যানজটে নগরবাসীর স্বাস্থ্যঝুঁকি
১৪ মার্চ ২০২৫, ১২:৩০ এএম | আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২৫, ১২:৩০ এএম

রমজানের শুরু থেকেই ঢাকার যানজট প্রকট আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিন এই যানজটের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে নগরবাসীকে। বিশেষ করে দুপুরের পর থেকে সারা শহরের রাস্তা স্থবির হয়ে যায়। ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে যানবাহনগুলো। রোদে, ঘামে আর গণপরিবহনে অতিরিক্ত যাত্রীর ঠাসাঠাসিতে নাকাল রাজধানীবাসী। দিন দিন এ পরিস্থিতি আরও নাজুক হচ্ছে। এতে সময় নষ্টের পাশাপাশি বাড়ছে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যঝুঁকি। সময় ও অর্থ যেমন নষ্ট হচ্ছে, মানুষের দুর্ভোগও ছাড়িয়ে যাচ্ছে সহনীয়তার সব সীমা। শহরের বাসিন্দারা প্রতিদিনের যানজটের কবলে পড়ে নানা স্বাস্থ্য সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। এতে প্রায় সব পরিবারে বাড়ছে চিকিৎসা ব্যয়। বাড়ছে মানসিক সমস্যাও। এর মধ্যে যানজটে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি নারী-শিশুদের।
সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যানজট যেন আরও তীব্রতর হয়ে উঠছে। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি সড়কেই যানবাহনের দীর্ঘ জট। ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যাম মাড়িয়ে গন্তব্যে ছুটে চলা মানুষের চোখেমুখে ছিল বিরক্তি আর ক্লান্তির ছাপ। যাত্রীদের অনেকে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে ক্ষোভ ঝাড়েন। ঢাকার প্রধান সড়কগুলোতে তীব্র যানজট। এতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন অফিস শেষে ঘরে ফেরা মানুষেরা। তারা পরিবারের সঙ্গে ইফতার করতে প্রতিদিনই তাড়াহুড়ো করে অফিস থেকে বের হন। কিন্তু যানজটের কারণে অনেক সময় ঠিক সময়ে বাসায় পৌঁছাতে পারেন না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, গুলিস্তান, পল্টন, মৎস্য ভবন, মিন্টু রোড, কাকরাইল, বাংলামোটর, শ্যামলী, তেজগাঁও, বিজয় সরণি, রামপুরা, হাতিরঝিল, বাড্ডা, গুলশান, বনানী, নতুন বাজার এলাকায় দুপুরের পর থেকেই ছিল তীব্র যানজট। এসময়ে অধিকাংশ সিগন্যালে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশদের ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। এফডিসি মোড়, মগবাজার, শাহবাগ, প্রেসক্লাব ও মতিঝিলের মতো ব্যস্ততম সড়কে অনেকেই আধা ঘণ্টার পথ যাচ্ছেন এক থেকে দেড় ঘণ্টায়। কর্মজীবীরা গাড়িতে বসে বারবার শুধু ঘড়ির কাঁটার দিকে তাকাচ্ছেন।
এশীয় দেশগুলোর মধ্যে ঢাকাবাসী সবচেয়ে বেশি মানসিক চাপের মধ্যে আছে বলে এক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি বাণিজ্যিক সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এশিয়ার শহরগুলোর মধ্যে ঢাকাতে বাস করা সবচাইতে স্ট্রেসফুল বা মানসিক চাপের ব্যাপার। তারা বলছে, ঢাকাবাসী মানুষের মানসিক চাপ কমানোর জন্য কর্তৃপক্ষের যেমন কোনো উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়, তেমনি বেসরকারিভাবেও তেমন কোনো উদ্যোগ নেই। গবেষণায় বায়ু দূষণ, যানজট, লিঙ্গ বৈষম্য, বেকারত্ব, মানসিক স্বাস্থ্যের মতো বিষয়ের মানদ-ে বিশ্বের ১৫০টি শহরের তালিকা করা হয়েছে। ঢাকার প্রতিটা মোড়ে, প্রতিটা সিগন্যালে অনেকক্ষণ বসে থাকতে হয়, বাসা থেকে রোজ সকালে এক ঘণ্টা আগে বের হতে হয়। জ্যাম, রাস্তায় ডাস্টবিন উপচে পড়ছে ময়লা। খাবারের ক্ষেত্রে বিশুদ্ধতার কোনো গ্যারান্টি নেই। হাঁটার কোনো জায়গা নেই, এজন্য দেখা যায় ওজন বেড়ে যায়, রক্তচাপ বাড়ে এবং ডায়াবেটিস হয়-এগুলোও মানসিক চাপ বাড়ায়। রাস্তায় জ্যাম, কোনো ট্রাফিক রুলস নেই, গাড়ি যেভাবে ইচ্ছা সেভাবেই যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব বিষয় একজন মানুষের ব্যক্তিগত এবং সামাজিক সম্পর্কগুলোর ওপর প্রভাব ফেলছে। প্রতিদিনের কাজ সম্পন্ন করা যখন কঠিন হয়ে যায় সিম্পল একটা জ্যামের কারণে, তখন সেটা একজন মানুষের ব্যক্তিগত ও সামাজিক সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলে। শহরে দেখবেন সম্পর্কের ক্ষেত্রে অনেক অবিশ্বস্ততা, সেটাও অস্থিরতা থেকে আসতে পারে। সরকারি হিসাবে এই মুহূর্তে যে শহরের জনসংখ্যা প্রায় দুই কোটি, অর্থাৎ প্রতি বর্গ কিলোমিটারে প্রায় দুই লক্ষ মানুষ বাস করে, সে শহরকে মানুষের জন্য একটু স্বস্তিকর করতে হলে কর্তৃপক্ষের উদ্যোগের কোনো বিকল্প নেই।
গণপরিবহনের যাত্রীরা জানিয়েছেন, কারও হয়তো গন্তব্যে যেতে আধাঘণ্টা সময় লাগার কথা। কিন্তু এক ঘণ্টা আগে রওনা হয়েও তিনি সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন না। সপ্তাহের প্রায় প্রতিটি দিন সড়কের এক অবস্থা। এ নিয়ে তাদের ভোগান্তির যেন শেষ নেই। রমজান ঘিরে অনেক অফিস-কর্মস্থলই বিকেল ৩টার পর ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায়। ফলে এসময়টাতে রাস্তায় বাড়তি চাপ তৈরি হয়। প্রতিদিন অফিস শেষে জ্যাম ঠেলে বাসায় যেতে হয়। প্রতিদিনই ইফতার নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকতে হয়।
আরেক যাত্রী বলেন, যাত্রীদের চাপে গাড়িতে ওঠার মতো পরিস্থিতি নেই। সবাই ধাক্কাধাক্কি করে গাড়িতে উঠতে চাইছেন। নিয়মিতই ভোগান্তিতে পড়তে হয়। রাস্তায় জ্যামে বসে থাকার চেয়ে হেঁটে চলে যাওয়া অনেক ভালো। কিন্তু যাবো তো সেই আমিনবাজার, এতদূর তো হেঁটে যাওয়া সম্ভব না। তাই বাধ্য হয়েই যানজটের মধ্যে গাড়িতে বসে আছি। যানজটের যে অবস্থা, পরিবারের সঙ্গে ইফতার করতে পারবো কি না জানি না।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, যানজট কমাতে শিক্ষার্থীরা এরই মধ্যে ঢাকা শহরে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় অংশগ্রহণ করেছে। রমজানে জনদুর্ভোগ যেন না হয় সেজন্য আমরা আবারও শিক্ষার্থীদের সহায়তা প্রত্যাশা করছি। ট্রাফিক বিভাগের নির্দেশনায় বাংলাদেশ স্কাউট, বিএনসিসি ও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ও যানজট কমাতে মাঠে থাকবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

