জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব: 'বিক্ষুব্ধ প্রশাসন ক্যাডারের তরুণ কর্মকর্তারা'
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫:১৪ পিএম | আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫:১৪ পিএম

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশে উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডারের বাইরে অন্য ক্যাডারের কোটা ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করে সুপারিশ চূড়ান্ত হয়েছে- এমন খবর সংবাদপত্রে ছড়িয়ে পড়ার পর ব্যাপক ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করে প্রশাসন ক্যাডারের তরুণ কর্মকর্তারা ৷
মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) ৩০ থেকে ৪১ তম ব্যাচের একাধিক তরুণ কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে এমন চিত্র দেখা গেছে৷
এদিকে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের এই প্রস্তাব নিয়ে এর আগে গত ২ ফেব্রুয়ায়রি রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর বিয়াম ফাউণ্ডেশনে প্রশাসন ক্যাডারের নবীন কর্মকর্তারা জড়ো হয়ে বাংলাদেশ এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশন এর নেতৃবৃন্দের সাথে দেখা করেন। এসময় আয়োজিত এক জরুরী মতবিনিময় অনুষ্ঠানে প্রশাসন ক্যাডারের নবীন কর্মকর্তারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন এবং এই সিদ্ধান্ত তাদের প্রতি ভয়াবহ অবিচার মর্মে বক্তব্য তুলে ধরেন।
৩০ থেকে ৪১ তম ব্যাচের কর্মকর্তারা বলছেন, ব্রিটিশ ভারত থেকে স্বাধীন বাংলাদেশে ঐতিহাসিকভাবেই উপসচিব পদে মূলত প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারাই কাজ করে থাকেন। এ বিষয়ে করা রীট মামলায় উচ্চ আদালতে আইনি লড়াই শেষে মাননীয় আপীল বিভাগ ২৪ মে ২০১০ সালে চূড়ান্ত আদেশে উপসচিব পদে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাগণের মধ্য থেকে ৭৫ শতাংশ নিয়োগ প্রদান বৈধ ঘোষণা করে।
প্রশাসনের নবীন কর্মকর্তারা মনে করে, আদালতের রায় উপেক্ষা করে এ ধরণের সুপারিশের প্রস্তাব একদিকে আদালত অবমাননার শামিল অপরদিকে রাষ্ট্রব্যবস্থাকে দুর্বল করার শামিল। পাশাপাশি এই সুপারিশ নবীন কর্মকর্তাদের জন্য বৈষম্যমূলক। এই সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে প্রশাসনে শৃংখলা ভেঙ্গে পড়তে পারে এবং রাষ্ট্রীয় সক্ষমতা দুর্বল হতে পারে বলেও আশংকা ব্যক্ত করেন তারা।
আয়োজিত ওই জরুরী মত বিনিময় সভায় বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ৩০ ব্যাচ থেকে ৪১ ব্যাচের প্রতিনিধিরা বক্তব্য প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশন এর সভাপতি ও পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব মোঃ নজরুল ইসলাম, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব, বাংলাদেশ এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশন এর মহাসচিব ও ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরীসহ এসোসিয়েশনের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন এবং বক্তব্য প্রদান করেন।
এসময় বাংলাদেশ এ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশন নেতৃবৃন্দরা তাদের বক্তব্য সরকারের উচ্চমহলে তুলে ধরার আশ্বাস দেন। একই সাথে, রিপোর্ট আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ হওয়ার পর প্রতিক্রিয়া ও কার্যক্রম গ্রহণের আশ্বাস দেন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ সরকারের নীতি বাস্তবায়নের সাথে জড়িত ‘কোর’ অফিসগুলোতে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা কাজ করেন। এই সুপারিশের ফলে প্রশাসনের নবীন কর্মকর্তাদের পদোন্নতি প্রায় ৪০ শতাংশ কমে যাবে। ফলে, এক বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তার ক্যারিয়ার অনিশ্চিত হয়ে পড়বে যা প্রভাব ফেলবে প্রশাসনের ‘ইস্পিরিট ডি কর্পস’ বা মনোবলে। প্রশাসন যেহেতু সরকারের নানা নীতি বাস্তবায়নে মূখ্য ভূমিকা পালন করে সেহেতু মনোবলহীন প্রশাসনব্যবস্থা রাষ্ট্রব্যবস্থা দুর্বল হওয়ার নামান্তর হবে।
নবীন কর্মকর্তারা আরো মনে করে যে, সরকারের নীতি বাস্তবায়নে তারা প্রায় ২৪/৭ মাঠে কাজ করে থাকে। ৫ই আগস্টের পর যখন রাজনীতিবিদেরা মাঠে অনুপস্থিত ছিলো, পুলিশ অকার্যকর ছিলো তখন স্থানীয় সরকারের নানা পর্যায়ে যেমন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ইত্যাদি নানা পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা সরকারকে কার্যকর রেখেছে। এই সুপারিশের ফলে ক্যারিয়ারে পদসোপান যদি কমে যায় তবে তারা বাড়তি কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। এতে করে মাঠ প্রশাসনের কার্যকারিতা অনেকাংশেই কমে যাবে এবং কর্মকর্তাদের মধ্যে শৃংখলা ভেঙ্গে যাবে। ফলে, সরকারের নীতি বাস্তবায়নে নেতৃত্বদানকারী কর্মকর্তাদের মনোবল ভেঙ্গে পড়বে যার প্রভাবে রাষ্ট্রের নীতি বাস্তবায়নে সক্ষমতা কমে যাবে। সরকারের এই সময়ে যা হতে পারে সরকারের জন্য বিপজ্জনক।
নবীন কর্মকর্তাদের মধ্যে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বলেন, উপসিচব পদটি প্রশাসন ক্যাডারের সহজাত পদ বলে রায় দিয়েছে আপীল বিভাগ। সেটি উপেক্ষা করে এই অনায্য সুপারিশ প্রশাসন ক্যাডারের জন্য বৈষম্যমূলক। যেখানে অন্য সকল ক্যাডার কর্মকর্তারা পঞ্চম গ্রেডে পদোন্নতির দুটি সুযোগ পাচ্ছে, ১) নিজের ক্যাডারের পঞ্চম গ্রেডে পদোন্নতির সুযোগ, ২) উপসচিব পদে পদোন্নতির সুযোগ সেখানে প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যরা একটি সুযোগ পাচ্ছেন একটি-উপসচিব পদে পদোন্নতির সুযোগ।
আরেক কর্মকর্তা বলেন, কমিশনের এই সিদ্ধান্তে ক্ষতিগ্রস্ত হতে যাচ্ছে জুনিয়র কর্মকর্তারা যারা এখনো উপসচিব পদে পদোন্নতি পায়নি। এসব কর্মকর্তারা বিসিএস পরীক্ষা দেওয়ার সময় উপসচিবে নিজেদের সুযোগ ৭৫ শতাংশ আছে ধরেই চয়েস প্রদান করেছেন। ক্যারিয়ারের মাঝপথে এসে এই ধরণের পরিবর্তন ‘ডকট্রিন অফ লেজিটিমেট এক্সপেকটেশন’ এর লঙ্ঘন।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও





আরও পড়ুন

আলেমসমাজ ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোন ষড়যন্ত্রই বাংলাদেশকে ঠেকাতে পারবেনা: এ এম এম বাহাউদ্দীন

অযথা কালক্ষেপণ করে ক্ষমতায় থাকার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা সরকারের নেই: আইন উপদেষ্টা

শ্রীলঙ্কাকে হোয়াইটওয়াশের খুব কাছে অস্ট্রেলিয়া

ডিআইজিসহ পুলিশের ৪ ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা আটক

ভারতে বসে নতুন চক্রান্ত শুরু করেছে হাসিনা: মির্জা ফখরুল

ওয়ার্ল্ড গভর্নমেন্ট সামিটে দুবাই যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা

বাবার মতোই দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হবেন কেজরিকে হারানো পরভেশ?

বগুড়ায় ইলেকট্রিক মোটরসাইকেল চালু করল রিভো

সৌদি আরব ও আমিরাত সফরে গেলেন বিমান বাহিনী প্রধান

কতটা নির্লজ্জ হলে দেশ থেকে পালিয়ে গিয়ে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেয় - আতাউর রহমান

মুসলমানদেরকে কুরআন ও সুন্নাহর ছায়াতলে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে: ধর্ম উপদেষ্টা

সবচেয়ে শক্তিশালী পাসপোর্ট সিঙ্গাপুরের, বাংলাদেশ কত নম্বরে?

ময়মনসিংহে ‘মাইক্লো বাংলাদেশ’র যাত্রা শুরু

টিএমএসএস পাবলিক স্কুল এ্যান্ড কলেজে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত

আমরা ক্ষমতায় গেলে বাদলেসের দাবি পূরণ করবো-খায়রুল কবির খোকন

তিন রাকাত বিশিষ্ট নামাজের প্রথম বৈঠক না করে ইমাম সাহেবের দাঁড়িয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে।

মনোহরগঞ্জে অবৈধভাবে পরিচালিত দুটি ইটভাটা বন্ধ ঘোষণা

লক্ষ্মীপুরে হত্যা মামলায় দুই আসামি গ্রেপ্তার

বই পড়ায় অনাগ্রহ বাড়ছে

চাটমোহরে ১৭ আসামি গ্রেফতার