চট্টগ্রাম বন্দরে সুবাতাস
২৩ মে ২০২৫, ১২:২৮ এএম | আপডেট: ২৩ মে ২০২৫, ১২:২৮ এএম

তবে বিদেশিদের ইজারার সিদ্ধান্ত বাতিলে গড়িমসি হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি শ্রমিকদের : সেনাপ্রধানের বক্তব্যে সন্তুষ্ট জনগণ : আমজনতার প্রতিক্রিয়া, ‘ভোটাধিকার বঞ্চিত মানুষ চাতক পাখির মতো তাকিয়ে নির্বাচনমুখী’
চাপা ক্ষোভ-অসন্তোষ, সন্দেহ-সংশয় ক্রমেই কাটতে শুরু করেছে দেশের প্রধান চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর-শিপিং অঙ্গনে। গতকাল বৃহস্পতিবার আপাত স্বস্তির সুবাতাস লক্ষ্য করা গেছে চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী-শ্রমিক এবং বন্দর ব্যবহারকারীদের (স্টেকহোল্ডার) মাঝে। সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বুধবার অফিসার্স অ্যাড্রেসে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর পরিচালনার বিষয়টি স্থানীয় জনসাধারণ, বন্দর ব্যবহারকারী, শ্রমিক-কর্মচারীদের মতামত নিয়ে আগামীতে ভোটে নির্বাচিত সরকারেরই এখতিয়ার। তাঁর সাফ সাফ কথাটি আন্দোলনরত বন্দর ডক শ্রমিক-কর্মচারী তথা দেশের জনগণের প্রত্যাশা ও দাবির প্রতিধ্বনি বলে বন্দর-সংশ্লিষ্টরা স্বাগত জানান। গতকাল সারাদিন বন্দর-শিপিং সার্কেলসহ ‘টক অব দ্য চিটাগাং’ ছিল বন্দর টার্মিনালগুলো বিদেশি কোম্পানিকে হস্তান্তর প্রশ্নে সেনাপ্রধানের সুস্পষ্ট এবং প্রত্যাশিত বক্তব্য।
চট্টগ্রাম ডক-বন্দরের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধিত্বকারী আন্দোলনরত শ্রমিক-কর্মচারী সংঠনসমূহের নেতাদের বক্তব্য জানতে চাইলে তারা জানান, সেনাপ্রধানের কথায় আমরা আশ^স্ত, আনন্দিত। তবে অন্তর্বর্তী সরকার সেনাপ্রধানের সেই পররামর্শের আলোকে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করে সেদিকে দিকে তাকিয়ে আছি। কেননা দুবাইভিত্তিক ‘ডিপি ওয়ার্ল্ড’সহ বিদেশি কোম্পানিগুলোর কাছে বন্দরের নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি), সিসিটি ইজারা দেয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে। সরকারকে অবিলম্বে সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়ে বিষয়টি পরিষ্কার করতে হবে। এ ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকার গড়িমসি করলে চলমান আন্দোলনের কঠোর থেকে কঠোরতর কর্মসূচি দেয়া হবে। সেনাপ্রধানের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বিকালে শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদের (স্কপ) বৈঠকে শ্রমিক নেতৃবৃন্দ উপরোক্ত দাবির বিষয়ে আলোচনা করেন।
এদিকে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী ‘সওদাগরী পাড়া’ খ্যাত খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী আবুল মনসুর মিয়া, কাজীর দেউড়ির দোকানি রবিউল ইসলাম, উত্তর চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির আবদুর রহমানের সঙ্গে সেনাপ্রধানের বক্তব্য প্রসঙ্গে গতকাল আলাপচারিতা হয়। তারা বললেনÑ ‘দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর যাবৎ ভোটাধিকার থেকে এদেশের জনগণকে বঞ্চিত রেখেছিল আওয়ামী জালিম স্বৈরাচারী হাসিনা। ‘ভোট’ কী জিনিস ভুলে গেছি! হাসিনার পতনের পর মানুষ চাতক পাখির মতোই তাকিয়ে আছে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, সুন্দর নির্বাচনের আশায়। সেনাপ্রধান যথাসময়েই সরকারকে সুপরামর্শ দিয়েছেন। দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর ওপর জনগণের আস্থা আছে। অন্তর্বর্তী সরকারের করণীয় কী এবং কী নয় তা বোঝা উচিৎ। সরকারকে দ্রæত নির্বাচনের তারিখ বা রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে। বিদেশিদের হাতে চট্টগ্রাম বন্দর তুলে দেয়া, বৃহত্তর চট্টগ্রাম সংলগ্ন মিয়ানমারের রাখাইনে করিডোর দেয়া এগুলো অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো কাজ নয়। তাছাড়া চাঁদাবাজি, ছিনতাই, খুন-খারাবি, রাস্তাঘাটে মব সন্ত্রাসের নামে বিশৃঙ্খলা বন্ধ করতে হবে। আমরা ব্যবসা-বাণিজ্য করতে হিমশিম খাচ্ছি। তার ওপর দেশের অশান্তি-অরাজকতায় মানুষ হতাশ। এগুলো যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কঠোর হাতে বন্ধ করতে হবে’।
সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের অফিসার্স অ্যাড্রেসে দেয়া বক্তব্য প্রসঙ্গে একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও লেখক প্রফেসর ড. মইনুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, সেনাপ্রধানের বক্তব্যে পরিষ্কার হয়ে গেছে ডিসেম্বরের মধ্যেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নিয়ে আর কোনো অনিশ্চয়তা থাকলো না। ডিসেম্বরের আগে বা মধ্যে নির্বাচন হলে কয়েক মাসে প্রস্তুতি নিতে হবে। সরকার ও জনগণের পাশে থেকে সহযোগিতায় সেনাবাহিনী সাংবিধানিক পথে হাঁটছে তাও বোঝা গেলো। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হলে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে সবাই এগুবে, যা ইতিবাচক।
ড. মইনুল বলেন, বিদেশিদের কাছে চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালনা, করিডোর দেয়ার বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর অবস্থান সুস্পষ্ট। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারকে সেটা উপলব্ধি করতে হবে। তাছাড়া ‘মব জাস্টিস’, অবরোধ, বøকেডের নামে রাস্তাঘাট, সড়কে ছাত্রদের লেলিয়ে দিয়ে বিশৃঙ্খলা-নৈরাজ্য, জনদুর্ভোগ বন্ধ করে জনজীবনে স্বস্তি ও নিরাপত্তায় সেনাপ্রধানের আশ^াস প্রশংসনীয়।
একই প্রসঙ্গে বিশিষ্ট আইনবিদ ‘সুজন’ চট্টগ্রামের সম্পাদক এডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, সেনাপ্রধানের যে কথাগুলো মিডিয়ায় এসেছে এতে জনআকাক্সক্ষার প্রতিফলন রয়েছে। এগুলো জাতির বিবেকের কথা। নির্বাচন অবশ্যই এ বছরের মধ্যে হওয়া প্রয়োজন। তাহলে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনমুখী হবে। দলের শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। নির্বাচিত সরকার যেখানে জাতির দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা, আমরা কেন বিগত কর্তৃত্ববাদী শাসনের দুঃখ বহন করেই যাবো? জনগণ চায় সুষ্ঠু নির্বাচন। যে নির্বাচনে সৎ, যোগ্য, জনকল্যাণে নিবেদিত প্রার্থীদের রাজনৈতিক দলগুলোকে মনোনয়ন দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, বন্দর-সম্পদ ও করিডোর বিদেশিদের দেয়ার সাথে সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন জড়িত। আগেও বন্দর নিয়ে অনেক টালবাহানা হয়েছে। বিদেশিদের হাতে বন্দর ছেড়ে দিয়ে বাইরের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করলে হাসিনা আর ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের মধ্যে পার্থক্য কী? বরং বন্দরের জনবলকে যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করাই অপরিহার্য।
এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ-চিকিৎসক প্রফেসর ডা. এস এম নোমান খালেদ চৌধুরী বলেন, সবার আগে দেশ। দেশ থাকলেই আমি, আপনি, আপনারা এবং চাওয়া-পাওয়ার হিসাব-নিকাশ। মতপার্থক্য থাকলেও দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, মঙ্গলের জন্য আপোষহীন থাকতে হবে। জাতীয় স্বার্থ সকলের এক ও অভিন্ন। আগামীতে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সিদ্ধান্তের জন্য ধৈর্য্য সহকারে অপেক্ষা করতে হবে। আমাদের অতীত অনেক ভুলের সংশোধন দরকার।
চট্টগ্রাম বন্দর এবং করিডোর বিদেশিদের দেয়ার কোনো সিদ্ধান্তের এখতিয়ার সরকারের নয়Ñ সেনাপ্রধানের সুস্পষ্ট এই বক্তব্য শ্রমিক-জনতার প্রশংসা পেয়েছে উল্লেখ করেন জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদল চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম বন্দর সংযুক্ত শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী শেখ নুরুল্লাহ বাহার। তিনি বলেন, সেনাপ্রধানের দায়িত্বশীলসুলভ বক্তব্যে বন্দরের সর্বস্তরের শ্রমিক-কর্মচারীরা উৎফুল্ল এবং কৃতজ্ঞ। তবে অন্তর্বর্তী সরকার চট্টগ্রাম বন্দরের সিসিটি-এনসিটি বিদেশি অপারেটরকে দেয়ার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করছে কিনা আমরা সেদিকে তাকিয়ে আছি। এ সিদ্ধান্ত বাতিলের সুস্পষ্ট ঘোষণা দেয়া না হলে শ্রমিক সংগঠনগুলো সরকারকে আলটিমেটাম ঘোষণাসহ আন্দোলন বেগবান করা হবে।
এ প্রসঙ্গে বন্দরের ডক জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল ও ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক তসলিম হোসেন সেলিম বলেন, সেনাপ্রধানের বক্তব্য আমাদের দাবির প্রতিধ্বনি। তিনি বন্দরের শ্রমিক-কর্মচারী তথা জনগণের নার্ভ ধরেই কথা বলেছেন। কেননা সেনাবাহিনীও এ দেশের নাগরিক। এবার সরকারের সিদ্ধান্ত কী হয় আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। সরকার যদি বন্দরকে বিদেশিদের হাতে তুলে দেয়ার উদ্যোগ বাতিল না করে জোরদার আন্দোলন চলবে। আপাতত গণসচেতনতা তৈরি, লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছি।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও






