ইরানের ভূখন্ডে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বর্বরোচিত হামলা সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের ঘৃণ্যতম দৃষ্টান্ত। সম্পূর্ণ অযাচিতভাবে ইরানে মার্কিন হামলার মাধ্যমে বর্বরতার আরেক ঘৃণ্যতম নজির স্থাপিত হয়েছে।

এটি বিশ্বমানবতাকে ভাবিয়ে তুলছে। ইহুদি-মার্কিনীরা একে একে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে ধ্বংস করতে চায়। ভেদাভেদ ভুলে মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধভাবে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন রুখে দাঁড়াতে হবে। ইরানের ভূখন্ডে বিনা উষ্কানিতে সা¤্রাজ্যবাদী মার্কিন বাহিনীর বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদে গতকাল বিভিন্ন ইসলামী দলের নেতৃবৃন্দ পৃথক পৃথক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ঃ জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ইরানের ভূখ-ে মার্কিন বাহিনীর সন্ত্রাসমূলক হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। গতকাল রোববার এক বিবৃতিতে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সভাপতি মাওলানা আবদুর রহিম ইসলামাবাদী ও মহাসচিব মাওলানা ড.গোলাম মুহিউদ্দীন ইকরাম বলেন, ইরানের ভূখন্ডের ওপর বিনা উষ্কানিতে মার্কিন সা¤্রাজ্যবাদীদের বর্বরোচিত বিমান হামলা আন্তর্জাতিক আইন, মানবতা ও সার্বভৌমত্বের চরম লঙ্ঘন। বিশ্বের শান্তিকামী মুসলিম উম্মাহর ওপর এটি সরাসরি হুমকিস্বরূপ। মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতা তৈরি করাই এ ধরনের আগ্রাসনের উদ্দেশ্য। নেতৃদ্বয় বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোকে একে একে ধ্বংস করার লক্ষ্যে ইসলামী দুনিয়াকে দুর্বল ও বিভক্ত করার জন্য ইহুদি-মার্কিন শক্তি সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ বিশ্ব মুসলিম নেতৃবৃন্দকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ ধরনের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। এদিকে ইরানে মার্কিন হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান কওমি পরিষদ বাংলাদেশের সভাপতি ও গুলিস্তান পীর ইয়ামেনী জামে মসজিদের খতিব মুফতি ইমরানুল বারী সিরাজী।

বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি ঃ ইরানে আমেরিকান হামলাকে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের ঘৃণ্যতম দৃষ্টান্ত বলে আখ্যায়িত করে বিবৃতি দিয়েছেন বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির আমীর আল্লামা সরওয়ার কামাল আজিজী ও মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইযহার। এক যুক্ত বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় বলেন, অবৈধ দখলদার ইসরাইল পৃথিবীর শান্তি ও মানবতা ধ্বংসের ঘৃণ্যতম গভীর চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে তারা ইরানে বর্বরোচিত হামলা করে নতুন করে যুদ্ধের দামামা বাজিয়ে দিয়েছে। ফলে ইরান-ইসরাইলের মধ্যে ভয়াবহ যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। এরই মধ্যে সম্পূর্ণ অযাচিতভাবে ইরানে মার্কিন হামলার মাধ্যমে বর্বরতার আরেক ঘৃণ্যতম নজির স্থাপিত হয়েছে। এটি বিশ্বমানবতাকে ভাবিয়ে তুলেছে।

নেতৃদ্বয় বলেন, যখন ফিলিস্তিনের মুসলমানদের ওপর গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায় অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইল, তখন কথিত মানবতার ধ্বজাধারী আমেরিকা রহস্যজনক নিরবতা পালন করে। আর ইসরাইল কোন প্রতিরোধের শিকার হলেই নির্লজ্জভাবে ইউরোপ-আমেরিকা আগ্রাসী থাবা বিস্তার করে মুসলিম রাষ্ট্রের ওপর। এভাবে বারবার তারা যুদ্ধ ও ধ্বংস ডেকে এনে মুসলিম বিশ্বে যুদ্ধের দাবানল জ্বালিয়ে দিচ্ছে। ইহুদী-নাসারা সা¤্রাজ্যবাদী আগ্রাসী শক্তির এহেন নির্মমতা ইসলাম ও মুসলিম বিশ্বের বিরুদ্ধে সেই পুরোনো ক্রুসেডের আধুনিক রূপ। এমতাবস্থায় সকল ভেদাভেদ ভুলে মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধভাবে সা¤্রাজ্যবাদী আগ্রাসন রুখে দাঁড়াতে হবে।

বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ঃ ইরানের উপর মার্কিন হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন নেতৃবৃন্দ বলেছেন, বিদ্যমান আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের প্ররোচনায় ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক প্রকল্পে উপর্যপুরী ধ্বংসাত্মক কর্মকা- পরিচালনা সভ্যতার এই ভর দুপুরে একটি স্বাধীন দেশের উপর অতর্কিত বর্বরোচিত হামলা যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রিয় সন্ত্রাসবাদ এর গুন্ডামি ছাড়া কিছুই নয়। যুক্তরাষ্ট্রের এই হিটলারী হামলা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের পাঁয়তারা। ইহুদি-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব ধ্বংসের খেলায় মেতে উঠেছে। শান্তিপ্রিয় সভ্য বিশ্বের উচিত যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের অসভ্যতার বিরুদ্ধে ঐক্য বদ্ধ হয়ে রুখে দাঁড়ানো। যাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ব মড়লিপনা এখনেই খতম হয়। গতকাল রোববার বিকেলে পুরানা পল্টনস্থ দলীয় কার্যালয়ে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ঢাকা মহানগরীর নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় কালে নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন। ঢাকা মহানগরী আমীর মাওলানা মুহাম্মাদ হোসাইন আকন্দের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন দলের সিনিয়র নায়েবে আমীর আলহাজ্ব মুহাম্মাদ আজম খান, মহাসচিব মুফতী ফখরুল ইসলাম, সহকারী অর্থ সম্পাদক মাওলানা আমীর হামজা, মহানগর নেতা মাওলানা দেলওয়ার হোসাইন, মাওলানা নুর মুহাম্মাদ, আলহাজ্ব বশির আহমাদ ও মাহমুদুল হাসান।

ইসলামিক মুভমেন্ট বাংলাদেশঃ ইসলামিক মুভমেন্ট বাংলাদেশের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খায়রুল আহসান এক বিবৃতিতে বলেন, ইহুদিবাদী ইসরাইল এবং যুক্তরাষ্ট্র একত্রে ইরানের উপর আক্রমণ করে প্রমাণ করলো তারা মুসলমানদের শত্রু। তারা মুসলমানদের অবস্থান সহ্য করতে পারে না। যেকোন মূল্যে মুসলমানদের ধ্বংস করতে চায়। তিনি বলেন, ইসরাইল বেপরোয়া ভাবে ইরান, গাজা, ফিলিস্তিন, সিরিয়া, লেবাননসহ সকল মুসলমানদের উপর জুলুম, নির্যাতন এবং অস্ত্রের আঘাতে মুসলমানদের রক্তে রঞ্জিত করছে। তিনি ইসরাইল এবং যুক্তরাষ্ট্রের অবৈধভাবে ইরানের উপর আক্রমণের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

তিনি আরো বলেন, ইসরাইল মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোঁড়া। তাকে যেকোনো মূল্যে সকল মুসলিম এক হয়ে রুখতে হবে। তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যের মোড়ল রাষ্ট্রগুলো মুখে কুলুপ এটে বসে আছে। তারা ইসরাইল এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোন রকমের পদক্ষেপ নিতে রাজি নয়। ইহা মুসলিম নামে মুনাফিকের লক্ষণ। তিনি আরো বলেন, সারা বিশ্বের মুসলিম জনগণ এক হয়ে তাদের রাষ্ট্রের প্রধানগণকে ইসরাইল এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। অন্যথায় তারা বিশ্বের সকল মুসলিম দেশগুলো একে একে নিশ্চিহ্ন করে ফেলবে। তারা চায় বিশ্বে কোন দেশে মুসলিম না থাকুক এবং মুসলিমরা যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে। তিনি জাতিসংঘকে এবং ওআইসিকে জরুরি ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইলের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ এবং আগ্রাসী যুদ্ধ বন্ধ করতে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আহ্বান জানা।