধারণ মানুষ নিরপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছেন। রাতের ঢাকা যেন আরো অনিরাপদ। অনেকেই বলেছেন, তাদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা ও উদ্বেগ রয়েছে।
গতকাল ঢাকার কোনো সিগন্যালে দেখা যায়নি ট্রাফিক পুলিশ। এহেন পরিস্থিতিতে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বে নেমে পড়েন বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীরা। বিজয় সরণি, জাহাঙ্গীর গেট, ফার্মগেট, কারওয়ানবাজার, বাংলা মোটর, শাহবাগ মোড়সহ একাধিক স্পটে তাদের ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, হামলার ভয়ে পুলিশ সদস্যরা রাস্তায় নামেননি। তাঁদের কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে এমন কোনো নির্দেশনাও ছিল না। কর্মকর্তাদের অনেকেই আত্মগোপনে। ফলে পুলিশের অভ্যন্তরে এক ধরনের বিশৃঙ্খলা চলছে।
যদিও পুলিশ পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেছেন, দ্রুতই এ সমস্যার সমাধান হবে। তিনি নিজের নিরাপত্তা বজায় রেখে দৃঢ় মনোবল নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে অধিনস্ত সদস্যদের প্রতি আহবান জানান। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, পুলিশ ও পুলিশের স্থাপনা সমূহের নিরপত্তা নিশ্চিত করতে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী সহযোগিতা করছে। পুলিশের সদস্য ও স্থাপনাসমূহে যাতে আক্রমনের ঘটনা সংঘটিত না হয় সেজন্য রাজনৈতিক ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দের প্রতি অনুরোধ জানান।
অপরদিকে পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সারা দেশে চার শতাধিক থানায় হামলা-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ-লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এই অবস্থায় থানায় বা নিজ নিজ কার্যালয়ে থাকা কেউ নিরাপদ মনে করছেন না। ফলে যে যার মতো নিরাপদ আশ্রয়ে গিয়েছেন। এছাড়া অনেক জায়গায় সেনাবাহিনীর সহায়তায় জনরোষে আটকে পরা পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নেওয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পুলিশ সদরদপ্তর থেকে শুরু করে বিভিন্ন থানায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত থানার একটি যাত্রাবাড়ি। যেখানে আগুন দেয়া হয়েছে। চলেছে ব্যাপক লুটপাট। কেড়ে নেয়া হয়েছে অস্ত্র। গতকাল বেলা ১টার দিকে যাত্রাবাড়ি থানায় গিয়ে দেখা যায়, থানার কয়েকটি ফ্লোর থেকে আগুনের ধোাঁয়া হচ্ছে। থানার কয়েক গজের মধ্যেই পড়ে আছে তিনটি লাশ। এর দু’টিতে পুলিশের পোশাক পরিহিত। ভাটারা, মোহাম্মদপুর, আদাবর, মিরপুর, পল্টন, শাহআলী, উত্তরা পূর্ব থানাসহ বিভিন্ন থানায় গত সোমবার বিকাল থেকে রাতভর হামলা এবং লুটপাটের ঘটনা ঘটে। পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, গত সোমবার বিকেল থেকে জনরোষের মুখে পড়ে অন্তত অর্ধশত পুলিশ সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন। পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় নিহতদের প্রকৃত পরিসংখ্যানও জানা যায়নি।
পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. সোহেল রানা বলেন, এ মুহূর্তে দেশ ও জাতির মতো বাংলাদেশ পুলিশও একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দৃশ্যত বাংলাদেশ পুলিশ এখন নেতৃত্বহীন। অভিযুক্তরা গা ঢাকা দিয়েছে। জুনিয়র কর্মকর্তা ও সদস্যগণ দিশেহারা। এরা সবাই নিরীহ সদস্য। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দেশের স্বার্থে রাষ্ট্রীয় একটি প্রতিষ্ঠান রক্ষার উদ্দেশ্যে সকলের সহযোগিতা চাচ্ছি। শীঘ্রই পুলিশের প্রশাসনিক ব্যবস্থা ও নেতৃত্ব যথাযথভাবে সক্রিয় হবে বলে বিশ্বাস করি।
