প্রসঙ্গ : রাষ্ট্রীয় সফর!
২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১২:২০ এএম | আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ১২:২০ এএম

২০২৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সে সময় জানানো হয়েছিল, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা। এ ছাড়া জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন তিনি। তখন কিন্তু এই সফরকে রাষ্ট্রীয় বা সরকারি সফর বলা হয়নি।
চলতি বছরের ৩ এপ্রিল দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষ নেতাদের অংশগ্রহণে থাইল্যান্ডে বিমসটেকের ষষ্ঠ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে ব্যাংককে যান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই সফরে প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন। এ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বলা হয়েছিল, সফরকালে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রার সঙ্গেও বৈঠকের কথা রয়েছে প্রধান উপদেষ্টার। এই সফরকেও কিন্তু সরকারি বা রাষ্ট্রীয় সফর বলা হয় নি। এর কারণ, কোনো সম্মেলনে যোগ দিলেই সেটাকে সরকারি বা রাষ্ট্রীয় সফর বলা যায় না।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতে, রাষ্ট্রীয় ও সরকারি সফর দুটোর মধ্যে পার্থক্য যেমন আছে তেমনিভাবে কোনো রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকার প্রধান সভা-সেমিনারে যোগ দিলে সেটাকে পৃথকভাবে সংজ্ঞায়িত করতে হবে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মতে, একজন রাষ্ট্রপ্রধান যখন অন্য কোন দেশে যাওয়ার আমন্ত্রণ বা প্রস্তাব গ্রহণ করেন, তখন একটি রাষ্ট্রীয় সফর হিসেবে বিবেচিত হয়। যখন একজন সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান রাষ্ট্রীয় সফরে যান, তখন যে দেশে তিনি যাচ্ছেন সেই দেশের রাষ্ট্র বা সরকার প্রধান পুরো সফরের জন্য তাঁকে সরকারী আতিথি হিসেবে বরণ করেন। এই সফরের পর সর্বদা আয়োজকের পক্ষ থেকে অতিথিকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানানো হয়। এমনকি রাষ্ট্রীয়ভাবে মধ্যাহ্নভোজ বা নৈশভোজের আয়োজন করা হয়। রাষ্ট্রীয় সফর সাধারণত কয়েক দিন দীর্ঘ হয় এবং এতে বেশ কয়েকটি বিস্তৃত অনুষ্ঠান অন্তর্ভুক্ত থাকে। রাষ্ট্রীয় সফরে দু’দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের সময় নিজ নিজ দেশের জাতীয় পতাকা ব্যবহার করা হয়।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সদ্য সমাপ্ত কাতার সফর নিয়ে তাঁর প্রেস উইং যে নাটকীয় প্রচারণা চালিয়েছে, তা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক সমালোচনা চলছে। শুরু থেকেই প্রচার করা হচ্ছিল, ড. ইউনূস কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানির আমন্ত্রণে রাষ্ট্রীয় সফরে যাচ্ছেন। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা ও জ্বালানি উপদেষ্টাকে সঙ্গী করে বড় বহর নিয়ে তিনি কাতার গিয়েছিলেন। সমালোচকরা বলছেন, ড. ইউনূস যোগ দিয়েছিলেন ‘আর্থনা শীর্ষ সম্মেলন ২০২৫’-এ। এটি ছিল একটি এনজিও উদ্যোগের সম্মেলন, যেখানে কোনো রাষ্ট্রপ্রধান তো দূরের কথা, স্বাগতিক কাতারের আমিরও উপস্থিত ছিলেন না।
‘আর্থনা সেন্টার ফর অ্যা সাসটেইনেবল ফিউচার’-কাতার ফাউন্ডেশনের এক অলাভজনক গবেষণা ও জনসচেতনতামূলক প্রতিষ্ঠান। টেকসই উন্নয়ন আর জলবায়ু বিষয়ক আলোচনার জন্য এটি কাজ করে। অর্থাৎ পুরো আয়োজন ছিল কাতারকেন্দ্রিক একটি এনজিও প্ল্যাটফর্মের প্রচারণা। সেখানে ড. ইউনূসের উপস্থিতি ছিল মূলত একজন বক্তা হিসেবে, রাষ্ট্রীয় প্রতিনিধি হিসেবে নয়। তাঁর সফরে ছিল না কোনো রেড কার্পেট সংবর্ধনা, ছিল না কাতারের রাষ্ট্রপ্রধানের দেয়া কোনো আনুষ্ঠানিক ভোজ। এমনকি তথাকথিত আমন্ত্রণকারী আমিরের সঙ্গেও সাক্ষাৎ হয়নি প্রধান উপদেষ্টার। এর পরিবর্তে ড. ইউনূসকে দেখা গেছে কাতারের কয়েকজন মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে। আর মহাসমারোহে প্রচার করা হয়েছে আমিরের মা ও বোনের সাথে সাক্ষাতের খবর। বাস্তবে তারা দু’জনই কাতার ফাউন্ডেশন ও আর্থনা সম্মেলনের আয়োজক- রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার প্রতিনিধিত্বকারী কেউ নন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের কাতার সফর প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর তারানা বেগম বলেন, এটা রাষ্ট্রীয় নাকি সরকারি সফর ছিল বা এ নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় কী বিকর্ত হচ্ছে তা আমার জানা নেই। তিনি বলেন, ড. ইউনূস যেন তেন মানুষ নন। তিনি একজন বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্ব। তার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় নাকি সরকারি সফর সেটা কোনো বিষয় নয়। আমার জানা মতে, তিনি গতানুগতিক কালচার মেইনটেইন করেন না। বরং তিনি কোন পারপাসে গেলেন সেটাই বিষয়। এখানে কারও বাড়িয়ে বলার দরকার ছিল না। হতে পারে তিনি রাষ্ট্রীয় সফরেই গেছেন। কারও আমন্ত্রণে তিনি গিয়ে থাকলে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ হতেই হবে তা নয়। হতে পারে তারা চেষ্টা করেও সবকিছু মেইনটেইন করতে পারেনি। এসব কিছুই নির্ভর করে পারিপার্শ্বিক অবস্থার উপর। তবে তিনি উল্লেখ করেন, এই সফরে আমরা কি পেলাম সেটাই দেখার বিষয়। যে সমস্ত এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল সেগুলো হয়েছে কি না বা সেখান থেকে আমরা কী পেলাম সেটাই দেখার বিষয়।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

