গ্যাসের দেখা নেই
১১ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০২ এএম | আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২৫, ১২:০২ এএম
রাজধানীতে এখন গ্যাস সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। বহু এলাকায় ৮ থেকে ১০ দিন বেলায় গ্যাস নেই। ফলে বাসায় রান্না করতে পারছেন না শহরের মধ্যবিত্ত ও নি¤œবৃত্ত পরিবারের লোকজন। বেশির ভাগ সময় বাইরে থেকে খাবার কিনে এনে খেতে হচ্ছে তাদের। নিত্যপ্রয়োজনীয় এই কাজের জন্য কেউবা খুঁজে নিয়েছেন বিকল্প ব্যবস্থা। কয়েকটি এলাকার গৃহিণীরা জানান, গত কয়েক মাসে গভীর রাতে গ্যাস আসত। এখনো মাঝেমধ্যে রাত ৩টা থেকে ৪টার দিকে গ্যাস আসে এবং এক ঘণ্টা থাকে। সেই লোভে রাত জেগে থাকলেও গ্যাসের দেখা মিলছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর শনিরআখড়া, মাতুয়াইল, মোহাম্মদপুর, বসিলা, যাত্রাবাড়ী, আদাবর, পশ্চিম আগারগাঁও, শ্যাওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, কাফরুল, পশ্চিম ধানমন্ডি, লালবাগ, সোবহানবাগ, ইন্দিরা রোড, তাঁতি বাজার, শাঁখারি বাজার, কামরাঙ্গীরচর, উত্তরা, দক্ষিণ খান, বনশ্রী ও রামপুরা এলাকায় গ্যাসের তীব্র সংকট। এসব এলাকার কিছু বাসা-বাড়িতে মাঝেমধ্যে গ্যাসের কম চাপ দেখা গেলেও ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ বাসায় গ্যাস আসে না। এসব এলাকার লোকজন রান্নার জন্য বিকল্প উপায় খুঁজে নিয়েছেন বা হোটেল থেকে তৈরি খাবার কিনে আনছেন। সীমিত আয়ের মানুষ হোটেলের খাবার কেনার সামর্থ্য যাদের নেই, তারা চিড়া-মুড়ি-পাউরুটি ও কলা খেয়ে দিনের পর দিন পার করছেন।
শনিরআখড়ার বাসিন্দা গৃহিণী সাবিনা ইয়াসমিন বললেন, গ্যাস নিয়ে বলার কিছু নেই। ১০ দিন থেকে গ্যাস নেই। গত সপ্তাহে এক রাতে ভোরে গ্যাস এলেও সকাল ৬টার চলে যায়। এই এলাকায় গ্যাসের অবস্থা শোচনীয়। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে একটি সিলিন্ডার কেনার চিন্তা-ভাবনা করছি। সিলিন্ডার কিনলে বাড়তি খরচ হবে, পরিবারের মাসিক বাজেট কাটছাঁট করতে হবে। নিয়মিত গ্যাস না পেয়েও গ্যাস বিল দিতে হচ্ছে; এটা কেমন আইন।
রাজধানী যাত্রাবাড়ী এলাকার বাসিন্দা লিজা সুলতানা বলেন, তাদের এলাকায় গত তিন বছর ধরে সকালে ব্যাপক গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। মাঝেমধ্যে গ্যাস এলেও গ্যাসের গতি থাকে কম। নিরুপায় হয়ে রাত জেগে থেকে গ্যাস এলে রাতের বেলায় রান্নার কাজ শেষ করে রাখতে হয়। যাত্রাবাড়ীর মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম নামের এক বাসিন্দা বলেন, বাচ্চাদের জন্য বাহির থেকে খাবার কিনে আনতে হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের ভুল নীতি এবং দুর্নীতিমূলক কর্মকা-ের ফলে এমন সংকটময় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। শিগগিরই এই সংকট থেকে উত্তরণের উপায় নেই। বর্তমান সরকার দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত বকেয়া পরিশোধ করে গ্যাস উৎপাদন ও এলএনজি আমদানিতে কিছুটা গতি আনলেও সার্বিক চাহিদা বিবেচনায় তা যথেষ্ট নয়। বর্তমানে জ্বালানি ও বিদ্যুতে যেভাবে নীতি সাজানো হচ্ছে এবং পরবর্তীতে নির্বাচনের মাধ্যমে একটি সরকার তা সুসংহতভাবে এগিয়ে নিলেও সংকট দূর করতে কমপক্ষে তিন থেকে চার বছর লাগবে। তবে কর্তৃপক্ষকে ত্রৈমাসিক পরিকল্পনা করে ধীরে ধীরে ঘাটতি কমিয়ে আনতে মনোযোগী হতে হবে।
