ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও পরিচ্ছন্নতায় সড়কে শিক্ষার্থীরা
১১ আগস্ট ২০২৪, ১২:০২ এএম | আপডেট: ১১ আগস্ট ২০২৪, ১২:০২ এএম
ছাত্র-গণআন্দোলনে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর পুলিশের প্রতি জনরোষ তীব্র আকার ধারণ করে। এ অবস্থায় উর্ধ্বতন সব পুলিশ অফিসার আত্মগোপনে চলে যায় এবং কর্মবিরতি ঘোষণা করে। রাজধানীর সব থানা হয়ে পড়ে পুলিশ শূন্য। রাস্তায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণেও নেই কোন পুলিশ। এমন অবস্থায় রাজধানীসহ সারাদেশে সড়কে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ও যানজট নিরসনে কাজ করছেন তারা। গত চারদিন ধরে পুলিশের অনুপস্থিতিতে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে শিক্ষার্থীরা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করছে। এতে সড়কে যানবাহন চলাচলে শৃঙ্খলা এসেছে। সেই সাথে স্বস্তি ফিরেছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। তাদের এই সেবামূলক কাজ সব মানুষের কাছেই প্রশংসিত হচ্ছে। অনেকে এই সব ছাত্রছাত্রীদের পানি, জুস এবং নানান খাবার দিয়ে উৎসাহ দিচ্ছেন অভিনন্দন জানাচ্ছেন।
ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় শিক্ষার্থীরা সড়ক ও আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত জায়গাগুলো পরিষ্কার করছেন। অনেক স্থানে সড়কের এবং বিভিন্ন স্থানে ময়লা আবর্জনাও পরিস্কার করছে ছাত্র ছাত্রীরা। এদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা বাসায় নিজের বিছানা বা রুমটা পর্যন্ত ঝাড়ু দেয় না। সেই সব আদরের দুলালরা দেশের প্রয়োজনে এখন রাস্তায় ময়লা পরিস্কার করছে। তাদের এই কাজ দেখে সব মানুষই ধন্য ধন্য করছেন। বলছেন যে এরাই আমাদের সোনার ছেলেই এরাই আমাদের এ দেশটাকে সোনার বাংলা হিসাবে গড়ে তুলতে পারবে। দেশব্যাপী ট্রাফিক পুলিশের অনুপস্থিতিতে তরুণ শিক্ষার্থীরা সারাদেশে ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করে সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় অন্যন্য নজির সৃষ্টি করেছে বলে যাত্রী কল্যাণ সমিতি জানিয়েছে।
গতকালও রাজধানীর সড়কগুলোতে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া স্কাউটসহ বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীদেরও শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করতে দেখা গেছে। গতকাল রাজধানীর মৌচাক, শান্তিনগর, আবুল হোটেল, রামপুরা, মতিঝিল, গুলিস্তান, পল্টনসহ বিভিন্ন সড়কে এমন চিত্র দেখা গেছে।
গতকাল রাজধানীর মগবাজার মোড়ে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির কর্মী ও শিক্ষার্থীরা ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করেছে। সেখানে সমন্বয়ক জয় বলেন, আমরা আনন্দ সহকারে কাজ করছি। রেড ক্রিসেন্ট থেকে আগেও ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করেছি। সেই অভিজ্ঞতা এখন কাজে লাগছে। মানুষ কিছুটা বিরক্তবোধ করছে। কিন্তু আমরা চাই সর্বোচ্চ শৃঙ্খলা আসুক। মানুষ কিছুটা শিখে গেলে পরে এই ধারা বজায় থাকবে।
আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী সুমন বলেন, যতদিন না ট্রাফিক পুলিশ আসে আমরা রাস্তায় থাকবো। সিগন্যালের পাশাপাশি গাড়িগুলো যেন লাইন ধরে চলে সেটা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। আমাদের কষ্ট হচ্ছে তারপরও ভালো লাগছে মানুষকে সচেতন করা যাচ্ছে এটা ভেবে। অভিজ্ঞতাও হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের এই ভূমিকায় খুশি পথচারী ও গণপরিবহনের চালকরা। তারা জানান, পুলিশ নেই কিন্ত সড়কে বিশৃঙ্খলা নেই। শিক্ষার্থীরা কাজ করে যাচ্ছে। খুব বেশি যানজট তৈরি হচ্ছে না। অনেক স্থানে শিক্ষার্থীদেরকে সাধারণ মানুষ পানি ও খাবার দিতেও দেখা গেছে।
ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি গত বুধবার থেকে শিক্ষার্থীরা সড়কের আবর্জনা পরিষ্কার ও দেয়াললিখন মুছে পরিচ্ছন্ন করার কাজ করছে। গতকালও রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে শত শত শিক্ষার্থীকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করতে দেখা গেছে। তাঁরা গ্লাভস হাতে দিয়ে কোথাও সড়ক ঝাড়ু দিয়েছেন। কোথাও আবর্জনা কুড়িয়ে বস্তায় ভরেছেন। আবার শিক্ষার্থীদের অনেকে দলে দলে ভাগ হয়ে বিভিন্ন এলাকার দেয়াল ও সড়কদ্বীপে লেখা স্লোগান মুছে ফেলে আগের চেহারায় নিয়ে আসতে কাজ করছে। এ ছাড়া অনেক স্থানে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়ও পাহারা দিতে দেখা গেছে।
১৯৭১ সালে যুদ্ধ করে এদেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার অন্যতম কারিগর ছিল এদেশের তরুণ ছাত্ররা। এরপর ১৯৯০ এ স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনেও ছাত্রদের ছিল মুখ্যভূমিকা। আর এবার দীর্ঘ ১৮ বছরের ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে যে অবিস্বরণীয় বিপ্লবে বিজয় অর্জিত হলো তারও মূল নায়ক দেশের তরুণ শিক্ষার্থীরা।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পর এদেশের শিক্ষার্থীরা আবারও রাজপথে বুলেটের সামনে বুক উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে অকাতরে জীবন দিয়েছে। তাদের আন্দোলনের মুখে এক ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন হয়েছে। সরকার প্রধান শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। অনেকে এটাকে দেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলেও আখ্যায়িত করছেন। দেশকে দ্বিতীয়বার স্বাধীনতা উপহার দেওয়ার পর সেই স্বাধীনতার সুফল জনগণ যাতে ভোগ করতে পারে তরুণ শিক্ষার্থীরা এখন সে লক্ষে কাজ শুরু করেছে। সেই তরুণরাই দেশে সৃষ্ট অরাজক পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রাণপণ চেষ্টা করছে। নিজেরা দায়িত্ব নিয়ে পাহারা দিচ্ছে হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির, বাড়ি ঘর। অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয় এবং ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর মানুষদের রক্ষায়ও তারা দিনরাত পাহারা দিচ্ছে। শুধু-তাই নয় এই আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরাই এখন রাজপথে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্যও ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছে। দেশের ময়লা আবর্জনা পরিস্কার করছে। তাদের এসব শুধু দেশের মানষ নয় সারা বিশ্ববাসী অবাক বিষ্ময়ে দেখছে আর বলছে সাবাস বংলাদেশ সাবাস। তরুণরাই এবার সোনার বাংলাদেশ গড়বে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
দুই শেয়ারবাজারেই বড় পতন
দিল্লির লকডাউন ঢাকায় দাফন হয়েছে : জাগপা
ইমাম প্রশিক্ষণে সউদী সরকারের সহায়তার আশ্বাস
চোর সন্দেহে কিশোরকে পিটিয়ে হত্যা, নারী গ্রেফতার
পঞ্চদশ সংশোধনীর রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি
কিছু রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ডে পতিত ফ্যাসিস্টরা উৎসাহিত হচ্ছে : রিজভী
রাজনৈতিক দলগুলোকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বার্তা
বিআরটিসি বাসে পাইলটিং ভিত্তিতে ই-টিকেট সেবা কার্যক্রম শুরু
ডিএমপি কমিশনারের ভুয়া ভিডিও ছড়িয়ে বিভ্রান্তি
প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে সংকট উত্তরণের প্রচেষ্টা থাকলেও সাংবিধানিক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে : সাইফুল হক
মতভিন্নতা সত্ত্বেও প্রধান উপদেষ্টার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালো এবি পার্টি
প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে দেশবাসী উজ্জীবিত : লেবার পার্টি
দেশকে দ্রুতবেগে বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছি : ফরহাদ মজহার
দিল্লি-কাবুলের ষড়যন্ত্রেই বেড়েছে সন্ত্রাসী হামলা: শেহবাজ শরীফ
জীবন্ত ফার্ন গাছে বিরল খনিজের সন্ধান
চীনের গুপ্তচর হিসেবে অভিযুক্ত লিন্ডা সানের বিচার শুরু
তীব্র পানি সংটে ইরানের নাগরিক জীবন ঝুঁকিতে
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনার মধ্যে চীনকে পাশে পেল ভেনেজুয়েলা
মালয়েশিয়াগামী শ্রমিকদের ৩১৪ কোটি টাকা আত্মসাতে ৫ এজেন্সির বিরুদ্ধে মামলা
গণতন্ত্র ফেরাতে নির্বাচনই একমাত্র বিকল্প : মির্জা ফখরুল