জগন্নাথের সামনে অবৈধ বাসস্ট্যান্ড, চাঁদাবাজির দায় পড়ে ছাত্রনেতাদের ওপর
২৪ মার্চ ২০২৫, ০৩:২৪ এএম | আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২৫, ০৩:২৪ এএম

রাজধানীতে অবস্থানগত কারণে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের এলাকা সবসময় জনাকীর্ণ হয়ে থাকে, বাস স্টপেজের কারণে বাড়ে ভোগান্তি। স্কুল, কলেজ, বিশ্বাবদ্যালয়সহ নানা ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের কেন্দ্রস্থল এই অঞ্চলটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটগুলোর সামনে বাসস্ট্যান্ড থাকার কারণে দিনের শুরুটা প্রচন্ড যানজট দিয়ে শুরু হয় যা রাত পর্যন্ত চলতেই থাকে। এতে ভোগান্তিতে পড়ে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী, রীতিমতো হয়রানি ও হেনস্তার স্বীকার হন শিক্ষার্থীরা। মাঝে মধ্যে বাসের হেল্পার ও ড্রাইভার কর্তৃক ইভটিজিংয়ের স্বীকার হন নারী শিক্ষার্থীরা। এসব ঘটনায় শিক্ষার্থী কর্তৃক মারধরও করা হয় তাদের। জুলাই বিপ্লবের পর এসব বাসস্ট্যান্ড থেকে চাদা তোলার অভিযোগও উঠেছিল কয়েকজন ছাত্রদলনেতার নামে। তবে এসব ছাত্রনেতাদের দাবি জগন্নাথের নাম ভাঙ্গিয়ে এসব কাজ করে, সংগঠনের ইমেজ ক্ষুন্ন করার জন্য এসব ষড়যন্ত্র করে অনেকে। পূর্বে বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে বাসস্ট্যান্ড সরানোর দাবী উঠলে আওয়ামী লীগ নেতাদের দাপটে তা সম্ভব হয় নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনসূত্রে জানা যায়, এখানে বাসস্ট্যান্ডের কোনো অনুমতি নেই। সাবেক এক ভিসি তার দায়িত্বকালীন প্রশাসনের সহায়তায় এটি ধোলাইখালে স্থানান্তর করেছিলেন। কিন্তু কিছু প্রভাবশালী নেতার চাঁদাবাজি ও কিছু অসাধু পুলিশ চাঁদাবাজি করার জন্যই এখানে বাসস্ট্যান্ড স্থাপন করেছে। শিক্ষার পরিবেশ ও আইনের তোয়াক্কা না করে অবৈধ বাসস্ট্যান্ডটি স্থাপন করেছিল মহানগর যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্থানীয়, জবি ছাত্রলীগের নেতারা। এগুলো থেকে প্রতিদিন ও মাসে মাসে চাঁদা-মাসোয়ারা নিত তারা। এই এরিয়া থেকে সকল প্রকার বাসস্ট্যান্ড অন্যত্র সরানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন, শিক্ষক সমিতি পূর্বে থেকেই চেষ্টা করে আসছে। বারবার রাষ্ট্রীয় প্রশাসন ও সিটি কর্পোরেশনের সাথে যোগাযোগ করা হলেও এ বিষয়টির কোনো নিষ্পত্তি হয় নি। রায়সাহেব বাজার মোড় থেকে সদরঘাট পর্যন্ত ও বাহাদুর শাহ পার্ক থেকে সোহরাওয়ার্দী কলেজ পযন্ত এই এরিয়ার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, মহানগর মহিলা কলেজ, সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজ, সেন্স গেটরি স্কুল এন্ড কলেজ, মুসলিম গভ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, জুবলি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বাংলা বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কলেজিয়েট স্কুলসহ মোট ১৯ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সাভার পরিবহন, বিহঙ্গ পরিবহন, আজমেরি পরিবহন, তানজিল পরিবহন ঢাকার বিভিন্ন রাস্তার লোকাল বাসগুলোর স্ট্যান্ড হলো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় মেইনগেট, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩নং গেইট ও বাহাদুর শাহ পার্কের চারপাশের ফুটপাত এবং রাস্তা। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নং গেইটে রয়েছে বাহাদুর শাহ পরিবহনের বাস, তার একটু সামনেই আরেকটি লেগুনা স্ট্যান্ড। সব মিলিয়ে হাজার খানেক গাড়ি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথগুলো বন্ধ করে রাখে। মাঝে মাঝে এসব বাসের ড্রাইভার,হেল্পারের নানা রকম কুরুচিপূর্ণ আচরণে ইতস্তত বোধ ও হেনস্তার স্বীকার হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের সাথে দূর ব্যবহারের ফলে দফায় দফায় হামলা ও গাড়ি ভাংচুর সহ নানা রকম অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে থাকে। গত ১৭ মার্চ রাতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে হেনস্তার ঘটনায় ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহনের ১০ বাস আটকে রাখে শিক্ষার্থীরা। জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের এক ছাত্রী গুলিস্তান থেকে বাসে ওঠার সময় তাকে হেনস্তা করেন ওই বাসের হেলপার। বাসের অন্যান্য যাত্রীদেরকে বিষয়টি জানালেও কেউ কর্ণপাত করেননি। ওই ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে তার বন্ধুদেরকে জানালে তারা ভিক্টর ক্লাসিকের বাসগুলো আটকে রাখেন। তবে হেনস্তাকারী হেলপার ও বাসটিকে পাওয়া যায়নি। এর আগে গত অক্টোবরে ভিক্টর ক্লাসিক বাসে হেনস্তার শিকার হন জবির আরেক ছাত্রী। এ ঘটনায় ১১ বাস আটকে দেন শিক্ষার্থীরা। পরে