বকশীগঞ্জে পাটক্ষেত থেকে অজ্ঞাত এক নারীর মরদেহ উদ্ধার

আগে কুকুরের মুখে ছিলাম, এখন বাঘের মুখে: মির্জা আব্বাস

যুদ্ধবিরতির অনুরোধ ভারতই করেছিল, ফের জানাল পাকিস্তান

আন্তর্জাতিক ইকোট্যুরিজম সোসাইটি পর্তুগালের সভাপতি হলেন বাংলাদেশের ডালটন জহির

জুলাই থেকে ইন্টারনেটের দাম কমবে ২০ শতাংশ

বিকেএমইএ নির্বাচিত সভাপতি হাতেম, নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম

গাজাকে ‘ফ্রিডম জোন’ করার প্রস্তাব, আবারও বিতর্কে মার্কিন প্রেসিডেন্ট

যশোরে হাবিবের কৃষি খামারে ঝুলছে থাইল্যান্ড জাতের বারমাসি কাঁঠাল!

ডাক বিভাগের মাধ্যমে ঢাকায় আম আনবেন কওমি তরুণ উদ্যোক্তারা

চলতি মাসেই বাজারে আসছে আমের রাজধানীর আম

পাকিস্তানের ‘শূন্য শুল্ক’ প্রস্তাব, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যে নতুন কূটনৈতিক বার্তা

২০০ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি, এআই প্রযুক্তিতেও আমিরাতের পাশে যুক্তরাষ্ট্র!

মোরেলগঞ্জে পানি তালের কদর সারাদেশে

দুর্দান্ত ইয়ামালে বার্সার লিগ শিরোপা পুনরুদ্ধার

ফিলিস্তিনিদের ৬০০ ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দিল ইসরাইল

গোপালগঞ্জে বাস-ট্রাক সংঘর্ষে নিহত ৩, আহত ২৮

লাইভ চলাকালীন জনপ্রিয় টিকটকারকে গুলি করে হত্যা

পটুয়াখালীতে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ এর উদ্যোগে অবহিতকরণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত

ভারতে সন্দেহভাজন ‘১৪৮ বাংলাদেশিকে’ ত্রিপুরায় স্থানান্তর, হতে পারে পুশ ব্যাক

বাড়ল ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির সময়সীমা