মৌলিক প্রস্তাবে এক জায়গায় আসার চেষ্টা করবে বিএনপি
১৮ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ১২:০৬ এএম

সংবিধান সংশোধন-সংক্রান্ত মৌলিক প্রস্তাবের বিষয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এক জায়গায় বিএনপি ঐকমত্যে আসার চেষ্টা করবে বলে জানিয়েছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ। বিএনপি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দফাওয়ারি আলোচনা করছে জানিয়ে তিনি বলেন, স্প্রেডশিটে সংক্ষিপ্ত হ্যাঁ/না জবাব দেওয়ার জন্য যে কাগজগুলো দিলো তাতে করে অনেকটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। আমরা বোঝাতে চাই বিএনপি সংস্কারের বিষয়ে কতটা সিরিয়াস।
গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের এলডি হলে বিএনপির সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার পর বৈঠক থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে এসব কথা বলেন সালাহ উদ্দিন আহমদ।
সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, স্প্রেডশিট দিয়ে আমাদের তারা বিভ্রান্ত করেছেন। এটা দেওয়া উচিত হয়নি। বিএনপি সংবিধান, বিচার বিভাগ, প্রশাসন, নির্বাচন নিয়ে বিস্তারিত মতামত জমা দিয়েছে। আজ (গতকাল) হার্ড কপি জমা দিয়েছি। এগুলোর ওপরে বিস্তারিত আলোচনা চলছে। সংবিধান সংস্কার দিয়ে শুরু করেছি। তারপর বিচার বিভাগ, নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হবে। তারপর আলোচনা চলমান রাখতে চাই, আজ (গতকাল) শেষ না হলে পরেও আলোচনা হবে। আমরা বুঝাতে চাই, বিএনপি সংস্কারের বিষয়ে কতটা সিরিয়াস।
সংবিধান সংস্কার কমিশনের বিস্তারিত প্রতিবেদনে ১৩১টি প্রস্তাব থাকলেও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের স্প্রেডশিটে ৭০টি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, আমাদের দফাওয়ারি আলোচনা চলছে। সংবিধানের প্রস্তাবনা হতে শুরু করে প্রজাতন্ত্র, রাষ্ট্রের মূলনীতিসহ সব বিষয়ে দফায় দফায় আলোচনা করবো। বিস্তারিত অগ্রগতি পরে জানতে পারবেন। সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত মৌলিক প্রস্তাবের বিষয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যে এক জায়গায় আসার চেষ্টা করবো। বিএনপি সংবিধান সংস্কার কমিশনের ২৫টিতে একমত, ২৫টির মতো বিষয়ে আংশিকভাবে একমত। বাকি বিষয়গুলোতে একমত হতে পারিনি। তিনি বলেন, আমরা যেসব বিষয়ে বিস্তারিত মতামত দিয়েছি, সে বিষয়ে কমিশনকে যৌক্তিকভাবে বোঝাবো এবং তাদের প্রস্তাবের বিষয়েও আমরা যৌক্তিকভাবে জানতে চাচ্ছি। যেটা যৌক্তিক, সেটা জাতির কল্যাণের দিকে লক্ষ্য রেখে আমরা অবশ্যই বিবেচনা করবো।
বিচারবিভাগের মতামত নিয়ে প্রতিবেদনে মিস লিড করা হয়েছে দাবি করে সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, বিস্তারিত প্রতিবেদনের ১৫০টি মতামতের মধ্যে ৮৯টির বিষয়ে মতামত দিয়েছি। বাকিগুলোর অধিকাংশক্ষেত্রে একমত হওয়া বা মন্তব্যসহ একমত হওয়ার কথা জানিয়েছি।
হ্যাঁ/ না তে মতামত চাওয়া বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদনে বিস্তর ফারাক আছে জানিয়ে তিনি দাবি করেন, সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদের সংশোধনী ব্যতিরেকে বিচারক নিয়োগের অধ্যাদেশ জারি করা ততক্ষণ পর্যন্ত অসাংবিধানিক হবে যতক্ষণ পর্যন্ত তা সংবিধানে গৃহীত হচ্ছে। ১১৬ অনুচ্ছেদ সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করা সংবিধানসম্মত হবে তা নিয়ে প্রশ্ন রইবে। বিচার বিভাগ কর্তৃক সংবিধান লঙ্ঘন সমুচিত হবে না।
বিএনপি বিচার বিভাগের স্বাধীনতা চায় জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, প্রক্রিয়া যাতে আইনানুগ ও সাংবিধানিক পদ্ধতিতে হয়, সে জন্য বিস্তারিত মতামত দেবো। লিখিতও দিয়েছি।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের অধিকাংশ সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত দাবি করে সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, কিছু কিছু বিষয়ে তারা এমন প্রস্তাব দিয়েছে, যা বাস্তবায়ন করলে নির্বাচন কমিশনের স্বাধীন সত্তা বজায় থাকবে না। বিএনপির সঙ্গে কমিশনের আলোচনা দ্বিতীয় পর্যায়ের জানিয়ে তিনি বলেন, প্রয়োজনে আরও আলোচনা হবে। কারণ আমরা ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আগাচ্ছি।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় সংলাপে আরও উপস্থিত ছিলেন- কমিশনের সদস্য জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি প্রফেসর আলী রীয়াজ, সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, ড. বদিউল আলম মজুমদার, ড. ইফতেখারুজ্জামান। বিএনপির প্রতিনিধি আরও ছিলেন- দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাঈল জবিউল্লাহ, রুহুল কুদ্দুস কাজল, মনিরুজ্জামান খান।
