বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুল মালেক আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন,আল্লাহপাক ঈমানদারদের হেদায়েত ও বরকতের জন্য সর্বপ্রথম পবিত্র বায়তুল্লাহ শরিফ নির্মাণ করেছেন।

এই পবিত্র ঘরকে অস্বীকার করলে ঈমানই থাকবে না। হজ যাদের ওপর ফরজ করা হয়েছে তাদের দ্রুত হজ পালন করতে হবে। বাহানা তৈরি করে হজে যাওয়াকে বিলম্ব করা যাবে না। যাদের সামর্থ্য আছে তাদের দ্রুত হজ পালন করতে হবে। নেক কাজে বিলম্ব করা যাবে না। আল্লাহ হজকে জীবনে একবার ফরজ করেছেন। হজ পালনের ক্ষেত্রে বানানো ওজর গ্রহণযোগ্য হবে না। ছেলে মেয়েদের বিয়ের অজুহাতে হজ আদায় থেকে বিরত থাকা যাবে না।

কেউ কেউ বলেন, আরেকটু বয়স হোক, এখন হজ করলে হজ ধরে রাখতে পারবো না। আবার কেউ কেউ বলেন, এখনো দাঁড়ি রাখি নাই, পরে হজ করবো। দাঁড়ি না রাখাটা গুনাহর কাজ। সকল নবী রাসুল ও সাহাবায়ে কেরাম দাঁড়ি রেখেছেন। আল্লাহর নেক বান্দাদের সুরত ধরতে হবে। হজের আগেই দাঁড়ি রাখতে হবে। রাসুল (সা.) বলেছেন, আমার রব বলেছেন দাঁড়ি লম্বা রাখতে এবং মোচ খাটো করতে।
খতিব বলেন, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, যার সামর্থ্য আছে অথচ হজ করলো না, সে ইহুদি হয়ে মারা যাক বা নাসারা হয়ে মারা যাক, আমার কিছু যায় আসে না।

খতিব বলেন, শরিয়তের কোনো বিধানকেই কঠিন করা হয়নি। হজ আদায়ের বিষয়টি একটি পরীক্ষা। আল্লাহ যাদের তাওফিক দিয়েছেন তারা হজ আদায় করবেন। আর যাদের তাওফিক নেই তারা হজের জন্য সবর করবেন।

টঙ্গী পূর্ব আরিচপুর সরকার বাড়ি ঈদগাহ মসজিদুল আকসার খতিব মাওলানা রিয়াদুল ইসলাম মল্লিক আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, নব্বই শতাংশ মুসলমানদের রাষ্ট্র পরিচালনায় নাস্তিক্যবাদের দোসর উপদেষ্টা ফারুকী অতিসম্প্রতি বলেছেন, নামাজ-রোজার মতই, পহেলা বৈশাখ আমাদের সংস্কৃতি। উপদেষ্টা ফারুকী শরিয়ত বিরোধী বক্তব্য দিয়ে মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ে চরম আঘাত হেনেছেন। কোনো মুসলমান কোরআনের সাথে সাংঘর্ষিক এ ধরনের বক্তব্য দিতে পারে না।

খতিব বলেন, নামাজ বা সালাত একটি ফরজ ইবাদত। ইসলামী পরিভাষায় শরিয়তের নিয়ম মোতাবেক রাসুল (সা.) দেখানো পদ্ধতিতে আল্লাহর গুণগান, তাসবিহ, রুকু-সিজদাসহ তাঁর ইবাদত করাকে নামাজ বলে।বান্দার জন্য তা অবশ্যপালনীয় (ফরজ)। শুদ্ধভাবে যারা সালাত আদায় করে, আল্লাহ তাদের জীবনের সব ক্ষেত্রে সুরক্ষা দেন।

আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন—“এবং তুমি নামাজ কায়েম কর দিনের দুই প্রান্তে ও রাতের কিছু অংশে। নিশ্চয় নেক আমলসমূহ মন্দ কর্মগুলোকে দূর করে দেয়। স্মরণকারীদের জন্য এটি একটি স্মারক।” (সূরা হুদ : ১১৪)আল্লাহতাআলা বলেন, “আপনি আপনার পরিবারের লোকদের নামাজের আদেশ দিন এবং নিজেও এর ওপর অবিচল থাকুন। আমি আপনার কাছে কোনো জীবনোপকরণ চাই না; আমিই আপনাকে জীবনোপকরণ দিই, আর আল্লাহভীরুতার পরিণাম শুভ।” (সূরা ত্বাহা : আয়াত ১৩২)“ওহীর মাধ্যমে তোমার প্রতি যে কিতাব অবতীর্ণ করা হয়েছে, তা তিলাওয়াত কর এবং নামাজ কায়েম কর। নিশ্চয় নামাজ অশ্লীল ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখে। আর আল্লাহর যিকরই সবচেয়ে বড়। তোমরা যা কর, আল্লাহ তা জানেন।” (সূরা আনকাবূত : ৪৫)

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “আল্লাহতাআলা বলেন, হে আদমসন্তান! তুমি নিজেকে আমার ইবাদতের জন্য মুক্ত করে দাও, আমি তোমার বক্ষকে ঐশ্বর্য ও অভাবহীনতা দ্বারা পূর্ণ করে দেব, তোমার দারিদ্র্য ও অভাব দূর করে দেব।”

সুবহে সাদিক বা ভোরের সূক্ষ্ম আলো থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার, পাপাচার, কামাচার, ইন্দ্রিয়তৃপ্তি এবং সেই সঙ্গে যাবতীয় ভোগ-বিলাস থেকেও বিরত থাকার নাম রোজা।ইসলামী বিধান অনুসারে, প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমান নারী ও পুরুষের জন্য রমজান মাসের প্রতিদিন রোজা রাখা ফরজ।মুসলিম উম্মাহর জন্য পবিত্র রমজান মাসজুড়ে রোজা ফরজ করেছেন আল্লাহ তাআলা।

রোজা শুধু ইসলামের অনুসারী উম্মতে মুহাম্মদীর ওপরই ফরজ হয়নি বরং পৃথিবীর শুরু থেকেই এ রোজার প্রচলন ছিল। অনেক নবী-রাসুলের ওপর তা ছিল ফরজ।আল্লাহ তাআলা বলেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর সিয়াম (রোজা) ফরজ করা হয়েছে; যেমনিভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল; যাতে তোমরা তাকওয়া (আত্মশুদ্ধি) অর্জন করতে পার।” (সূরা বাকারা : আয়াত ১৮৩)রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, “যে ব্যক্তি সিয়াম পালন করেও মিথ্যা কথা বলা, পরনিন্দা ও অন্যান্য পাপাচার থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারলো না; তার পানাহার পরিত্যাগ করা আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।” (বুখারি)

উপদেষ্টা ফারুকীর ধৃষ্টতা প্রদর্শন করে ইসলামের মৌলিক দুটি ফরজ ইবাদতের সঙ্গে পহেলা বৈশাখ উদযাপনকে একাকার করে ফেলেছেন।আমি একজন সচেতন খতিব হিসেবে তাঁর এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছি, প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।
আল্লাহ পথভ্রষ্টদের হেদায়েত দান করুন। আমিন।