আরও পড়ুন

ছুটি শেষে গ্রাম থেকে ফিরতে শুরু করেছে সাভার ও আশুলিয়ার পোশাক শ্রমিকরা
‘ইসরায়েলকে চরম মূল্য দিতে হবে’

মুক্তির অপেক্ষায় অপূর্ব-তটিনীর 'ফিরে আসা'

নিজ ঘরে ঝুলন্ত মা-মেয়ের লাশ উদ্ধার, স্বামী আটক

ইরানজুড়ে পাঁচ ধাপে ইসরায়েলের শতাধিক বিমান হামলা

অধ্যাপক ইউনূস ‘কিংস তৃতীয় চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড’ গ্রহণ করলেন

নিজেদের আকাশসীমা বন্ধ করলো ইরান

আহমেদাবাদে দুর্ঘটনার পর বোয়িংয়ের শেয়ারে বড় ধস

ইসরাইলকে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে : আলী খামেনি

যুক্তরাজ্য সফরে পাচারের অর্থ পুনরুদ্ধার বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে : প্রেস সচিব শফিকুল আলম

ইরানের পাল্টা হামলা হতে পারে ভয়াবহ-ব্যাপক

প্রধান উপদেষ্টার সাথে হাউস অব কমন্সের স্পিকারের বৈঠক

ইরানে ইসরাইলি হামলার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ততা নেই : দাবি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর

চকরিয়ায় বিদ্যুৎ স্পৃষ্টে মাদরাসা শিক্ষকের মৃত্যু

এবার ইরানের রাডার ও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় হামলা ইসরাইলের

মাগুরার গ্রামে সংঘর্ষে হাতবোমা বিস্ফোরণ বোমাবাজসহ তিনজন গ্রেফতার, আহত ১০ জন

সিরাজগঞ্জে রবীন্দ্রনাথের বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় মোদিকে মমতার চিঠি

পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় ভয়াবহ বিমান হামলা

মারা গেছেন শিল্পপতি সঞ্জয় কাপুর

ভারতের বিমান দুর্ঘটনায় শোক প্রকাশ করলেন ট্রাম্প