তাদের বাস মালিকদের এনে নানারকম মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। গত ২২ মার্চ সদরঘাট বাস টার্মিনালে আজমেরী গ্লোরী পরিবহণ নিয়ন্ত্রণ ও চাঁদা তোলাকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের মধ্যে কোন্দলসহ মারামারির ঘটনা ঘটে। ভিক্টোরিয়া পার্ক এলাকায় আজমেরী বাস থেকে চাঁদা তেলাকে কেন্দ্র করে এ ঘটে। আজমেরী গ্লোরী কোম্পানির পরিচালক রবিউল ইসলাম পরাগ বলেন, আজমেরী ট্রান্সপোর্ট লিমিটেড ও গ্লোরী এক্সক্লুসিভ লিমিটেড যৌথভাবে আমাদের আজমেরী গ্লোরী কোম্পানি। আমরা সরকারিভাবে নিবন্ধিত। কিন্তু আজমেরী বাস মালিক সমিতি নামে অবৈধ একটি সমিতি খুলে আমাদের ব্যবসা দখল করতে চায়। মালিকানাধীন কোম্পানির সমিতি হয় কিভাবে। অথচ তারা বৈধ কোনো কাগজ দেখাতে পারেনি। আমাদের মালিকানাধীন কোম্পানি তারা সমিতি খুলে দখল নিতে চায়। বাস থেকে চাঁদা তোলা নিয়ে প্রশ্ন করলে কর্তৃপক্ষ বলেন, আজমেরী গ্লোরী রোডে চালানোর জন্য কোম্পানির অনেক স্টাফ আছে। তাদের বেতন দিতে হয়। এজন্য সব বাসের মালিক বসে রেজুলেশন করে প্রতিদিন আজমেরী বাস প্রতি ৩০০ টাকা চাঁদা নির্ধারণ করা হয়েছে। যে কারও বাস চলতেও চাঁদা দিতে হয়। আজমেরী বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম জিলানী টিপু বলেন, অনেক আগে থেকেই আমাদের এই বাস মালিক সমিতি। আওয়ামী লীগের সময় আমাদের মারধর করে বের করে দেয়া হয়। আমাদের বাস চলেনি। আওয়ামী লীগ পতনের পর আমরা বাস মালিক সমিতি পূর্ণগঠন করেছি। আমাদের বৈধ কাগজপত্র আছে। ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি বরাবর আমাদের কমিটির খড়সা প্রদান করা হয়েছে। অবৈধ বাসস্ট্যান্ডের কারণে, দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রাখা হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ নং গেট। বিকেল চারটা পর্যন্ত গেট খোলা রাখা থাকলেও তারপর ভিড়তে থাকে এসব বাস। গেটের সামনের পুরো জায়গাটাই অবৈধভাবে দখল করে সারি সারি বাস রাখা থাকে। এতেও ভোগান্তি বেড়েছে শিক্ষার্থীদের। অবৈধ এই বাসস্ট্যান্ড উচ্ছেদ করে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের ব্যাপারে অনেকবার দাবি তুলা হলেও উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণে গা ছাড়া ভাব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে তুলা দাবির জবাবে অবৈধ আওয়ামী দখলবাজদের পক্ষে সাফাইয়ের সুরে কথাও বলেন পূর্বের প্রশাসন। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যেও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। শিক্ষার্থীদের কথা না ভেবে সদরঘাটের যাত্রীদের কথা ও নিজেদের স্বার্থসিদ্ধীর কথা বিবেচনা করতেন তারা। বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীরা দূর্ঘটনার শিকার হলেও তা নিয়ে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই প্রশাসনের। গত ৮ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক মানববন্ধনে বাসস্ট্যান্ড সরানোর আল্টিমেটাম দেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। এতে শিক্ষকরা বলেন, আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে রায়সাহেব বাজার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে থাকা সব বাস ও লেগুনাস্ট্যান্ড অপসারণ করতে হবে। তবে স্থানীয় পঞ্চায়েত নেতা, ব্যবসায়ী ও বাস মালিক সমিতির নেতারা বলেন ভিন্ন কথা। তারা বলেন, পুরান ঢাকার বংশাল ,কোতোয়ালি, সূত্রাপুর থানার এরিয়াটুকু সবচেয়ে বেশি ঘনবসতিপূর্ণ। এখানে রাস্তায় একটা রিকশা দাড় করিয়ে রাখার সুযোগ নেই। কোট কাচারি সরানো গেলে ঘনবসতি একটু কমতো। কোট কাচারি স্থানীয়দের খুব বেশি দরকার পড়ে না। এখানে আমাদের ব্যবসা বাণিজ্য, দোকান পাট রয়েছে এগুলো স্থানীয়দের যেমন দরকার পাশাপাশি এটি আমাদের বাপ দাদার ঐতিহ্যও। বাসস্ট্যান্ডগুলো সরিয়ে দূরে নিয়ে গেলে আমাদের অনেক ভোগান্তি হবে। দেখা যাবে আমাদের দোকান পাট ব্যবসা আর চলছে না। কারণ যোগাযোগ ব্যবস্থা সুবিধা না পেলে ক্রেতারা দূর থেকে আসতে চাইবে না। পাশাপাশি সদরঘাট দিয়ে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের চলাচল, বাড়ি থেকে আসার পথে অনেকের নানা রকম জিনিসপত্র থাকে। গভীর রাতে লঞ্চ ভিড়লে নারীদের জন্য নিরাপত্তার ঝুকির একটা প্রশ্ন থাকে। বাসস্ট্যান্ড যদি দূরে যায় তখন ছিনতাই, চুরি, ডাকাতির মতো অপরাধ বাড়বে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. রেজাউল করিম বলেন, আমরা এখান থেকে বাস স্ট্যান্ড সরানোর জন্য দফায় দফায় মিটিং করছি। মিটিংয়ে ছাত্রপ্রতিনিধি, বাস মালিক সমিতি, পুলিশ-প্রশাসন সবাই উপস্থিত ছিল। ঢাকা জেলা প্রশাসন মাঠ পর্যায়ে কাজ করে আমাদের জানাবে বলেছে।##
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও






আরও পড়ুন

আসামিদের গ্রেপ্তারে অনুমতি আদেশ চ্যালেঞ্জ, হাইকোর্টে রিট

লাঞ্চের পর বৃষ্টির বাগড়া

ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বর্বরোচিত হামলার প্রতিবাদ জানালো ফুলকুঁড়ি আসর তারার মেলা

শেরপুরে আড়াই শ’ বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যে সমৃদ্ধ- “মাইসাহেবা মসজিদ”

নারী চিকিৎসক দিয়ে নারীর মরদেহের ময়নাতদন্ত কেন নয়: হাইকোর্ট

লক্ষ্মীপুরে দুর্বৃত্তের দেওয়া আগুনে পুড়ে মরলো ৩ গরু

মাগুরায় মা সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা

শিক্ষার্থী ফাইয়াজের মামলার তদন্ত দ্রুত শেষ করার আহ্বান আইন উপদেষ্টার

মার্কিন শুল্কে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এক হাজার পোশাক কারখানা, মালিকদের শঙ্কা

ঢাকায় তৎপর ‘র’! জুলকারনাইন এর চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস!

ভবেশের মৃত্যুতে ভারতের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান বাংলাদেশের

শার্শায় দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরার পথে ব্যবসায়ীর টাকা ছিনতাই, আটক ২

সার্বজনীন না করে সেকুলার নারীদের দিয়ে কমিশন গঠন করায় একটা ক্যাচাল তৈরি হয়েছে : রাশেদ খান

আশুলিয়ার শীর্ষ সন্ত্রাসী জিয়া দেওয়ান পিস্তলসহ গ্রেফতার

ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে ফের বৈঠকে বিএনপি

বিতর্কিত ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে ভারতে মুসলিমদের ব্যাপক বিক্ষোভ

আশুলিয়ায় নারী পোশাক শ্রমিককে হত্যার পর ঘরে আগুন, স্বামী পলাতক

রাজধানীতে যুবদল নেতাকে গুলি, অবস্থা আশঙ্কাজনক

আজ সন্ধ্যায় স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন পেশ

লালপুরে ফসলের মাঠ থেকে কবিরাজের মরদেহ উদ্ধার