শিশু আয়ান : দুই চিকিৎসক ও হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার সুপারিশ
২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০৪ এএম

রাজধানীর বাড্ডার সাতারকুলে অবস্থিত ইউনাইটেড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সুন্নতে খৎনার জন্য অজ্ঞান করা শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় দুই চিকিৎসক ও হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে আয়ানের মা-বাবাকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কমিটি অনুমোদনহীন সব হাসপাতাল, ক্লিনিক বন্ধ করতে সুপারিশ করেছে।
শনিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে হাইকোর্টে পাঠানো এ প্রতিবেদনে এ সুপারিশ করা হয়েছে। রোববার হাইকোর্টে এ প্রতিবেদনের ওপর শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চে এ প্রতিবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে।
তদন্ত কমিটির সুপারিশ :
১. সাতারকুলে অবস্থিত ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর জন্য দায়ী হওয়ায় এ প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদান করা উচিত। ক্ষতিপূরণের একটি অংশ আয়ানের পিতামাতাকে প্রদান করা এবং অন্য অংশ দিয়ে দুস্থ শিশু ও কিশোর/কিশোরীদের জন্য একটি হাসপাতাল নির্মাণ করার জন্য কমিটির সদস্যরা সুপারিশ করছেন।
২. স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া চিকিৎসা কর্মকা- পরিচালনা এবং শিশু আয়ানের মৃত্যুর জন্য ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
৩. ডাক্তার তাসনুভা মাহজাবীন ও অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট সৈয়দ সাব্বির আহম্মদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হলো।
৪. চিকিৎসা সংক্রান্ত লিখিত সম্মতিপত্রটি বাংলায় বড় বড় অক্ষরে স্পষ্ট ও বোধগম্যভাবে লিখতে হবে, যাতে রোগীর বাবা-মা বা অভিভাবকেরা সেটি সহজে পড়তে পারেন এবং চিকিৎসা ও তার পরবর্তী ফলাফল সম্পর্কে জেনেবুঝে লিখিত সম্মতিপত্র স্বাক্ষর করতে পারেন। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সমগ্র বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য একটি ‘ইউনিফর্ম’ বা একই ধরনের সম্মতিপত্র প্রস্তুত করার জন্য অনুরোধ ও সুপারিশ করা হলো।
৫. স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া যেসব হাসপাতাল ও ক্লিনিক চিকিৎসা কর্মকা- পরিচালনা করছে, সেগুলো খুঁজে বের করে অবিলম্বে সেখানে চিকিৎসা কর্মকা- বন্ধ করা, এবং সেসব হাসপাতালের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার সুপারিশ করা হচ্ছে।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য কয়েকটি সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি
১. বাংলাদেশের সব মানুষের সুস্বাস্থ্যের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য বিদ্যমান আইনগুলোর প্রয়োগ নিশ্চিত করা এবং প্রয়োজনে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিদ্যমান আইনের সংস্কার ও পরিমার্জন করার সুপারিশ করা হলো।
২. বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় রেফারেল পদ্ধতির মাধ্যমে নিচ থেকে উচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কাছে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হচ্ছে। একজন জেনারেল ফিজিশিয়ানকে দেখানোর পরে তিনি যদি কোনো রোগীকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে রেফার করেন, তাহলে তিনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। এতে চিকিৎসা পদ্ধতি সহজ হবে এবং রাজধানী ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে রোগীর চাপ কমবে।
৩. অপরিকল্পিত, মানহীন (ডায়াগনস্টিক সেন্টার, হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ) বন্ধ করার জন্য কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
৪. এন্টিবায়োটিকের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
৫. একমাত্র বিএমডিসি (বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল) কর্তৃক নিবন্ধিত ব্যক্তির মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে।
৬. বাংলাদেশের সব নাগরিকের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য বৈশ্বিকভাবে অনুসারিত জিডিপির ৫ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ও সেটি যথাযথভাবে ব্যবহার করার জন্য সুপারিশ করা হলো।
৭. চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তাসহ অন্যান্য ব্যক্তিকে তাদের যোগ্যতা অনুসারে ক্ষেত্রমতো প্রণোদনা প্রদান ও ভালো প্রাতিষ্ঠানিক চর্চা (গুড ইনস্টিটিউশনাল প্র্যাকটিস) উৎসাহিত করার জন্য সুপারিশ করা হলো।
এর আগে গত বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বাড্ডার সাতারকুলের ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সুন্নতে খৎনার জন্য অজ্ঞান করা শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে নতুন কমিটি গঠন করে দেন হাইকোর্ট।
আদালত বলেছেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কমিটির রিপোর্ট আমাদের মনোঃপূত হয়নি। আমরা পাঁচ সদস্যের নতুন কমিটি করে দিচ্ছি। বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। কমিটিতে তিনজন চিকিৎসক, দুইজন সিভিল সোসাইটির ব্যক্তি ও একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপককে রাখা হয়।
সোহওয়ার্দী হাসপাতালের অধ্যাপক ডাক্তার এ বি এম মাকসুদুল আলমকে কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়। শিশু আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসকদের অবহেলা আছে আছে কি না, তার মৃত্যুর ঘটনায় কারা দায়ী এ কমিটি তা খুঁজে বের করবে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আজাদ। রিটের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট এ বি এম শাহজাহান আকন্দ মাসুম। ইউনাইটেড হাসপাতালের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা।
গত বছরের ২৯ জানুয়ারি সুন্নতে খৎনা করাতে গিয়ে রাজধানীর বাড্ডার ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের তদন্ত কমিটির রিপোর্ট লোক দেখানো (আইওয়াশ) ও হাস্যকর বলে মন্তব্য করেন হাইকোর্ট।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও





আরও পড়ুন

ফেব্রুয়ারির ১৫ দিনে এলো ১৬ হাজার কোটি টাকার প্রবাসী আয়

সিটি ব্যাংক ও ইফাদ মটরস চুক্তি

‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটিতে পদ পেতে লাগবে নির্দিষ্ট শিক্ষা যোগ্যতা’

মুসলমানদের ঐক্য ও সংহতি কামনা আখেরি মুনাজতে সমাপ্ত

চাঁদপুরে সম্পত্তিগত বিরোধে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা, আটক ৩

গত ১৫ বছর ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচার বাংলাদেশকে ধ্বংস করে গেছে: তারেক রহমান

ইউক্রেন শান্তি আলোচনায় ইউরোপের স্থান নেই: যুক্তরাষ্ট্র

সিলেট ওসমানী বিমাবন্দরের পাশে টিলায় আগুন, নিয়ন্ত্রনে নিলো ফায়ার সার্ভিস

বরগুনায় মুসলিম তরুণীকে অপহরণ করে ধর্ষণঃ তিন হিন্দু যুবকের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা

ভোজ্যতেল বিক্রিতে শর্তজুড়ে দিলে কঠোর শাস্তি: ভোক্তার ডিজি

আবারও ভারতীয়দের হাত-পা বেঁধেই ফেরত পাঠালো যুক্তরাষ্ট্র

সালথায় বিএনপি নেতার ভাতিজাকে কোপাল শ্রমিকলীগ নেতার ভাতিজা: হামলা-ভাঙচুর

ঈশ্বরগঞ্জে আ.লীগের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে বিএনপির বিক্ষোভ

ব্যাখ্যা ছাড়াই ২০ অভিবাসন বিচারককে বরখাস্ত করলেন ট্রাম্প

ইসলাম নিয়ে ব্যবসা করা কোন ইসলামী দল ক্ষমতায় আসতে পারবে না : এ এম এম বাহাউদ্দীন

গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দিতে নির্বাচনের বিকল্প নেই: মির্জা ফখরুল

নীলফামারী জেলা ছাত্রদলের ফরম বিতরণ ও কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত

আড়াইহাজারে সড়ক দুর্ঘটনায় মাদ্রাসা ছাত্র নিহত

রাঙামাটিতে কাপ্তাই হ্রদের কাট্টলি বিলে বাঁশের ভেলা

বান্দরবানে সেনাবাহিনীর সহয়তায় কুকি-চিনের অত্যচারে পালিয়ে যাওয়া পরিবার নিজ গৃহে ফিরছে