‘যাদেরকে আপনারা সুযোগ পেলেই নানা বিশেষণে বিশেষায়িত করেন, দিনশেষে তারাই মাঠে দৌঁড়ায় ‘

আছিয়ার চিকিৎসা, মৃত্যু, আসামী গ্রেফতার ও হেলিকপ্টারে চড়ে জানাজায় অংশগ্রহণ নিয়ে যা বললেন সারজিস

Daily Inqilab মোহাম্মদ আবদুল অদুদ

১৫ মার্চ ২০২৫, ০২:৫০ পিএম | আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২৫, ০৩:০৪ পিএম

মাগুরার ৮ বছর বয়সী শিশু আছিয়ার চিকিৎসা, মৃত্যু, আসামী গ্রেফতার, গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে নিয়ে লেখা নেতিবাচক তথ্য ও হেলিকপ্টারে চড়ে জানাজায় অংশগ্রহণ নিয়ে একটি বিস্তারিত বর্ণনা দিলেন জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম। তিনি বলেন, যাদেরকে আপনারা সুযোগ পেলেই নানা বিশেষণে বিশেষায়িত করেন- যেকোনো ফরমেটে, যেকোনো সীমাবদ্ধতা নিয়েই হোক না কেন; দিনশেষে তারাই মাঠে দৌঁড়ায়।
 
 
 
তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের তার ভেরিফায়েড আডিতে এক পোস্টে লিখেন,  চলেন সোজাসাপ্টা কিছু আলাপ করি। ওই যে- যেটা নিয়ে আপনারা আলাপ করছেন সেই ফুটেজ নিয়ে। বোন আছিয়ার সাথে নৃশংস একটা ঘটনা ঘটলো ।আমি আমার জায়গা থেকে সংশ্লিষ্ট পুলিশ প্রশাসনকে জানালাম দ্রুত আসামি গ্রেফতার করার কথা। আবার- হাইকোর্ট থেকে ঘোষণা আসলো ১৮০ দিনের মধ্যে ধর্ষণের বিচার প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। আমি আমার জায়গা থেকে দায়িত্বশীল একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে আমার মতামত জানালাম। ১৮০ দিন অনেক বেশি হয়ে যায়। এটা ১-২ মাসের মধ্যে করা উচিত।
 
 
 
তার মতে, নাহলে মানুষের মাথা থেকে ঘটনাটা অনেকটাই মুছে যায় এবং সেই অপরাধের শাস্তি আদতে সমাজে অপরাধ দমনে তেমন প্রভাব রাখতে পারে না। ব্যাপারটা এমন নয় যে আমি একাই জানিয়েছি কিংবা আমার জানানোর জন্যই গ্রেফতার হয়েছে বা আইন পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু আমার জায়গা থেকে মনে হয়েছে এটা আমার করা উচিত তাই আমি করেছি। তবে সে বিষয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেইনি। এরপর আছিয়াকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসা হলো ।আমিও ঢাকা মেডিকেলে গেলাম। যখন জানলাম ICUতে আছে তখন আর ICUতে দেখতে যাইনি। কারণ বাইরে থেকে ICUতে দেখতে গেলে ইনফেকশনের সম্ভাবনা থাকে। মেডিকেলের বাইরে থেকে খোঁজখবর নিয়ে চলে এসেছি। ছবি পোস্ট করিনি।
 
সারজিস বলেন,  এরপর যখন জরুরি অবস্থায় CMH নেয়া হলো তখন সেদিনই সন্ধ্যায় নাগরিক পার্টির কয়েকজন সহ CMH গিয়েছি। সেখানেও ICUতে ছিল আছিয়া। দেখতে যাওয়া সম্পূর্ণ নিষেধ ছিল বলে CMH এর সামনে থেকে ডিউটিরত ডাক্তারের সাথে কথা বলে সার্বিক খোঁজখবর নিয়ে বাসায় ফিরেছি। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেইনি। এরপর CMH এ থাকা আমাদের ছাত্র প্রতিনিধিদের থেকে খোঁজ নিয়েছি। সবশেষে যখন শুনলাম আছিয়া আর নেই তখন সিএমএইচে ছুটে গিয়েছি। সেনাবাহিনী, র্যাব থেকে পরিবারের জন্য বরাদ্দকৃত হেলিকপ্টারে যখনই একাধিক সিট খালি থাকার কথা শুনেছি তখনই মাগুরায় গিয়ে আছিয়ার জানাযায় অংশগ্রহণ করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছি এবং জানাযা পড়ে আবার ঢাকায় ব্যাক করেছি।
 