গত কয়েক বছর ধরে যখনই গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে তখনই স্থানীয় উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বিনিয়োগ এবং এলএনজি আমদানির পরিমাণ বৃদ্ধির কথা বলেছে সরকারি সংস্থা ও কোম্পানিগুলো। কিন্তু দাম বাড়লেও উৎপাদন ও সরবরাহ বাড়েনি। ২০২৩ সালে সরকার গ্যাসের দাম ১৭৯ শতাংশ বাড়ায় তখনকার আওয়ামী লীগ সরকার। চলতি বছর আবার ৩৩ শতাংশ বাড়িয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। তার পরও সংকট কাটেনি।
পেট্রোবাংলা এবং শিল্প সংশ্লিষ্টদের তথ্য অনুযায়ী, দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৪০০ কোটি ঘনফুট। কিন্তু বর্তমানে সরবরাহ হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৭০ কোটি ঘনফুট। জ্বালানি বিভাগ ও পেট্রোবাংলা থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ১৮৮ কোটি ঘনফুটের মতো গ্যাস। চার বছর আগেও এই পরিমাণ ছিল ২৪৭ কোটি ঘনফুট। এতে দেখা যায়, দেশীয় উৎপাদন কমেছে প্রায় ৫৯ কোটি ঘনফুট গ্যাস। সরবরাহ মোটামুটি স্থিতিশীল রাখতে হলে আমদানিকৃত এলএনজির ওপর নির্ভরতা বেড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি মাসে গ্যাসের বিল দিলেও গ্যাস না পাওয়ার মানুষ বিক্ষুব্ধ। যাত্রাবাড়ী, শনিরআখড়া, মোহাম্মদ বাগের মানুষ গ্যাসের দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় থাকায় সে কর্মসূচি বাদ দিয়েছে। উল্লেখ, ২০০৩-৪ সালে গ্যাসের দাবিতে শনিরআখড়ায় আন্দোলনের সময় সে সময়ের স্থানীয় এমপি আন্দোলন থামাতে এলে তাকে জনরোষ থেকে বাঁচতে দৌড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছিল।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
আকুর বিল পরিশোধ, ৩১ বিলিয়নে নামলো রিজার্ভ
সরকারের আশ্বাসে প্রাথমিক শিক্ষকদের কর্মবিরতি আপাতত স্থগিত
সাতক্ষীরায় এমএফএস-এর অপব্যবহার রোধে এজেন্টদের সচেতনতা বাড়াতে জেলা পুলিশ ও বিকাশ-এর সমন্বয় কর্মশালা
গণমাধ্যম শ্বাসরুদ্ধ করে ‘রাজত্ব’ কায়েম ,বদলি হলেন ডিসি মুফিদুল
নাসিরনগরে তিন আওয়ামী নেতা গ্রেফতার
ইসরায়েলি যুদ্ধের প্রথম ১২ ঘণ্টার অভিজ্ঞতা জানালেন জ্যেষ্ঠ ইরানি জেনারেল
মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে কাপনের কাপড় জড়িয়ে মশাল মিছিল
“মোস্ট ইনোভেটিভ ফিনটেক প্রোডাক্ট ডিজাইন অব দ্য ইয়ার” অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে মাস্টারকার্ড বাংলাদেশ
যারা নির্বাচনকে বানচাল বা বিলম্বিত করার চেষ্টা করছে নির্বাচনে তাদের ভরাডুবি হবে: শামীম
২৬টি সম্মাননা প্রদানের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হলো ৩য় বাংলাদেশ ফিনটেক অ্যাওয়ার্ড
সালাহউদ্দিন আহমদের অনুরোধে অনশন ভাঙলেন আম জনতার তারেক, নেওয়া হলো হাসপাতালে
ধানের শীষে ভোট দিন, এলাকার উন্নয়নের দায়িত্ব আমার : ব্যারিস্টার মীর হেলাল
সরাইলে ইউএনও হিসেবে যোগদান করেছেন মো. আবুবকর সরকার
আগামী নির্বাচন হতে যাচ্ছে মাইলফলক : সিইসি
বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড সিরিজে আছেন জেসি
পদ ফিরে পেলেন বিএনপির বহিষ্কার হওয়া ৩৯ নেতা
ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর মন্তব্য কূটনৈতিক সৌজন্যের পরিপন্থী : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
এনসিপি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলায় যুগ্ম সমন্বয়কারী সৈয়দ ইমরান সাময়িক বহিষ্কার
নাইম-শহিদুলের ফিফটি
৫ লক্ষ টাকা জরিমানা ও ৩ হাজার কেজি পলিথিন জব্দ