বৈঠকের বিষয়ে প্রফেসর আলী রিয়াজ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে বিএনপির বিশাল ভ‚মিকা রয়েছে। রাষ্ট্র সংস্কারের ক্ষেত্রে এই সমস্ত দল দাবি উত্থাপন করেছে, কর্মসূচি দিয়েছে। ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পাশাপাশি সংস্কারের তাগিদ দিয়েছে বিএনপি। সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে দেয়া সুপারিশগুলো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সামনে অগ্রসর হতে চাই।
তিনি বলেন, সুপারিশগুলো আমরা রাজনৈতিক দলগুলোকে দিয়েছিলাম। তারই পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি আন্তরিকভাবে ও সুচিন্তিতভাবে তাদের মতামত জানিয়েছে। সংবিধান সংস্কার কমিশনের দায়িত্ব পালনকালে বিএনপির সহযোগিতা পেয়েছি তার জন্য আন্তরিকভাবে তাদের ধন্যবাদ জানাই।
তিনি আরো বলেন, আলোচনার মধ্যদিয়ে আমাদের লক্ষ্য হলো-একটি জাতীয় সনদ তৈরি করা। যাতে আমরা বাংলাদেশে একটি স্থায়ী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে পারি। বারবার আমরা দেখেছি গণতন্ত্র হোঁচট খেয়েছে। শুধু তাই নয়, একটি ব্যক্তিতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এ দেশে। সেগুলো যাতে ভবিষ্যতে না ঘটে যার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে রাজনৈতিক গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো দীর্ঘদিন সংগ্রাম করেছে। বিএনপি তার অগ্রগণ্য ভ‚মিকা পালন করেছে। সেই জায়গায় সেই প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ার জন্যই এই প্রচেষ্টা।
দিকে বৈঠকের শুরুতে সূচনা বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, সংস্কার একটা চলমান অনিবার্য প্রক্রিয়া, হতেই হবে। আমি যখন একা আমার ঘরে থাকি তখন ঘরের যে সেটআপ, যখন বিয়ে করি সেটা বদলে যাবেই। আমাদের যখন সন্তান হবে তখন সেটা আবার বদলে যাবে। আরেকটা সন্তান হলে আরো বদলে যাবেৃ তাদের বয়স যখন বাড়বে তখন আবার বদলে যাবে। সময়ের সাথে সাথে অনেক কিছু বদলায়, বদলাবেই, অনিবার্য চলমান প্রক্রিয়া বলছি এটাকে। তবে আমরা সবাই চাই, ভালো চাই। আরও ভালো চাই, আরও ভালো চাই। কিন্তু খুব ভালো করার জন্য যেন আমরা এতো সময় না নেই যাতে মানুষের পরিবর্তনের যে আকাক্সক্ষা সেটা স্তিমিত হয়ে যায়। নিশ্চয় আমরা ভালো করতে চাই এবং এই ভালো করার প্রয়াস অব্যাহত থাকবে, সব সময় থাকবে।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, আমরা কালকেও (বুধবার) প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি, বিএনপির চাইতে বেশি সংস্কার বাংলাদেশে কোন রাজনৈতিক দল করেছে? রাজনৈতিকভাবে বলেন, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা তো বিএনপি করেছেন। বহু দলীয় গণতন্ত্র তো বিএনপি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে, সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা তো বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছেন। তত্ত¡াবধায়ক শাসন ব্যবস্থা তো বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছে, প্রশাসনের বিকেন্দ্রীকারণ তো অনেক ক্ষেত্রে করেছে। এমনকি বিএনপি তো গ্রাম সরকার প্রবর্তন করেছে। তাতে আর কত দূর পর্যন্ত আমরা প্রশস্ত করতে চাই। আপনি মুক্ত বাজার অর্থনীতি বিএনপি চালু করেছে, দুর্নীতি দমন কমিশন বিএনপি গঠন করেছে। আজকে অর্খনীতির সরকারের রাজস্ব আয়ের অন্যতম খাত হলো ভ্যাটৃ বিএনপি করেছে। আজকে অর্থনীতির মূল স্তম্ভ পোষাক খাত বিএনপির হাতে হয়েছে, কৃষি উন্নয়ন, প্রবাসী কর্মসংস্থান, পল্লী বিদ্যুতায়ন থেকে শুরু করে সমবায় উন্নয়ন, কুটির শিল্পৃ বিএনপি সংস্কারের বিপক্ষে না, বিএনপি সংস্কারের দল।
তিনি বলেন, তারপরও কেউ কেউ নানা কথা বলেন, তারা যখন সংস্কারের ‘স’ উচ্চারণ করেনি, তখন তো দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ভিশন ২০৩০ দিয়েছেন। কেউ যখন সংস্কারের কথা ভাবেনি তখন শহীদ জিয়াউর রহমান ১৯ দফা কর্মসূচি দিয়েছেন। আমরা সব রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা করে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি এবং আমরা এটা বলেছি, এর চেয়ে ভালো প্রস্তাব থাকলে সেটা সাদরে গ্রহন করব। কাজেই যদি ঐকমত্য কমিশনের সনদ নাও হয় বিএনপির জন্য সনদ আছে একটা, সংস্কারের সনদ। কাজেই আমরা সংস্কারের পক্ষে।
নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা একটা জিনিস বলব, সব কিছুর উপরে জনগণ। জনগণ কার মাধ্যমে সম্মতি জানায় আমরা জানি। আমরা বিশ্বাস করি, এমন যোগ্য মানুষরা এই কমিশনের দায়িত্ব পেয়েছেন, তাদের নেতৃত্বে এই কমিশন কাজ করেছে। তাদের সহযোগিতায় আমরা আাগামী দিনে আমাদের দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব।###
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