ফেসবুক ও মিডিয়া সম্পর্কে সারজিস লিখেন,  এই পুরো ঘটনার মধ্যে সর্বশেষ অংশটুকু আমি ফেসবুকে দিয়েছি এবং ফেইসবুকে দেয়া অংশটুকু কে "সামগ্রিক" মনে করে মিডিয়া এবং কিছু পাবলিক জাজমেন্ট করা শুরু করলো । তার মানে আমরা যতটুকু সোশ্যাল মিডিয়া কিংবা গণমাধ্যমে প্রকাশ করি ততটুকুই হচ্ছে বলে আপনারা মনে করেন এবং সেটাকে পুরো ঘটনা ধরে জাজমেন্ট শুরু করে। অর্থাৎ আপনারাও আসলে ফুটেজের দিকেই তাকিয়ে থাকেন । আবার যদি কোনো কিছু না দেই তখন মনে করেন কিছুই করা হয়নি ! কি অদ্ভুত ! দিলে বলেন ফুটেজমুখী আর না দিলে বলেন কিছুই করেনি। আপনাদের এই ডাবল স্ট্যান্ডার্ড কবে একটা সিঙ্গেল স্ট্যান্ডার্ডে পরিণত হবে ?
 
 
 
সারজিস বলেন, আবার আরেকটা ঘটনা লক্ষ্য করেন। আছিয়ার জানাজা ছিল সন্ধ্যা সাতটায়। আমরা পৌঁছেছি সাড়ে পাঁচটায়। এই দেড় ঘন্টা একটা ওয়েটিং রুমে অপেক্ষা করেছি। তার মধ্যে কয়েক মিনিট হয়তো ফোনের নোটিফিকেশন চেক করেছি। ঠিক ওই সময়ে কেউ ছবি তুললো এবং কালের কন্ঠ একাধিক বারের মতো এবারও অপেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়ে তাদের অনলাইন পোস্টারে সেটা প্রকাশ করলো। পাশাপাশি এমনভাবে দেখালো যে আমরা মনে হয় পুরো সময় বসে শুধু ফোনের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। চাইলেই কিন্তু তারা ওখানে বসে থাকার অন্য সময়ের নরমাল কোন ছবি ব্যবহার করতে পারতো। কিন্তু কিছু রিয়াকশন বেশি পাওয়ার আশায় সেটা তারা করেনি। আচ্ছা নিজের বিবেককে জিজ্ঞাসা করেন- দেড় ঘন্টা কোথাও বসে থাকলে অন্তত কয়েক মিনিট আপনারা ফোনের নোটিফিকেশন চেক করতেন কিনা? যদি করেন তাহলে আপনাদের এই ভিউখোর মনোভাব বন্ধ হবে কবে? কবে পেশাদারিত্বের পরিচয় দেওয়া শুরু করবেন ?
 
তার মতে, শুনেন, ঘরে বসে থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় জাজমেন্টের বড় বড় এনালাইসিস কপচানো যায়। এরপর থেকে অনলাইনে এসব এনালাইসিস দেওয়ার আগে অফলাইনে আমাদের জন্য অনুগ্রহ করে কিছু দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন। আমরা আপনার ভালো কাজগুলো অনুসরণ করার অপেক্ষায় থাকবো। Take care.

বিভাগ : জাতীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

আবরার ফাহাদ হত্যা মামলা : ২০ আসামিরই মৃত্যুদণ্ড বহাল
খুলনায় গুলিতে হত্যা মামলার আসামি ও চরমপন্থি নেতা শাহীন নিহত
আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় হাইকোর্টের রায় পড়া চলছে
হেলিকপ্টারে মাগুরা যাওয়া প্রসঙ্গে যা বললেন সারজিস
ঈদযাত্রায় নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রতি লঞ্চে থাকবেন ৪ আনসার সদস্য
আরও
X