পুলিশ সদর দফতরের এক কর্মকর্তা জানান, একাত্তরের পরে এইরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়নি পুলিশ। গত সোমবার রাতে পুলিশ সদর দফতরে হামলা হওয়ার পর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হেলিকপ্টারে উদ্ধার করে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়। রাতে রাজারবাগেও হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। আরেক কর্মকর্তা বলেন, সব মিলিয়ে ১০ থেকে ১৫ জন কর্মকর্তা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে থেকেও সরাসরি রাজনৈতিক এজেন্ডা নিয়ে সক্রিয় ছিলেন। তাদের জন্য এখন সবাইকে মাশুল গুনতে হচ্ছে। রাজনৈতিক লেজুরবৃত্তি করা সিনিয়র কর্মকর্তারাই সাধারণ পুলিশ সদস্যদের জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।
গতকাল সকালে মোহাম্মদপুর থানায় দেখা গেছে, পুরো থানা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। থানা ভবনের কয়েকটি রুম থেকে ধোঁয়া উঠছে। সব ধরনের জিনিসপুত্র লুট হয়ে গেছে। জানা গেছে, সব অস্ত্র এবং গোলাবারুদ লুট হয়ে গেছে। তবে হাজতখানায় যেসব আসামি ছিল গত সোমবার সকালের মধ্যেই তাদের আদালতে পাঠিয়ে দেওয়ায় তাদের কোনো ক্ষতি হয়নি। নিকটস্থ আদাবর থানাতেও ব্যাপক লুটপাট হয়েছে। থানার সামনে রাখা যানবাহন, মোটরসাইকেল এবং থানার ভেতরের জিনিসপত্র সোমবার রাতেই লুট হয়ে গেছে। এই থানায়ও কোনো পুলিশ সদস্য দেখা যায়নি।
রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র মতিঝিল থানাতে গিয়েও দেখা যায় থানার তালাবদ্ধ গেট। একটি গাড়ি থানার গেটের অর্ধেকটা ঢেকে রেখেছে। বাড্ডা এবং ভাটারা থানায়ও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। একের পর এক হামলার কারনে খিলগাঁও, কদমতলী, উত্তরা পূর্ব, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল ও লালবাগসহ বিভিন্ন থানার পুলিশ সদস্যরা উধর্¦তনদের নির্দেশনা পেয়ে নিরাপদে আশ্রয় নেন। বংশাল, বাড্ডাসহ কোনো কোনো থানার পুলিশ সদস্যরা সোমবার রাতে থানা ত্যাগ করে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে আশ্রয় নেন।
পুলিশ সদর দপ্তরের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তিনি অফিসে যেতে পারছেন না। এখন সময় খারাপ দেখে সুযোগ বুঝে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সটকে পড়েছেন। তাঁরা বিপদের মুখে রেখে গেছেন অসহায় ও নিরপরাধ পুলিশ সদস্যদের। এ অবস্থা থাকলে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে। সেই সুযোগকে বিভিন্ন মহল কাজে লাগানোর চিন্তা করতে পারে। অপরাধীরা পুলিশের নিস্ক্রিয়তার সুযোগ নিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বিলুপ্তির পথে মাটির ঘর
চোর সন্দেহে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ
প্রতিবন্ধী স্কুল শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ
কেরু চিনিকলে আখ মাড়াই মৌসুমের উদ্বোধন
বিহারিরা কেমন আছে
লক্ষ্মীপুরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি
আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন
মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে
১৫ নারী ও শিশুকে হস্তান্তর
আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
মেহেরপুরে বেড়েছে গরম কাপড় বিক্রি
কাশিয়ানীর হাট-বাজার নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব
অ্যানুয়াল বিজনেস কন্টিনিউয়িটি প্ল্যান ড্রিল ২০২৪ আয়োজন করলো ব্র্যাক ব্যাংক
সমস্যায় জর্জরিত আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
সবুজ গালিচায় হলুদের সমারোহ
আখাউড়ায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের মেধা বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
নিউ ইয়র্কের আদালতে অভিযুক্ত লুইজি
কিউবায় সমাবেশ
ঈশ্বরদীতে দূর্বৃত্তের হামলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আহত
থিনেস্ট স্বাস্থ্যের