‘ফ্যাসিস্ট আমলে গ্রেফতারকৃত আলেমদের ঈদের আগেই মুক্তি দিতে হবে’

ভারত হাজার হাজার ‘বাংলাদেশিকে’ ফেরত পাঠাতে চায়

ঝিনাইদহে গ্রাম আদালত বিষয়ক প্রশিক্ষণ ”অল্প সময়ে স্বল্প খরচে সঠিক বিচার পেতে চলো যায় গ্রাম আদালতে”

শাহরাস্তিতে বিএনপি নেতার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আওয়ামীলীগ নেতার হামলা ও ভাংচুর

প্যারাবন কেটে ঘের নির্মাণের পায়তারা আওয়ামী ভূমিদস্যু চক্রের

ইরানের মধু রপ্তানি বেড়েছে ২০ শতাংশ

বিভাজন মিটিয়ে ফের এক হওয়ার আহ্বানে যা বললেন জুলাই যোদ্ধারা

সৈয়দপুরে সড়ক থেকে অতিরিক্ত স্পিড ব্রেকার অপসারণের দাবিতে গণস্বাক্ষর ও মানববন্ধন

জুলাই-আগস্টের আন্দোলন তারেক রহমানের নির্দেশেই পরিচালিত হয়েছে - শফিউদ্দিন আহম্মেদ সেন্টু

সীমান্ত অনুপ্রবেশের সময় বিজিবি'র হাতে আটক ২ জন

ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান মির্জাপুরে সড়কে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ৩ ব্যবসায়ীর জরিমানা

ঈশ্বরদীর পদ্মা নদীতে বালুমহালের আধিপত্যের দ্বন্দ্বে দুই গ্রুপের বন্দুকযুদ্ধে ৭ জন গুলিবিদ্ধ

কাশ্মীরে স্বাধীনতাকামী সঙ্গে সংঘর্ষে ভারতীয় সেনা নিহত

কুষ্টিয়ায় দুধ দিচ্ছে পাঠা

মনোহরগঞ্জ উপজেলার নবাগত নির্বাহী অফিসারের মতবিনিময় সভা

সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার আহ্বান আমীরে জামায়াতের

কৃষক দল নেতাকে গুলি করে হত্যা

যশোরে অভয়নগরে কৃষকদল সভাপতিকে গুলি করে হত্যা

যুক্তরাষ্ট্রে সান দিয়েগোর একটি আবাসিক এলাকায় বাড়িঘরের ওপর বিমান বিধ্বস্ত!

দেশের রিজার্ভ আরও বাড়ল