আরও পড়ুন

মাগুরায় সেনা বাহিনীর অভিযানে অস্ত্রসহ তিনজন গ্রেফতার

মাগুরায় সেনা বাহিনীর অভিযানে অস্ত্রসহ তিনজন গ্রেফতার

ভয়েস অব আমেরিকার ১৩ শতাধিক কর্মীকে পাঠানো হলো ছুটিতে

ভয়েস অব আমেরিকার ১৩ শতাধিক কর্মীকে পাঠানো হলো ছুটিতে

মে মাসে রাজধানীতে অনুষ্ঠিত হবে 'ভয়েস অব জুনুন'

মে মাসে রাজধানীতে অনুষ্ঠিত হবে 'ভয়েস অব জুনুন'

রাজশাহীর নিউমার্কেটে আগুন, ফায়ার সার্ভিস কর্মী আহত

রাজশাহীর নিউমার্কেটে আগুন, ফায়ার সার্ভিস কর্মী আহত

আজ বিএনপি'র প্রয়াত মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের ১৪ তম মৃত্যুবার্ষিকী

আজ বিএনপি'র প্রয়াত মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের ১৪ তম মৃত্যুবার্ষিকী

আবরার ফাহাদ হত্যা মামলা : ২০ আসামিরই মৃত্যুদণ্ড বহাল

আবরার ফাহাদ হত্যা মামলা : ২০ আসামিরই মৃত্যুদণ্ড বহাল

লাকসাম পৌরসভা জ্বলে না সড়কবাতি, সন্ধ্যা হলেই নামে ঘুটঘুটে অন্ধকার

লাকসাম পৌরসভা জ্বলে না সড়কবাতি, সন্ধ্যা হলেই নামে ঘুটঘুটে অন্ধকার

মির্জাপুরে শিশু ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামী ফিরোজ গ্রেপ্তার

মির্জাপুরে শিশু ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামী ফিরোজ গ্রেপ্তার

খুলনায় গুলিতে হত্যা মামলার আসামি ও চরমপন্থি নেতা শাহীন নিহত

খুলনায় গুলিতে হত্যা মামলার আসামি ও চরমপন্থি নেতা শাহীন নিহত

মিয়ানমারে জান্তার বিমান হামলায় নিহত ১২, আতঙ্কে স্থানীয়রা

মিয়ানমারে জান্তার বিমান হামলায় নিহত ১২, আতঙ্কে স্থানীয়রা

আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় হাইকোর্টের রায় পড়া চলছে

আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় হাইকোর্টের রায় পড়া চলছে

সিলেটে শিলাবৃষ্টির আভাস

সিলেটে শিলাবৃষ্টির আভাস

পাকিস্তানের নতুন শুরুর এই দশা!

পাকিস্তানের নতুন শুরুর এই দশা!

মহাকাশ থেকে ফেরার অপেক্ষায় সুনীতাদের উদ্ধার অভিযানে মাস্কের স্পেসএক্স

মহাকাশ থেকে ফেরার অপেক্ষায় সুনীতাদের উদ্ধার অভিযানে মাস্কের স্পেসএক্স

হেলিকপ্টারে মাগুরা যাওয়া প্রসঙ্গে যা বললেন সারজিস

হেলিকপ্টারে মাগুরা যাওয়া প্রসঙ্গে যা বললেন সারজিস

ঈদযাত্রায় নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রতি লঞ্চে থাকবেন ৪ আনসার সদস্য

ঈদযাত্রায় নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রতি লঞ্চে থাকবেন ৪ আনসার সদস্য

বেনাপোল দিয়ে চার মাসে ১৮ হাজার ৮০০ টন চাল আমদানি

বেনাপোল দিয়ে চার মাসে ১৮ হাজার ৮০০ টন চাল আমদানি

ফরিদপুরে ট্রাক-মোটরসাইকেল-অটোরিকশা সংঘর্ষে নিহত ২, আহত ১

ফরিদপুরে ট্রাক-মোটরসাইকেল-অটোরিকশা সংঘর্ষে নিহত ২, আহত ১

বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মানবিক সহযোগিতার জন্য জাতিসংঘ মহাসচিব বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানালেন

বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মানবিক সহযোগিতার জন্য জাতিসংঘ মহাসচিব বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানালেন

ইউক্রেনীয় সেনারা ঘেরাও হয়নি, পাল্টা দাবি জেলেনস্কির

ইউক্রেনীয় সেনারা ঘেরাও হয়নি, পাল্টা দাবি জেলেনস্কির