চ্যাম্পিয়ন বিকেএসপি

‘বিদেশি’ আনছে ভারতও!

কর্ণফুলীতে বন্যহাতির আক্রমণে শিশুর মৃত্যু

কিশোরগঞ্জে স্কুল ম্যানেজিং কমিটি নিয়ে সংঘর্ষে ছাত্রদল নেতা নিহত

ঝিনাইদহে জমে উঠেছে ঈদের বাজার ক্রেতাদের ঝোঁক দেশি পোশাকে

সুশীল বিপ্লবীরা আ.লীগের পুনর্বাসন করতে চায় : রাশেদ খান

ধানমন্ডিতে নিষিদ্ধ হিজবুত তাহরীরের ৭ সদস্য রিমান্ডে

সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ৯০% ভোট পেয়ে বিএনপি জয়লাভ করবে : কায়কোবাদ

আপন চাচাতো ভাইয়ের বিরুদ্ধে ৪ বছরের বোনকে ধর্ষণের অভিযোগ

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত জনগণই নেবে : মাহমুদুর রহমান মান্না

টিভিতে দেখুন

অমর একুশে হল ছাত্রদলের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত

বিশ্বকাপে এক পা আর্জেন্টিনার

মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়ায় হাফেজ ছেলের উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে নামাজরত অবস্থায় বাবা নিহত

‘‘রাম্বল ইন দ্য জাঙ্গল’ কিংবদন্তি জর্জ ফোরম্যান আর নেই

বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে ঐক্যবদ্ধভাবে ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হবে : নাসিরউদ্দীন পাটোয়ারী

৬ এপ্রিল ক্যাম্পে ফিরছেন সাবিনারা

আর্জেন্টিনা ম্যাচে ‘বেকার’ আলিসনও

ইউট্যাবের ইফতার মাহফিলে খালেদা জিয়ার সুস্থতার কামনা

কুস্তির কমিটি নিয়ে ক্ষোভ অব্যহত