‘চৈত্র সংক্রান্তি আমাদের আসল সংস্কৃতি’ প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টার বক্তব্য নিয়ে সমালোচনা
১৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:২৯ পিএম | আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:২৯ পিএম

বাংলা নববর্ষের ঐতিহ্যবাহী প্রধান অনুষঙ্গ হালখাতা। গ্রামে গঞ্জে ব্যবসায়ীরা এই দিন হালখাতা অনুষ্ঠান করে থাকেন। হালখাতা অনুষ্ঠান উপলক্ষে ব্যবসায়ীরা তাদের বাধা কাস্টমার যারা বাকি নিয়ে থাকেন তাদের সর্বশেষ বাকির পরিমাণ জানিয়ে একটি চিঠি দেন ক্রেতাকে এবং তার দোকানে দাওয়াত দেন। ক্রেতা এই চিঠি পাওয়ার পর হালখাতার দিনে অর্থাৎ পহেলা বৈশাখে দোকানে গিয়ে তার সমুদয় বাকি বা সমুদয় বাকি একটি উল্লেখযোগ্য অংশ পরিশোধ করেন। দোকানদারও খুশি হয়ে ক্রেতাকে মিষ্টি মুখ করান এবং এ সময় তিনি একটি নতুন খাতায় সর্বশেষ লেনদেনের বিবরণ উল্লেখ করে ক্রেতার নাম লিপিবদ্ধ করেন। এটাই হালখাতা।
তবে এই ঢাকা শহরেই বৈশাখের হালখাতা হয় দুই দিনে। ইসলামপুর আর শাঁখারী বাজার হাঁটা পথে ১০ মিনিটের দুরত্ব। একই বাঙালী পরিচয়ে গর্বিত হওয়া সত্ত্বেও পহেলা বৈশাখ পালনের ব্যবধান চব্বিশ ঘন্টার। সহস্র বছর একই আবেগ ও ইতিহাসে পাশাপাশি বাস ও ভাগাভাগি করেও এই চব্বিশ ঘন্টার ব্যবধান কখনো মুছে যায়নি। ১৯৪৬ সালে যেমন আমরা পশ্চিমবঙ্গের বাঙালীদের সাথে থাকতে চাইনি কিম্বা পশ্চিমবঙ্গের বাঙালীরা আমাদের সাথে থাকতে চায়নি; বরং ভোট দিয়ে আমরা উভয়েই বেছে নিয়েছি শত শত মাইল দুরের পিন্ডি ও দিল্লীকে।
আজও তেমনি তাঁতি বাজার, শাখারী বাজার ইসলামপুরের সাথে পহেলা বৈশাখ বা হালখাতা পালন না করে একদিন পর শত শত মাইল দুরের বাগবাজারের সাথে উদযাপন করে। এর মূল কারণ দুইটি পঞ্জিকা। মোহাম্মাদী পঞ্জিকা ও লোকনাথ পঞ্জিকা। আক্ষরিক অর্থে এ শুধু দুই পঞ্জিকার দ্বন্দ্ব নয়। এর পেছনে রয়েছে হাজার বছরের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ধর্ম বিশ্বাসের দ্বন্দ্ব। তসবিহ আর জপমালার মতোই তা আলাদা রয়ে গেছে হাজার বছর ধরে। বাঙালীত্বের রাখী বেঁধে তাকে এক করার চেষ্টা আজকের মতোই চলছে বহুকাল ধরে। কিন্তু তসবিহ কখনো জপমালা হয়নি, জপমালাও তসবিহ নয়। মোহাম্মদ ও লোকনাথের এই সাতন্ত্র সহস্র বছর ধরেই একই নদীর দুই স্রোতধারার মতো বয়ে চলেছে বাঙালী শোনিতে।
চৈত্র সংক্রান্তির মূল অনুষ্ঠান চড়ক পূজা। এতে শিব ও কালিকা দেবী পূজিত হয়ে থাকে। কাপালিক সম্প্রদায় এই অনুষ্ঠানে পূর্বে নরবলি দিতেন। এখন আর কোথাও নরবলি দেয়া হয় না, পরিবর্তে পশু বলি দেয়া হয়। হিন্দু সম্প্রদায়ের তরুণরা এ উৎসব উপলক্ষে শিব ও পার্বতী ও তাদের অনুচর সেজে বাড়িতে বাড়িতে নেচে মাগন আদায় করে থাকে। ঢেঁকির মতো সাইজের একটি বড় কাঠের টুকরোকে চড়কের কাঠ হিসেবে পূজো করা হয়। পিঠে বড়শি বিঁধে সন্ন্যাসীদের চরকের উপরে ঘোরানো হয়। উপলক্ষে গ্রাম বাংলায় মেলা বসে। এসবই হচ্ছে চৈত্র সংক্রান্তির মূল অনুষঙ্গ। হাজার বছর ধরে এটি বাঙালি হিন্দুদের একটি অন্যতম প্রধান উৎসব হিসেবে উদযাপিত হচ্ছে। এতে কোথাও কোন প্রশ্ন ওঠেনি। কিন্তু আজকে যখন বাঙালিদের বরণ ডালায় এই উৎসবকে বৃহত্তর বাঙালির মাঝে বিশেষ করে বাঙালি মুসলিম সমাজের মধ্যে পরিবেশন করা হচ্ছে তখনই প্রশ্নটা উঠেছে।
একজন হিন্দুর বাড়িতে ড্রয়িং রুমে বেডরুমে রিডিং রুমে সরস্বতী বা অন্য যেকোন দেবদেবীর মূর্তি থাকতেই পারে। কিন্তু একজন মুসলিম বা যিনি নিজেকে মুসলিম হিসেবে দাবি করেন তিনি তার ড্রয়িং রুমে কখনোই সরস্বতীর মূর্তি রাখতে পারেন না। কিংবা সরস্বতীর মূর্তির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে পারেন না। পার্সোনাল চয়েজ বলেও তিনি রাখতে পারেন না কেননা এতে সমাজে বিশৃঙ্খলা ও বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। তিনি যদি নিজেকে হিন্দু বা নাস্তিক বলে ঘোষণা করে সরস্বতীর মূর্তি রাখেন তাহলে কারো আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু মুসলিম পরিচয়ে তিনি রাখতে পারেন না। প্রাণী সম্পদ উপদেষ্টার স্বামী যেভাবে তার ড্রয়িং রুমে সরস্বতীর মূর্তি রেখেছেন বা সরস্বতীর মূর্তির প্রতি তিনি যেভাবে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেছেন বলে ছবি প্রকাশিত হয়েছে সেটিকে বাঙালি সংস্কৃতি বলে চালিয়ে দেয়ার কোন সুযোগ নেই। সরস্বতী হিন্দু বাঙালির দেবী মুসলিম বাঙালির কেউ নয়। কাজেই সার্বজনীন বাঙ্গালীত্বের বরণডালায় তাকে পরিবেশন করার কোন সুযোগ নেই। যেমন, চৈত্র সংক্রান্তি।
যাদের ড্রয়িংরুমে সরস্বতীর মূর্তি স্থান পেতে পারে তাদের কাছে চৈত্র সংক্রান্তি বাঙালির উৎসব বলে বিবেচিত হতেই পারে। তাই বলে তিনি সেটা বাঙালিত্বের বরণডালায় বাঙালি মুসলিম সমাজের মাঝে পরিবেশন করবেন সেটি গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। কাজেই তিনি ও সংস্কৃতি উপদেষ্টা মিলে যে প্রচেষ্টাটি এবছর নিলেন তা বাঙালি মুসলিম সমাজে দূষক হিসেবে বিবেচিত হবে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও






আরও পড়ুন

গাজায় ফের ইসরায়েলি হামলা, ২৪ ঘণ্টায় নিহত ৪০

গফরগাঁওয়ে এক সপ্তাহে প্রতিকেজি ৩৫টাকার স্থলে ৬০ দরে বিক্রি হচ্ছে পেয়াজ

ক্যান্সারের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আমেনা বেগমের আত্মহত্যা

স্থায়ী যুদ্ধবিরতির শর্তে সব জিম্মি মুক্তির প্রস্তাব দিল হামাস

ওয়াটসনে ফেডারেল লিবারেল পার্টির প্রার্থী জাকির আলমের নির্বাচনী প্রচারণা শুরু

বাংলাদেশ-পাকিস্তান বৈঠক, ভারত বলল নজরে রয়েছে

অর্ধেক মূল্যে দেখা যাবে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে ম্যাচ

বিশ্বকাপের টিকেট পেল পাকিস্তান

৯ গোলের রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে জিতে শেষ চারে ম্যান ইউ

সমাবর্তন, আবাসন, জকসু নির্বাচনে গড়িমসি জবি প্রশাসনের

২৩ এপ্রিল ভারতীয় দূতাবাস অভিমুখে গণমিছিল

ভারতের সঙ্গে ট্রানজিট ও অসমচুক্তি বাতিলে নোটিশ

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্তে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে :জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম

ইমারত নির্মাণ বিধিমালা না মানলে কঠোর ব্যবস্থা :রাজউক চেয়ারম্যান

২৭ এপ্রিল ঢাকায় আসছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী

৫ বছর ক্ষমতায় থাকলেও সব সংস্কার সমাধান হবে না : জয়নুল আবদীন ফারুক

জালিয়াতিপূর্ণ ঘোষিত ফলাফল বাতিল দাবিতে মামলা

ঝটিকা মিছিলে নেতৃত্ব দেয়াসহ ৬ মামলা আ.লীগ নেতা শাহে আলম মুরাদ গ্রেফতার

জান্তাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী

সিদ্ধিরগঞ্জে স্ত্রী হত্যায় স্বামীর যাবজ্জীবন